X
শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪
৫ বৈশাখ ১৪৩১
একান্ত আলাপ

সরকারকে যেমন তোয়াজ করি না, শ্রোতাকেও না: সায়ান

কামরুল ইসলাম
কামরুল ইসলাম
১২ অক্টোবর ২০২২, ১৯:১৭আপডেট : ২১ জানুয়ারি ২০২৩, ১৮:০৮

নির্ধারিত সময়ের মিনিট দশেক আগে তার বাড়ির নিচে হাজির। ঢোকার আগে টংয়ের এক কাপ চা হলে মন্দ হয় না। ধোঁয়া ওঠা বাদামি রঙের গরম পানীয় দিয়ে গলা ভিজিয়ে সিঁড়ি ভাঙতে শুরু করলাম। উঠে দেখি দরজায় দাঁড়িয়ে তিনি। পরনে চেনা কালো পোশাক, আর মুখে দ্যুতি ছড়াচ্ছে একফালি হাসি। মানুষটির নাম ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান। শব্দ-সুরে যিনি দেশ, রাজনীতি ও জীবনের চেনা-অচেনা গলির গল্প তুলে ধরেন। সেগুলোকে কিছু মানুষ বলে ‘জীবনমুখী গান’, কারও কাছে আবার ‘প্রতিবাদী বা সাহসী গান’। যদিও স্বাধীনচেতা এই শিল্পীর কাছে গান শুধুই তার অনুভূতি প্রকাশের মাধ্যম। সায়ানের সঙ্গে একান্ত আলাপে উঠে এসেছে তার জীবন ও গান নিয়ে এমন আরও অনেক ব্যতিক্রম প্রতিক্রিয়া... 

বাংলা ট্রিবিউন: কেমন আছেন? এইসব দিনকাল পোহাচ্ছেন কেমন?

ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান: খুবই ভালো আছি। বেশি ব্যস্ততা আমি পছন্দ করি না। তাই বেশি ব্যস্ততা রাখিও না। তবে কাজ আছে। এর মধ্যে প্রতিদিনই একটা বড় সময় থাকে, যখন কিছুই করি না; নিজের মতো থাকি। হাঁটতে যাই, গান শুনি, বই পড়ি, রাস্তায় দাঁড়িয়ে চুপচাপ মানুষ দেখি। বন্ধুদের সঙ্গে, ফ্যামিলির সঙ্গে সময় কাটে, সিনেমা দেখি; এই তো। 

বাংলা ট্রিবিউন: সিনেমার প্রসঙ্গ যখন চলেই আসলো, তাহলে একটু জানতে চাই, সর্বশেষ দেশের কোন সিনেমাটি দেখেছেন? 

সায়ান: দেশের সিনেমা নিয়ে সবচেয়ে গর্বের জায়গা এখন ‘পরাণ’ আর ‘হাওয়া’। এতো ভালো ছবি যে বাংলাদেশে হতে পারে, এটা ভেবে গর্বিত। ‘অপারেশন সুন্দরবন’ আর ‘বিউটি সার্কাস’ও দেখবো। সামনে যেগুলো আসবে, দেখার ইচ্ছে আছে। কিন্তু আগে সেভাবে নিয়মিত দেখা হয়নি। বিচ্ছিন্নভাবে গিয়াস উদ্দিন সেলিম, অমিতাভ রেজা চৌধুরীদের সিনেমা দেখা হয়েছে। তারও আগে খান আতাউর রহমান, জহির রায়হান, মোরশেদুল ইসলাম ওনাদের সিনেমাগুলো দেখেছি। 

ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান বাংলা ট্রিবিউন: নয় মাস হলো আপনার শেষ গান ‘তোমার রাজাকারি’র বয়স। এভাবেও বলা যায়, মুক্তিযুদ্ধের সমান বয়স! তবে কি নতুন প্রকাশের যুদ্ধটা শেষ হয়নি এখনও!

সায়ান: প্রথমত; প্রত্যেকটা মানুষ, প্রত্যেকটা শিল্পীর যাত্রা আলাদা। আমি প্রত্যেকের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। একটা মানুষ যদি সারাজীবনে শুধু একটা গান করে, এরপর আর কোনও গান না করে, আমি তার প্রতিও শ্রদ্ধাশীল এবং কৃতজ্ঞ; কারণ তার গানটি সে আমাকে ভালো লাগালো, একটা অনুভূতি দিলো। দ্বিতীয়ত; ‘তোমার রাজাকারি’ গানটা প্রকাশ হলো ২০২১-এর শেষে, কিন্তু এই গান তৈরি হওয়া ২০০৯ সালে! এরকম অনেক গান আছে, যেগুলি আমি প্রকাশ করিনি অফিসিয়ালি। আরেকটা ব্যাপার হলো, গান আমি যুদ্ধ হিসেবে কখনোই করিনি। এটা আমার কাছে ছিলো জার্নি, আমার কাজ। হ্যাঁ, এটার মধ্যে সাধারণ সংকট, কষ্ট এগুলো ছিলো। কিন্তু সেটা আমার জন্য কোনোদিন যুদ্ধ মনে হয়নি, আনন্দ মনে হয়েছে। এটা আমার জীবনের একটি উপহার। 

