X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০
শুভ জন্মদিন

ফেলে আসা দিনগুলো স্বপ্নের মতো মনে হয়: সাবিনা ইয়াসমিন

সুধাময় সরকার
০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০৫আপডেট : ০৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:৪৯

১৯৫৪ সালের এই দিনে (৪ সেপ্টেম্বর) পৃথিবীর আলোয় চোখ মেলেন কিংবদন্তি কণ্ঠশিল্পী সাবিনা ইয়াসমিন। আজ এই শিল্পী পেছনে ফেলে এলেন ৬৮ বছরের বর্ণাঢ্য জীবন। ৬৯ বছরে পা রেখে সংগীতের এই সূর্যকন্যা মনে করছেন, ফেলে আসা দিনগুলো এখন স্বপ্নের মতো মনে হয় তার কাছে।

১৯৬৭ সালে জহির রায়হানের ‘আগুন নিয়ে খেলা’ ছবিতে আলতাফ মাহমুদের সংগীত পরিচালনায় মাত্র ১৩ বছর বয়সে প্রথম প্লেব্যাক করেন সাবিনা ইয়াসমিন। আর পেছনে তাকাতে হয়নি। একজীবনে তিনি মোট কত গান গেয়েছেন সেই হিসেবেটাও নেই তার কাছে। 

পাঁচ দশকের ক্যারিয়ার প্রসঙ্গে সাবিনা ইয়াসমিন বলেন, ‌‘গানে গানে কীভাবে এত বছর কেটে গেল তা টেরই পাইনি। ফেলে আসা দিনগুলো আমার কাছে স্বপ্নের মতোই মনে হয়। মায়ের অনুপ্রেরণা আর বোনদের গাইতে দেখে ছোটবেলায় গানের তালিম নেওয়া শুরু করেছিলাম। এরপর থেকে গান করেই চলেছি। গানের মাধ্যমে পাওয়া অগণিত মানুষের ভালোবাসাই আমাকে এগিয়ে চলার শক্তি জুগিয়েছে। বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রে কতো গান গেয়েছি, সঠিক হিসাব নিজেরও জানা নেই।’ 

গাওয়ার স্বীকৃতি হিসেবে সাবিনা ইয়াসমিন পেয়েছেন ১৪ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ স্বাধীনতা পুরস্কার আর একুশে পদকও।

এবারের জন্মদিনে নিজ ঘরেই কাটাবেন এই জ্যেষ্ঠ শিল্পী। বললেন, ‘ছোটবেলায় জন্মদিন ঘিরে কতো পরিকল্পনা থাকতো। এখন আর তেমন কিছু ভাবি না। অন্য সব দিনের মতো এ দিনটিও পার করতে চাই। প্রতি বছর ভক্ত-শ্রোতা আর প্রিয়জনের শুভেচ্ছা ও ভালোবাসায় সিক্ত হই। এবারও হয়তো তেমন কিছুই হবে। প্রতি বছর কোনও না কোনও টিভি আয়োজনে যেতে হয়। কিন্তু এ বছর সেটাও যাচ্ছি না। সারাদিন বাসাতেই থাকবো। কয়েকজন বন্ধু বাসায় আসবে। পাশাপাশি দেশ-বিদেশে অনেকেই হয়তো এবারও কেন কাটবেন। বিষয়টি আমাকে ভালো লাগায় ভরিয়ে দেয়।’

সংগীতের চলমান সময় নিয়ে মোটেই খুশি নন সাবিনা ইয়াসমিন। তার ভাষায়, ‘‘সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সব পাল্টে যাচ্ছে। সিনেমায় গল্প বলার ধরন পাল্টে গেছে। আগের মতো গুণী নির্মাতা, সংগীত পরিচালক আর নেই। তাই তো গানসমৃদ্ধ ছবি নির্মাণ নেই বললেই চলে। গানের জন্যই ছবি হিট হয়, এ বিষয়টি এখন আর নেই। কিন্তু একটা সময় ছিল, যখন মানুষ শুধু গানের জন্যই প্রেক্ষাগৃহে গিয়েছেন। সেসব দিন হারাতে বসেছি আমরা। ‘সে যে কেন এলো না’, ‘শুধু গান গেয়ে পরিচয়’, ‘আমি রজনীগন্ধা ফুলের মতো’, ‘দুঃখ ভালোবেসে’, এমন অসংখ্য গান শ্রোতাদের মুখে আজও ফিরছে। সময়ের প্রবাহে গানগুলো পেয়েছে কালজয়ীর মর্যাদা। এখন তো এসব সৃষ্টি আর নেই।’’ 

সাবিনা ইয়াসমীন/ ছবি: সাজ্জাদ হোসেন আগের মতো সৃষ্টি কেন হচ্ছে না সেই ব্যাখ্যাটাও দিলেন তিনি। বললেন, ‘এখন সব কিছুতেই চলছে বাণিজ্যিকীকরণ। তাড়াহুড়া করে সবাই কাজ করছে। গানের চেয়ে ভিডিওর প্রতি সবার মনোযোগ। ফলে ভালো গান হচ্ছে না। খেয়াল করে দেখবেন, গত ১০ বছরে সিনেমায় ম্যাসিভ হিট কোনও গান আমরা পেয়েছি? পাইনি। মাঝেমধ্যে দু-একটি গান কানে বাজলেও কয়েকদিন পরই শ্রোতার তা ভুলে যাচ্ছে। এখন নতুন প্রজন্মের নির্মাতারা ভালো ভালো কাজ করছেন ঠিকই। আশা করছি, তারা গানের বিষয়গুলো নিয়েও ভাববেন।

