বৈরুতসহ বিভিন্ন স্থানে বিমান হামলা, শক্তিশালী সশস্ত্র গোষ্ঠী হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহকে হত্যার পর এবার লেবাননে স্থল অভিযানের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসরায়েল। সোমবার লেবানন সীমান্তে সেনা উপস্থিতি বাড়ানোর পদক্ষেপ নিয়েছে নেতানিয়াহুর সরকার। হিজবুল্লাহর ভারপ্রাপ্ত প্রধান বলেছেন, ইসরায়েলি স্থল অভিযান মোকাবিলায় তাদের বাহিনী প্রস্তুত রয়েছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্রও মধ্যপ্রাচ্যে সেনা সংখ্যা বাড়িয়েছে। মার্কিন কর্মকর্তারা বলেছেন, পরিস্থিতি পর্যালোচনায় মনে হচ্ছে লেবাননে ইসরায়েলি স্থল অভিযান আসন্ন।
সোমবার ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়োভ গ্যালান্ট বলেছেন, হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে পরবর্তী পর্যায়ের যুদ্ধ শিগগিরই শুরু হবে। ইসরায়েলের উত্তরের সীমান্তের মেয়রদের সঙ্গে আলোচনায় তিনি বলেন, এই অভিযান ইসরায়েলের নিরাপত্তা পরিস্থিতির একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন ঘটাবে। বাস্তুচ্যুত নাগরিকদের তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে আনার সুযোগ করে দেবে।
তেল আবিবে ইসরায়েলের সামরিক সদর দফতরে সোমবার রাতে নিরাপত্তা মন্ত্রিসভার বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বৈঠকে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু একটি সীমিত স্থল আক্রমণের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করবেন।
উত্তর সীমান্তে সম্ভাব্য স্থল অভিযানের অনুমোদন
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) জানিয়েছে, হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে সম্ভাব্য স্থল অভিযানের প্রস্তুতি হিসেবে উত্তরাঞ্চলীয় কমান্ডের প্রধান মেজর জেনারেল ওরি গর্ডিন সম্প্রতি ৯৮তম, ৩৬তম এবং ৯১তম ডিভিশনের কমান্ডারদের সঙ্গে যুদ্ধ পরিকল্পনা অনুমোদন করেছেন। এছাড়া, ১৮৮তম সাঁজোয়া ব্রিগেড লেবানন সীমান্তের কাছে মহড়া পরিচালনা করেছে। এই মহড়ায় বিভিন্ন সুরক্ষা ইউনিট বিভিন্ন পরিস্থিতি মোকাবিলার প্রস্তুতি নিয়েছে।
আইডিএফ প্রধান হেরজি হালেভি কয়েক দিন আগে এই যুদ্ধ পরিকল্পনাগুলো অনুমোদন করেছেন।
আইডিএফ হিজবুল্লাহর বিরুদ্ধে আগাম পরিকল্পনা অনুযায়ী যুদ্ধ পরিচালনা করতে প্রস্তুত রয়েছে। উত্তরের সীমান্ত এলাকায় সামরিক তৎপরতা বাড়ানোর পাশাপাশি ইসরায়েল উত্তরাঞ্চলীয় নাগরিকদের পুনর্বাসনের জন্য একটি সুসংগঠিত কৌশল গ্রহণ করেছে। তবে যুদ্ধ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এবং আন্তর্জাতিক চাপের কারণে ইসরায়েলকে কিছুটা কৌশলগত পরিবর্তন আনতে হতে পারে।
প্রস্তুত হিজবুল্লাহ
ইসরায়েলের স্থল আক্রমণের জন্য হিজবুল্লাহ প্রস্তুত বলে ঘোষণা করেছেন গোষ্ঠীটির উপ-নেতা নাঈম কাসেম। সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) এক অজ্ঞাত স্থান থেকে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্যে ভাষণ দিয়ে তিনি এ ঘোষণা দেন। ইসরায়েলের সর্বশেষ আক্রমণে হিজবুল্লাহ প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ নিহত হওয়ার পর এটি ছিল কাসেমের প্রথম বক্তব্য।
