X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৭ বৈশাখ ১৪৩১

এশিয়ার কয়েকটি দেশে টিকাদান বিলম্বিত হচ্ছে কেন?

বিদেশ ডেস্ক
০৮ মার্চ ২০২১, ১৭:৪৯আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২১, ১৭:৪৯
image

দুনিয়া জুড়ে প্রায় ১৬ কোটি মানুষকে ইতোমধ্যে করোনাভাইরাসের টিকা দেওয়া হয়েছে। তবে এর বেশিরভাগই যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে। এশিয়া অঞ্চলে ভারতের মতো কয়েকটি দেশে টিকাদান কর্মসূচি চলছে ধীর গতিতে। দেশটিতে গত জানুয়ারি থেকে এই পর্যন্ত ১ কোটি ৪০ লাখ টিকা দেওয়া হয়েছে। তবে অন্য দেশগুলোতে হয় এখনও টিকাদান শুরু হয়নি, কিংবা খুবই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। তবে এর কারণ প্রতিটা দেশেই আলাদা। এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশের পরিস্থিতি এবং ভিন্ন ভিন্ন কারণ তালাশ করে দেখেছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।

ভয় এবং ভুলতথ্য

ফিলিপাইনের অনেকেই এখনও ২০১৬ সালে ডেঙ্গু জ্বরের টিকা ডেঙভ্যাক্সিয়ার কথা মনে করে থাকেন। দুই বছর পর এটি গ্রহণ করা কয়েকটি শিশুর মৃত্যুর পর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায় হঠাৎ করে টিকাটি বন্ধ করে দেওয়া হয়। ব্যাপক বিতর্কের পর দেশটির স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে বিচারের মুখোমুখি করা হয়।

সাম্প্রতিক এক জরিপে দেখা গেছে, ফিলিপাইনের মাত্র ১৯ শতাংশ মানুষই করোনাভাইরাসের টিকা নিতে আগ্রহী। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে টিকার প্রথম চালান হিসেবে পৌঁছায় চীনের সিনোভ্যাক। তার কয়েক দিন আগেই এটি দেশটিতে জরুরি ব্যবহারের অনুমোদন পায়। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে টিকাদান শুরু হওয়ার কথা থাকলেও ফাইজার/বায়োএনটেক এবং অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা সময় মতো না পৌঁছানোয় তা শুরু করা যায়নি। শেষ পর্যন্ত গত ৪ মার্চ অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেশটিতে পৌঁছেছে।

পাকিস্তানেও ভীতি একটি বড় ফ্যাক্টর হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে সেখানে এর মূল কারণ ভুল তথ্য আর কয়েকটি সফল ভাইরাল ভিডিও। ২০২০ সালের একটি ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গেছে, একটি বেসরকারি স্কুলের এক শিক্ষক কয়েকজন শিক্ষার্থীকে সামনে রেখে ভীতিকর ভাবে চিৎকার করছেন। তিনি অভিযোগ করছেন ওই শিক্ষার্থীদের পোলিও’র টিকা নিতে বাধ্য করা হয়েছে আর তারা অচেতন হয়ে গেছে। এই ঘটনার পর উত্তেজিত কিছু মানুষ একটি ক্লিনিক জ্বালিয়ে দেয়। একই ধরনের কিছু ভিডিওর কারণে দেশটিতে পোলিও ভ্যাকসিন নেওয়ার হার কমে গেছে। এসব ভিডিও পরে সরিয়ে ফেলা হলেও লাখ লাখ মানুষ তা দেখে ফেলেছে।

পোলিও টিকা নিয়ে এই ঘটনা করোনা ভ্যাকসিনের ওপরও প্রভাব ফেলেছে। পেশোয়ারের এক চিকিৎসক জানিয়েছেন টিকাদান শুরুর দিনেই চারশ’র বেশি স্বাস্থ্যকর্মীর টিকা নেওয়ার কথা থাকলেও মাত্র কয়েকজনই তা গ্রহণ করেছে।

সতর্ক পদক্ষেপ

এশিয়ার আরও কয়েকটি দেশে টিকাদান প্রাথমিক পর্যায়ে থাকলেও বিশেষজ্ঞরা বলছেন এসব দেশে দ্বিধার চেয়ে বেশি রয়েছে সতর্কতা। এসব দেশের অনেকেই মহামারি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছে আর তারা মনে করছে তাদের আরও বেশি দেখে নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

অস্ট্রেলিয়ার ডেকিন বিশ্ববিদ্যালয়ের মহামারি বিশেষজ্ঞ ক্যাথেরিন বেন্নেত বলেন, এসব দেশ নিজ জনগোষ্ঠীর ওপর টিকাদানের আগে অতিরিক্ত ডোজ প্রয়োগ কিংবা গর্ভকালীন অবস্থায় এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে তা দেখে নিতে চাইছে।

দক্ষিণ কোরিয়ায় বিলম্বে টিকাদান শুরুর যুক্তি হিসেবে একই কথা বলেছেন প্রধানমন্ত্রী চাং সায়ে-কিয়ুন। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি দেশটিতে টিকাদান শুরু হয়েছে। সিঙ্গাপুর, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনামের মতো এই অঞ্চলের অন্য দেশগুলোর কর্মকর্তারাও একই ধরনের যুক্তি দিয়েছেন।

তবে এসব দেশ বিলম্বে শুরু করলেও দ্রুততম সময়ের মধ্যে টিকাদান শেষ করতে চায়। উদাহরণ হিসেবে দক্ষিণ কোরিয়ার কথা বলা যায়, দেশটি শরৎ আসার আগেই হার্ড ইমিউনিটি অর্জনের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে।

থাইল্যান্ডে মার্চে টিকাদান শুরু হলেও দেশটির অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে এই বছরের মাঝামাঝির মধ্যে টিকা দিয়ে ফেলতে চাইছে। পুরো জনগোষ্ঠীর জন্য টিকা সংগ্রহ করে ফেলা সিঙ্গাপুর ইতোমধ্যে আড়াই লাখ মানুষকে টিকা দিয়ে ফেলেছে। এপ্রিলের মধ্যে টিকাদান শেষ করে ফেলার লক্ষ্য নিয়েছে দেশটি।

ভ্যাকসিন নিয়ে দ্বিধা

অলিম্পিক আয়োজনের পরিকল্পনা থেকে জাপানে টিকাদান কর্মসূচি সফলভাবে চললেও সমস্যা হিসেবে দেখা দিচ্ছে ভ্যাকসিন নিয়ে দ্বিধা। ভ্যাকসিন নিয়ে সবচেয়ে কম আত্মবিশ্বাসের দেশগুলোর অন্যতম জাপান। ১৯৯০ এর দশকে দেশটিতে হাম, গলগন্ড এবং রুবেলার টিকাদানের সঙ্গে উচ্চ হারে মেনিনজাইটিস আক্রান্তের সংশ্লিষ্টতা ছিলো বলে মনে করা হয়। এর কোনও সুনির্দিষ্ট সংশ্লিষ্টতা পাওয়া না গেলেও এসব টিকাদান পরে আর চালানো হয়নি।

কিয়োটো ইউনিভার্সিটির স্কুল অব মেডিসিনের গবেষক ড. রিকো মুরানাকা মনে করেন, জনগণের কাছে টিকাদানের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করা নিয়ে বিস্তারিত কৌশলের ঘাটতি রয়েছে। এছাড়াও সংবাদমাধ্যমে ভ্যাকসিন সংশ্লিষ্ট নেতিবাচক খবর এবং অনলাইনে সেগুলো প্রচারের কারণেও দ্বিধা তৈরি হয়েছে বলে মনে করেন তিনি। আর এই দ্বিধা কাটাতেই জাপানে ভ্যাকসিন অনুমোদন পেয়েছে দেরিতে।

ফাইজারের ভ্যাকসিনের তৃতীয় পর্যায়ের পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার পর ডিসেম্বরের শুরুতেই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে তা অনুমোদন পায়। তবে আরও পরীক্ষার ওপর জোর দেওয়া জাপানে টিকাদান শুরু হয় গত ১৭ ফেব্রুয়ারি।

গবেষক ড. রিকো মুরানাকা মনে করেন অন্য অনেক দেশের মতো করোনা মহামারি জাপানে খুব বেশি প্রভাব ফেলতে পারেনি, সেকারণে মানুষ ভ্যাকসিন নেওয়ার কারণ দেখতে পারছে না। তবে এই মুহূর্তে মনোভাবের বদল ঘটেছে বলেও মনে করছেন তিনি।

/জেজে/
সম্পর্কিত
ভারতে লোকসভা নির্বাচনের দ্বিতীয় ধাপের ভোট শুরু
চীনে আমেরিকার কোম্পানিগুলোর প্রতি ন্যায্য আচরণের আহ্বান ব্লিঙ্কেনের
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
সর্বশেষ খবর
ছেলেবেলার ক্লাবের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন রোনালদো
ছেলেবেলার ক্লাবের শেয়ার বিক্রি করে দিচ্ছেন রোনালদো
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নাটকীয় উন্নতি হয়েছে: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কে নাটকীয় উন্নতি হয়েছে: ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী
মুক্তিযোদ্ধাকে মারধর, আ.লীগ নেতার ভাগনে কারাগারে
মুক্তিযোদ্ধাকে মারধর, আ.লীগ নেতার ভাগনে কারাগারে
ইন্দোনেশিয়ার রুয়াং আগ্নেয়গিরিতে আবারও অগ্ন্যুৎপাত,সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
ইন্দোনেশিয়ার রুয়াং আগ্নেয়গিরিতে আবারও অগ্ন্যুৎপাত,সর্বোচ্চ সতর্কতা জারি
সর্বাধিক পঠিত
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
এসি কেনার আগে মনে রাখতে হবে এই ৭ বিষয়
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি বন্ধের সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসছে সরকার
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়