ইউক্রেনে রাশিয়ার সর্বাত্মক যুদ্ধ বন্ধে যুক্তরাষ্ট্রের উদ্যোগের মধ্যেও চলমান সংঘাত আরও জটিল হচ্ছে। তিন বছর ধরে চলমান এই যুদ্ধে নতুন চ্যালেঞ্জ হিসেবে যুক্ত হয়েছে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের শৃঙ্খলাবদ্ধ অংশগ্রহণ। দক্ষিণ কোরিয়ার তথ্য অনুযায়ী, উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার পক্ষে যুদ্ধে সহায়তা করতে আরও সেনা পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। অন্যদিকে, ইউক্রেন জানিয়েছে, তারা সম্প্রতি বেশ কিছু উত্তর কোরিয়ার সেনাকে আটক করেছে এবং এই নতুন শত্রুরা ক্রমেই যুদ্ধক্ষেত্রে দক্ষ হয়ে উঠছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা এ খবর জানিয়েছে।
দক্ষিণ কোরিয়ার যৌথ চিফস অব স্টাফ শুক্রবার এক বিবৃতিতে জানায়, ‘উত্তর কোরিয়ার সেনাদের অনেকে হতাহত ও বন্দি হওয়ার কারণে তাদের পুনর্বিন্যাস এবং পরবর্তী মোতায়েনের জন্য প্রস্তুতি ত্বরান্বিত হচ্ছে।
ইউক্রেনের সামরিক গোয়েন্দা বিভাগ জানিয়েছে, জানুয়ারির শুরুতে নতুন উত্তর কোরিয়ার সেনাদের রাশিয়ার কুরস্ক অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, গত নভেম্বরে প্রায় ১১ হাজার সেনা অঞ্চলটিতে প্রবেশ করেছে এবং ১০ দিন পর যুদ্ধক্ষেত্রে নামানো হয়েছে।
প্রথম ৪০ দিনে প্রতিদিন গড়ে ৭৫ জন হতাহত হয়, তবে পরবর্তী ২০ দিনে এটি নেমে আসে ৫০ জনে। ইউক্রেন দাবি করেছে, যুদ্ধের অভিজ্ঞতার কারণে উত্তর কোরিয়ার সেনারা দ্রুত শৃঙ্খলাবদ্ধ হয়ে উঠছে।
কৌশলগত বিশেষজ্ঞ কিয়ার জাইলস বলেছেন, উত্তর কোরিয়া রাশিয়াকে মানবসম্পদ দিয়ে সহায়তা করছে, যা রাশিয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার মতে, উত্তর কোরিয়ার এই অংশগ্রহণ সম্ভবত আরও বড় আকারে সম্প্রসারিত হতে পারে।
রাশিয়া এ বিষয়ে সরাসরি কিছু জানায়নি। তবে ইউক্রেন ও পশ্চিমা দেশগুলো বলছে, উত্তর কোরিয়ার সেনাদের কঠোর আদেশ এবং আত্মহত্যার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে যাতে তারা বন্দি না হয়।
২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকে রাশিয়া ও উত্তর কোরিয়ার মধ্যে সামরিক সহযোগিতা বৃদ্ধি পেয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়ার গোয়েন্দা সংস্থা জানিয়েছে, পিয়ংইয়ং রাশিয়াকে প্রায় ৯০ লাখ গোলাবারুদ সরবরাহ করেছে। বিনিময়ে রাশিয়া উত্তর কোরিয়াকে তেল সরবরাহ এবং ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রযুক্তি সহায়তা করছে।
গত বছরের জুনে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন একটি সমন্বিত কৌশলগত অংশীদারিত্ব চুক্তি স্বাক্ষর করেন। এতে ‘আগ্রাসনের ক্ষেত্রে পারস্পরিক সহায়তা’ অন্তর্ভুক্ত ছিল।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ইউক্রেনে যুদ্ধের মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া সামরিক অভিজ্ঞতা অর্জন করছে। বিশেষজ্ঞ ওলেনা গুসেইনোভা জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সামরিক চুক্তির মাধ্যমে উত্তর কোরিয়া বার্ষিক ১৪৩ থেকে ৫৭২ মিলিয়ন ডলার পর্যন্ত আয় করতে পারে।
তবে উত্তর কোরিয়ার সেনাদের আধুনিক যুদ্ধকৌশল নিয়ে এখনও চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। ইউক্রেনের ৮০তম এয়ার অ্যাসল্ট ব্রিগেড জানিয়েছে, উত্তর কোরিয়ার সেনারা রুশদের তুলনায় শৃঙ্খলাবদ্ধ এবং তারা কঠিন পরিস্থিতিতেও পালায় না।
উত্তর কোরিয়ার অংশগ্রহণ পশ্চিমা দেশগুলোর জন্য নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছে। জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি ইউক্রেনে একটি শান্তিরক্ষী বাহিনী পাঠানোর সম্ভাবনার কথা বলেছেন। তবে রাশিয়ার পারমাণবিক হামলার হুমকির কারণে এই পদক্ষেপ নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে।