X
শুক্রবার, ০৪ জুলাই ২০২৫
২০ আষাঢ় ১৪৩২

ফিলিস্তিনি বন্দিদের চোখ বেঁধে অর্ধনগ্ন করে বসিয়ে রাখছে ইসরায়েল

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
০৮ ডিসেম্বর ২০২৩, ২৩:০০আপডেট : ০৯ ডিসেম্বর ২০২৩, ০৩:৫১

গাজা উপত্যকায় আটক করা অন্তত ১০০ ফিলিস্তিনির সঙ্গে অমানবিক আচরণের অভিযোগ উঠেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ও ভিডিওতে দেখা গেছে, এসব বন্দিদের অন্তর্বাস পরা অবস্থায় চোখ বেঁধে উত্তর গাজার রাস্তায় হাঁটুতে ভর দিয়ে বসিয়ে রাখা হয়েছে। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরা বলেছে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনী এসব ছবি ও ভিডিওর সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

তারিখ না থাকা ভিডিও প্রথম প্রকাশ্যে এসেছে বৃহস্পতিবার। এতে দেখা গেছে, বন্দি ফিলিস্তিনিদের মাথা অবনত অবস্থায় রাস্তায় হাঁটুতে ভর দিয়ে বসে আছেন। তাদের পাহারা দিচ্ছে ইসরায়েলি সেনারা। ভিডিওটি প্রকাশ্যে আসার পর অনেকেই ইসরায়েলি সেনাদের এমন আচরণের নিন্দা জানাচ্ছেন।

দখলকৃত পূর্ব জেরুজালেম থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক অ্যালান ফিশার বলেছেন, অর্ধনগ্ন ব্যক্তিদের অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। এসব বন্দিদের অনেককে শনাক্ত করেছেন স্থানীয় সমাজ ও পরিবারের সদস্যরা।

ফিশার বলেছেন, কেউ বলছেন, এদের একজন শিক্ষার্থী ছিলেন, একজন একটি দোকান পরিচালনা করতেন, অপর একজনের ‘সন্ত্রাসবাদের’ সঙ্গে কোনও যোগসূত্র নেই। বেশ কয়েকজন বন্দিদের মধ্যে স্থানীয় একজন পরিচিত সাংবাদিককে শনাক্ত করেছেন। যখন সারিবদ্ধ বসিয়ে রাখা হয়েছিল তখন এক ব্যক্তির সঙ্গে তার দুই সন্তানও ছিল।

ইসরায়েলি হামলায় নিহতের মরদেহ ঘিরে স্বজনদের কান্না। ছবি: এপি

আল-হক নামের মানবাধিকার সংস্থার পরিচালক শাওয়ান জাবারিন বলেছেন, ছবিগুলো দেখে তিনি বিমূঢ় হয়ে পড়েছেন। এগুলো দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় বন্দি ও আটকদের সঙ্গে আচরণের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। 

তিনি বলেন, এটি অমানবিক। এটি নির্যাতনের চেয়ে বেশি কিছু। এটি একটি যুদ্ধাপরাধ এবং মানবতাবিরোধী অপরাধ।

ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যমের খবরে দাবি করা হয়েছে, ছবিতে থাকা ব্যক্তিদের মধ্যে কয়েকজন হামাস যোদ্ধা রয়েছেন, যারা ইসরায়েলি সেনাদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে।

শুক্রবার বিকালে তেল আবিব থেকে আল জাজিরার সাংবাদিক ইমরান খান বলেছেন, ছবিতে থাকা কয়েকজন ফিলিস্তিনি বন্দিকে ছেড়ে দিয়েছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী।

পরিবারের সদস্যদের মতে, মুক্তি পাওয়া এক বন্দি ছিলেন একজন দোকানদার, হামাসের সঙ্গে তার কোনও যোগাযোগ নেই।

