ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর প্রথমবারের মতো মুখ খুললেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। বর্তমানে তিনি ভারতে অবস্থান করছেন। তাকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মতো বিদেশি শক্তিকে দায়ী করেছেন তিনি। শনিবার (১০ আগস্ট) দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে যে বার্তা দিয়েছেন শেখ হাসিনা, সেখানেই তিনি বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য প্রিন্ট এ খবর জানিয়েছে।
নেতাকর্মীদের উদ্দেশে দেওয়া বার্তায় শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি ক্ষমতায় থাকতে পারতাম, যদি সেন্টমার্টিন এবং বঙ্গোপসাগর আমেরিকার হাতে তুলে দিতাম।’
ভারত সরকার বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংকটের পেছনে ‘বিদেশি শক্তির হাত’ আছে কিনা, তা খতিয়ে দেখছে—এমন ঘোষণা দেওয়ার কয়েক দিন পর, এ নিয়ে কথা বললেন শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে বছরের পর বছর ধরে যুক্তরাষ্ট্রের টানাপড়েন চলছিল। চলতি বছরের জানুয়ারিতে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের আগে তিনি বলেছিলেন, ‘একজন সাদা মানুষ’ বিমান ঘাঁটির বিনিময়ে তাকে মসৃণভাবে ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের প্রস্তাব দিয়েছিলেন।
সবশেষ দেওয়া এই বার্তায়, নতুন অন্তর্বর্তী সরকারকে এই ধরনের বিদেশি শক্তি দ্বারা ‘ব্যবহৃত’ না হতে সতর্ক করেছেন বাংলাদেশের ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘমেয়াদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, ‘আমি পদত্যাগ করেছি যাতে আমাকে লাশের মিছিল দেখতে না হয়। শিক্ষার্থীদের লাশের ওপর দিয়ে তারা ক্ষমতায় আসতে চেয়েছিল। আমি তা হতে দেইনি। ক্ষমতা ছেড়ে চলে এসেছি।’
শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘আমি দেশে থাকলে হয়তো আরও প্রাণহানি হতো। আরও অনেক সম্পদহানি হতো।’
ভারতে অবস্থানরত শেখ হাসিনা আগামী সপ্তাহে সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলবেন বলে আশা করা হচ্ছে।
বার্তায় পরাজয় মেনে নিয়ে দেশে ফিরে আসার অঙ্গীকার করেছেন শেখ হাসিনা।
তিনি বলেছেন, ‘আমি শিগগিরই ফিরবো, ইনশাআল্লাহ। পরাজয় আমার, কিন্তু জয়ী হয়েছে বাংলাদেশের জনগণ।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমি নিজেকে সরিয়ে নিয়েছি। আপনাদের সমর্থন নিয়ে আমি এসেছিলাম, আপনারা ছিলেন আমার শক্তি। আপনারা যখন আমাকে চাননি, তখন আমি নিজে থেকে সরে গেছি, পদত্যাগ করেছি। আমার যেসব কর্মী যারা দেশে আছেন, কেউ মনোবল হারাবেন না। আওয়ামী লীগ বারবার উঠে দাঁড়িয়েছে।’
সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্য বিকৃত করার অভিযোগ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘তরুণ শিক্ষার্থীদের আবারও বলতে চাই, আমি কখনোই আপনাদের রাজাকার বলিনি। আমার কথাগুলো বিকৃত করা হয়েছে। একটি মহল ফায়দা নিয়েছে।’
শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সপ্তাহব্যাপী ছাত্র বিক্ষোভে ৩০০ জনের বেশি মানুষ মারা গেছে। শিক্ষার্থীদের মৃত্যুর ঘটনা তদন্তের আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা ও অন্যান্য দেশ।
নোবেল বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস নতুন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হয়েছে। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগকারী দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তার দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
নোট: শেখ হাসিনার ছেলে ও তার সাবেক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় রবিবার (১১ আগস্ট) নিজের অফিসিয়াল এক্স অ্যাকাউন্টে বলেছেন, তার মা ঢাকা ছাড়ার আগে ও পরে এখন পর্যন্ত কোনও বিবৃতি দেননি। তিনি লিখেছেন, ‘আমার মায়ের পদত্যাগের বিষয়ে একটি বিবৃতি সম্প্রতি এক সংবাদপত্রে প্রকাশ করা হয়েছে, যা পুরোপুরি মিথ্যা ও বানোয়াট। আমি একটু আগে তার (শেখ হাসিনা) সঙ্গে কথা বলে নিশ্চিত হয়েছি। তিনি ঢাকা ছাড়ার আগে বা ঢাকা ছাড়ার পরে এ পর্যন্ত কোনও বিবৃতি দেননি।’