X
শুক্রবার, ২১ মার্চ ২০২৫
৭ চৈত্র ১৪৩১

ট্রাম্প-পুতিন মৈত্রীর কাছে কি হেরে যাচ্ছেন জেলেনস্কি?

সুদীপ্ত কবির
১৩ মার্চ ২০২৫, ২৩:৩৯আপডেট : ১৩ মার্চ ২০২৫, ২৩:৩৯

ইউক্রেনীয় প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি একসময় রাশিয়ার বিরুদ্ধে একাই যুদ্ধে নামার ঘোষণা দিয়ে বিশ্বজুড়ে বীরের মর্যাদা পেয়েছিলেন। ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় তিনি ছিলেন অনড়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাব বারবার নাকচ করে এসেছিলেন তিনি। কারণ, ট্রাম্পের প্রস্তাব মেনে নিলে ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের অর্ধেক চলে যেত যুক্তরাষ্ট্রের হাতে। আর রাশিয়াকে ছেড়ে দিতে হতো দখলকৃত ইউক্রেনীয় ভূমি। কিন্তু এখন সেই জেলেনস্কিই ট্রাম্পের নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে আগ্রহী। কীভাবে এই পরিবর্তন এল? 

জেলেনস্কির এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে ট্রাম্পের চাপ এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে ট্রাম্পের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক। সম্প্রতি হোয়াইট হাউজে ট্রাম্পের কাছে জেলেনস্কি রীতিমতো নাজেহাল হন। এমনকি সফরের বাকি অংশ বাতিল করে তাকে হোয়াইট হাউজ থেকে বের করে দেওয়া হয়। এই ঘটনা জেলেনস্কির অবস্থানকে আরও দুর্বল করে দিয়েছে। 

জেলেনস্কি দীর্ঘদিন ধরে নিজের অবস্থানে অনড় ছিলেন। কিন্তু এখন তিনি ট্রাম্পের শান্তি প্রস্তাবের প্রতি আগ্রহ দেখাচ্ছেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, জেলেনস্কির এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে তার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার অভাব। তিনি মূলত একজন কৌতুক অভিনেতা, যিনি রাজনীতিতে এসেছেন তৃতীয় পক্ষের স্বার্থ হাসিলের মাধ্যম হিসেবে। কিন্তু যখন সেই নেপথ্যের চরিত্র পালটে যায়, তখন সামনের পুতুলের চলার পথও বদলে যায়। 

জেলেনস্কির সমালোচকদের মতে, তিনি অন্যের ইচ্ছাধীন পুতুল। তিনি ইমরান খান, ম্যানি প্যাকিয়াও বা আর্নল্ড শোয়ার্জেনেগারের মতো নন, যারা অন্য ক্ষেত্রে সফলতা অর্জন করে রাজনীতিতে এসেছেন। জেলেনস্কির রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা নেই, নেই কোনও সুস্পষ্ট ভিশন। ফলে তিনি এখন অকুল পাথারে পড়েছেন। 

জেলেনস্কি বাইডেন প্রশাসনের পরামর্শে ন্যাটোতে যোগদানের তোড়জোড় শুরু করেছিলেন। কিন্তু পুতিন এই উদ্যোগের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তিনি চান না পশ্চিমা সামরিক জোট তার সীমানার কাছে ঘাঁটি গাড়ুক। এই উত্তেজনার ফলেই ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের সূত্রপাত হয়, যা প্রায় তিন বছর ধরে চলছে। 

রাশিয়ার হামলার পেছনে দীর্ঘদিনের নিরাপত্তাজনিত ইস্যু, কৃষ্ণসাগরে অ্যাক্সেস এবং সাবেক সোভিয়েত গৌরব পুনরুদ্ধারের বাসনা কাজ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, ইউক্রেন যদি ন্যাটোর সঙ্গে জোট বাঁধার চেষ্টা না করত, তাহলে পুতিন হামলা চালাতেন না। 

ট্রাম্প প্রথম থেকেই বলে আসছেন, ক্ষমতায় এলে তিনি যুদ্ধ বন্ধ করে দেবেন। তিনি ইউক্রেনের হাতে ধরিয়ে দিয়েছেন তিন বছরের বিল। দায় শোধ করতে না পারলে ইউক্রেনের খনিজসম্পদের অর্ধেক দাবি করেছেন। এ ছাড়া ন্যাটোর সদস্যপদের আকাঙ্ক্ষা বাদ দেওয়া এবং রাশিয়াকে দখলকৃত ভূমির অধিকার ছেড়ে দেওয়ার শর্তও রয়েছে তার প্রস্তাবে। 

 

