সরকারবিরোধী বিক্ষোভ চলাকালে কেনিয়াজুড়ে পুলিশের গুলিতে অন্তত ১১ জন নিহত হয়েছে। সোমবার (৭ জুলাই) এক বিবৃতিতে পুলিশ জানায়, বিক্ষোভের সময় তাদের অন্তত ৫২ সদস্য আহত হয়েছে। কেনিয়ার গণতান্ত্রিক আন্দোলন ‘সাবা সাবা’–এর ৩৫তম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে সোমবার এ বিক্ষোভের আয়োজন করা হয়েছিল। তবে এবার বিক্ষোভটি কেনিয়ার বর্তমান প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর পদত্যাগের দাবিতে বড় আকার ধারণ করে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
রাজধানী নাইরোবিতে শত শত মানুষ বিক্ষোভে অংশ নেয়। এ সময় পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে সরাসরি গুলি ও জলকামান ব্যবহার করে। বিক্ষোভকারীদের অনেককে শিস বাজিয়ে মিছিল করতে দেখা যায়। অথচ রাস্তায় ব্যাপক পুলিশ মোতায়েন ছিল।
১৯৯০ সালের ৭ জুলাই কেনিয়ার গণতন্ত্রপন্থি বিক্ষোভকে স্থানীয় কিসওয়াহিলি ভাষায় ‘সাবা সাবা’ (‘সাত সাত’) আন্দোলন বলে অভিহিত করা হয়। বহু দলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রবর্তনের দাবিতে কেনিয়ার তৎকালীন স্বৈরশাসক প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল মোইয়ের বিরুদ্ধে এ আন্দোলন হয়েছিল। দিনটির স্মরণে প্রতি বছর জুলাইয়ের ৭ তারিখ কেনিয়ার মানুষ বিক্ষোভ মিছিল বের করে।
তবে এবারের সাবা সাবা আন্দোলন বৃহত্তর প্রতিবাদে রূপ নেয়। কারণ এবার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রুটোর পদত্যাগ দাবি করে বিক্ষোভকারীরা।
আল জাজিরার নাইরোবি প্রতিনিধি ম্যালকম ওয়েব জানান, পুলিশ শহরের কেন্দ্রের দিকে যাওয়া প্রায় সব প্রধান সড়ক অবরোধ করে রেখেছিল। বিক্ষোভকারীরা সেগুলো অতিক্রম করে এগোনোর চেষ্টা করলে সংঘর্ষ শুরু হয়।
তিনি আরও জানান, ‘আমরা বিভিন্ন স্থান থেকে গুলিবিদ্ধ ব্যক্তিদের খবর পেতে শুরু করেছি এবং অ্যাম্বুলেন্সগুলো আহতদের উদ্ধারে ঘটনাস্থলে যাচ্ছে।’
গত মাসেও দুর্নীতি, পুলিশি নির্যাতন এবং সরকারবিরোধীদের গুমের প্রতিবাদে হওয়া অনুরূপ বিক্ষোভ সংঘর্ষে রূপ নেয়। কেনিয়া ন্যাশনাল কমিশন অন হিউম্যান রাইটস জানিয়েছে, গত মাসের বিক্ষোভে সারা দেশে অন্তত ১৯ জন নিহত হয়েছে।
সোমবারের এই বিক্ষোভে তরুণরা ব্যাপকভাবে অংশ নেয়। এ সময় কিছু এলাকায় লুটপাট ও সহিংসতা ঘটে, ডজনখানেক মানুষ নিহত এবং হাজার হাজার ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যায়।
বিক্ষোভকারীরা সরকারের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনেছে যে, সরকার ইচ্ছাকৃতভাবে সশস্ত্র ভাড়াটে লোক পাঠিয়ে আন্দোলনকে কলঙ্কিত করছে। অন্যদিকে সরকার বলেছে, এই বিক্ষোভ ‘একটি ব্যর্থ অভ্যুত্থানের প্রচেষ্টা’।
রাজনৈতিকভাবে ২০২২ সালে নির্বাচিত রুটো এখনও শক্ত অবস্থানে রয়েছেন। তিনি প্রধান বিরোধী নেতা রাইলা ওডিঙ্গার সঙ্গে একটি জোট গঠন করেছেন। ফলে ২০২৭ সালের নির্বাচনকে ঘিরে এখনই তার জন্য কোনো সুস্পষ্ট চ্যালেঞ্জ দেখা যাচ্ছে না।
২০২৪ সালের জুন থেকে এখন পর্যন্ত বিক্ষোভে অন্তত ৮০ জন নিহত হয়েছে এবং অনেককে অবৈধভাবে আটক করা হয়েছে।