এই প্রজন্মের সংগীতশিল্পীদের নিয়েও সাবিনা ইয়াসমিনের মনে রয়েছে হতাশা। তরুণ শিল্পীদের লক্ষ্য করে এই কোকিলকণ্ঠী বলেন, ‘এ সময়ের অনেক তরুণ শিল্পীই বেশ ভালো কাজ করছেন। তবে তাদের অনেকেই জানেন না- কী করতে হবে, আর কী করা যাবে না। যে এটুকু বুঝতে পারবে, সে সামনে আগাবে। নয় তো ঝরে যাবে।’

সাবিনা ইয়াসমিনের বাবা লুতফর রহমান ব্রিটিশ রাজের অধীনে সরকারি কর্মকর্তা ছিলেন এবং মা বেগম মৌলুদা খাতুন। পৈতৃক বাড়ি সাতক্ষীরায়। তার পাঁচ বোনের মাঝে চার বোনই সংগীতের সাথে যুক্ত। তারা হলেন ফরিদা, ফৌজিয়া, নীলুফার ও সাবিনা। তার আরেক বোন নাজমা ইয়াসমিন। তার ভগ্নীপতি চলচ্চিত্র নির্মাতা, অভিনেতা, সুরকার খান আতাউর রহমান এবং তার ভাগ্নে সংগীতশিল্পী-অভিনেতা আগুন।

সাবিনা ইয়াসমিন তার বাবার চাকরির সূত্রে নারায়ণগঞ্জে বেড়ে ওঠেন। শৈশব থেকে তিনি গানের পরিবেশে বেড়ে উঠেছেন। তার বাবা রবীন্দ্রসংগীত গাইতেন। মা মুর্শিদাবাদে সে সময়ের প্রখ্যাত সংগীতজ্ঞ ও ওস্তাদ কাদের বক্সের কাছে গান শিখতেন। তার বড় বোন ফরিদা ও ফৌজিয়া দুর্গাপ্রসাদ রায়ের কাছে উচ্চাঙ্গসংগীত শিখতেন। তিনি ও নীলুফার ইয়াসমিন তাদের সাথে বসতেন। তার মা তাকে তালিমে সহায়তা করতেন এবং হারমোনিয়াম বাজিয়ে সঙ্গ দিতেন। হারমোনিয়াম বাজিয়ে তার শেখা প্রথম গান ছিল ‘খোকন মনি সোনা’। এছাড়া মায়ের কাছ থেকে তিনি সুপ্রীতি ঘোষের কয়েকটি গান শিখেন। মাত্র সাত বছর বয়সে তিনি প্রথম মঞ্চে গান করেন। পরবর্তীকালে ওস্তাদ পি সি গোমেজের কাছে একটানা ১৩ বছর শাস্ত্রীয় গানের তালিম নিয়েছেন।

১৯৬৪ সালে সাবিনা ইয়াসমিন বেতারে ছোটদের গানের অনুষ্ঠান খেলাঘর-এ নিয়মিত অংশ নিতেন। এই অনুষ্ঠান থেকে তার প্রথম সম্মানী ছিল ১০ টাকা। এই অনুষ্ঠানে তার সঙ্গী ছিলেন আরেক কিংবদন্তি শাহনাজ রহমতুল্লাহ। শিশুশিল্পী হিসেবে তারা দুজন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি আইয়ুব খানের কাছ থেকে পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। সাবিনা ইয়াসমিন রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরী উচ্চ বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণিতে পড়াকালীন তার প্রতিবেশীর বাড়িতে আলতাফ মাহমুদ আসেন। মাহমুদ তখন চলচ্চিত্রের সংগীত ও সুরায়োজন করতেন। তার মা ও তিনি চলচ্চিত্রের গানের সুযোগ দেওয়া অনুরোধ করেন এবং মাহমুদ তাকে ‘আগুন নিয়ে খেলা’ (১৯৬৭) চলচ্চিত্রে গান গাওয়ার সুযোগ দেন।

সাবিনা ইয়াসমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজবিজ্ঞানে স্নাতক সম্পন্ন করেন। তার সহপাঠী ছিলেন শেখ কামাল ও তার স্ত্রী সুলতানা কামাল খুকী।

/এমএম/
সম্পর্কিত
ফের ক্যানসার, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন সাবিনা ইয়াসমিন
ফের ক্যানসার, সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন সাবিনা ইয়াসমিন
সাবিনাকন্যা বাঁধনের কণ্ঠে হিন্দি রবীন্দ্রসংগীত
সাবিনাকন্যা বাঁধনের কণ্ঠে হিন্দি রবীন্দ্রসংগীত
দুই সংগীত কিংবদন্তির আসা-যাওয়ার দিন
দুই সংগীত কিংবদন্তির আসা-যাওয়ার দিন
জাতীয় নারী ফুটবল ও ক্রিকেট দলের মধ্যমণি সাবিনা ইয়াসমিন
জাতীয় নারী ফুটবল ও ক্রিকেট দলের মধ্যমণি সাবিনা ইয়াসমিন
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
শাকিব খান: নির্মাতা-প্রযোজকদের ফাঁকা বুলি, ভক্তরাই রাখলো মান!
ঢাকার পর্দায় আবার গডজিলা-কিং কং
ঢাকার পর্দায় আবার গডজিলা-কিং কং
পুষ্পা: আসবে তৃতীয় কিস্তি!
পুষ্পা: আসবে তৃতীয় কিস্তি!