বাংলা ট্রিবিউন: ইউটিউবে আপনার একটি চ্যানেল রয়েছে। সেখানে আপলোড করা প্রথম গান ‘কোলবালিশ’। ওই গানের গল্পসহ ইউটিউব চ্যানেল করার প্রেক্ষাপট জানতে চাই…

সায়ান: ‘কোলবালিশ’ গানটি প্রকাশ হয় ২০০৯-এ। আর এটি লেখা ১৯৯৪ সালে। আমার যেকোনও গান যখন প্রকাশ হয়, তার মধ্যে খুব কম গান থাকে, যেটা নগদ নগদ বানানো। প্রত্যেকটা গানের প্রকাশনা এবং আমার ভেতরকার জন্ম, এটার মাঝখানে সাত-আট বছরের ব্যবধান থাকে। আমি চিন্তা করে গান লিখি না, একটা অনুভূতি হয়, সেটা একটা চাপ তৈরি করে আমার মনে। যখন গানটি লিখে ফেলি, তখন আমার মধ্যে টেম্পোরারি প্রশান্তি আসে। 

আর ইউটিউব চ্যানেল করার প্রসঙ্গে যদি বলি, আমার গান কিছু মানুষ খুবই ভালোবাসে। তাদের মধ্যে একজন আমাকে জানালো, আমার কিছু গান ইউটিউবে দিতে চায়, যাতে দেশের বাইরের মানুষও শুনতে পারে। আমি বলেছি, তোমার যদি ভালো লাগে, করো। এরপর ‘সায়ানের গান’ নামে চ্যানেল খুলে তাতে গান আপলোড করতে থাকলো। সেই চ্যানেল গোছালো মাত্র দেড় বছর আগে, করোনার সময়ে। এই সময়ে এসে আমি চ্যানেলটিকে মনিটাইজ করলাম, কপিরাইট সংক্রান্ত বিষয়গুলো গুছিয়ে নিলাম। 

বাংলা ট্রিবিউন: মাস কয়েক আগে কবিতার একটি অ্যালবাম প্রকাশ করেছেন। গান না করে কবিতা কী ভেবে? 

সায়ান: একটা গান হয়ত লিখতে লিখতে সুর মাথায় চলে আসলো, অথবা লেখা শেষে সুর নিয়ে বসতাম। সুর করতে অনেক আয়োজন লাগে আমার, সময় লাগে। এতে আমি আলাদা মনোযোগ দিতে চাই। আর কথা আমার কাছে সহজে আসে। তো একটা সময় খেয়াল করলাম, আমি সুরে পিছিয়ে যাচ্ছি, লেখা বেশি হয়ে যাচ্ছে। সুর দিয়ে কুলাতে পারছি না। তখন আমি ওই লেখাগুলোকে আলাদা স্বীকৃতি দিলাম কবিতা হিসেবে। এরপরই কবিতার অ্যালবাম প্রকাশ করা। আগামীতেও অনেক কবিতা রেকর্ড করবো। আবৃত্তিশিল্প যে আমি খুব জানি, এমন নয়। স্বাভাবিকভাবে যতটুকু হয়, ওটাই শেয়ার করতে চাই। 

ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান বাংলা ট্রিবিউন: সায়ান যেমন বিদ্রোহী, তেমনই কি একাকীত্ব আর বিরহ বিলাসী? অনেক গানেই সেই ছাপ লক্ষ্য করা যায়। এর পেছনে কোনও ব্যাখ্যা আছে কি?

সায়ান: আমি আপনার মতোই একজন মানুষ, যার মাঝেমধ্যে ইচ্ছে করবে প্রতিবাদ করতে, যার ভেতরে রাগ হবে, দুঃখ হবে, মানুষ তাকে কষ্ট দিলে ব্যথা লাগবে, তার মাঝেমধ্যে একা লাগবে, মাঝেমধ্যে বন্ধুদের দরকার হবে, কারও সঙ্গে দেখা করতে চাইবে; অনুভূতির জায়গা থেকে আপনার সঙ্গে আমার কোনও পার্থক্য নাই। এখন আমার অনুভূতিটা আমি প্রকাশ করি গান দিয়ে। যখন রেগে থাকি, তখন প্রতিবাদের গান করি, যখন দুঃখে থাকি, তখন গান হয় বেদনার। বাইরের মানুষ আমাকে ক্যাটাগরাইজ করছেন, কেউ বলছেন, ‘এই মেয়েটা শুধু প্রতিবাদের গান করে’; আমি সেটা বলছি না। আমি বলছি, আমার অনুভূতিকে গানে প্রকাশ করি। 

