X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

চলে গেলেন নির্মাতা তরুণ মজুমদার

রক্তিম দাশ, কলকাতা
০৪ জুলাই ২০২২, ১৩:৪৯আপডেট : ০৪ জুলাই ২০২২, ১৪:১০

জীবনযুদ্ধে হার মানলেন বাংলা সিনেমা ‘দাদার কীর্তি’র স্রষ্টা। আজ (৪ জুলাই) বেলা ১১টা ১৭ মিনিটে প্রয়াত বর্ষীয়ান পরিচালক তরুণ মজুমদার । গত ১৪ জুন থেকে কিডনি ও ফুসফুসের সমস্যা নিয়ে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। অবশেষে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন বর্ষীয়ান পরিচালক। মৃত্যুকালে বয়স হয়েছিল ৯২ বছর। দীর্ঘ দু’দশক ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। 

গতকাল মধ্যরাত থেকে অবস্থার অবনতি হতে শুরু করে। সম্পূর্ণ আচ্ছন্ন অবস্থায় রাখা হয়েছিল তাকে। ডায়ালাইসিসের প্রয়োজন থাকলেও ডায়ালিসিস দেওয়ার অবস্থায় তিনি ছিলেন না। ১০০ শতাংশ ভেন্টিলেটরি সাপোর্টে রাখা হয়েছিল। কিডনির সমস্যা নিয়েই তিনি হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন পরে ফুসফুসে সংক্রমণ ধরা পড়ে তার। 

১৯৩১ সালের ৮ জানুয়ারি অধুনা বাংলাদেশের বগুড়ায় জন্ম তরুণ মজুমদারের। প্রায় ষাট বছরের দীর্ঘ কেরিয়ার তাঁর। ১৯৫৯ সালে ছবির জগতে পা রাখা। কাজ করেছেন ২০১৮ সাল পর্যন্ত। ১৯৯০ সালে 'পদ্মশ্রী' সম্মানে ভূষিত হয়েছিলেন। তার বাবা মজুমদার ছিলেন স্বাধীনতা সংগ্রামী। কেমিস্ট্রির ছাত্র হলেও সিনেমা তৈরির ঝোঁক ছিল বরাবরই।

১৯৫৯ সালে উত্তম কুমার এবং সুচিত্রা সেনের সঙ্গে ‘চাওয়া পাওয়া’ ছবিটি বানিয়েছিলেন তরুণ মজুমদার। ১৯৬০ সালে বানালেন 'স্মৃতিটুকু থাক'। ১৯৬২ সালে ‘কাচের স্বর্গ’ বানিয়েছিলেন প্রবাদপ্রতিম এই পরিচালক। এই ছবির জন্যই জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন তিনি। 

সিনেমাপাড়া দিয়ে তরুণের হাঁটা শুরু হয়েছিল অনেক আগেই। যোগাযোগ হয়েছিল ‘থিরবিজুরি’ কাননদেবীর সঙ্গে। এই কাননদেবীর প্রোডাকশনেই আলাপ শচীন মুখোপাধ্যায় এবং দিলীপ মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। ১৯৫৯ সালে ততদিনে বন্ধু শচীন এবং দিলীপকে সঙ্গে নিয়েই তরুণ গড়লেন ‘যাত্রিক’। যাত্রিকের ব্যানারে প্রথম ছবিই ব্লক ব্লাস্টার উত্তম-সুচিত্রার 'চাওয়া-পাওয়া'। পরে 'কাঁচের স্বর্গ'ও সাড়া ফেলে দিল। ১৯৬২ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবির জন্য জুটেছিল জাতীয় পুরস্কার। ঘটনাচক্রে তরুণের জীবনে সেটিই প্রথম জাতীয় পুরস্কার।

১৯৫৯ সাল থেকে ১৯৬৫ সাল- এই সাত বছর তরুণ মজুমদার 'যাত্রিক'-এর ব্য়ানারেই কাজ করেন। ১৯৬৩ সালের পর থেকেই তরুণ স্বাধীনভাবে কাজ শুরুর কথা ভাবছিলেন। ‘পলাতক’র পরে ১৯৬৫ সালে তিনি তৈরি করলেন দুটি ছবি- ‘আলোর পিপাসা’ ও ‘একটুকু বাসা’। তার একক প্রয়াসের প্রথম দুটি ছবি। প্রথম ছবিতেই জাত চিনিয়ে দিলেন তরুণ।

এরপর তার হাত থেকে একে একে বেরিয়ে এল কত না মণিমুক্তো- বালিকা বধূ (১৯৬৭), নিমন্ত্রণ (১৯৭১), কুহেলি (১৯৭১), শ্রীমান পৃথ্বীরাজ (১৯৭৩), ফুলেশ্বরী (১৯৭৪), সংসার সীমান্তে (১৯৭৫), গণদেবতা (১৯৭৮)। নিমন্ত্রণ ও গণদেবতা। ‘গণদেবতা’ শ্রেষ্ঠ বিনোদনমূলক জনপ্রিয় চলচ্চিত্রের জন্য জাতীয় পুরস্কার জিতে নিয়েছিল, আর 'নিমন্ত্রণ' পেয়েছিল শ্রেষ্ঠ বাংলা ছবি হিসেবে জাতীয় পুরস্কার।