বন্দিদের প্রতি এমন আচরণের ছবি সম্পর্কে ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রকাশিত বিবৃতিতে দুঃখপ্রকাশমূলক কোনও বক্তব্য ছিল না। তারা এই কৌশল ব্যবহার করে যাবে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বা মানবাধিকার সংগঠনের নিন্দার পরোয়া তারা করে না।

ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর প্রধান মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি এর আগে বলেছিলেন, লড়াইয়ের সময় যারা এলাকায় থাকবে, সুড়ঙ্গ থেকে বের হয়ে আসবে, বাড়ি থেকে বের হয়ে আসবে, তাদের সঙ্গে হামাসের যোগাযোগ থাকুক বা না থাকুক, সবাইকে বন্দি করা হবে, সবাইকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।

গাজায় অবস্থান নেওয়া দুই ইসরায়েলি সেনা। ছবি: রয়টার্স

এসব ছবির বিষয়ে সরাসরি তিনি কোনও মন্তব্য করেননি। তবে বলেছেন, গত ২৪ ঘণ্টায় কয়েক শ’ সন্দেহভাজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে এবং অনেকে আত্মসমর্পণ করেছে।

ইউরো-মেডিটেরানিয়ান হিউম্যান রাইটস মনিটর বলছে, উত্তর গাজা থেকে এসব ব্যক্তিদের নির্বিচারে গ্রেফতার করা হয়েছে। বেইত লাহিয়া শহর কয়েক দিন ঘিরে রাখার পর দুটি আশ্রয়কেন্দ্র থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

সংস্থাটি এক বিবৃতিতে আরও বলেছে, জাতিসংঘ সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ সংশ্লিষ্ট দুটি স্কুল, খলিফা বিন জায়েদ ও নিউ আলেপ্পো স্কুল থেকে তাদের বন্দি করা হয়।

ইউনাইটেড ভয়েসেস ফর আমেরিকা-এর প্রেসিডেন্ট আহমেদ বেদিয়ের বলেছেন,  এসব ছবি ভয়াবহ। এটি অসম্মান ও মানসিক যুদ্ধের একটি উপায়। যা ফিলিস্তিনিদের মনোবল ভেঙে দিতে এবং আশ্রয়কেন্দ্রও যে নিরাপদ নয়, সেই  বার্তা দিতে ব্যবহার করা হচ্ছে।

দ্য নিউ আরব নামে পরিচিত সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, তাদের প্রতিনিধি দিয়া আল-কাহলুত এই বন্দিদের মধ্যে রয়েছেন। তাকে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সাংবাদিকের সঙ্গে তার ভাই ও আত্মীয়দেরও বন্দি করা হয়েছে। সব বন্দিকে অন্তর্বাস ছাড়া সব পোশাক খুলে ফেলতে বাধ্য করা হয়। অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যাওয়ার আগে তাদের দেহ তল্লাশি করা হয়েছে। 

আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন

ফিলিস্তিনি সশস্ত্র গোষ্ঠী হামাস শুক্রবার এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছে। তারা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোকে বিষয়টি তদন্তের আহ্বানও জানিয়েছে।

হামাসের কর্মকর্তা ইজ্জাত আল-রিশেক এক বিবৃতিতে বলেছেন, অপমানমূলক পন্থায় অন্তর্বাস বাদে বাকি সব পোশাক খুলে নেওয়া জায়নবাদী অপরাধ। ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ গোষ্ঠীর হাতে ইসরায়েলের সেনা ও কর্মকর্তারা যে বড় পরাজয়ের মুখোমুখি হয়েছে সেটির প্রতিশোধ নিচ্ছে তারা আমাদের আত্মরক্ষায় অসক্ষম বেসামরিকদের ওপর।

গাজায় নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে সন্তান কোলে নিয়ে এক ফিলিস্তিনি। ছবি: এপি

বিবৃতিতে আরও বলা হয়েছে, বন্দিদের জীবন ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করা দখলদারদের দায়িত্ব। হস্তক্ষেপের জন্য আমরা সব মানবাধিকার, মানবিক সংগঠন ও প্রতিষ্ঠানকে আহ্বান জানাচ্ছি।