বাংলা ট্রিবিউন: বাস্তুহারা, ফুটপাতে পড়ে থাকা মানুষকে দেখে আপনি ‘তাজ্জব’ বনে গেছেন, জনতা হিসেবে সরকারের সঙ্গে ‘বেয়াদবি’ করেছেন; গানের মধ্যে রাজনৈতিক বাস্তবতার এই সাহসী ভাষা কীভাবে এসেছে? সেটা অনুপ্রেরণা হতে পারে আবার সমাজ ব্যবস্থাও হতে পারে।

সায়ান: এটা অনেক সাহসের ব্যাপার, আমার কখনও মনেই হয়নি। আমার কাছে মনে হয়েছে, আমি বাংলাদেশের জনতা, এটা আমার দেশ, অনেক যুদ্ধ করে পাওয়া দেশ। আমার ধারণা ছিলো, আমি শক্তিশালী জনতা, আমি দেশের মালিক। এখনও তাই মনে করি। আমার কণ্ঠস্বর চোরের মতো কেন হবে? আমার দেশ নিয়ে আমি স্বাভাবিক সুরে কথা বলবো, এই স্বাভাবিক সুরটাকেই মানুষ বলছে সাহস! এটা দুঃখের ব্যাপার। এটা বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের অবক্ষয় যে, একটা সাধারণ প্রশ্ন করাকে মানুষ মনে করে সাহস। এখানে তো সাহসের জায়গা দেখি না। ভয়টাকে সাধারণ করে ফেলা হয় কেন? সারাক্ষণ সরকারকে ভয় পেতে হবে কেন? সরকার হলো তোমার দায়িত্ব নেওয়া একটা প্রতিষ্ঠান, সে তোমার নির্বাচিত। যেকোনও সরকারের লজ্জিত হওয়া উচিত যে, তার জনগণ তাকে ভয় পায়! 

বাংলা ট্রিবিউন: কখনও কি মনে হয়, সংগীত জগত বা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে যতটা সাড়া পাওয়ার কথা, ততটা পাননি? অর্থাৎ প্রাপ্তি নিয়ে আপনার কোনও আক্ষেপ আছে কিনা? 

সায়ান: একদমই না। কারণ গানকে যখন পণ্য হিসেবে দেখবেন, এটার একটা বাজার আছে। সেই বাজারটাকে কিছু মানুষ চালায়। তখন এটাকে বাস্তব দৃষ্টিতে দেখতে হবে যে, এই বাজারটা আসলে কেমন। আপনি কখনও ভারতের সঙ্গে এ দেশের তুলনা করতে পারবেন না; ওখানে একজন পপ সিঙ্গার গান গেয়ে যেমন সংসার চালাতে পারে, আবার যিনি রাগ-শাস্ত্রীয় গান করেন, তিনিও পারেন। ওদের ইন্ডাস্ট্রি অনেক ম্যাচিওর। আমি বাংলাদেশের মাটিতে যখন গান গাইতে চাই, আমাকে বুঝতে হবে এই বাজারটার ইতিহাস কী। আমি কেন তার কাছে আশা করবো যে, আমাকে সে মাথায় তুলে রাখবে। যদি আমি এই আশা করি, তাহলে এটা আমার বোকামি। আমাদের এখানে এরকম গানের বাজারই নেই। যেখানে আমি সরকারের সঙ্গে কথাবার্তা বলবো, দরদাম করবো, নাগরিক হিসেবে কড়া সমালোচনা করবো। এই সংস্কৃতি আমাদের সংগীতাঙ্গনে কোনোদিন ছিলো না।

সিনেমার গান, পপ গান, ব্যান্ড গান এই কয়েকটা ঘরানার মধ্যেই ইন্ডাস্ট্রি সীমাবদ্ধ। এর বাইরে যারা গান করেন, তাদেরকে আলাদা একটা চাকরি করতে হয়। সেটা না করলে তার পেট চলবে না। কাজেই এই বাজার থেকে আমি কিছুই আশা করি না। সেজন্য আমি আইন বিষয়ে পড়েছি যে, এটা দিয়ে পেট চালাবো। আর অন্য সময়ে গানবাজনা করবো। এবার যতটুকু হবে, পুরোটাই বোনাস। শ্রোতাকে আমি কখনও তোয়াজ করি না। কারণ এই শ্রোতা হয়ত সামনাসামনি বলবে, আমার গান পছন্দ করে। কিন্তু সে যখন কোনও গানের আয়োজন করবে, সেখানে ঠিকই বলবে, ‘নিরাপদ’ গানগুলো করেন। তাই সরকারকে যেমন আমি তোয়াজ করি না, শ্রোতাকেও না। আমি কোথাও মাথা নত করতে চাই না, আনন্দে বেঁচে থাকতে চাই।

ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান বাংলা ট্রিবিউন: গিটার, মাউথ অর্গান, হারমোনিয়াম একাই বাজান। একা একা গান করার এই ভাবনাটা কীভাবে এলো?

