মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ফ্যাক্ট শিট থেকে তাইওয়ানের স্বাধীনতায় সমর্থন না দেওয়া সংক্রান্ত শব্দগুচ্ছ বাদ দেওয়া হয়েছে। এর প্রেক্ষাপটে ব্রিটিশ বার্তাসংস্থা রয়টার্স সোমবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে তাইওয়ানের ইতিহাস এবং এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়ে তুলে ধরেছে।
ফরমোজা থেকে তাইওয়ান
একসময় ফরমোজা নামে পরিচিত দ্বীপটিতে হাজার বছর ধরে আদিবাদী গোষ্ঠী বাস করত। সপ্তদশ শতাব্দীতে অল্প সময়ের জন্য এখানে ডাচ ও স্প্যানিশরা উপনিবেশ গড়ে তোলে।
১৬৮৪ সালে ফরমোজাকে দখল করে ফুজিয়ান প্রদেশের অন্তর্ভুক্ত করে চিং সাম্রাজ্য। পরে ১৮৮৫ সালে এটি চীনের পৃথক একটি প্রদেশে পরিণত হয়। জাপানের সঙ্গে যুদ্ধে চিং সাম্রাজ্যের পরাজয়ের পর এটি প্রায় পাঁচ দশকের জন্য জাপানের উপনিবেশে পরিণত হয়।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটি আবার চীনের দখলে যায়। ১৯৪৯ সালে মাও সে তুংয়ের কাছে ক্ষমতা হারায় তৎকালীন শাসক গোষ্ঠী চিয়াং কাই শেকের দল কৌমিংটান। তারা পরে মূল ভূখণ্ড ছেড়ে তাইওয়ানে আশ্রয় নিয়ে একে রিপাবলিক অব চায়না নামে ঘোষণা করে। এদিকে, মাও সে তুংয়ের কমুন্যিস্ট পার্টি বর্তমান চীনের আনুষ্ঠানিক নামকরণ করে পিপলস রিপাবলিক অব চায়না। তাদের দাবি, তারাই একমাত্র বৈধ রাষ্ট্র এবং তাইওয়ান তাদেরই অংশ। এদিকে, ক্ষমতাচ্যূত চিয়াং কাই শেকের দলও দাবি করে, তাইওয়ানসহ মূল চীন ভূখণ্ডের একমাত্র বৈধ সরকার তারাই। এরপর থেকেই এই দ্বীপ নিয়ে দ্বন্দ্ব চলমান আছে।
তাইওয়ানের কি আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আছে?
প্রতিষ্ঠার পর থেকে তাইপে সরকার নিজেদের একমাত্র বৈধ চীনা সরকার বলে দাবি করে আসলেও ১৯৭১ সালে বেইজিং সরকারকে খুশি করতে তাইওয়ানকে জাতিসংঘ থেকে বহিষ্কার করা হয়। বর্তমানে বেলিজ ও টুভ্যালুর মতো ছোট ও দরিদ্র দেশগুলোই কেবল তাদের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও তাদের অধিকাংশ মিত্রদেশই রিপাবলিক অব চায়নার পাসপোর্ট অনুমোদন করে এবং একে অপরের রাজধানীতে কার্যত দূতাবাস (ডি ফ্যাক্টো অ্যাম্বাসি) স্থাপন করেছে। তবে ১৯৭৯ সাল থেকেই তাইপের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিন্ন করেছে ওয়াশিংটন।
তাইওয়ান কি তবে স্বাধীন দেশ?
তাইওয়ানের আছে নিজস্ব ভূখণ্ড, সেনাবাহিনী, মুদ্রাব্যবস্থা এবং পাসপোর্ট। তারা নিজেদের শাসক নির্বাচন করে থাকে। অধিকাংশ দেশ তাদের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি না দিলেও কার্যত স্বাধীনতা (ডি ফ্যাক্টো ইনডিপেনডেন্স) উপভোগ করে থাকে তাইওয়ানবাসীরা।
তাইপে সরকারের দাবি, রিপাবলিক অব চায়না (তাইওয়ানের নিজস্ব সাংবিধানিক নাম) একটি সার্বভৌম রাষ্ট্র। তাদের নেতা নির্বাচন বা শাসন পদ্ধতিতে নাক গলানোর কোনও এখতিয়ার বেইজিং সরকারের নেই।
তাইওয়ান কি চাইলেই স্বাধীনতা ঘোষণা করতে পারবে?
এখানে কিছু জটিলতা আছে। প্রেসিডেন্ট লাই ছিং-তের মুখের কথাতেই স্বাধীনতার ঘোষণা হবে না। স্বাধীনতা ঘোষণা করতে প্রথমে প্রয়োজন হবে সংবিধান সংশোধনের জন্য পার্লামেন্টে প্রস্তাব উত্থাপন। এর সঙ্গে একটি গণভোটেরও আয়োজন করতে হবে।
সংশোধন প্রস্তাব অনুমোদিত হতে অন্তত ৭৫ শতাংশ আইনপ্রণেতার সমর্থন প্রয়োজন হবে।
২০১৬ সাল থেকে ক্ষমতায় থাকা ডেমোক্র্যাটিক প্রগ্রেসিভ পার্টি (ডিপিপি) এখন পর্যন্ত সংবিধান সংশোধনের কোনও প্রচেষ্টা চালায় নি। আর প্রধান বিরোধীদল কুওমিনটাং (কেএমটি) তো এরকম কোনও পদক্ষেপ নেওয়ায় ঘোরতর আপত্তি জানিয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে তাইওয়ানের সম্ভাব্য স্বাধীনতা ঘোষণার কথা মাথায় রেখে পার্লামেন্টে একটি আইন পাস করে বেইজিং। এই আইন অনুযায়ী, ‘বিদ্রোহ’ করলে বা ‘একত্রীকরণের’ সম্ভাবনা উবে গেলে সামরিক হস্তক্ষেপে বেইজিং সরকারের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে।