X
মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫
২২ বৈশাখ ১৪৩২

জাপানের কয়েকজন বৃদ্ধা কেন কারাবাস পছন্দ করছেন?

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:৪২আপডেট : ২০ জানুয়ারি ২০২৫, ১৮:৪৭

জাপানের সবচেয়ে বড় নারীদের কারাগার, তোচিগি। এটি দেখতে অনেকটাই বৃদ্ধাশ্রমের মতো। ভেতরে প্রবীণ বন্দিরা ধীর গতিতে হাঁটেন, কেউ কেউ হুইলচেয়ার ব্যবহার করেন। কর্মীরা তাদের খাওয়ানো, গোসল করানো এবং ওষুধ সেবনে সাহায্য করেন। তবে এটি আসলে একটি কারাগার, যেখানে বৃদ্ধ বন্দিদের অনেকেই বেছে নিয়েছেন স্থায়ীভাবে থাকার পথ।

তোচিগি কারাগারের এক কর্মকর্তা তাকায়োশি শিরানাগা বলেন, কিছু বন্দি তো মাসে ২০-৩০ হাজার ইয়েন দিয়ে এখানেই চিরকাল থাকতে চান।

খাবার চুরির অভিযোগে কারাগারে থাকা ৮১ বছর বয়সী আকিও নামের এক বন্দি বলেন, এখানে খুব ভালো মানুষ রয়েছেন। সম্ভবত এই জীবনটাই আমার জন্য সবচেয়ে স্থিতিশীল।

কারাগারের ভেতরে নিয়মিত খাবার, বিনামূল্যে স্বাস্থ্যসেবা এবং বৃদ্ধদের সেবাযত্ন পাওয়া যায়। কারাগারের বাইরে এই সুবিধাগুলো অনেকেরই নাগালের বাইরে।

মাদক সংক্রান্ত অভিযোগে পাঁচবার কারাবন্দি হওয়া ৫১ বছর বয়সী ইয়োকো জানান, কিছু মানুষ ইচ্ছে করেই অপরাধ করেন, যাতে তারা কারাগারে ফিরে আসতে পারেন।

জাপানের বৃদ্ধ বন্দিদের মধ্যে চুরির ঘটনা সবচেয়ে বেশি। ২০২২ সালে কারাবন্দি নারীদের ৮০ শতাংশই চুরির অভিযোগে গ্রেফতার হন। এর পেছনে রয়েছে দারিদ্র্য ও সামাজিক বিচ্ছিন্নতা। বৃদ্ধ বন্দিদের এই সংকট সামাজিক একাকীত্ব ও দারিদ্র্যের একটি করুণ প্রতিফলন। তবে কারাগারে জীবন বেছে নেওয়া কেবল সাময়িক স্বস্তি নিয়ে আসে, যা এই প্রবীণদের সমস্যার স্থায়ী সমাধান নয়।

আকিও বলেন, যদি আমার আর্থিক অবস্থা ভালো থাকত, তবে হয়তো এই পরিস্থিতিতে পড়তাম না।

জাপানের বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীর ২০ শতাংশ দারিদ্র্যের মধ্যে বাস করেন। পেনশন কম এবং পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার কারণে অনেকেই অপরাধে জড়িয়ে পড়েন।

২০০৩ থেকে ২০২২ সালের মধ্যে ৬৫ বা তার বেশি বয়সী বন্দিদের সংখ্যা চার গুণ বেড়েছে। তোচিগি কারাগারের মতো প্রতিষ্ঠানগুলোতে এখন বৃদ্ধদের ডায়াপার পরিবর্তন, গোসল করানো ও খাবার খাওয়ানোর মতো সেবায় জোর দিতে হচ্ছে।

কারারক্ষী মেগুমি বলেন, অনেকেরই পরিবার নেই। আর যাদের আছে, তারাও তাদের পরিত্যাগ করেছেন।

