X
শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪
১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিজেপির মিঠুন আর তৃণমূলের দেবের ‘প্রজাপতি’ যে কারণে বিতর্কে 

দিল্লি প্রতিনিধি
২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ২২:৩৪আপডেট : ২৯ ডিসেম্বর ২০২২, ২২:৪০

বিজেপির মিঠুন আর তৃণমূলের দেবের ‘প্রজাপতি’ যে কারণে বিতর্কে 

একজন কলকাতার ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি টলিউডের পয়লা সারির নায়ক, যার ঝুলিতে গত প্রায় এক যুগ ধরে অজস্র হিট সিনেমা। তিনি দেব অধিকারী বা ‘দেব’, এবং তার আর একটা পরিচয় তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল তৃণমূল কংগ্রেসের এমপি। সেই ২০১৪ থেকেই তিনি ঘাটালের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। 

দ্বিতীয়জন বলিউড ও টলিউড কাঁপানো সম্ভবত সবচেয়ে সফল বাঙালি অভিনেতা, মিঠুন চক্রবর্তী বা ‘মিঠুন’। এককালে বামপন্থী ও পরে তৃণমূলীদের সঙ্গে থাকলেও অধুনা তিনি ভারতের শাসক দল বিজেপির তারকা ক্যাম্পেনার – গত দেড় বছর ধরেই তিনি পশ্চিমবঙ্গে বিজেপির প্রচারের মুখ। 

তো এই দুই তারকা মিলে দেবের প্রোডাকশন সংস্থার ব্যানারেই ‘প্রজাপতি’ নামে একটি সিনেমা বানিয়েছেন, যা কলকাতাসহ সারা রাজ্যে মুক্তি পেয়েছে বড়দিনের ঠিক আগে। ছবিটি মূলত এক বাবা ও তার একমাত্র ছেলের গল্পকে ঘিরে, যেখানে বাবার চরিত্রে মিঠুন ও ছেলের চরিত্রে দেব অভিনয় করেছেন। মুক্তির পর থেকে ‘প্রজাপতি’ দর্শক ও সমালোচকদের প্রশংসাও কুড়োচ্ছে অবিরল। 

বিজেপির মিঠুন আর তৃণমূলের দেবের ‘প্রজাপতি’ যে কারণে বিতর্কে 

এই পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল – কিন্তু তৃণমূলের তারকা এমপি-র নির্মিত ছবি হলেও ‘প্রজাপতি’ কিন্তু কলকাতায় সবচেয়ে মর্যাদাব্যঞ্জক প্রেক্ষাগৃহ ও পশ্চিমবঙ্গ সরকারের নিয়ন্ত্রণাধীন ‘নন্দনে’ মুক্তি পায়নি। নন্দনকে পশ্চিমবঙ্গে সুস্থ চলচ্চিত্র চর্চার প্রধান কেন্দ্র বলে ধরা হয় – দর্শকনন্দিত প্রজাপতি সেই নন্দনেই ব্রাত্য থাকায় তা নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এবং পুরো ঘটনাটির মধ্যে যেভাবে এখন রাজনীতি ঢুকে গেছে, তা কলকাতার কোনও সিনেমাকে নিয়ে সম্ভবত নজিরবিহীন।  

কেন ‘প্রজাপতি’ নন্দনে দেখা গেল না, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র ও সাবেক এমপি কুনাল ঘোষ মন্তব্য করেছেন, ‘আসলে প্রজাপতি ছবিটাকে ঝুলিয়ে দিয়েছেন মিঠুন। দেবের এর ঠিক আগের ছবি, ‘টনিকে’ আমরা বাবার চরিত্রে পরান ব্যানার্জি আর ছেলের ভূমিকায় দেবের যে অসাধারণ কেমিস্ট্রি দেখেছিলাম, এটায় তার কিছুই নেই। পরানদা যেখানে ফাটাফাটি অভিনয় করেছিলেন, সেখানে মিঠুনের জন্য এই ছবিটা কিন্তু একেবারে ঝাড় খেয়ে গেছে!’ 

রাজ্যের শাসক দলের পক্ষ থেকে এ ধরনের বিবৃতি আসার পর বিজেপি আবার পাল্টা অভিযোগ করেছে, বিজেপি নেতা মিঠুনের সঙ্গে কাজ করার শাস্তি দিতেই দেব-কে এভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। 

বিজেপি-র জাতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ মন্তব্য করেছেন, ‘প্রজাপতি যে সরকারি হলে জায়গা পায়নি এটায় অবাক হওয়ার কিছু নেই। পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল না-করলে আসলে কোনও সুযোগ-সুবিধাই পাওয়া যায় না, শিল্পী-অভিনেতাও এর ব্যতিক্রম নন। মিঠুনকে নেওয়ার জন্য এখানে কোপ পড়েছে দেবের কোম্পানির ওপর।’ 