সায়ান: আমি কয়েকবারই চেষ্টা করেছিলাম, কিছু মানুষকে নিয়ে গান করতে। কিন্তু কখনওই সেটা আরাম করে হয়নি। হয় একটা মানুষ দশটায় আসবে বলে ওইদিন আসলোই না, অথবা আমার গানগুলো বড় বড়, মিউজিক্যালি তার সঙ্গে আমি ব্লেন্ড করতে পারছি না। আমার গান খুব সিম্পল; মূল কিছু কথা বলতে চাই এবং সেটা সুরে গাইতে চাই। এর জন্য আমি রেওয়াজ করি। শ্রোতার সঙ্গে মানসিক বন্ধনে জড়ানোর একটা মৌলিক ইচ্ছা থাকে। যেমন আমি যাকে গান শোনাবো, সে যেন ওই সময়ে ফোনটা না ধরে। শ্রোতার মনোযোগ লাগবে, ফোনোযোগ না। সে মুগ্ধ হোক, এটা না, আমার চোখের দিকে তাকিয়ে আমি কী বলছি সেটা শুনুক। এটা আমার প্রসেস, এর বাইরে আমি মজা পাই না। সবকিছু মিলিয়ে একা একা গান করলে আমি আনন্দটা পাই। 

বাংলা ট্রিবিউন: অন্যের লেখা-সুরে কখনও গান করেননি কেন? প্রস্তাব নিশ্চয়ই পেয়েছেন… 

সায়ান: আমার ইচ্ছে করেনি, তাই। গানের সঙ্গে একটা সম্পর্ক হয় আমার। গানটা যখন জন্ম হচ্ছে, পুরো প্রক্রিয়াটা আমার ভেতরে হয়। এই নিবিড় সম্পর্কটা আমি অন্য জায়গায় পাই না। অন্যের কথা-সুর অনেক ভালো। কিন্তু আমার সঙ্গে তার ওই সম্পর্কটা হচ্ছে না, সুতরাং অন্য কেউ গাইবে গানটি। 

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি মূলত অডিও আমলের শিল্পী। এই ভিডিও জামানাতেও আপনি নিজেকে ভিডিওমুক্ত রেখেছেন। এটি কি ইচ্ছে করেই নাকি বাজেট ফ্যাক্ট?

সায়ান: গানের ক্ষেত্রে ভিডিও আমি এখনও বিশ্বাস করি না। আমি বিশ্বাস করি, ভালো গান হলো সেটা, যেটা শুনতে শুনতে মানুষের চোখ বন্ধ হয়ে যায়। যে সুরগুলি আমার হাড্ডির ভেতরে ঢুকে আছে, সেগুলি হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের গান, কিশোর কুমারের গান, লতা মঙ্গেশকর, রুনা লায়লার গান। সেগুলির কোনও ভিডিও আমি কোনোদিন দেখিনি। ভিডিওর ভালো-খারাপ নিয়ে বলছি না, একটা গান আমি ইতোমধ্যে বানিয়েছি; এরপর সেটার ভিডিওর জন্য আবার চার-পাঁচদিন জ্যাম ঠেঙিয়ে শুটিং করতে পারবো না। ভিডিওতে বাগান দিয়ে হেঁটে যাওয়া, বিদেশে গিয়ে তুষারের মধ্যে হাঁটাহাঁটি করা, এটা আমি পারবো না; কারণ এটার সঙ্গে গানের কোনও সম্পর্ক নেই। এটা একদমই মেকি আয়োজন আমার কাছে। 

বাংলা ট্রিবিউন: গত দুই দশকে অডিও ইান্ডাস্ট্রি বহুরূপ নিয়েছে। ফিতা, সিডি, ইউটিউব পেরিয়ে এখন মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি বলেই আর কোনও বিষয় নেই। কারণ রেকর্ড লেবেলগুলো নাটক প্রডিউস করছে! কোন চোখে দেখেন?

