X
রবিবার, ১১ মে ২০২৫
২৮ বৈশাখ ১৪৩২

‘মমতার চপশিল্প’ নিয়ে গবেষণাপত্র, পশ্চিমবঙ্গে হইচই

রক্তিম দাশ, কলকাতা 
২১ জুলাই ২০২২, ১৭:২৬আপডেট : ২১ জুলাই ২০২২, ১৭:২৬

চপ বিক্রি করে বেকারদের কর্মসংস্থানের রাস্তা আগেই বাতলে দিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এবার সেই চপশিল্পই উঠে এলো বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ার টেবিলে। চপ নিয়ে রীতিমতো গবেষণা প্রবন্ধ (ডিসার্টেশন) তৈরি করে ফেললেন পশ্চিমবঙ্গের রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী কণা সরকার, যাকে নিয়ে এখন রাজ্যজুড়ে হইচই শুরু হয়েছে।

কণার বাড়ি মালদা জেলার গাজোলের স্টেশন মোড়ে। তিনি রায়গঞ্জ বিশ্ববিদ্যালয়ের স্নাতকোত্তরের ভূগোল বিভাগের চতুর্থ সিমেস্টারের ছাত্রী। ইউজিসির নতুন নিয়ম অনুসারে, স্নাতকোত্তর বিভাগের প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে একটি বিষয়ে গবেষণাধর্মী প্রবন্ধ লিখতে হয়। অনেকটা পিএইচডির ধাঁচে সেই প্রবন্ধ তৈরি করতে হয় বলেই জানিয়েছেন অধ্যাপকদের একাংশ। প্রবন্ধের জন্য বিষয় নির্বাচনসহ অন্যান্য কাজের জন্য গাইডও নিযুক্ত করতে হয়। প্রবন্ধ জমা হলে সেটা পরীক্ষকরা যাচাই করে পরীক্ষার্থীর ইন্টারভিউ নেন। ডিসার্টেশনের জন্য মোট ৫০ নম্বর বরাদ্দ রয়েছে বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ামক বিভাগ থেকে জানানো হয়েছে।

কণার ডিসার্টেশনের বিষয়, ‘রুরাল চপ ইন্ডাস্ট্রি অ্যান্ড ইটস ইমপ্যাক্ট অন ফ্যামিলি ওয়েলবিং, এ স্টাডি অন গাজোল-১, গাজোল-২ অ্যান্ড কর্কচ গ্রাম পঞ্চায়েত অব মালদা ডিস্ট্রিক্ট, ওয়েস্টবেঙ্গল’। ওই ছাত্রীর গাইড তাপস পাল জানিয়েছেন, কণা যে এলাকায় থাকেন সেই এলাকার আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির আলোকে বিষয়টি নির্বাচন করা হয়েছে। তবে ভূগোলের সঙ্গে আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির সম্পর্ক কোথায়? তাপস জানান, নতুন নিয়ম অনুসারে ভূগোলের কোনও ছাত্র ওই বিষয়ে কাজ করতেই পারেন। তাতে কোনও সমস্যা নেই। একই কথা বলেছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা অনুষদের ডিন দীপক কুমার রায়ও।

দীপক কুমার জানান, ইতোমধ্যে ওই প্রবন্ধ পদ্ধতি মেনে বিশ্ববিদ্যালয়ে জমা হয়েছে। তবে এখনও ছাত্রীর ইন্টারভিউ হয়নি। তার বক্তব্য, ডিসার্টেশনের মধ্য দিয়ে গবেষণার হাতেখড়ি হয়। ভূগোল বিভাগের গাইড ও ছাত্রী মিলে যে বিষয়ে কাজ করেছেন সেটা উল্লেখযোগ্য। এই ধরনের কাজের মধ্য দিয়ে যে তথ্য উঠে আসবে সেগুলো ভবিষ্যতের জন্য কাজে লাগবে।

কী তথ্য উঠে এসেছে কণার গবেষণায়? মালদার গাজোল-১, গাজোল-২ ও কর্কচ গ্রাম পঞ্চায়েত নিয়ে কাজ করেছেন কণা। ৫২ পাতার প্রবন্ধে কণার দেওয়া তথ্য বলছে, তিন গ্রাম পঞ্চায়েতে মোট ২৩টি চপের দোকান আছে। এক-একটি দোকানের সঙ্গে এক-একটি পরিবার যুক্ত। দোকানগুলোর ৬৪ শতাংশ পরিচালিত হয় নারীদের দ্বারা আর ৩৬ শতাংশ চালান পুরুষরা। ওই এলাকায় আলু, চিংড়ি, মাংস, সবজি ও ডিম- এই পাঁচ ধরনের চপ বিক্রি হয়। চপ বিক্রি করে নারীরা মাসে গড়ে নয় হাজার এবং পুরুষরা গড়ে ১৪ হাজার রুপি আয় করেন। নারী ও পুরুষদের দ্বারা পরিচালিত দোকানে আয়ের তফাত কেন, সেটিরও বর্ণনা দেওয়া হয়েছে প্রবন্ধে।