জাপান সরকার প্রবীণদের পুনর্বাসনে কাজ করছে। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, যেসব বন্দি কারাগার থেকে বের হওয়ার পর সঠিক সহায়তা পান, তাদের পুনরায় অপরাধে জড়ানোর হার কম। নারীদের জন্য স্বাবলম্বী জীবনযাপনের দিকনির্দেশনা, আসক্তি নিরাময় এবং পারিবারিক সম্পর্ক পুনর্গঠনে সহায়তা দেওয়ার কর্মসূচি চালু করেছে।

তবে বৃদ্ধ জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার দেখে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, একা সরকারের প্রচেষ্টায় সমস্যার সমাধান সম্ভব নয়। ২০৪০ সালের মধ্যে জাপানে ২.৭২ মিলিয়ন সেবাকর্মীর প্রয়োজন হবে। এই ঘাটতি পূরণে বিদেশি কর্মীদের আমন্ত্রণ জানানো হচ্ছে।

অক্টোবরে নিজের সাজার মেয়াদ শেষ করে মুক্তি পাওয়ার আগে আকিও বলেন, আমি লজ্জিত ও ভীত যে আমার ছেলে কীভাবে আমাকে দেখবে। আমি তার কাছে ক্ষমা চাইবো, তবে জানি না সে আমাকে গ্রহণ করবে কি না।

তিনি আরও বলেন, একা থাকা অত্যন্ত কঠিন। আমি যদি আরও দৃঢ় মনোবল নিয়ে জীবনযাপন করতাম, তবে হয়তো এ অবস্থা হতো না। কিন্তু এখন আমার পক্ষে আর কিছু করা সম্ভব নয়।

সূত্র: সিএনএন

/এএ/
সম্পর্কিত
গাজায় ত্রাণ লুটের দায়ে কয়েকজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করলো হামাস
গাজা ‘দখলের’ পরিকল্পনা ইসরায়েলের
দিল্লির লালকেল্লার মালিকানা দাবিতে আদালতে মুঘল বংশধর সুলতানা
সর্বশেষ খবর
চেম্বার থেকে নারী চিকিৎসককে টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় এনে মারধর
চেম্বার থেকে নারী চিকিৎসককে টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় এনে মারধর
কলেজের অধ্যক্ষকে মারধর করে পুলিশে দিলেন এনসিপির নেতাকর্মীরা
কলেজের অধ্যক্ষকে মারধর করে পুলিশে দিলেন এনসিপির নেতাকর্মীরা
আরেকটি গ্রিন কটেজ থেকে রক্ষা পেলাম: ফায়ার সার্ভিস
বেইলি রোডের সিরাজ টাওয়ারে আগুনআরেকটি গ্রিন কটেজ থেকে রক্ষা পেলাম: ফায়ার সার্ভিস
আগে সরকার ব্যয়ের মহোৎসব করেছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
আগে সরকার ব্যয়ের মহোৎসব করেছে: বাণিজ্য উপদেষ্টা
সর্বাধিক পঠিত
ঝকঝকে ত্বক পেতে যেভাবে ব্যবহার করবেন চিয়া সিড
ঝকঝকে ত্বক পেতে যেভাবে ব্যবহার করবেন চিয়া সিড
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের জানাজা পড়ালেন ছেলে, প্রিয় আইনাঙ্গন থেকে শেষ বিদায়
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের জানাজা পড়ালেন ছেলে, প্রিয় আইনাঙ্গন থেকে শেষ বিদায়
স্বর্ণালঙ্কার তৈরির মেশিনেই মিললো স্বর্ণ
স্বর্ণালঙ্কার তৈরির মেশিনেই মিললো স্বর্ণ
এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের চাপে আওয়ামীপন্থি ৬ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল
এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের চাপে আওয়ামীপন্থি ৬ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল
স্বাস্থ্য ক্যাডার পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস করার সুপারিশ
স্বাস্থ্য ক্যাডার পুনর্গঠন করে বাংলাদেশ হেলথ সার্ভিস করার সুপারিশ