সায়ান: পরিবর্তনকে আমি কখনও খারাপ চোখে দেখবো না। নতুন সময়, ধারা আসবেই। এটার বিরুদ্ধে দাঁড়ানোটা বোকামি। আবার এটাতে গা ভাসানোটা কতটুকু জরুরি, সেটা আপনাকে বিবেচনা করতে হবে। শাহ আব্দুল করিমের মতো মানুষ নদীর পাড়ে বসে একটা দোতারা দিয়েই গান করতেন, সেই গান এখনও আছে। এমপিথ্রি, সিডি, ইউটিউব কী আসলো, আর কী গেলো, পুরো সময়টা জুড়ে কিন্তু আসল গান ছিলো। কিন্তু কোনও দিন যদি এমন হয়, পুরো জিনিসটা যন্ত্র-সফটওয়্যার বেজড হয়ে যায়, তাহলে গানের মৃত্যু হবে।

এই সফটওয়্যারকে আমি খারাপ চোখে দেখছি না। এমন গান শুনছি, ভালো লাগছে তো। কিন্তু কতগুলি বিষয় চিরন্তন। আর প্রযোজনার ক্ষেত্রে যেটা বললেন, একটা সংকট তো তৈরি হয়েছে ঠিক। কিন্তু গান তো তাদের কাছে প্রোডাক্ট। তারা মুনাফা দেখবে, এটাই তো স্বাভাবিক।  

ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান বাংলা ট্রিবিউন: নাটক বা সিনেমার গানে সম্ভবত আপনি একেবারেই অনুপস্থিত। প্রস্তাব আসেনি নাকি এলেও ঠেলে দিয়েছেন?  

সায়ান: ‘পিতা’ নামের একটি সিনেমায় গান করেছিলাম, আমার এক বন্ধুর অনুরোধে। আর কখনওই করার ইচ্ছা নাই। সিনেমা-নাটক কিন্তু আমি দেখি। কিন্তু সেখানে গান করতে হবে, এই চাহিদাটা আমার নিজের মধ্যে নাই। ভবিষ্যতে যদি ভালো লাগে, হয়ত করতে পারি; কিন্তু সম্ভাবনা খুব কম। তবে আমার ইতোপূর্বে করা কোনও গান কেউ সিনেমায় ব্যবহার করতে চায়, সেটার বাস্তবায়ন হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কারণ সিনেমার কথা মাথায় রেখে গান বানানো, এটা আমার প্রক্রিয়া না। 

বাংলা ট্রিবিউন: একটু পেছনে যেতে চাই। আপনার জন্ম ও বেড়ে ওঠার গল্পটা জানতে চাই

সায়ান: আমার জন্ম কানাডার মন্ট্রিয়ালে। কিন্তু আমার সাত মাস বয়সে বাবা-মা বাংলাদেশে চলে আসেন। তাই আমার বেড়ে ওঠার প্রথম একুশ বছর বাংলাদেশে। এরপর আমি আবার কানাডায় যাই, চার বছর থেকে আবার চলে আসি। তবে এখন মাঝেমধ্যে যাওয়া-আসা আছে। আমি খুব কৃতজ্ঞ; এই দেশে যদি বড় না হতাম, তাহলে বাংলা ভাষাটা এভাবে বলতে পারতাম না। আর বাংলায় যদি কথা বলতে না পারতাম, তাহলে অনুভূতি প্রকাশের অপশনটা খুলতো না আমার কাছে। তাই নিজের জীবন নিয়ে আমি খুব খুশি। 

বাংলা ট্রিবিউন: কানাডায় পড়াশোনা করতে গিয়েছিলেন। উন্নত ও নিরাপদ জীবন ছেড়ে কেন ফিরে এলেন? 

সায়ান: আমার এখানে ভালো লাগে। এই ট্রাকের আওয়াজ আসে সারারাত ধরে, এই আওয়াজটা আমি ওই দেশে পাই না। হেঁটে গেলেও ১৬-১৭ মিনিটে শাহবাগ কিংবা ২০ মিনিটে শহীদ মিনার, এগুলো আমার মাথায় শান্তি দেয়। কোনও ত্যাগ না, খুব স্বার্থপরতার জায়গা থেকে আমি দেশে থাকি। অনেক মানুষ এই দেশ থেকে বের হয়ে যাওয়ার জন্য মরিয়া, তাদেরকে আমি একটুও দোষ দেই না। তাদের জীবন অনেক কঠিন। কোনও কারণে আমার জীবন এই মুহূর্তে অতো কঠিন না। যে কারণে কানাডার চেয়ে এই জায়গাটাকে আমি বেশি অগ্রাধিকার দেই। আমি এখানেই বেশি শান্তি পাই। ওখানেও আমার ভালো লাগে, তবে ঘুরতে যাওয়ার জন্য, স্থায়ীভাবে বসবাসের জন্য না। 
এই যে এখানে আমি রাস্তায় খিস্তি শুনি, টংয়ের চা খাই, রাস্তায় উবার ড্রাইভারের সঙ্গে রিকশা চালকের যে মারামারি দেখি, এটা আমার সংস্কৃতি। এটা থেকে বের হয়ে আরেকটা দেশে স্থায়ী হওয়া, সেটা ভালো, কিন্তু আমার পোষাবে না। 

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার সবচেয়ে জনপ্রিয় গান ‘এক হারিয়ে যাওয়া বন্ধু’র গল্পটা শুনতে চাই। কীভাবে এই গান সৃষ্টি করলেন? 

