X
সোমবার, ০৫ মে ২০২৫
২২ বৈশাখ ১৪৩২

তালেবান শাসনে কেমন বোধ করছেন আফগান নারীরা?

বিদেশ ডেস্ক
১৬ আগস্ট ২০২১, ২৩:৪৪আপডেট : ১৭ আগস্ট ২০২১, ০০:১১

‘তাদের আসার অপেক্ষায় আমি এখানে বসে আছি। আমাকে বা আমার পরিবারকে সাহায্য করার মতো কেউ নেই; তারা আমার মতো মানুষের জন্য আসবে এবং আমাকে হত্যা করবে।’ তালেবান কাবুলের নিয়ন্ত্রণ নেওয়ার পর এভাবেই নিজের অসহায়ত্ব প্রকাশ করেন আফগানিস্তানের প্রথম নারী মেয়র, খ্যাতনামা অ্যাক্টিভিস্ট ও রাজনীতিক জারিফা গাফারি। টুইটারে দেওয়া এক পোস্টে গাফারির এমন মর্মস্পর্শী অভিব্যক্তি তুলে ধরেছেন ঔপন্যাসিক এলিফ শাফাক। বলেছেন, আফগান নারীদের কান্নার কাছে সবকিছু তুচ্ছ মনে হয়।

বিবিসির প্রভাবশালী ১০০ নারীর তালিকায় স্থান পাওয়া জারিফা গাফারির মতো রাজনীতিকের যদি এমন দশা হয় তাহলে কেমন আছে আফগানিস্তানের সাধারণ নারীরা? এ প্রশ্নের উত্তর কেমন হতে পারে তার কিছুটা আঁচ মেলে এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীর মন্তব্যে। তিনি জানান, চারপাশে নারীদের সন্ত্রস্ত চেহারা আর নারীদের ঘৃণা করে এমন পুরুষদের কুৎসিত চেহারা দেখতে পাচ্ছেন তিনি।

তালেবান শাসনে আফগান নারীদের অবস্থা নিয়ে সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানে একটি নিবন্ধ লিখেছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক আফগান নারী। কাবুলের বাসিন্দা পরিচয়ে তিনি লিখেছেন, ‘রবিবার সকালে আমি একটি ক্লাসের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে যাচ্ছিলাম। তখন মেয়েদের ডরমিটরি থেকে একদল নারী ছুটে আসছিল। আমি জিজ্ঞাসা করলাম কি হয়েছে? তাদের একজন আমাকে বললো, পুলিশ তাদের সরিয়ে দিচ্ছে। কারণ তালেবানরা কাবুলে ঢুকে পড়েছে এবং যাদের বোরকা নেই তাদের তারা মারধর করবে।’

তিনি বলেন, সবাই বাড়ি ফিরতে চাইলাম। কিন্তু আমরা গণপরিবহন ব্যবহার করতে পারিনি। চালকরা আমাদের তাদের গাড়িতে উঠতে দিচ্ছিল না। কারণ তারা একজন নারীকে বহনের দায়িত্ব নিতে চায়নি। ডরমিটরির নারীদের অবস্থা ছিল ছিল আরও খারাপ। যারা কাবুলের বাইরে থেকে এসেছে তাদের কোথায় যাওয়া উচিত তা নিয়ে তারা ভীত হয়ে পড়ে।

এদিকে চারপাশে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষরা নারীদের নিয়ে মজা করছিল। মেয়েদের ভীত সন্ত্রস্ত অবস্থা দেখে তারা হাসাহাসি করছিল। একজন বললো, ‘যাও বোরকা পর। আরেকজন বললো, ‘তোমাদের রাস্তায় বের হওয়ার এটাই শেষ দিন।’ তৃতীয় জন বললো, ‘একদিন আমি তোমাদের চারজনকে বিয়ে করবো।’

এই নারী বলেন, সরকারি অফিস বন্ধ হয়ে যাওয়ায় আমার বোনকে বাড়ি ফেরার জন্য শহরে কয়েক মাইল দৌড়াতে হয়েছিল। অনেক বেদনা নিয়ে আমি আমার কম্পিউটার বন্ধ করে দিয়েছি। গত চার বছর ধরে এটি আমাকে আমার জনগণ ও সম্প্রদায়ের সেবা করতে সাহায্য করেছে। অশ্রুসিক্ত চোখে আমার ডেস্ক ছেড়ে দিয়ে সহকর্মীদের বিদায় জানালাম। আমি জানতাম এটা আমার চাকরির শেষ দিন।

তিনি বলেন, আমি আফগানিস্তানের সেরা দুই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে প্রায় একই সময়ে দুইটি ডিগ্রি প্রায় সম্পন্ন করেছি। নভেম্বরে আমেরিকান ইউনিভার্সিটি অব আফগানিস্তান এবং কাবুল ইউনিভার্সিটি থেকে আমার গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু আজ সকালে আমার চোখের সামনে সবকিছু ধরা দিলো।