চপ তৈরির ক্ষেত্রে উনুন ও গ্যাস সিলিন্ডার উভয়েই ব্যবহার হচ্ছে বলেই জানিয়েছেন কণা। তবে চপ তৈরির ক্ষেত্রে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবের কথাও উল্লেখ করেছেন তিনি। কণা জানিয়েছেন, আগে ওই এলাকায় নারীরা বিড়ি বাঁধা, শাল পাতার কাজ করত। সেখানে তাদের যা আয় হত তা থেকে কম পরিশ্রমে চপ তৈরি করে নারীরা বেশি আয় করছেন। কণার বক্তব্য, ডিসার্টেশনের জন্য প্রায় তিন মাস সময় লেগেছে। তবে এরকম হইচই হবে ভাবিনি। কাজ করতে গিয়ে মনে হয়েছে, চপ বিক্রি গ্রামের কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে নতুন দিশা দেখাতে পারে। যদি কাজের অভিজ্ঞতা কোথাও শেয়ার করতে হয় অবশ্যই করব। তাপস বাবু বলছেন, একটা উল্লেখযোগ্য কাজ হয়েছে। ডিসার্টেশনের যাবতীয় প্রক্রিয়া শেষ হলে যদি সম্ভব হয় বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রীর সামনে তুলে ধরার চেষ্টা করব।

যদিও ওই ডিসার্টেশন নিয়ে প্রবল বিতর্ক তৈরি হয়েছে। ডিসার্টেশনের প্রথম পাতার একটি ছবি ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। তা নিয়ে শুরু হয়েছে ট্রোল। সেখানে লেখা রয়েছে, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের চপশিল্প ধারণায় অনুপ্রাণিত হয়ে গবেষণায় চপশিল্প। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি ডিসার্টেশনের প্রথম পাতায় ওইভাবে লেখা যায় না বলেই জানিয়েছেন অধ্যাপকদের একটি অংশ। যদিও কণা জানিয়েছেন, তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ে যে প্রবন্ধ জমা দিয়েছেন তাতে ওই ধরনের কোনও বাক্য লেখা নেই। তাপসবাবু বলেন, অযথাই বিতর্ক তৈরি করা হচ্ছে। যদি কখনও মুখ্যমন্ত্রীকে বিষয়টি নিয়ে বলার সুযোগ পাই সেকারণেই ওই ধরনের একটি মলাট তৈরি করেছিলাম। কেউ বা কারা সেটির ছবি তুলে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল করেছে। আসল ডিসার্টেশনে ওই ধরনের কোনও বাক্য নেই।

 

/এএ/
সম্পর্কিত
কাশ্মীর বিরোধ সমাধানে কাজ করতে চান ট্রাম্প
প্রথম বিদেশ সফরে মধ্যপ্রাচ্য যাচ্ছেন ট্রাম্প
ভারত-পাকিস্তান সংঘাত‘নাজুক যুদ্ধবিরতি’: বন্দুক নীরব, কিন্তু শান্তি কি টিকবে?
সর্বশেষ খবর
তালের শাঁস খেলে এত উপকার পাওয়া যায় জানতেন?
তালের শাঁস খেলে এত উপকার পাওয়া যায় জানতেন?
‘নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ কখনও বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না’
‘নারী সংস্কার কমিশনের সুপারিশ কখনও বাস্তবায়ন করতে দেওয়া হবে না’
স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক বিজিএমইএ গড়তে চায় ‘ফোরাম’
স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক বিজিএমইএ গড়তে চায় ‘ফোরাম’
১৮ বছরে প্রথমবার ম্যানইউর মাঠে জিতলো ওয়েস্ট হ্যাম
১৮ বছরে প্রথমবার ম্যানইউর মাঠে জিতলো ওয়েস্ট হ্যাম
সর্বাধিক পঠিত
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
আওয়ামী লীগ কচু পাতার পানি না: কাদের সিদ্দিকী
ব্যাংকে টাকা আসছে নাকি বের হয়ে যাচ্ছে
ব্যাংকে টাকা আসছে নাকি বের হয়ে যাচ্ছে
যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ
যুদ্ধাপরাধের সহযোগীদের ক্ষমা চাইতে হবে: উপদেষ্টা মাহফুজ
বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ
বিচারের আগ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ
মহাসড়কের পাশে দুই যুবকের লাশ, একজনের গলাকাটা অপরজনের চোখ উপড়ানো
মহাসড়কের পাশে দুই যুবকের লাশ, একজনের গলাকাটা অপরজনের চোখ উপড়ানো