ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে ইসরায়েল পাল্টা হামলা চালালে এর পরিণতি ‘অপ্রচলিত প্রতিক্রিয়া’ ডেকে আনবে বলে হুমকি দিয়েছে ইরান। বৃহস্পতিবার কাতারের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রকে এই হুমকি দেওয়া হয়েছে। ইরানি এক কর্মকর্তা আল জাজিরাকে বলেছেন, এই প্রতিক্রিয়ায় ইসরায়েলি অবকাঠামোকে টার্গেট করা হতে পারে। ইরানের সাম্প্রতিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর নতুন উত্তেজনার প্রেক্ষিতে যুক্তরাষ্ট্রকে এ বার্তা পাঠানো হয়।
ইরানি কর্মকর্তার মতে, তেহরান বার্তায় যুক্তরাষ্ট্রকে জানিয়েছে যে, একতরফা সংযমের সময় শেষ হয়েছে এবং তা আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার প্রয়োজনীয়তা পূরণ করতে ব্যর্থ হচ্ছে। তবে বার্তায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, ইরান কোনও আঞ্চলিক যুদ্ধ চায় না।
মঙ্গলবার ইরানের ইসলামিক রেভ্যুলিউশনারি গার্ড কর্পস (আইআরজিসি) ইসরায়েলের সামরিক ও গোয়েন্দা লক্ষ্যবস্তুতে দুটি ধাপে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। ইরান দাবি করেছে, এই হামলা গাজা ও লেবাননে ইসরায়েলের হামলা এবং হিজবুল্লাহ ও হামাসের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের হত্যার প্রতিশোধ হিসেবে পরিচালিত হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনীর দাবি অনুযায়ী, প্রায় ২০০টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়, যেগুলোর বেশিরভাগই প্রতিহত করা হয়েছিল। ফলে বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতি বা প্রাণহানি ঘটেনি।
যুক্তরাষ্ট্র বারবার ইসরায়েলের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় ইরান এই বার্তা পাঠিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বাইডেন ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার জবাবে ইসরায়েলের প্রতিশোধ নেওয়ার অধিকারকে সমর্থন জানিয়েছেন। ইরানের এই বার্তা দুভাবে ব্যাখ্যা করা যেতে পারে বলে উল্লেখ করেছে আল জাজিরা। হয়তো ইরান শান্তিপূর্ণ সমাধান চায়, নয়তো ইসরায়েলের প্রতিশোধের জবাবে আরও বড় প্রতিক্রিয়া দেখানোর হুমকি দিচ্ছে।
ইরানি এক কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্রকে বার্তায় ইরান বলেছে যে, ইসরায়েলের অবাধ উন্মত্ততা বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। ইসরায়েল বর্তমানে দক্ষিণ লেবাননে স্থল অভিযান পরিচালনা করছে এবং বৈরুতসহ লেবাননের বিভিন্ন স্থানে বোমা হামলা অব্যাহত রেখেছে। এই হামলায় ইতোমধ্যে সহস্রাধিক মানুষ নিহত হয়েছেন এবং ১০ লাখেরও বেশি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।
গাজায় ইসরায়েলি হামলা প্রায় এক বছর আগে শুরু হয়েছিল। যা এখনও চলমান রয়েছে। এই আক্রমণে গাজার জনসংখ্যার প্রায় ৯০ শতাংশ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং মানবিক সংকট আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে। ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এই আক্রমণে প্রায় ৪২ হাজার মানুষ নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই নারী ও শিশু।
ইরানি বিশেষজ্ঞ তৌহিদ আসাদি আল জাজিরাকে বলেন, ইরান আঞ্চলিক যুদ্ধ চায় না। তবে ইসরায়েল তাদের ধৈর্য পরীক্ষা করে যাচ্ছে। ইরান কোনও যুদ্ধ চায় না বললেও, তারা যুদ্ধের ভয়ও পাচ্ছে না। ইরানের ধৈর্যের সীমা রয়েছে এবং ইসরায়েল আরেকটি হামলা করলে এর ফলাফল হবে কঠোর। ইরান এখন আর চুপ করে বসে থাকবে না, কারণ তাদের ধৈর্য শেষের পথে।
সামরিক বিশ্লেষক এলিয়াহ ম্যাগনিয়ার আল জাজিরাকে বলেন, ইরানের সামনে এখন দুটি পথ খোলা: হয় তাদের মিত্রদের পরাজিত হওয়ার অপেক্ষা করা, নয়তো এখনই যুদ্ধে অংশগ্রহণ করা। ইসরায়েলের আর কোনও হামলা সহ্য করবে না ইরান। কারণ তারা মনে করে ইসরায়েল দুবার হামলা করেছে, এখন ইরানও দুবার প্রতিশোধ নিয়েছে।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনার প্রেক্ষিতে আঞ্চলিক নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরও জটিল আকার ধারণ করতে পারে। ইরানের বার্তা স্পষ্ট: ইসরায়েল নতুন কোনও আক্রমণ করলে তার প্রতিক্রিয়া হবে অপ্রচলিত। এতে পুরো অঞ্চলে সহিংসতা বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র: আল জাজিরা