লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে প্রভাবশালী মিলিশিয়া নেতা আবদেল ঘানি আল-কিকলির হত্যাকাণ্ডের পর সৃষ্ট সংঘর্ষে কমপক্ষে ছয়জন নিহত হয়েছেন। সোমবার রাতেমানবাধিকার লঙ্ঘন ও শরণার্থীদের নিপীড়নের অভিযোগ থাকা এই নেতা নিহত হন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান এ খবর জানিয়েছে।
ত্রিপোলির ঘনবসতিপূর্ণ আবু সালিম এলাকাভিত্তিক শক্তিশালী সাপোর্ট ফোর্স অ্যাপারেটাস (এসএসএ)-এর প্রধান কিকলি। তিনি ‘ঘেনিওয়া’ নামে বেশি পরিচিত। লিবিয়ায় সেনাবাহিনীর ৪৪৪তম কমব্যাট ব্রিগেডের সদর দফতরে কিকলি নিহত হন বলে আল-ওয়াসাত টেলিভিশনকে জানিয়েছেন দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর একজন সূত্র।
এ ঘটনার পরই শহরজুড়ে গুলির শব্দ ছড়িয়ে পড়ে। আবু সালিম ও সালাহ এদ্দিন এলাকায় রাতভর গোলাগুলির শব্দে ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন নগরবাসী। লিবিয়ার জরুরি চিকিৎসা ও সহায়তা কেন্দ্র জানিয়েছে, সংঘর্ষের স্থানগুলো থেকে ছয়টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে।
দেশটির জাতীয় ঐক্য সরকারের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নাগরিকদের ঘরে থাকার আহ্বান জানালে রাস্তায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। গাড়িচালকরা দ্রুত গতিতে চলতে থাকেন, শহরের বিভিন্ন রাস্তায় শোনা যায় হর্ণের শব্দ।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা রয়টার্সকে বলেন, আমি ভারী অস্ত্রের গুলির শব্দ শুনেছি, আকাশে লাল আলোও দেখেছি।
জাতিসংঘের লিবিয়া মিশন সব পক্ষকে যুদ্ধ বন্ধ ও শান্তি ফিরিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে সতর্ক করে বলেছে, নাগরিক ও বেসামরিক স্থাপনার ওপর হামলা যুদ্ধাপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ও ইউরোপীয় মানবাধিকার সংস্থা কিকলির নেতৃত্বাধীন এসএসএকে লিবিয়ার আটক কেন্দ্রগুলোতে সহিংসতার মূল হোতা বলে চিহ্নিত করেছে। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, কিকলি ছিলেন লিবিয়ার ক্ষমতার ভারসাম্যের কেন্দ্রীয় ব্যক্তি, যিনি দুর্নীতির মাধ্যমে মিলিশিয়াদের অর্থায়ন করতেন।
উল্লেখ্য, লিবিয়া ইউরোপগামী শরণার্থীদের জন্য অন্যতম প্রধান ট্রানজিট পয়েন্ট। এখানে সাব-সাহারান আফ্রিকা থেকে আসা হাজার হাজার মানুষ মানব পাচারকারী ও মিলিশিয়াদের দয়ার ওপর নির্ভরশীল। তাদের অনেকেই বদ্ধ কেন্দ্রে অমানবিক অবস্থায় আটক রয়েছেন।
২০১১ সালে ন্যাটো-সমর্থিত আন্দোলনের মাধ্যমে মোয়াম্মার গাদ্দাফির পতনের পর থেকে লিবিয়ায় স্থিতিশীলতা ফিরেনি। ২০১৪ সাল থেকে দেশটি পূর্ব-পশ্চিমে বিভক্ত। ২০২০ সালের অস্ত্রবিরতির পর বড় সংঘর্ষ বন্ধ থাকলেও রাজনৈতিক সমাধানে অগ্রগতি হয়নি, বরং মাঝেমধ্যেই নতুন করে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ছে বিভিন্ন পক্ষ।