X
সোমবার, ২৯ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১

‘ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সতর্ক হওয়া উচিত’

বিদেশ ডেস্ক
১৯ আগস্ট ২০১৯, ০৮:৫৯আপডেট : ১৯ আগস্ট ২০১৯, ২১:৩৯

ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সতর্ক হওয়া উচিত বলে মন্তব্য করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। কেননা, এটি কোনোভাবেই আঞ্চলিক বিষয় নয়, বরং একটি সামগ্রিক সমস্যা। রবিবার টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে তিনি এমন মন্তব্য করেন। ‘ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সতর্ক হওয়া উচিত’
আরেক টুইটে ভারতকে অ্যাডলফ হিটলারের নাৎসি জার্মানির সঙ্গে তুলনা করেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। হিটলারের মতাদর্শের সঙ্গে নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন ভারতের ক্ষমতাসীন দল বিজেপির আদর্শের মিল রয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভারতের পারমাণবিক বোমার নিয়ন্ত্রণ ফ্যাসিবাদী ও বর্ণবাদী হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদী মোদি সরকারের হাতে। ফলে দেশটির পারমাণবিক অস্ত্রাগারগুলোর নিরাপত্তা ও সুরক্ষার বিষয়টি বিশ্বকে অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হবে।

ইমরান খান বলেন, নাৎসিরা যেভাবে জার্মানির দখল নিয়েছে একইভাবে ভারতের দখল নিয়েছে একটি ফ্যাসিবাদী, বর্ণবাদী হিন্দু শ্রেষ্ঠত্ববাদী দর্শন। এই দর্শন দুই সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে কাশ্মিরের ৯০ লাখ মানুষকে অবরুদ্ধ অবস্থার হুমকিতে ফেলেছে। এ ঘটনায় সমগ্র বিশ্বকে সজাগ হওয়া উচিত। সেখানে জাতিসংঘের পর্যবেক্ষক পাঠানো প্রয়োজন।

তিনি বলেন, ভারতের হুমকি কাশ্মির ছাড়িয়ে পাকিস্তান পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে। ভারতীয় মুসলিমরাও এ হুমকিতে রয়েছে। যে কেউ গুগলে সার্চ দিয়ে হিটলারের নাৎসি মতবাদ ও জাতিগত নিধনযজ্ঞের সঙ্গে আরএসএস-বিজেপির প্রতিষ্ঠাতাদের গণহত্যার দর্শনের মিল খুঁজে পাবেন।

পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইতোমধ্যে ভারতের ৪০ লাখ মুসলিম নাগরিকত্ব হারানো ও বন্দিশিবিরের মুখোমুখি হওয়ার পরিস্থিতিতে রয়েছেন। বিশ্বকে অবশ্যই এই ঘৃণা ও গণহত্যার দানব থেকে সজাগ থাকতে হবে। আরএসএস গুণ্ডাদের তাণ্ডব থেকে সতর্ক থাকতে হবে। এদের থামাতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখনই উদ্যোগী না হলে এই মতাদর্শ আরও ছড়িয়ে পড়বে।

২০১৯ সালের ৫ আগস্ট ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের স্বায়ত্তশাসন বাতিল করে অঞ্চলটিকে দুই টুকরো করে দেয় দিল্লি। ওই দিন সকাল থেকে কার্যত অচলাবস্থার মধ্যে নিমজ্জিত হয় দুনিয়ার ভূস্বর্গ খ্যাত কাশ্মির উপত্যকা। জম্মু-কাশ্মিরের সাবেক মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির মেয়ে ইলতিজা জাভেদের ভাষায়, ‘বাকি দেশ যখন ভারতের স্বাধীনতা দিবস উদযাপন করছে তখন কাশ্মিরিরা খাঁচার প্রাণীর মতো বন্দি রয়েছে। বঞ্চিত হচ্ছে মৌলিক মানবাধিকার থেকে।’

আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের হিসাব অনুযায়ী, ভারত অধিকৃত জম্মু-কাশ্মিরে গত ৫ আগস্ট থেকে ১৮ আগস্ট পর্যন্ত অন্তত চার হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের বেশিরভাগকেই কাশ্মিরের বাইরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। কারণ সেখানকার কারাগারগুলোতে বন্দি ধারণের আর কোনও জায়গা নেই। উপত্যকার রাস্তায় রাস্তায় নজরদারি চালাচ্ছে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনীর হাজার হাজার সদস্য। ইন্টারনেট-মোবাইল পরিষেবায় আরোপ করা হয়েছে বিধিনিষেধ। নাগরিকদের সাধারণ চলাচলের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ৪০ লাখেরও বেশি ভারতীয়, যাদের বেশিরভাগই মুসলমান; ভারত সরকার তাদের দেশটিতে অবৈধ অভিবাসী ঘোষণা করতে পারে। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার কট্টর হিন্দু জাতীয়তাবাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে এমন পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। মিয়ানমার ও বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী দরিদ্র আসাম রাজ্যে অভিবাসীদের চিহ্নিত করার মধ্য দিয়ে এই এজেন্ডা বাস্তবায়ন শুরু হচ্ছে। যেসব বাসিন্দার নাগরিকত্ব যাচাই করা হচ্ছে তাদের অনেকেরই জন্ম ভারতে এবং এতোদিন ধরে তারা নির্বাচনে ভোট দেওয়াসহ সব ধরনের নাগরিক অধিকার ভোগ করে আসছিলেন। নাগরিক তালিকা নিয়ে বিরোধ মীমাংসা করতে রাজ্য সরকার ফরেনার্স ট্রাইব্যুনালের সংখ্যা বৃদ্ধি এবং নতুন বন্দিশিবির গড়ে তোলার পরিকল্পনা করছে মোদি সরকার। কথিত বিদেশি নাগরিক বা অবৈধ অভিবাসী সন্দেহে কয়েক হাজার মানুষকে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক মুসলমান সদস্যও রয়েছেন। স্থানীয় অ্যাক্টিভিস্ট ও আইনজীবীরা বলছেন, নাগরিক তালিকায় স্থান না পাওয়ার বেদনায় এবং কারাগারে যাওয়ার আতঙ্কে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন অনেকে। তবে মোদির নেতৃত্বাধীন বিজেপি সরকার এই প্রক্রিয়া থেকে পিছু হটছে না।

মোদির সমালোচকরা বলছেন, আসাম ও কাশ্মিরের ঘটনা প্রমাণ করে বিজেপি সরকার কট্টর হিন্দুত্ববাদী এজেন্ডা বাস্তবায়নে শক্তি প্রয়োগের নীতি অবলম্বন করছে। তারা ভারতকে হিন্দু রাষ্ট্র হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চায়। আসাম ও কাশ্মির ইঙ্গিত দেয়, আগামী দিনে ভারতের জনগণকে কোন পথে নিয়ে যেতে চাইছেন মোদি।

বিশ্লেষকরা বলছেন, নরেন্দ্র মোদি একটি বিপজ্জনক খেলা শুরু করছেন। তিনি ভারতের শতাব্দী প্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে ও সামাজিক বিচ্ছেদ তৈরি করছেন। মোদির রাজনৈতিক শেকড় কট্টরপন্থী হিন্দুত্ববাদী সংগঠনের গাঁথা। আরএসএস সবকিছুর ঊর্ধ্বে উগ্র হিন্দুত্ববাদকে স্থান দেয়। তাদের এই দৃষ্টিভঙ্গির ফলে হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ ভারতে একাধিক মুসলিমবিরোধী দাঙ্গার ঘটনা ঘটেছে।

এক সময়ের সরকারি কর্মকর্তা থেকে মানবাধিকার কর্মীতে পরিণত হওয়া হার্শ মান্দার বলেন, আসাম ও কাশ্মিরে যা ঘটছে তা ভারত, ভারতের স্বাধীনতাযুদ্ধ ও সংবিধানের ওপর হামলা। দেশের সবাই সমান−এমন ধারণার ওপর আঘাত। মুসলমানরা এখন শত্রু। সরকারের এমন আচরণ কার্যত ভারতীয় সংবিধানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। সূত্র: টুইটার, নিউজ ১৮, নিউইয়র্ক টাইমস।

/এমপি/এমএমজে/
সম্পর্কিত
পাচার হওয়া বোনকে নিতে এসে কলকাতায় অসহায় দশায় চট্টগ্রামের তরুণ
আম আদমি পার্টির সাথে জোট, দিল্লি কংগ্রেস প্রধানের পদত্যাগ
ভারতের মণিপুরে আবারও জাতিগত সহিংসতা
সর্বশেষ খবর
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রার নতুন রেকর্ড
মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে জাতিসংঘে সমালোচনার মুখে তালেবান
মানবাধিকার রেকর্ড নিয়ে জাতিসংঘে সমালোচনার মুখে তালেবান
লক্ষ্মীপুরের পাঁচ ইউপির তিনটিতে নতুন মুখ, দুটিতে পুরোনোতে আস্থা
লক্ষ্মীপুরের পাঁচ ইউপির তিনটিতে নতুন মুখ, দুটিতে পুরোনোতে আস্থা
স্কুল-মাদ্রাসা ২ মে পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হাইকোর্টের নির্দেশ
স্কুল-মাদ্রাসা ২ মে পর্যন্ত বন্ধ রাখতে হাইকোর্টের নির্দেশ
সর্বাধিক পঠিত
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
থেমে যেতে পারে ব্যাংকের একীভূত প্রক্রিয়া
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
ভেসে আসা ‘টর্পেডো’ উদ্ধারে কাজ করছে নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ
প্রাথমিক বাদে সোমবার ৫ জেলার সব স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা বন্ধ