X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১১ বৈশাখ ১৪৩১

পাকিস্তানের অস্থিরতা ভারতের জন্য কতটা হুমকি?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৮ মে ২০২৩, ১৮:৩০আপডেট : ১৮ মে ২০২৩, ২৩:৩১

কয়েক সপ্তাহ ধরে পাকিস্তান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অস্থিরতায় জর্জরিত। দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে গ্রেফতারের ঘটনায় দেশজুড়ে বিক্ষোভ-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়েছিল। উচ্চ মূল্যস্ফীতিতে ধুঁকছে অর্থনীতি, প্রবৃদ্ধিও নিম্নগামী এবং ঋণখেলাপি হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে ইসলামাবাদ। রাজনীতিতে প্রভাবশালী সেনাবাহিনীর সঙ্গে ইমরানের ক্রমবর্ধমান বিরোধ বাড়ছে। তিনি অভিযোগ করেছেন, তাকে উৎখাত ও হত্যাচেষ্টার নেপথ্যে সেনা কর্মকর্তারা রয়েছেন। পাকিস্তানের এমন পরিস্থিতিতে ভারতের উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত কিনা তা নিয়ে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।

কয়েক বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দক্ষিণ এশিয়া বিশেষজ্ঞ স্থানীয় একজন বিশ্লেষককে বলেছিলেন, পাকিস্তান যদি ব্যর্থ হয় তাহলে আমাদের নিশ্চিত করতে হবে যেন তাদের সঙ্গে আমাদেরও পতন না হয়।

ওয়াশিংটনের উইলসন সেন্টার থিংক ট্যাংকের সাউথ এশিয়া ইনস্টিটিউটের পরিচালক মাইকেল কুগেলম্যান বলেন, যখন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী রাষ্ট্রীয় ভালো সময়েও অস্থির, গুরুতর রাজনৈতিক চাপান-উতোরে রয়েছে, বড় ধরনের বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়তে পারে, তখন উদ্বিগ্ন হওয়া উচিত।

বিষয়টি এমন নয় যে পাকিস্তানের বিশৃঙ্খলা ভারতে ছড়িয়ে পড়বে। কিন্তু পাকিস্তানে বিশৃঙ্খলার কারণে তারা এমন কিছু গোষ্ঠীর ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলবে, যারা ভারতের জন্য বড় ধরনের হুমকি। যেমন- ভারতকেন্দ্রিক জঙ্গিগোষ্ঠী।

পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলায় ভারতের জড়িয়ে পড়ার অতীত উদাহরণ রয়েছে। ১৯৭১ সালে ভারতের সহযোগিতায় পাকিস্তান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে স্বাধীন বাংলাদেশ গঠিত হয়। ২০০৮ সালে পারভেজ মুশাররফের সামরিক শাসনের অবসান হওয়ার কয়েক মাস পরে ইসলামাবাদ সমর্থিত জঙ্গিরা ভারতের মুম্বাইয়ে হামলা চালায়।

সাম্প্রতিক ইতিহাসের আলোকেও চলমান সংকট ভারতের জন্য আরও উদ্বেগের বলে মনে করছেন পাকিস্তানের এক সাবেক রাষ্ট্রদূত এবং ওয়াশিংটন ডিসির হাডসন ইনস্টিটিউটের স্কলার হুসেন হাক্কানি। তার মতে, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা এমন সময়ে ঘটছে যখন পাকিস্তান সম্ভাব্য সবচেয়ে খারাপ অর্থনৈতিক সংকটে রয়েছে এবং দৃশ্যত দেশটির শাসন কাঠামো দুর্বল ও অভ্যন্তরীণভাবে বিভাজিত হয়ে পড়েছে।

কুগেলম্যানের মতো বিশেষজ্ঞরা দুটি চরম পরিস্থিতির আশঙ্কা উড়িয়ে দিচ্ছেন। প্রথমত, পাকিস্তান এমন পর্যায়ে পৌঁছে যাবে যেখানে তারা ভারতের সঙ্গে পুনর্মিলিত হতে চাইবে। ভারত যে আগ্রহী হবে না তা অন্য বিষয়। দ্বিতীয়ত, পাকিস্তান ভারতকেন্দ্রিক জঙ্গিদের সীমান্তে আক্রমণ চালানোর জন্য উৎসাহ দিচ্ছে।

তিনি বলেন, এমন পর্যায়ে পাকিস্তানের পক্ষে আরেকটি সংঘাতে অথবা ভারতের সঙ্গে নতুন সংকটে জড়িয়ে পড়ার সুযোগ নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কিন্তু নয়া দিল্লির জন্য উদ্বেগের বিষয় হলো এই দুই চরম পরিস্থিতির মাঝামাঝি অবস্থা। কুগেলম্যান বলেন, এটি হবে এমন পরিস্থিতি যখন পাকিস্তান নিজেদের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে মনোযোগী থাকবে এবং যেকোনও আন্তসীমান্ত হামলার ঝুঁকি এড়ানোর মতো সক্ষমতা থাকবে না।

১২ মে ইমরান খানকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। ফাইল ছবি: রয়টার্স

এসওএএস ইউনিভার্সিটি অব লন্ডনের রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক গবেষণার শিক্ষক অভিনাশ পালিওয়ালও একই ধরনের কথা বলেছেন। তার মতে, পাকিস্তানের দ্বৈত সংকটের কারণে সীমান্তে অস্ত্রবিরতিকে জটিলতায় ফেলতে পারে।

