X
মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫
৩০ বৈশাখ ১৪৩২

কলকাতায় ২৪ ঘণ্টায় শ্বাসকষ্ট ও অ্যাডিনো ভাইরাসে ৫ শিশুর মৃত্যু

রক্তিম দাশ, কলকাতা
২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২৩:২৩আপডেট : ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ২৩:২৩

একদিনেই শ্বাসকষ্ট এবং অ্যাডিনো ভাইরাসে পশ্চিমবঙ্গের কলকাতায় পাঁচ শিশুর মৃত্যু হয়েছে। মঙ্গলবার কলকাতা শহরের দুই হাসপাতালে ওই পাঁচ শিশুর মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে একটি শিশুর অ্যাডিনো পজেটিভ ধরা পড়েছিল বাকি চার জনের মৃত্যু শ্বাসকষ্টজনিত কারণে বলে হাসপাতালের তরফে জানা গেছে।

কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের শিশু বিভাগে মঙ্গলবার সকালে দুই শিশুর মৃত্যু হয়। হাসপাতালের সুপার ডা. অঞ্জন অধিকারী জানান, যে দুই শিশু সেখানে অ্যাডিনোতে আক্রান্ত ছিল এদের মধ্যেই একজনের মৃত্যু হয়। যে শিশুটির সকালে মৃত্যু হয়েছে সে অ্যাডিনো পজিটিভ হওয়ার সঙ্গে হৃদযন্ত্রের সমস্যায়ও ভুগছিল। আদিত্য দাস নামে মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা ৬ মাস বয়সের ওই শিশুটির প্রথম কুড়ি দিন আরজিকরে ভর্তি ছিল। খুব সংকটজনক অবস্থায় তাকে গত ২৩ ফেব্রুয়ারি মেডিক্যাল কলেজে নিয়ে আসা হয়। সকাল ছয়টা নাগাদ মৃত্যু হয়েছে তার।

আবার এই হাসপাতালেই স্বর্ণা দাস নামে এক বছর বয়েসের একটি শিশুর মৃত্যু হয় সকাল আটটা নাগাদ। গত ২৬ তারিখ সে প্রবল শ্বাসকষ্ট নিয়ে এখানে ভর্তি হয়। হাওড়ার উদয় নারায়ণপুরের বাসিন্দা ওই শিশুটিকে হাওড়া জেলা হাসপাতাল থেকে মেডিক্যালে রেফার করা হয়েছিল। সুপার জানান, তার ব্রংকিওলাইটিস হয়েছিল।

অ্যাডিনোর সঙ্গেই সমান তালে দেখা দিচ্ছে নিউমোনিয়া, ব্রংকাইটিস ও অন্যান্য শ্বাসকষ্ট জনিত অসুখ। বর্তমানে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজের শিশুরোগ বিভাগের পিকুতে অ্যাডিনো ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে একজন ভর্তি আছে। সব মিলিয়ে ওই হাসপাতালে একই রকম উপসর্গ নিয়ে ভর্তি আছে ৬ টি শিশু।

অন্যদিকে, বি সি রায় শিশু হাসপাতালে মঙ্গলবারই তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। ওই তিনজনেরই নিউমোনিয়া ও শ্বাসকষ্ট ছিল। এদের মধ্যে একজন গত ১৭ তারিখ ভর্তি হয় ওই হাসপাতালে। দুই মাসের ওই শিশুটির বাড়ি ছিল হরিণঘাটায়। তাকে প্রথমে কল্যাণীর জে এন এম হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। পরে বি সি রায়তে রেফার করা হয়। মঙ্গলবার সকাল ছয়টায় মৃত্যু হয়েছে শিশুটির। যদিও এই তিন শিশুর মৃত্যুর নেপথ্যে অ্যাডিনো ভাইরাস দায়ী কি না হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কিছু জানায়নি। কিন্তু এআরআই বা তীব্র শ্বাস যন্ত্রের সংক্রমণ এবং আইএলআই বা ইনফ্লুঞ্জার মতো অসুস্থতার প্রভাব দাপিয়ে বেড়াচ্ছে। এতে কাহিল শিশুরা। বিশেষ করে যাদের বয়স দুই বছরের কম। গত কয়েক দিনে যেসব মৃত্যু হয়েছে তাদের বয়স দুই বছরের মধ্যে।

শিশুদের অযথা কলকাতায় রেফার করতে নিষেধ করেছে স্বাস্থ্য দফতর। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজ্যের মুখ্য সচিবের সঙ্গে স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের একটি বৈঠক হয় নবান্নে। ওই বৈঠকে স্পষ্ট বলা হয়, রাজ্যের জেলায় জেলায় শিশুদের চিকিৎসার যথেষ্ট পরিকাঠামো আছে। সেগুলো কাজে না লাগিয়ে অহেতুক কলকাতায় রেফার করা হচ্ছে। পাশাপাশি, শিশুদের দূর-দূরান্ত থেকে আনতে গিয়েই অবস্থার অবনতি হচ্ছে। তাদের আর বাঁচানো যাচ্ছে না। এছাড়া এর ফলে সব ভীড় জমা হচ্ছে বি সি রায় হাসপাতালে।

এদিকে, তীব্র শ্বাসযন্ত্রের সংক্রমণের ফলে রাজ্যে ক্রমবর্ধাণ শিশু মৃত্যু রুখতে মঙ্গলবার নতুন করে নির্দেশিকা জারি করলো স্বাস্থ্য দফতর। পাশাপাশি জরুরি ভিত্তিতে চালু করলো চব্বিশ ঘণ্টার হেল্প লাইন নম্বর।