এর পরে যে ছবিগুলি তার হাত থেকে এল সেগুলিও জনপ্রিয় তথা 'হিট' বাংলা ছবির ইতিহাসে দীর্ঘ ছায়া ফেলে রেখে গিয়েছে। এরমধ্যে আছে- দাদার কীর্তি (১৯৮০), ভালোবাসা ভালোবাসা (১৯৮৫), পথভোলা (১৯৮৬), আপন আমার আপন (১৯৯০)। বিভিন্ন বিষয়ের ওপর অনেক রকম ছবি বানালেও শোনা যায়, নিজের তৈরি ছবিগুলির মধ্যে তরুণ মজুমদার নাকি সব চেয়ে পছন্দ করতেন 'ফুলেশ্বরী'।  

তার হাতেই কেরিয়ার শুরু মৌসুমী চট্টোপাধ্যায়, তাপস পাল, মহুয়া রায়চৌধুরী, অয়ন বন্দ্যোপাধ্যায়ের। তাপস পাল তার আটটি ছবিতে কাজ করেছেন। 

তরুণ মজুমদারের ছবিতে সংগীতের জায়গাটা খুব বড়। তার ছবিতে ব্যবহৃত গান বাঙালির বড় আদরের। তা যেমন চলতি অর্থে 'হিট'ও, তার মধ্যে আবার নান্দনিকতার সুচারু প্রকাশও বহুবার পেলব স্পর্শ দিয়েছে বাঙালির শ্রবণে ও মনে। নতুন গানের পাশাপাশি তার ছবিতে রবীন্দ্রসংগীতের ব্যবহারও চোখে পড়ার মতো। সেখানেও অসংখ্য চেনা গান এমন নতুন ভাবে ব্যবহৃত বা উপস্থাপিত হয়েছে যা দর্শক-শ্রোতার সংগীতবোধকে ভিন্ন ভাবে ছুঁয়ে দিয়েছে। তার ছবিতে রবীন্দ্রগান কোথাও কোথাও যেমন অমোঘ তেমনই অপরিহার্য।

তরুণ মজুমদার সুস্থ রুচির স্নিগ্ধ স্বাদের এমন এক ধাঁচের ছবি চিরকাল বানিয়ে গিয়েছেন, যা দিনে দিনে টলিউডে একটা আলাদা ঘরানাই তৈরি করে দিয়েছে। যে-ছবি দেখতে বসে বুদ্ধির গোড়ায় অনর্থক ধোঁয়া দিতে হয় না; অথচ যে-ছবি রুচি ও মেজাজের সহজ সাধারণ স্বাভাবিকতাকেও কখনও ক্ষুণ্ণ করে না- তেমন একটা মিষ্টি-মধুর রসের সাহিত্যধর্মী ছবি তিনি বরাবর তৈরি করে গিয়েছেন, যা পরিবারের সবাইকে নিয়ে একসঙ্গে বসে উপভোগ করা যায়। বিনোদনের সমস্ত রসদ সেখানে পূর্ণমাত্রায় থাকে, কিন্তু কোথাও বাঙালির চেনা নান্দনিকতায় বা বাঙালিয়ানায় যা বিন্দুমাত্র বিঘ্ন ঘটায় না। টানা কয়েক দশক ধরে সিনেমাপাড়া দিয়ে যেতে যেতে তিনি রুচিশীল কিন্তু বিনোদনোজ্জ্বল ছবি-নির্মাণের যে অপূর্ব তারুণ্যময় কলা ও কৌশলের উত্তরাধিকার রেখে গেলেন।

/এম/
সম্পর্কিত
ভুয়া পরিচয়ে ভারতে বসবাস বাংলাদেশির, ৪ বছরের কারাদণ্ড
ভুয়া পরিচয়ে ভারতে বসবাস বাংলাদেশির, ৪ বছরের কারাদণ্ড
বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলন দিবস পালিত হলো কলকাতায়
বহির্বিশ্বে বাংলাদেশের প্রথম পতাকা উত্তোলন দিবস পালিত হলো কলকাতায়
কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনে ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস’ উদযাপন
কলকাতায় বাংলাদেশ উপ-হাইকমিশনে ঐতিহাসিক ‘মুজিবনগর দিবস’ উদযাপন
কলকাতায় চালু হলো চালকবিহীন মেট্রো
কলকাতায় চালু হলো চালকবিহীন মেট্রো
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
কান উৎসব ২০২৪১৬ বছর ধরে পুনরুদ্ধার করা ‘নেপোলিয়ন’ দেখাবে কান
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
এই জন্মদিনে আরেক সিনেমার ঘোষণা
ভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির নির্বাচনভোট দিতে এসে কেউ উৎফুল্ল, অনেকেই ক্ষুব্ধ!
দেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
সিনেমা সমালোচনাদেয়ালের দেশ: মন খারাপ করা সিনেমা
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না
জোভানের নতজানু বার্তা: আমার ওপর কষ্ট রাখবেন না