পালিওয়াল বলেন, মনোযোগ সরিয়ে দিতে বা কাশ্মিরে শক্তি প্রদর্শনে সেনাবাহিনীর নিয়ন্ত্রণ দেখাতে সীমান্ত অতিক্রম করে কর্মকাণ্ডে উৎসাহ দেওয়ার মতো কারণ রয়েছে পাকিস্তানের সেনাপ্রধানের সামনে। সামর্থ্যের সীমাবদ্ধতা থাকলেও এই ঝুঁকি বহাল থাকছে। কারণ, পাকিস্তানে অস্ত্রবিরতির নিশ্চয়তাদানকারীরা নিজেরাই বিবাদে লিপ্ত।

তিনি বলেন, এমন অস্ত্রবিরতি ভেঙে পড়া ভারতের জন্য কৌশলগত হুমকি নয়। কিন্তু চীনের সঙ্গে চলমান সামরিক মুখোমুখি অবস্থানের কারণে তা অনেক বেশি বিপজ্জনক হয়ে পড়বে।

অনেকে অবশ্য মনে করেন, ভারতের উচিত পাকিস্তানকে নিয়ে ‘ঘোর’ কাটিয়ে ওঠা। প্রতিবেশী দেশের সংকট নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো কারণ নেই। তারা বলছেন, পাকিস্তানের চেয়ে ভারতের অর্থনীতি দশগুণ বড় এবং দেশটির অর্থনীতি ভারতের ধনী রাজ্য মহারাষ্ট্রের চেয়েও ছোট।

কুগেলম্যান বলছেন, এমন প্রতিক্রিয়া সহজেই অনুমেয়। প্রতিটি দেশ প্রতিদ্বন্দ্বীদের অবস্থা খারাপ দেখতে চায়। বিশেষ করে যখন ওই প্রতিদ্বন্দ্বী সীমান্ত অতিক্রম করে হামলায় উসকানি দেয় এবং তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লিপ্ত হয়। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীকে দ্বন্দ্বের কারণে ভারতে বিশেষ ধরনের সন্তুষ্টিও বিরাজ করে। কারণ, দেশটির সেনা সমর্থিত জঙ্গিরা দীর্ঘদিন ধরে ভারতে হামলা চালিয়ে আসছে।

কুগেলম্যান আরও বলেন, কিন্তু ভারত যদি এতে আনন্দ পেতে শুরু করে তাহলে পাকিস্তানের বিশৃঙ্খলার ঝুঁকি বিপদ তৈরি করে।

হাক্কানি বলছেন, পারমাণবিক শক্তিধর প্রতিবেশী দেশে অর্থনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা ভারতের স্বার্থের পক্ষে যায় না।

অবশ্য পাকিস্তানে দায়িত্ব পালন করা সাবেক ভারতীয় হাইকমিশনার শরৎ সাবারওয়াল মনে করেন না যে পাকিস্তানের ধস আসন্ন। বরং আগের মতোই বিশৃঙ্খল পথে তারা এগিয়ে যাবে।

পাকিস্তান যখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে তখন ভারতের কী করা উচিত? এমন প্রশ্নের জবাবে পাকিস্তানে ভারতের সাবেক হাইকমিশনার টিসিএ রাঘবন বলেন, সবচেয়ে ভালো হবে বিদ্যমান ন্যূনতম সম্পর্ক বজায় রাখা এবং নিয়ন্ত্রণরেখায় অস্ত্রবিরতি জারি থাকা।

হাক্কানির মতো অন্যরা মনে করেন, ভারত অপেক্ষা ও পর্যবেক্ষণের নীতি গ্রহণ করেছে। সীমান্তে নিবিড় রাখছে। মূল বিষয় হলো অপ্রস্তুত অবস্থায় না পড়া।

কুগেলম্যান বলেন, ভারতকে এখনও সতর্ক থাকতে হবে, যাতে তাদের সতর্কতায় শিথিলতা না আসে।

সূত্র: বিবিসি।

 

/এএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
দক্ষিণ লেবাননে ‘আক্রমণাত্মক পদক্ষেপ’ নিচ্ছে ইসরায়েল
হিজবুল্লাহর ৪০টি লক্ষ্যবস্তুতে হামলার দাবি ইসরায়েলের
দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেফতার রুশ উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী
সর্বশেষ খবর
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
চার বছরেও পাল্টায়নি ম্যালেরিয়া পরিস্থিতি, প্রশ্ন নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি নিয়ে
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
দিল্লিকে ভয় ধরিয়ে হারলো গুজরাট
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
ডিইউজে নির্বাচনে সভাপতি পদের মীমাংসা মামলার শুনানি ২৫ এপ্রিল
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
জুড়ী উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে মারধরের অভিযোগ
সর্বাধিক পঠিত
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
সিয়াম-মেহজাবীনের পাল্টাপাল্টি পোস্টের নেপথ্যে…
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
‘মারামারি’র ঘটনায় মিশা-ডিপজলের দুঃখপ্রকাশ
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
মিয়াবতী থেকে পিছু হটলো মিয়ানমারের বিদ্রোহীরা?
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
আজকের আবহাওয়া: কোথায় কেমন গরম পড়বে
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী
ছয় দিনের সফরে ব্যাংকক গেলেন প্রধানমন্ত্রী