নাঈম কাসেম বলেন, আমরা যেকোনও পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে প্রস্তুত এবং ইসরায়েল স্থলপথে প্রবেশ করলে আমরা স্থল যুদ্ধে অংশ নিতে প্রস্তুত।
তিনি আরও বলেন, ইসরায়েল লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না। আমরা আগেও জয়ী হয়েছি, এবারও জয়ী হবো।
হামলা অব্যাহত
হিজবুল্লাহ উপ-প্রধানের বক্তব্য দেওয়ার কয়েক ঘণ্টা আগে, ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী হামাস জানিয়েছে, লেবাননের টাইর শহরে ইসরায়েলি বিমান হামলায় তাদের নেতা ফাতেহ শেরিফ আবু আল-আমিন নিহত হয়েছেন। একই হামলায় তার স্ত্রী ও সন্তানও নিহত হন। বৈরুতের কেন্দ্রে প্যালেস্টাইন মুক্তি সংস্থা (পিএফএলপি)-এর তিন নেতা নিহত হয়েছেন। এটি ছিল লেবাননের রাজধানী সীমানার ভেতরে প্রথম হামলা।
যুক্তরাষ্ট্রের পর্যবেক্ষণ ও মধ্যপ্রাচ্যে সেনা বৃদ্ধি
যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ইসরায়েলের সেনাদের অবস্থান দেখে বোঝা যাচ্ছে যে লেবাননে সম্ভাব্য স্থল অভিযান আসন্ন হতে পারে। এই পর্যবেক্ষণের পর যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে আরও কয়েক হাজার সেনা মোতায়েনের ঘোষণা দিয়েছে।
পেন্টাগনের মুখপাত্র সাব্রিনা সিং বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে বাড়তি নিরাপত্তার জন্য যুদ্ধবিমান স্কোয়াড্রনসহ বেশ কিছু সামরিক ইউনিট পাঠানো হয়েছে। এফ-১৫ই স্ট্রাইক ঈগল, এফ-১৬, এ-১০ এবং এফ-২২ ফাইটার জেট স্কোয়াড্রনসহ প্রয়োজনীয় সামরিক কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে।
এছাড়া, মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন ঘোষণা করেছেন, ইউএসএস আব্রাহাম লিংকন ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ এবং তার সহগামী স্কোয়াড্রনগুলো এই অঞ্চলে তাদের মিশন সম্প্রসারণ করবে।
হামলা বাড়ানোর ঘোষণা হুথিদের, মার্কিন ড্রোন ভূপাতিত
ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলের হামলার জবাবে তাদের সামরিক অভিযান বাড়ানোর ঘোষণা দিয়েছে। সম্প্রতি হুথিরা আরেকটি মার্কিন এমকিউ-৯ রিপার ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে। ইয়েমেনের সাদা প্রদেশে ড্রোনটিকে ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে ভূপাতিত করার ভিডিও অনলাইনে ছড়িয়ে পড়েছে।
ইসরায়েলি বিমান হামলায় ইয়েমেনের হোদেইদা শহরে পাঁচজন নিহত এবং ৫৭ জন আহত হয়েছে। হুথিরা ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা অব্যাহত রেখেছে। এর জবাবে ইসরায়েলি বিমান বাহিনী হুথি নিয়ন্ত্রিত এলাকায় পাল্টা হামলা চালিয়েছে।
এই ঘটনার ফলে লোহিত সাগরের নৌপথে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচল বিপন্ন হয়েছে। প্রায় ১ ট্রিলিয়ন ডলারের পণ্য পরিবহনের একটি গুরুত্বপূর্ণ এই নৌপথ। যুদ্ধবিধ্বস্ত সুদান ও ইয়েমেনে ত্রাণ সরবরাহের জন্য অপরিহার্য এই রুটটি।
সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল, রয়টার্স, এপি