গাজায় যুদ্ধবিরতির একটি নতুন মার্কিন প্রস্তাবে সম্মতি দিয়েছে হামাস। সোমবার (২৬ মে) বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক বিবৃতিতে ফিলিস্তিনের এক কর্মকর্তা জানান, যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের প্রস্তাবকে ইতিবাচকভাবে গ্রহণ করেছে হামাস। এতে দীর্ঘ সাত মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘাতের অবসান ঘটার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। তবে ইসরায়েলের এক কর্মকর্তা প্রস্তাবটি ওয়াশিংটনের বলে যে দাবি করা হয়েছে তা প্রত্যাখ্যান করেছেন এবং বলেছেন কোনও ইসরায়েলি সরকার তা মেনে নেবে না।
জিম্মি মুক্তি ও গাজায় যুদ্ধবিরতির জন্য হামাস তার প্রস্তাব গ্রহণ করার বিষয়টি প্রত্যাখ্যান করেছেন উইটকফ। মার্কিন দূত বলেছেন, তিনি যা দেখেছেন তা একেবারে অগ্রহণযোগ্য এবং যে প্রস্তাব নিয়ে আলোচনা হচ্ছে তা তার প্রস্তাব নয়।
সূত্র জানায়, মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে প্রস্তাবটি হামাসের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। এতে দুই ধাপে ১০ জন জীবিত ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দেওয়া এবং ৭০ দিনব্যাপী যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করার কথা বলা হয়েছে। একইসঙ্গে গাজা উপত্যকা থেকে ইসরায়েলের আংশিক সেনা প্রত্যাহারও অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
প্রস্তাব অনুযায়ী, ইসরায়েলও কয়েকশ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দেবে। এদের অনেকে দীর্ঘ মেয়াদে কারাবন্দি।
গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাসের সম্মতির খবর প্রকাশের পর এক ইসরায়েলি কর্মকর্তা ওই প্রস্তাব সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছেন। তিনি বলেন, কোনও দায়িত্বশীল সরকার এমন একটি চুক্তি মেনে নিতে পারে না।
একইসঙ্গে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফের দেওয়া প্রস্তাবের সঙ্গে এ চুক্তির মিল থাকার দাবি নাকচ করে দেন।
এ বিষয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দেওয়া এক ভিডিও বার্তায় বলেন, আমি খুবই আশাবাদী যে আজকের মধ্যেই, আর যদি না হয়, তবে আগামীকাল হামাসের বিরুদ্ধে আমাদের লড়াই এবং জিম্মিদের মুক্তি বিষয়ে কিছু অগ্রগতি জানাতে পারব।
তবে ভিডিওটি নিয়ে নেতানিয়াহুর কার্যালয় তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য করেনি।
জানুয়ারির যুদ্ধবিরতির একটি চুক্তি কার্যত বাতিল করে চলতি বছরের ১৮ মার্চ নতুন করে গাজায় সামরিক অভিযান শুরু করে ইসরায়েল। এর দুদিন পর হামাস ও তার মিত্র গোষ্ঠীগুলো পাল্টা রকেট হামলা ও আক্রমণ শুরু করে।
হামাস আগে থেকেই বলে আসছে, তারা ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে হামলার সময় যেসব ইসরায়েলিকে জিম্মি করা হয়েছিল, তাদের সবাইকে মুক্তি দিতে প্রস্তুত। তবে এর জন্য ইসরায়েলের গাজা থেকে পূর্ণাঙ্গ সেনা প্রত্যাহার ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতির প্রতিশ্রুতি চায় তারা।
ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বারবার বলেছেন, কেবল জিম্মি মুক্তির বিনিময়ে সীমিত সময়ের যুদ্ধবিরতিতে রাজি ইসরায়েল। তার দাবি, যুদ্ধ থামবে তখনই, যখন হামাসকে সম্পূর্ণ নির্মূল করা হবে।
গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের আকস্মিক সীমান্ত পেরিয়ে হামলায় প্রায় ১ হাজার ২০০ ইসরায়েলি নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করে গাজায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপরই গাজায় ব্যাপক বিমান ও স্থল অভিযান শুরু করে ইসরায়েল।
গাজা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, এ পর্যন্ত ৫৪ হাজারের কাছাকাছি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। ধ্বংসস্তূপে পরিণত হওয়া উপত্যকায় চরম অপুষ্টির লক্ষণ ব্যাপকভাবে দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থাগুলো।