নির্দেশিকায় বলা হয়েছে, রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজ, জেলা হাসপাতাল, সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল, মহকুমা ও স্টেট জেনারেল হাসপাতালগুলোতে চব্বিশ ঘণ্টা শিশুদের শ্বাসকষ্টের চিকিৎসার ক্লিনিক খোলা রাখতে। সব মেডিক্যাল কলেজগুলোকে বলা হয়েছে, সাধারণ ওপিডি বা বহির্বিভাগ ছাড়াও আলাদা করে একটি ওপিডি চালু করতে। যেটি চব্বিশ ঘণ্টা চালু রাখা হবে। কারণ সাধারণ বহির্বিভাগের সময় দুপুর দুটো পর্যন্ত। এর পরও যাতে বাইরের রোগীরা পরিষেবা পায় তাই এই ব্যবস্থা। সেই বহির্বিভাগে অন্তত একজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞের উপস্থিতি বাধ্যতামূলক।

যেকোনও সংকটে চব্বিশ ঘণ্টার জন্য ১৮০০- ৩১৩৪৪ -২২২ এই হেল্প লাইন নম্বরে যোগাযোগ করা যাবে। কোনও এআরআই বা শ্বাসযন্ত্রের তীব্র সংক্রমণের রোগীকে অন্যত্র রেফার করতে গেলে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের শয্যা মজুদ আছে কি না নিশ্চিত হয়েই রেফার করতে হবে। পাশাপাশি, যেখান থেকে রেফার করা হচ্ছে সেই হাসপাতালের সুপারকে না জানিয়ে রেফার করা যাবে না।

প্রতিটি হাসপাতালকে ভেন্টিলেটর ও অন্য সরঞ্জাম মজুত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে, শিশু রোগ বিভাগের স্নাতকোত্তর শ্রেণির পড়ুয়া এবং সিনিয়র রেসিডেন্টদের এই পরিস্থিতিতে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে হবে।

স্বাস্থ্য দফতর থেকে উপদেশ দেওয়া হয়েছে, শিশুদের ভীড় থেকে দূরে রাখতে এবং মাস্ক ব্যবহার করাতে। সাধারণ মানুষকে এইসব বিষয়ে সচেতন করতে আশা কর্মী ও স্বাস্থ্য কর্মীদের ভূমিকা নিতে হবে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় শিশুদের ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটের চিকিৎসকদের নিয়মিত প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে।

কোভিডের সময়ে যে পাঁচটি হাসপাতালে পেডিয়াট্রিক হাব তৈরি করা হয়েছিল ওই হাসপাতালগুলো এই পরিস্থিতিতে অন্য হাসপাতালের মেন্টর হিসেবে কাজ করবে। সেই হাসপাতালগুলো হলো, বি সি রায়, ন্যাশানাল মেডিক্যাল কলেজ, উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল, বাঁকুড়া সম্মিলনী এবং মালদা মেডিক্যাল। বেসরকারি পরিসরেও হাসপাতাল ও চিকিৎসকদের শিশু রোগীদের সংক্রমণের বিষয়ে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে।

/এএ/
সম্পর্কিত
পাকিস্তানি পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হুঁশিয়ারিপানি সমস্যা সমাধান না হলে যুদ্ধবিরতি হুমকির মুখে পড়বে
ভারতের সঙ্গে সংঘাত বড় ধরনের আর্থিক প্রভাব ফেলবে না: পাকিস্তানের অর্থমন্ত্রী
পাকিস্তানকে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদির চূড়ান্ত হুঁশিয়ারি
সর্বশেষ খবর
এনবিআর বিভক্ত করায় রাজস্ব আদায়ে কোনও প্রভাব পড়বে না: অর্থ উপদেষ্টা
এনবিআর বিভক্ত করায় রাজস্ব আদায়ে কোনও প্রভাব পড়বে না: অর্থ উপদেষ্টা
ক্লোরিন থেকে চুল বাঁচানোর উপায় জেনে নিন
ক্লোরিন থেকে চুল বাঁচানোর উপায় জেনে নিন
১৬১ টাকা লিটার দরে রাইস ব্রান তেল কেনার সিদ্ধান্ত
১৬১ টাকা লিটার দরে রাইস ব্রান তেল কেনার সিদ্ধান্ত
জুনেই আইএমএফের ১.৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ
জুনেই আইএমএফের ১.৩ বিলিয়ন ডলার ঋণ পাচ্ছে বাংলাদেশ
সর্বাধিক পঠিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
পররাষ্ট্র সচিবের অফিসার্স ক্লাবের সদস্য পদ স্থগিত
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
আ.লীগ-ছাত্রলীগের ২৬ নেতার আত্মসমর্পণ
স্বর্ণের দাম আবার কমলো
স্বর্ণের দাম আবার কমলো
সুস্থ তটিনী, তবে শুটিংয়ে ফেরার মতো নয়
সুস্থ তটিনী, তবে শুটিংয়ে ফেরার মতো নয়
পাকিস্তানে ভারত হামলা করলে সহায়তা করবে বালুচ লিবারেশন আর্মি
পাকিস্তানে ভারত হামলা করলে সহায়তা করবে বালুচ লিবারেশন আর্মি