মার্কিন মিত্র ইসরায়েল এবং তাদের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাত নিয়ে বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছেন মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও। এছাড়া, অস্ট্রেলীয় পররাষ্ট্রমন্ত্রী পেনি ওয়াং, ফরাসি পররাষ্ট্রমন্ত্রী জ্যঁ নোয়েল ব্যারট এবং ইতালি পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্তোনিও তাজানির সঙ্গে পৃথকভাবে ফোনালাপ করেছেন তিনি।
মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে এসব বৈঠকের বিষয়ে জানানো হয়, আলোচনায় রুবিওর সঙ্গে অন্য শীর্ষ কর্মকর্তারা সহমত প্রকাশ করেছেন যে, ইরান কখনই পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি বা অর্জন করতে পারবে না।
আলোচনার পর সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে ল্যামি জানিয়েছেন, মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি এখন খুবই সংকটাপন্ন এবং কূটনৈতিক উপায়ে এই সংকট পার করতে হাতে কেবল দু সপ্তাহ রয়েছে।
এই দু সপ্তাহ সময়সীমা বেঁধে দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। গত কয়েকদিন ধরে পুরো বিশ্বকে নিজের পরিকল্পনা নিয়ে রহস্যের মধ্যে রেখেছেন তিনি। এরমধ্যে, ইরানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ বা তাদের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনিকে হত্যার প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়েছেন তিনি।
তবে, গতকাল হুট করে বলে বসেন, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র জড়াবে কিনা, সেটা আগামী দু সপ্তাহে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। অর্থাৎ, কূটনৈতিক উপায়ে সমাধানে আসার জন্য ইরানের হাতে এই সময়টা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়, শুক্রবার সকালে নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক ডেকেছেন ট্রাম্প।
গত শুক্রবার ইরানের পারমাণবিক অবকাঠামো ও সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে ইসরায়েলি বিমান হামলার মধ্য দিয়ে চলমান সংঘাতের সূচনা। ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত অন্তত ৬৩৯ জন ইরানি নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে হিউম্যান রাইটস অ্যাক্টিভিস্টস নিউজ এজেন্সি। তেল আবিবের অভিযানে তেহরানের শীর্ষ সামরিক-বেসামরিক একাধিক কর্মকর্তা নিহত হয়েছেন।
এদিকে, তেল আবিবের সামরিক লক্ষ্যবস্তুতে পাল্টা হামলা চালিয়েছে ইরান। তবে সামরিক ঘাঁটির নিকটবর্তী কয়েকটি হাসপাতাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পর তেহরান দাবি করছে, এটা অনিচ্ছাকৃত আর ইসরায়েলের অভিযোগ, তেহরান ইচ্ছাকৃতভাবেই বেসামরিকদের ওপর হামলা চালিয়েছে।
এখন পর্যন্ত ইরানি হামলায় দুই ডজনের বেশি বেসামরিক ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে তেল আবিব। অবশ্য তাদের অভিযোগ স্বাধীনভাবে যাচাই করতে পারেনি রয়টার্স।
২০২৩ সালের অক্টোবর থেকে গাজা যুদ্ধ নিয়ে উত্তপ্ত মধ্যপ্রাচ্যকে এই সংঘাত আরও অস্থিতিশীল করে তোলে। তবে, গত এক সপ্তাহে ইরান-ইসরায়েলের কেউই সামান্যতম পিছু হটারও আগ্রহ প্রকাশ করেনি। এরমধ্যেই ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ব্রিটেন, ফ্রান্স এবং জার্মানির পররাষ্ট্র বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তারা আজ (২০ জুন) জেনেভায় ইরানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করতে যাচ্ছেন।
ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি ঠেকাতেই হামলা চালানো হয়েছে বলে দাবি করেছে ইসরায়েল। তবে, এর প্রতিক্রিয়ায় বরাবরই ইরানের দাবি, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচির পেছনে কোনও সামরিক উদ্দেশ্য নেই।
উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যে একমাত্র ইসরায়েলের কাছেই পারমাণবিক অস্ত্র আছে বলে ধারণা করা হয়। অবশ্য, এই দাবি কখনও স্বীকার করেনি তেল আবিব।
এদিকে, ইসরায়েল নিউক্লিয়ার নন প্রলিফারেশন ট্রিটি বা এনপিটিতে স্বাক্ষর না করলেও ইরান এই চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী।
এনপিটি হচ্ছে এমন একটি চুক্তি, যাতে স্বাক্ষরকারীরা পারমাণবিক অস্ত্র অর্জন হতে বিরত থাকতে সম্মত হয়।
তথ্যসূত্র: রয়টার্স