আজকের এই পর্যায়ে আসার জন্য আমাকে দীর্ঘ সময় ধরে দিনরাত কাজ করতে হয়েছে। আজ সকালে যখন আমি বাড়ি পৌঁছালাম, তখন আমার বোন ও আমি প্রথম যে কাজটি করেছি তা হলো আমাদের আইডি, ডিপ্লোমা ও সার্টিফিকেট লুকিয়ে রাখা। এটা ছিল ভয়াবহ। যে বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের গর্ব করা উচিত সেগুলো কেন আমরা লুকিয়ে রাখবো? আফগানিস্তানে এখন আমাদের পরিচয়ে আমরা পরিচিত হতে পারি না।

এই শিক্ষার্থী বলেন, একজন নারী হিসেবে আমি মনে করি পুরুষরা যে রাজনৈতিক যুদ্ধ শুরু করেছে আমি তার শিকার। আমার মনে হচ্ছে, আমি আর জোরে হাসতে পারছি না, আমার প্রিয় গান শুনতে পারছি না, পছন্দের ক্যাফেতে বন্ধুদের সঙ্গে দেখা করতে পারছি না। আমার প্রিয় হলুদ পোশাক বা গোলাপী লিপস্টিক ব্যবহার করতে পারছি না। আমি আর আমার চাকরিতে যেতে পারবো না কিংবা যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি অর্জন করতে আমি বছরের পর বছর ধরে কাজ করেছি তা শেষ করতে পারবো না।

১৫ আগস্ট কাবুল দখলের আগে থেকেই একের পর এক বিভিন্ন এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিচ্ছিল তালেবান। গত জুলাইয়ের গোড়ার দিকে দলটির একদল যোদ্ধা কান্দাহারে অবস্থিত আজিজি ব্যাংক ভবনে ঢুকে পড়ে। তারা সেখানে কর্মরত ৯ জন নারী কর্মীকে বেরিয়ে যেতে বলে। তালেবান সদস্যরা ওই নারীদের নিজ নিজ বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে তাদের আর অফিসে ফিরতে না করে দেয়। তবে তাদের পরিবারের পুরুষ সদস্যরা ওই নারী কর্মীদের বদলে কাজে যোগ দিতে পারবেন বলে জানানো হয়।

নুর খাতারা নামের ব্যাংকটির একজন কর্মীর ভাষায়, ‘কাজে যাওয়ার অনুমতি না পাওয়া অদ্ভূত হলেও এখানে এটাই ঘটছে।’

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান, রয়টার্স।

/এমপি/
সম্পর্কিত
আইএসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তালেবানকে সহায়তা করবে রাশিয়া
৮০ হাজার আফগানকে বিতাড়িত করেছে পাকিস্তান
আফগানিস্তান-তাজিকিস্তান সীমান্তে ৫.৯ মাত্রার ভূমিকম্প
সর্বশেষ খবর
বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা জোরদারে মিলানে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক
বাংলাদেশের উন্নয়নে সহায়তা জোরদারে মিলানে আন্তর্জাতিক অংশীদারদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের বৈঠক
জামিনে মুক্তির পর জেল গেট থেকে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেফতার
জামিনে মুক্তির পর জেল গেট থেকে আওয়ামী লীগ নেতা গ্রেফতার
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয়ের আর্থিক অনিয়মের চিত্র
স্বাস্থ্য খাত সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয়ের আর্থিক অনিয়মের চিত্র
কিউইদের উড়িয়ে সিরিজ শুরু করলো বাংলাদেশ ‘এ’ দল
কিউইদের উড়িয়ে সিরিজ শুরু করলো বাংলাদেশ ‘এ’ দল
সর্বাধিক পঠিত
এবার আড়াই হাজার ভোট পাওয়া আরিফুরকে মেয়র ঘোষণা করলেন আদালত
এবার আড়াই হাজার ভোট পাওয়া আরিফুরকে মেয়র ঘোষণা করলেন আদালত
এনায়েত উল্লাহর ১৯০টি যানবাহন জব্দ
এনায়েত উল্লাহর ১৯০টি যানবাহন জব্দ
ইসলামি ব্যাংকগুলো একীভূত করার প্রস্তাব: সমাধান নাকি নতুন সংকট?
ইসলামি ব্যাংকগুলো একীভূত করার প্রস্তাব: সমাধান নাকি নতুন সংকট?
মেছতা হলে কী করবেন?
মেছতা হলে কী করবেন?
হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলা
হাসনাত আব্দুল্লাহর গাড়িতে হামলা