সায়ান: এটা আমার ছোটবেলার এক বন্ধুকে নিয়ে লেখা। প্রত্যেকটা সম্পর্কের মধ্যে বন্ধুত্ব যেমন অনেক উঁচুতে নিয়ে যায়, আবার ইগো বা অহংবোধ ওই সম্পর্কটার ক্ষতি করে। এটাই তুলে ধরতে চেয়েছিলাম। আর আলাদা করে প্রতিক্রিয়ার কথা মনে নেই। তবে আমার গান সবাই পছন্দ করে না। কিন্তু এটা এমন গান, যেটা বেশিরভাগ মানুষ পছন্দ করে। আমার শত্রু আসলে নাই, তাও ধরেন যে আমার শত্রু, সে-ও আমার এই গানটাকে মন্দ বলে না। 

বাংলা ট্রিবিউন: আপনার নিজের কাছে সবচেয়ে প্রিয় গান কোনটি?

সায়ান: এটা বলতে পারবো না। এটা বলতে পারি, আমার যে গান আপনার সবচেয়ে খারাপ লাগে, সেটাও আমার অনেক প্রিয়। 

ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান বাংলা ট্রিবিউন: আপনি যে ধারার গান করছেন, সেই ধারা আমাদের দেশে কেন জনপ্রিয় হচ্ছে না? আপনার কাছাকাছি সময়েই মাহমুদুজ্জামান বাবু, প্রীতম আহমেদ, হায়দার হোসেন বা তারও আগে মাকসুদুল হক-সঞ্জীব চৌধুরীরা চেষ্টা করেছেন। কিন্তু এই কথাসমৃদ্ধ প্রতিবাদী গানের সুরটা আর আগালো না। অথচ ওপার বাংলায় কবীর সুমন, নচিকেতা, অঞ্জন, শিলাজিৎরা এখনও গাইছেন...

সায়ান: দুইটা কারণ; একটা হলো- আমাদের বাজারের ওই ম্যাচুরিটি নাই যে, এটাকে একটি ধারা হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। যারা করেছে, তারা নিজেদের তাগিদ থেকে করেছে। যেমন হায়দার ভাই, তার কোনও মুখাপেক্ষিতা ছিলো না। সেজন্য কয়েকটা গান বের হয়ে গেছে, আমরা চিনে ফেলেছি। আমিও তাই। প্রথমে ল’ পাশ করে, একটা চাকরি না নিয়ে টেলিভিশনে অনুষ্ঠান করিনি। কারণ গান থেকে আমার পেট চললে আমি মরে যাবো, ঋত্বিক ঘটকের মতো মারা যাবো। ওই বাজার আমাদের এখানে নাই। যতটুকু হবে, সেটা আমাদেরই তৈরি করতে হবে। আর দ্বিতীয় কারণ হলো- কন্ট্রোল অব ডেমোক্রেসি। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ ৩৪-৩৫ বছর ধরে যে দর্শনে বিশ্বাস করে, সেই দর্শনের পক্ষেই এই গানগুলি হয়েছে। নচিকেতা যেমন গাইছেন, ‘হাসপাতালের বেডে টিবি রোগীর সাথে খেলা করে শুয়োরের বাচ্চা’, এটা কিন্তু পুরো ভারত নিয়ে বলেছেন। আর পশ্চিমবঙ্গের শাসনব্যবস্থায় যারা জড়িত, তারা বামপন্থী। মোট কথা, পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বাম দর্শনটা প্রচলিত। আমাদের দেশে কিন্তু সেরকম না। এখানে শিল্পীকে একলা দাঁড়াতে হয়, কোনও একটা প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে। এবং এখানে গণতন্ত্রের ভারসাম্য সেভাবে নাই। তারপরও কিছু গান তো গাইলাম, এখনও গাচ্ছি। কিন্তু আমি যদি স্বতন্ত্র না হয়ে কোনও দলের পক্ষ হয়ে গান করি, তাহলে মার খেতে হবে। আমার দলটাই হলো বাংলাদেশ। যে-ই ক্ষমতায় আসেন, আমি আপনাকে চোখে চোখে রাখবো, আমি খেয়াল রাখবো আপনাকে সর্বোচ্চ কণ্ঠে গালি দেওয়ার ক্ষমতাটা যেন আমার থাকে। এখানে কেউ চায় না, জনগণ জাগ্রত গানবাজনা করুক, জাগ্রত কবিতা পড়ুক। কেননা এখানে ওই ব্যবস্থাটা এখন একদমই নাই। এ কারণে এই বাজার উঠবে না।
রবীন্দ্রসংগীত, নজরুলগীতি, লোকগান, ফোকগান, যেখানে আমি-তুমি এসব থাকবে, সেসব গান হবে। কিংবা প্রতিবাদের জন্য আমরা সেই মুক্তিযুদ্ধের সময়ের গান গাইবো। অথচ আজকেও আমাদের একটা মুক্তিযুদ্ধ হচ্ছে। মানুষের স্বাধীনতার যুদ্ধ এখনও আমরা করি। আমরা যেন নির্ভয়ে কথা বলতে পারি, আমাদের সাধারণ মানুষ যেন একবেলা অন্তত এক টুকরা মাছ খেতে পারে। এটা সংগ্রাম না? এই সংগ্রাম নিয়ে যদি আমি গান গাই, আপনি কি সেটা খুব আনন্দে প্রচার করবেন? না। 

