যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামকে সতর্ক করছে যাতে ২০৩০ সালের মধ্যে ১০টি নতুন সাবসি (সমুদ্রের তলদেশে) ক্যাবল নির্মাণ প্রকল্পে চীনা প্রতিষ্ঠান এইচএমএন টেকনোলজিস এবং অন্যান্য চীনা কোম্পানির সহায়তা না নেওয়া হয়। এই আলোচনা সম্পর্কে ধারণা রাখা সূত্রগুলো জানিয়েছে, ভিয়েতনামের বর্তমান পাঁচটি পুরোনো সাবসি ক্যাবল লাইন বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় নতুন কেবল নির্মাণ এখন দেশটির সরকারের অগ্রাধিকার। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর জানিয়েছে।
এই বছরের জানুয়ারি থেকে, মার্কিন কর্মকর্তারা ভিয়েতনামের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক কর্মকর্তাদের সঙ্গে অন্তত ছয়টি বৈঠক করেছেন, যেখানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশটির সাবসি ক্যাবল নীতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছে সাতজন অংশগ্রহণকারী বা সূত্র। একটি সূত্র জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ভিয়েতনামের সাবসি ক্যাবল পরিকল্পনা থেকে চীনের প্রভাব দূরে রাখার জন্য ‘শক্তিশালী লবিং’ চালাচ্ছে।
এদের মধ্যে পাঁচজন বলেছেন, মার্কিন কর্মকর্তারা ভিয়েতনামকে সাবসি ক্যাবল অবকাঠামোর সম্ভাব্য ধ্বংসাত্মক হামলা নিয়ে গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করেছেন। তবে, কোনও সূত্র প্রকাশ্যে কথা বলতে রাজি হননি।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন প্রতিযোগিতা ও সাবসি ক্যাবল নিয়ে উদ্বেগ
যুক্তরাষ্ট্র ও চীন উভয়ই ভিয়েতনামের ওপর কৌশলগত প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে। গত বছর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এবং চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দেশটি সফর করেছেন এবং উভয় দেশেরই বড় কর্পোরেশনগুলো ভিয়েতনামে বিনিয়োগ করছে। একই সময়ে, সাবসি ক্যাবলগুলো, যা বিশ্বের প্রায় ৯৫ শতাংশ ইন্টারনেট ডেটা পরিবহন করে, যুক্তরাষ্ট্র-চীনের টেক যুদ্ধে কেন্দ্রীয় ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।
ওয়াশিংটন দীর্ঘদিন ধরে এই ক্যাবলের মাধ্যমে চীনা গুপ্তচরবৃত্তির আশঙ্কা করে আসছে। এর আগেও তারা এইচএমএন টেককে একাধিক আন্তর্জাতিক প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়ার জন্য সফলভাবে লবিং করেছে।
যুক্তরাষ্ট্রে চুক্তিবদ্ধ এপিটেলিকম ভিয়েতনামের সঙ্গে আলোচনায় যুক্ত হয়েছে বলে জানিয়েছেন পাঁচজন সূত্র। এটি চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের ‘ক্লিন নেটওয়ার্ক’ উদ্যোগকে প্রচার করছে বলে জানা গেছে।
চীনের প্রতি ভিয়েতনামের ইতিবাচক মনোভাব
ভিয়েতনামের কর্তৃপক্ষ ও দেশটির বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এখনও পর্যন্ত চীনের সঙ্গে সাবসি ক্যাবল নির্মাণে কাজ করতে উন্মুক্ত মনোভাব দেখিয়েছে। তবে, বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা লাইন স্থাপনের জন্য অভিজ্ঞতাহীন এইচএমএন টেককে চুক্তিতে অন্তর্ভুক্ত করা কেন উচিত নয় তা বুঝিয়েছেন।
এই বৈঠকগুলোতে মার্কিন কর্মকর্তারা চীনের প্রতিষ্ঠানগুলোর দক্ষতা নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। তারা জানিয়েছেন, যারা কম দক্ষ ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ পেতে কম সক্ষম সেসব প্রতিষ্ঠানকে অন্তর্ভুক্ত করলে ভিয়েতনামে মার্কিন বিনিয়োগের প্রবাহও কমতে পারে।
সাবসি ক্যাবল নিয়ে সম্ভাব্য ধ্বংসাত্মক হামলার আশঙ্কা
২০২২ সালের শেষ থেকে ২০২৩ সালের শুরু পর্যন্ত ভিয়েতনামের প্রধান সাবসি ক্যাবলগুলোতে বারবার ব্যর্থতা দেখা গেছে। এর ফলে ভিয়েতনাম এই বছরের জন্য আরও উচ্চাভিলাষী ক্যাবল প্রকল্প গ্রহণের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
মার্কিন কর্মকর্তারা ভিয়েতনামের কয়েকটি বৈঠকে স্যাটেলাইট ছবি ও গোয়েন্দা তথ্য বিনিময় করেছেন, যা ক্যাবল লাইনের ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পেছনে অন্তর্ঘাতের প্রমাণ দেয় বলে মনে করেন পাঁচটি সূত্র। যদিও ভিয়েতনামের তথ্য ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় বলেছে, অন্তর্ঘাতের কোনও সুস্পষ্ট প্রমাণ তারা খুঁজে পায়নি।
ক্যাবল স্থাপনের প্রতিযোগিতা ও ভবিষ্যতের সম্ভাবনা
এপ্রিল মাসে, ভিয়েতনামের রাষ্ট্র-পরিচালিত টেলিযোগাযোগ সংস্থা ভিয়েটেল এবং সিঙ্গাপুরের সিঙ্গটেল দক্ষিণ ভিয়েতনাম থেকে সিঙ্গাপুর পর্যন্ত একটি নতুন সাবসি ক্যাবল প্রকল্পের পরিকল্পনা ঘোষণা করে, যা দক্ষিণ চীন সাগরের বিতর্কিত অঞ্চলগুলো এড়িয়ে চলবে। তবে, এই ক্যাবল স্থাপনের দরপত্র এখনও ঘোষণা করা হয়নি।
ভিয়েতনামের সাবসি ক্যাবল চুক্তিগুলো কারা পাবে, তা নিয়ে প্রতিযোগিতা তীব্রতর হচ্ছে। হ্যানয়ভিত্তিক একজন কূটনীতিক বলেন, সময়ই বলে দেবে, এই প্রতিযোগিতায় কে বিজয়ী হবে।
এই প্রতিযোগিতার মাধ্যমে স্পষ্ট যে ভিয়েতনামকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যকার প্রভাব বিস্তারের লড়াই আরও জটিল হয়ে উঠছে।