ভারতের দুটি জনপ্রিয় মসলা কোম্পানি—এভারেস্ট ও এমডিএইচ-এর নির্দিষ্ট কয়েকটি প্রোডাক্ট হংকং ও সিঙ্গাপুরে নিষিদ্ধ ঘোষিত হওয়ার পর ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বিষয়টি সামলানোর জন্য তড়িঘড়ি ব্যবস্থা নিচ্ছে। এই দুটি কোম্পানির বহু মসলা বাংলাদেশের বাজারেও ব্যাপকভাবে বিক্রি হয়। এ ব্যাপারে বাংলাদেশে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয় সেদিকেও সতর্ক নজর রাখা হচ্ছে।
এমডিএইচ-এর মাদ্রাজ কারি পাউডার, সম্বার মসলা ও কারি পাউডার মসলা এবং এভারেস্ট ফুড প্রোডাক্ট লিমিটেডের ফিশ কারি মসলা (মাছের ঝোল মসলা)– মোট এই চারটি প্রোডাক্টকে ঘিরে তৈরি হয়েছে এই সমস্যা।
হংকংয়ের যে সংস্থাটি খাদ্যের গুণগত মান পরীক্ষা করে ছাড়পত্র দেয়, সেই সেন্টার ফর ফুড সেফটি (সিএফএস) গত ৫ এপ্রিল এক বিজ্ঞপ্তিতে জানিয়েছে—এই প্রোডাক্টগুলোতে সহনীয় মাত্রার চেয়ে অনেক বেশি পরিমাণে ইথিলিন অক্সাইড পাওয়া গেছে। এটি একটি বিপজ্জনক রাসায়নিক, যা ক্যানসারের কারণ হতে পারে। এটি কোনও কোনও কীটনাশকেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
এই বিজ্ঞপ্তিতে হংকংয়ের সব বিক্রেতাকে এই মসলাগুলোর বিক্রি বন্ধ করতে এবং দোকানের তাক থেকে সরিয়ে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এই নির্দেশের তথ্য সম্প্রতি সামনে এসেছে। এরপর হংকংয়ের বাজার থেকে এই প্রোডাক্টগুলো প্রায় রাতারাতি উধাও হয়ে গেছে।
এর আগে গত ১৮ এপ্রিল সিঙ্গাপুর ফুড এজেন্সিও (এসএফএ) এক নির্দেশনামায় এভারেস্টের ফিশ কারি মসলা সে দেশের বাজার থেকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিল। তারা জানিয়েছিল, সিঙ্গাপুরে এই প্রোডাক্টটি আমদানি করে ‘স্পাইস মুথাইয়া অ্যান্ড সন প্রাইভেট লিমিটেড’ নামে যে সংস্থাটি, তাদেরও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এটির আমদানি ও বিক্রি বন্ধ করে দিতে।
সিঙ্গাপুরের ক্ষেত্রেও ভারতের ওই মসলাটি নিষিদ্ধ করার কারণ ছিল একই, সহনীয় মাত্রার চেয়ে বেশি ইথিলিন অক্সাইড পাওয়া। এই রাসায়নিকটিকে ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার একটি ‘গ্রুপ ১ কার্সিনোজেন’ বলে চিহ্নিত করেছে। অর্থাৎ যা থেকে ক্যানসার হওয়ার শঙ্কা খুবই বেশি।
এভারেস্ট ও এমডিএইচ দুটি কোম্পানিই বাংলাদেশে বহুল প্রচলিত ও বেশ সুপরিচিত। তাদের নানা ধরনের মসলা প্রোডাক্ট বাংলাদেশের বিভিন্ন দোকানে ও অনলাইন গ্রোসারিতে প্রচুর বিক্রি হয়। এভারেস্ট মসলার বিজ্ঞাপন করেন অমিতাভ বচ্চন ও শাহরুখ খানের মতো মেগা তারকারা। কাজেই ভারতের গণ্ডি ছাড়িয়ে বাংলাদেশ, মধ্যপ্রাচ্য বা ইউরোপ-আমেরিকাতেও এটি খুবই বিখ্যাত ব্র্যান্ড।
বিশেষ করে যারা ধোসা-ইডলি-উত্তাপমের মতো দক্ষিণ ভারতীয় খাবার বানান, তাদের কাছে এমডিএইচের সম্বার মসলা বা মাদ্রাজ কারি পাউডারের প্যাকেট খুবই জনপ্রিয়। আর ‘মাছে-ভাতে’ বাঙালির কাছে এভারেস্টের ‘ফিশ কারি’ বা মাছের ঝোল মসলার যে আলাদা কদর থাকবে, তা তো বলাই বাহুল্য।
তবে এভারেস্ট বা এমডিএইচ—দুটি কোম্পানির কোনোটিই এ নিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে কোনও প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
ভারতের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানাচ্ছে, তাদের দেশের বিভিন্ন কোম্পানির মসলা শুধু হংকং বা সিঙ্গাপুরে নয়, বিশ্বের অন্তত ৯০টি দেশে রফতানি হয়। তার মধ্যে মাত্র দুটো জায়গায় কিছু সমস্যা হয়েছে। আশা করা হচ্ছে শিগগিরই এটার সমাধান করা যাবে।
দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেসব কারখানায় এসব মসলা প্যাকেটজাত করা হয়, তার সব ইউনিট থেকে ভারত সরকার সোমবার (২২ এপ্রিল) দেশের ফুড কমিশনারদের নমুনা সংগ্রহের নির্দেশ দিয়েছে। এর মধ্যে শুধু এমডিএইচ বা এভারেস্ট নয়, সব মসলা কোম্পানিকেই সরকারি পরীক্ষার আওতায় আনা হচ্ছে।
আগামী তিন-চার দিনের মধ্যে এসব নমুনা সংগ্রহ শেষ হবে এবং তারপর ২০ দিনের ভেতরেই সরকারি ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা চালানো হবে বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে।
মসলা ভারতের একটি অন্যতম প্রধান ও খুব গুরুত্বপূর্ণ রফতানি পণ্য। হংকং ও সিঙ্গাপুর যে ধরনের ব্যবস্থা নিয়েছে, তারপর যাতে ভারতকে আর কোনও বাজার হারাতে না হয়, তার জন্য দৃশ্যতই সরকার এখন তৎপরতা শুরু করেছে।