বাংলা ট্রিবিউন: এই ধরণের গান করতে গিয়ে কোনও সমস্যা পড়তে হয়েছে? 

সায়ান: হ্যাঁ, দুটি প্রধান রাজনৈতিক দলের পক্ষ থেকেই টমেটো খেয়েছি, এটা আমার জন্য গর্বের বিষয়। গান গাওয়ার পর এটা আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি যে, দুই দলই আমার দিকে স্যান্ডেল মেরেছে, টমেটো মেরেছে। কারণ দুই দলই মনে করেছে ওদেরকে আমি আক্রমণ করেছি। এটা আমার জন্য বড় প্রাপ্তি। কেননা অসুবিধা করার মতো গান। আমি যদি জুতা না খেলাম, তাহলে আমার প্রাপ্তিটা কী? যে রাজনীতি করে, সে যদি এক-আধবার জেলে না যায়, তাহলে তার রাজনীতি করা বৃথা। আমি যদি প্রতিবাদের গান গাই, সেটাতে কেউ বিরক্ত হলো না, তাহলে এটা কী প্রতিবাদ হলো? 

বাংলা ট্রিবিউন: চলমান সমাজ, রাজনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি কিংবা দেশ নিয়ে আপনার ভাবনার বিষয়গুলো জানতে চাই।

সায়ান: সমাজ নিয়ে আমি আশাবাদী, কারণ সমাজের বড় অংশ হলো সাধারণ মানুষ। আর রাজনীতি পাল্টাতেই হবে। যে রাজনীতিটা এখন খুবই প্রকট, সেটার মধ্যে ভারসাম্য নাই। আমি মনে করি, দেশে রাজনীতি নেই, শাসন আছে।    

বাংলা ট্রিবিউন: দেশের বেশিরভাগ ‘তারকা’ সামাজিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে দর্শকের আসনে বসে থাকেন। তাদের কর্মে তো নয়ই, বক্তব্যেও পাওয়া যায় না। কেন এমনটা চলছে বলে মনে করেন। অথবা আদৌ কি তারকাদের এসব বিষয়ে কথা বলবার প্রয়োজন মনে করেন? 

সায়ান: প্রত্যেকটা শিল্পীর নিজস্ব রুচি আছে। সে ঝামেলায় জড়াতে চায় না, সে সাধারণ জীবনযাপন করে, আমি সেই মানুষটাকে আঘাত করতে চাই না। আবার এটাও বলবো, দেশের প্রতি তার দায়িত্ববোধও কিছুটা কম। কারণ আমি যদি দেশের মালিক হই, যে আমার দেশের ক্ষতি করবে, আমি তো তাকে একটা লাথি মারার চেষ্টা করবো। আমি শুধু ২৬ মার্চ গিয়ে গান গেয়ে উদযাপন করবো, মাথায় পতাকা বাঁধবো, কিন্তু দেশের বড় বড় বিষয়ে আমি চুপ থাকবো, সেটাকে আমি সমর্থন করি না। কিন্তু অন্য কোনও মানুষের যে রুচি, তার যে চুপ থাকার অধিকার আছে, এটাকে আমি স্বীকার করি। তাকে বাধ্য করা যাবে না। এ কারণে শিল্পী হিসেবে সে ছোট হয়ে গেল না। কিন্তু নাগরিক হিসেবে তার দায়িত্ব পালন করলো না। 

ফারজানা ওয়াহিদ সায়ান বাংলা ট্রিবিউন: যে মানুষ ‘এখানেই সুখ ছিলো একদিন’-এর মতো গান সৃষ্টি করেন, তিনি কেন একাকীত্ব বেছে নিলেন?