আল জাজিরা ফিশার বলেছেন, বন্দিদের সঙ্গে যে আচরণ, ছবি তোলা এবং প্রকাশ করা হয়েছে তা অবশ্যই আন্তর্জাতিক বন্দি আইনের লঙ্ঘন। তাদের কী ঘটেছে বা কোথায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা একেবারে অস্পষ্ট থাকা আন্তর্জাতিক ত্রাণ ও মানবাধিকার সংস্থার জন্য উদ্বেগের বিষয়।

ইসরায়েলি সেনাদের অবস্থানমূলক স্থান থেকে ছবি ও ভিডিও ধারণ করা হয়েছে। একটি ক্লিপে দেখা গেছে, বড় একটি রাস্তায় কয়েক ডজন মানুষ আড়াআড়ি পায়ে তিনটি সারিতে এবং মাথা নিচু করে চারটি সারিতে রয়েছেন।

এক ছবিতে দেখা গেছে, অ্যাসল্ট রাইফেল হাতে একটি দেয়ালের পাশে হাঁটু গেড়ে থাকা কয়েক ডজন মানুষকে পাহারা দিচ্ছেন ইসরায়েলি সেনারা। আরেক ছবিতে দেখা গেছে, একটি ফাঁকা মাঠে বন্দিদের সারিবদ্ধভাবে রাখা হয়েছে।

শেষ ভিডিওতে দেখা গেছে, বন্দিদের গাদাগাদি করে সেনাবাহিনীর একটি ট্রাকে তোলা হয়েছে।

ইসরায়েল বলেছে, ৭ অক্টোবর দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে হামাসের হামলার পর গাজা ও দখলকৃত পশ্চিম তীরে হাজারো ফিলিস্তিনিকে আটক ও জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। ওই হামলার পর গাজায় বিমান হামলা ও স্থল অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, ৭ অক্টোবর থেকে গাজায় নিহতের সংখ্যা ১৭ হাজার ছাড়িয়ে গেছে। ইসরায়েলের দাবি, হামাসের হামলায় ১ হাজার ১৫০ জন নিহত হয়েছেন।

/এএ/
সম্পর্কিত
ভারতীয় পর্যটন প্রচারের আকর্ষণ এখন ব্রিটিশ এফ-৩৫ যুদ্ধবিমান
দালাই লামার উত্তরসূরি, চীন-ভারত সংঘাত আর একটি সোনার কৌটো
ইউক্রেনের হামলায় রুশ নৌবাহিনীর উপ-কমান্ডার নিহতের দাবি
সর্বশেষ খবর
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
হাসপাতালের বারান্দায় দুই প্রসূতির সন্তান প্রসব, এক নবজাতকের মৃত্যু
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় সীসা কারখানায় অভিযান, তিন চীনা নাগরিকসহ ৬ জনকে কারাদণ্ড
পাবনায় দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
পাবনায় দুই শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগে যুবক গ্রেফতার
জাপার অফিস ভাঙচুর: নুরসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিতে বললেন আদালত
জাপার অফিস ভাঙচুর: নুরসহ ২৫ জনের বিরুদ্ধে মামলা নিতে বললেন আদালত
সর্বাধিক পঠিত
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের দ্বিতীয় সংশোধন উপদেষ্টা পরিষদে অনুমোদন
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
মুরাদনগরে দুই সন্তানসহ মাকে পিটিয়ে হত্যা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
এনবিআর নিয়ে ‘কঠোর’ সরকার, আতঙ্কে শীর্ষ কর্মকর্তারা
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
প্রশ্নপত্রে ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের বাড়ির গল্প, পরীক্ষা বাতিল
বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে রয়েছে বিশ্বকাপে খেলার হাতছানিও!
বাংলাদেশের মেয়েদের সামনে রয়েছে বিশ্বকাপে খেলার হাতছানিও!