প্রথমে জেলেনস্কি ট্রাম্পের শর্তগুলো উড়িয়ে দিয়েছিলেন। কিন্তু এখন তিনি বলছেন, নিরাপত্তা নিশ্চয়তা পেলে খনিজসম্পদের অর্ধেক দেওয়ার বিনিময়ে চুক্তিতে রাজি আছেন। হোয়াইট হাউজে নাজেহাল হওয়ার পর তিনি এখন ট্রাম্পের নেতৃত্বে শান্তি প্রতিষ্ঠায় কাজ করতে প্রস্তুত। 

ইউক্রেনের আগের সরকারও রাশিয়ার চাপে নতি স্বীকার করেছিল। তারা ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগদানের প্রচেষ্টা থেকে সরে এসেছিল। জেলেনস্কি ক্ষমতায় এসেছিলেন জনগণের প্রত্যাশা নিয়ে। কিন্তু তার নিজস্ব কোনও ভিশন নেই, নেই শক্তিশালী প্রতিবেশীর সঙ্গে দাপট দেখানোর সক্ষমতা। ফলে তিনি এখন অন্যের শক্তির ওপর নির্ভরশীল। 

জেলেনস্কির পশ্চিমা মিত্রদের একমাত্র লক্ষ্য ছিল রাশিয়া ও পুতিনকে শায়েস্তা করা। যুদ্ধের সুযোগে তারা রাশিয়ার ওপর শত শত নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে, তাদের অর্থনীতিতে ধস নামিয়েছে। কিন্তু জেলেনস্কির ভাগ্য খারাপ, মাঝপথে এলেন ট্রাম্প, যিনি পুতিনকে নিজের বন্ধু মনে করেন। 

ট্রাম্প একজন ব্যবসায়ী। তার কাছে ইউক্রেনে আরেকটি আফগানিস্তান তৈরি করার আগ্রহ নেই, যেখানে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন ডলার ব্যয় হবে কোনও যথাযথ ফলাফল ছাড়া। ফলে, জেলেনস্কি এখন সব সমর্থন হারিয়ে বেকায়দায় পড়েছেন। তার নিজের কোনও ভিশন নেই, যার জন্য লড়াই করবেন। ফলাফল, তিনি এখন ট্রাম্পের কাছেই সাহায্য চাইতে বাধ্য হচ্ছেন। 

জেলেনস্কির এই অবস্থান পরিবর্তন ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুন প্রশ্ন তুলেছে। ট্রাম্প-পুতিন মৈত্রীর কাছে কি হেরে যাচ্ছেন জেলেনস্কি? নাকি তিনি শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য বাস্তবসম্মত সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন? সময়ই এর উত্তর দেবে। তবে এটা স্পষ্ট, ইউক্রেনের ভাগ্য এখন অন্যের হাতে।

/এএ/
সম্পর্কিত
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৯১
শিক্ষা বিভাগ বন্ধে নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করবেন ট্রাম্প
কৃষ্ণ সাগরে নৌপরিবহন নিয়ে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের বৈঠক সোমবার
সর্বশেষ খবর
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৯১
গাজায় ইসরায়েলি হামলায় নিহত ৯১
পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা
পদ্মা নদী থেকে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন, ভ্রাম্যমাণ আদালতে জরিমানা
ভিনিসিয়ুসের ৯৯ মিনিটের গোলে কলম্বিয়াকে হারালো ব্রাজিল
ভিনিসিয়ুসের ৯৯ মিনিটের গোলে কলম্বিয়াকে হারালো ব্রাজিল
ছিনতাইকারীদের কোপে ব্যবসায়ী নিহত, পিটুনি দিয়ে দুজনকে পুলিশে সোপর্দ
ছিনতাইকারীদের কোপে ব্যবসায়ী নিহত, পিটুনি দিয়ে দুজনকে পুলিশে সোপর্দ
সর্বাধিক পঠিত
ঈদের ছুটি আরও দুই দিন বাড়ানোর দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ
ঈদের ছুটি আরও দুই দিন বাড়ানোর দাবিতে মহাসড়ক অবরোধ
যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেলেন ১৯৪ কর্মকর্তা
যুগ্ম সচিব পদে পদোন্নতি পেলেন ১৯৪ কর্মকর্তা
আ.লীগকে নিষিদ্ধের পরিকল্পনা নেই, নির্বাচনের তারিখ পেছাবে না: প্রধান উপদেষ্টা
আ.লীগকে নিষিদ্ধের পরিকল্পনা নেই, নির্বাচনের তারিখ পেছাবে না: প্রধান উপদেষ্টা
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত
উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত
ফেসবুক পোস্টে প্রধান উপদেষ্টাকে যা বললেন হাসনাত
আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ প্রসঙ্গফেসবুক পোস্টে প্রধান উপদেষ্টাকে যা বললেন হাসনাত