গাজার বাসিন্দা ও চার সন্তানের বাবা মাহমুদ আল-হাও আকুতি জানিয়ে বলছিলেন, আমার শিশু-কন্যা অসুস্থ। তার জন্য কিছুই দিতে পারছি না। রুটি নেই, কিছুই নেই।
ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া গাজার জাবালিয়া এলাকায় প্রতিদিনই খাবারের খোঁজে বের হন হাও। কখনও ছয় ঘণ্টা অপেক্ষা করেও বাড়ি ফিরতে হয় খালি হাতে। আবার কোনও কোনও দিন ভাগ্য ভালো হলে মসুর ডালের স্যুপ জোটে।
মঙ্গলবার খাবার বিতরণ কেন্দ্রে ভিড় করছেন হাওসহ বহু ফিলিস্তিনি। কাঁদছে ছোট ছোট শিশুরা। কেউ একজন প্লাস্টিকের বেসিন বাড়িয়ে দিচ্ছে এক চামচ স্যুপ পাওয়ার আশায়। হাও ভিড় ঠেলে এক বাটি খাবার সংগ্রহ করে ফিরে যাচ্ছেন।
৩৯ বছর বয়সী হাও বলেন, সকালে আটটা থেকে এখানে দাঁড়িয়ে আছি। ছয়জনের জন্য এক প্লেট খাবার পেলাম, যা আসলে এক জনের জন্যও যথেষ্ট নয়।
চলতি বছরের মার্চ থেকে গাজায় চিকিৎসা, খাদ্য ও জ্বালানির প্রবেশ বন্ধ করে রেখেছে ইসরায়েল। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সোমবার কিছু ত্রাণবাহী ট্রাক প্রবেশ করলেও মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত জাতিসংঘ জানিয়েছে, কোনও ত্রাণই বিতরণ করা যায়নি।
এদিকে যুদ্ধ আরও তীব্র হয়েছে। গত সপ্তাহে হামাসের বিরুদ্ধে নতুন সামরিক অভিযান শুরু করেছে ইসরায়েলি বাহিনী। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের তথ্যমতে, গত আট দিনে ইসরায়েলি হামলায় নিহত হয়েছেন ৫০০ জনের বেশি।
ইসরায়েলের এই অভিযানে বিশ্বজুড়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছে। ফ্রান্স, জার্মানি, ব্রিটেনসহ ইউরোপীয় দেশগুলো গাজায় পরিস্থিতিকে ‘অসহনীয়’ বলছে। এমনকি দেশটির দীর্ঘদিনের মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও এখন সমর্থনে দ্বিধান্বিত।
ইসরায়েল অবশ্য গাজায় দুর্ভিক্ষের অভিযোগ অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, হামাস যাতে ত্রাণদ্রব্য আত্মসাৎ করতে না পারে, সেজন্যই অবরোধ। হামাস বলছে, ইসরায়েল খাদ্যকে যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করছে।
গাজায় চলমান যুদ্ধ ২০তম মাসে গড়িয়েছে। অথচ এই সময়েও সাধারণ ফিলিস্তিনিদের জন্য কোনও স্থায়ী সমাধানের পথ বের হয়নি।
হাও বলেন, যুদ্ধ শুরুর আগেও তাদের জীবন ছিল কষ্টের। জাবালিয়ায় তাদের বাড়ির চারপাশে এখন ধ্বংসস্তূপ। তার মেয়ের হৃদরোগ ও হাঁপানি আছে। বাড়িতে থাকে হাঁটতে অক্ষম একটি ভাতিজিও।
হাও যখন খাবার নিয়ে ঘরে ফেরেন, তার চার সন্তান ও ভাইয়ের দুই শিশু মেঝেতে বসে অপেক্ষা করছিল। টিনের বাটিতে সুপ ঢেলে তিনি সবার হাতে তুলে দেন। শিশুরা ধীরে ধীরে খাবার খায়।
হাও বলেন, আলহামদুলিল্লাহ, দেখছেন তো, এটাই আমাদের নাশতা, দুপুর আর রাতের খাবার। আগের দিন তো কিছুই ছিল না। আমি চাই সবাই আমাদের পাশে দাঁড়াক। আমাদের শিশুরা ধীরে ধীরে মারা যাচ্ছে।
সূত্র: রয়টার্স