তৃণমূল ছেড়ে গত বছর বিজেপি শিবিরে যোগ দেওয়া প্রতিবাবান অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ যে ইদানীং আর টলিউডে কাজই প্রায় পাচ্ছেন না, সে কথাও মনে করিয়ে দিচ্ছেন বিজেপির অনেক নেতাই। 

মমতার একদা খুবই ঘনিষ্ঠ দেব নিজেও যে গোটা ঘটনায় খুব হতাশ তা বলার অপেক্ষা রাখে না। নিজেরই দলের মুখপাত্র কুনাল ঘোষের মন্তব্যে প্রতিক্রিয়া জানাতে গিয়ে দেব শুধু বলেছেন, ‘রাজনৈতিক দলগুলোর মুখপাত্ররা যদি সব ব্যাপারে কথা বলা থেকে বিরত থাকেন তাহলেই বোধহয় ভালো হয়। সিনেমার ব্যাপারটা অন্তত ওরা আমার বা মিঠুনদার ওপর ছেড়ে দিলেই ভালো করবেন।’ 

প্রজাপতি-তে বাবার চরিত্রে মিঠুন ছাড়া অন্য কারও কথা যে তার পক্ষে ভাবা সম্ভব ছিল না, সেটাও দেব পরিষ্কার করে দিয়েছেন। আরও বলেছেন, মিঠুনকে তিনি ‘কাস্ট’ করেছেন অভিনেতা হিসেবে – কোনও বিজেপি নেতা হিসেবে নয়। 

বিজেপির মিঠুন আর তৃণমূলের দেবের ‘প্রজাপতি’ যে কারণে বিতর্কে 

পশ্চিমবঙ্গের ঐতিহ্যবাহী সিনেমার দুনিয়ায় যে রাজনীতি ঢুকে পড়েছে – এবং তা ‘প্রজাপতি’কে কেন্দ্র করে এভাবে বেআব্রু হয়ে পড়েছে – তাতে রাজ্যের চলচ্চিত্রপ্রেমীরা যথারীতি খুবই তিতিবিরক্ত। 

কলকাতায় সিনেমা সমালোচক ও অধ্যাপক সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায় বাংলা ট্রিবিউনকে এদিন বলছিলেন, ‘এ রাজ্যের রাজনীতিবিদরা এতদিন সিনেমাটাকে অন্তত ছাড় দিয়েছিলেন। সিনেমার অভিনেতাদের অবশ্যই নিজস্ব রাজনৈতিক বিশ্বাস বা দর্শন থাকতে পারে, তবে সেটা এতদিন তাদের সিনেমা করার পথে কোনও বাধা হয়নি – কিন্তু এখন হচ্ছে!’ 

তিনি আরও জানাচ্ছেন, বাংলা সিনেমার অবিসংবাদিত নায়ক উত্তমকুমার নিজেই ছিলেন কংগ্রেস ঘেঁষা, মুখ্যমন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়ও ছিলেন তার ব্যক্তিগত বন্ধু। অন্যদিকে সৌমিত্র চ্যাটার্জি যে বামপন্থীদের সমর্থন করতেন, এটাও সবারই জানা।  

‘অথচ এর পরেও ঝিন্দের বন্দী কিংবা স্ত্রী-র মতো একাধিক ছবিতে একসঙ্গে কাজ করতে তাদের কোনও সমস্যাই হয়নি। এই সবগুলো ছবিই সুপারহিট হয়েছিল’, বলছিলেন সঞ্জয় চট্টোপাধ্যায়। 

কিন্তু আজকের পশ্চিমবঙ্গে বাণিজ্যিক সিনেমার দুনিয়াতেও রাজনীতি ঢুকে গেছে পুরোদমে – প্রজাপতি তা প্রমাণ করে দিলো।

/এএ/
সম্পর্কিত
জলপাইগুড়িতে বিজেপির ইস্যু বাংলাদেশের তেঁতুলিয়া করিডর
ইডি হেফাজতে আরও ৪ দিন কেজরিওয়াল
সরকার ক্ষমতায় থাকতে ভোটের ওপর নির্ভর করে না: সাকি
সর্বশেষ খবর
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
ডিভোর্স দেওয়ায় স্ত্রীকে কুপিয়ে নিজেও আত্মহত্যার চেষ্টা করেন স্বামী
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
এক সপ্তাহের মাথায় ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আরেকজন নিহত
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
‘উচিত শিক্ষা’ দিতে পঙ্গু বানাতে গিয়ে ভাইকে হত্যা
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে মানবাধিকার উইং চালুর পরামর্শ সংসদীয় কমিটির
সর্বাধিক পঠিত
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
অ্যাপের মাধ্যমে ৪০০ কোটি টাকার রেমিট্যান্স ব্লক করেছে এক প্রবাসী!
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!
সমুদ্রসৈকতে জোভান-সাফার ‘অনন্ত প্রেম’!