সায়ান: কে বললো আমি একাকীত্ব বেছে নিয়েছি? প্রথম কথা হলো, আমি নিজের খুব ভালো বন্ধু। দ্বিতীয় কথা হচ্ছে, আমার ভালোবাসার মানুষও আছে। আর তৃতীয় কথা হচ্ছে, সারা পৃথিবী আমাকে সঙ্গ দেয়। আমার ভালোবাসার জায়গাটা আমি প্রচার করে বেড়াবো না, সেটা আমার ব্যক্তিগত। বিয়ে নিয়ে যদি জানতে চান, তাহলে বলবো, বিয়ে করবো না। একবার করেছি। আবার আশি বছর বয়সে গিয়ে করতেও পারি। সেটা পরের ব্যাপার। আমি খুব ভালোবাসার পক্ষে। 

বাংলা ট্রিবিউন: আপনি দুই সংগীত তারকা ফেরদৌস ওয়াহিদ আর হাবিব ওয়াহিদ পরিবারের আরেকজন উজ্জ্বল সদস্য। যেটা অনেকেই হয় তো জানে না। আপনাদের সম্পর্ক আর সংগীত-সংযোগ নিয়ে জানতে চাই। আর তাদের মতো না করে গানের আলাদা ধরন বেছে নিলেন কেন? 

সায়ান: সবার সঙ্গেই আমার যোগাযোগ খুব ভালো। পরিবার তো। আর গানের জায়গায় প্রত্যেকেই প্রত্যেককে ইন্সপায়ার করে। কিন্তু এই পরিবারের অংশ হলেও আমি বড় হয়েছি একক মায়ের হাতে। তার কাছে আমি জীবনের যে বলয় দেখেছি, সেটা এই পরিবারে থাকলে দেখতে পেতাম না। এজন্য আমি খুবই কৃতজ্ঞ যে, আমি এরকমভাবে বেড়ে উঠতে পেরেছিলাম বলে আমার গানের ভেতরে এই ছায়াগুলি এসেছে। তা না হলে হয়ত আমি অন্যরকম গান করতাম।  

বাংলা ট্রিবিউন: একেবারে শেষ জিজ্ঞাসা। আপনার বয়কাট চুল, খানিক আলাদা পোশাক- এটা নিয়ে কিছু বলবেন?

সায়ান: আমি আমার স্বাধীনতার ভক্ত। একটা বয়সের পর থেকে কোনও কাজ শুধুমাত্র সবাই করে বলে আমি করি না। একুশ বছর বয়স পর্যন্ত মা যেটা বলতো, মুরব্বিরা যেটা বলতো, সেটা করতাম। যেটা আমি চাই না, আমার ভালো লাগে না, সেটা শুধুমাত্র আরেকটা মানুষ খুশি হবে বলে করবো, তার পক্ষে নই। তার মানে এই না যে, আমি রঙ বিমুখ, আমি কিন্তু অন্য রঙ পরি, বিশেষ দিনে। পোশাক আমি পরবো, যেটাতে আমাকে সহজ মনে হবে। এই সহজের মধ্যেই থাকবে আমার শালীনতাবোধ, ভদ্রতাবোধ। আমি যদি আপনার চোখে অশালীন একটা পোশাক পরে সহজে থাকতে পারি, সেটা আমার কাছে আমার পোশাক। স্বাধীনতা এবং আনন্দ দুইটাই আমার লাগবে। বয়কাট চুল বলেন আর গার্লকাট চুল বলেন, আমার যেটা ভালো লাগবে, আমি ওটাই চাই। সায়ানের মুখোমুখি প্রতিবেদক কামরুল ইসলাম

ছবি: সাজ্জাদ হোসেন/বাংলা ট্রিবিউন

/এমএম/
সম্পর্কিত
কালো মানুষের জন্য সায়ানের গান (ভিডিও)
কালো মানুষের জন্য সায়ানের গান (ভিডিও)
ভোটাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার দাবিতে সাংস্কৃতিক সমাবেশ
ভোটাধিকার ও মত প্রকাশের স্বাধীনতার দাবিতে সাংস্কৃতিক সমাবেশ
প্রথম একক শো: গল্প-গানে মুগ্ধতা বিলি করলেন সায়ান
প্রথম একক শো: গল্প-গানে মুগ্ধতা বিলি করলেন সায়ান
বুকের ভেতরটা নাড়িয়ে দিলেন সায়ান: জয়া আহসান
বুকের ভেতরটা নাড়িয়ে দিলেন সায়ান: জয়া আহসান
বিনোদন বিভাগের সর্বশেষ
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
কানের সমান্তরাল বিভাগে ঢাকার দুই নির্মাতার স্বল্পদৈর্ঘ্য
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
এআই প্রযুক্তিতে প্রথম বাংলা গানের অ্যালবাম
১৬ বছর পর জেনস সুমনের ফেরা (ভিডিও)
১৬ বছর পর জেনস সুমনের ফেরা (ভিডিও)
মা হারালেন বেবী নাজনীন
মা হারালেন বেবী নাজনীন
ওমর: ‘নায়িকাবিহীন’ এক থ্রিলার
সিনেমা সমালোচনাওমর: ‘নায়িকাবিহীন’ এক থ্রিলার