X
বুধবার, ১৮ জুন ২০২৫
৪ আষাঢ় ১৪৩২

হামলার সিদ্ধান্তে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিধা, প্রতিশোধের জন্য প্রস্তুত ইরান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১৮ জুন ২০২৫, ১৭:২৯আপডেট : ১৮ জুন ২০২৫, ১৭:৪৫

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধের ষষ্ঠ দিনে এসে সরাসরি যুদ্ধে জড়াতে পারে যুক্তরাষ্ট্র। এমনিতেই ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় সামরিক ও কূটনৈতিক সমর্থনকারী দেশ হিসেবে যুদ্ধে পরোক্ষভাবে সক্রিয় রয়েছে মার্কিন প্রশাসন। তবে, একেবারে সরাসরি প্রকাশ্যে যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িয়ে পড়া নিয়ে আলোচনা জোরদার হয়েছে।

মঙ্গলবার রাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজ দেশের জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদ ও ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে ফোনে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন। যুদ্ধের সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ গতিপথ এবং তাতে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিয়ে এই আলোচনা হয় বলে জানিয়েছে হোয়াইট হাউজ।

ইসরায়েলের স্থানীয় সময় রাত ১টায় নেতানিয়াহুর সঙ্গে ট্রাম্পের ফোনালাপ শেষ হয়। নেতানিয়াহু বলেন, যুদ্ধ শুরুর পর থেকে আমি প্রতিদিনই ট্রাম্পের সঙ্গে কথা বলছি। তার ভাষ্য অনুযায়ী, ইসরায়েল একা নয়, যুক্তরাষ্ট্র এই যুদ্ধে তাদের কৌশলগত সহযোগী হিসেবেই পাশে আছে।

মঙ্গলবার ট্রাম্প সাফ জানিয়ে দেন, আমরা এখন ইরানের আকাশপথের পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছি। আমি চাই ইরান এখনই নিঃশর্তে আত্মসমর্পণ করুক।

তিনি আরও বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি কোথায় আছেন তা যুক্তরাষ্ট্র জানে। তবে এখনই তাকে হত্যা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র।  

হোয়াইট হাউজ জানিয়েছে, জাতীয় নিরাপত্তা পরিষদের সঙ্গে ট্রাম্পের বৈঠক প্রায় দেড় ঘণ্টা স্থায়ী হয়। তবে বৈঠকে সরাসরি হামলার বিষয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল বলছে, হামলা ছিল কেবল আলোচনার ‘একটি বিকল্প মাত্র’। ট্রাম্প এখনও আশা করছেন, চাপের মুখে ইরান শান্তিপূর্ণ উপায়ে পারমাণবিক কর্মসূচি বন্ধ করতে রাজি হবে।

অন্যদিকে, ইরান বা যুক্তরাষ্ট্র কেউই বসে নেই। লোহিত সাগর থেকে পারস্য উপসাগর পর্যন্ত অস্থিরতা বাড়ছে।

রয়টার্স ও এপির প্রতিবেদন অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে অতিরিক্ত যুদ্ধবিমান, রিফুয়েলিং ট্যাংকার ও দুটি বিমানবাহী রণতরী পাঠাচ্ছে। এর মধ্যে একটি হলো ইউএসএস নিমিটজ। এটির ভিয়েতনামে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু তা বাতিল করে মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করা হচ্ছে।

ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপে ৩০টির বেশি রিফুয়েলিং বিমান পাঠিয়েছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে অবস্থানরত ৪০ হাজার মার্কিন সেনাকে ‘হাই অ্যালার্টে’ অবস্থায় রাখা হয়েছে।

মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর জানিয়েছে, ইসরায়েলে নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতির কারণে জেরুজালেম ও তেল আবিবের মার্কিন কনস্যুলার দফতর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সপ্তাহব্যাপী বন্ধ থাকার ঘোষণা দিয়ে মার্কিন দূতাবাস বলেছে, মার্কিন নাগরিকদের সরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে এখনও কোনও পরিকল্পনা নেই।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ধ্বংসে শুধু ইসরায়েলের পক্ষে যথেষ্ট আঘাত ও ক্ষতি করা সম্ভব নয়। বিশেষ করে ফরদো পারমাণবিক স্থাপনায়। কারণ এটি একটি পাহাড়ের নিচে অবস্থিত। সেখানে ইসরায়েলি অস্ত্র কার্যকর নাও হতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্র তাদের বি-২ স্টিলথ বোমারু বিমান দিয়ে ৩০ হাজার পাউন্ড ওজনের ‘ম্যাসিভ অর্ডন্যান্স পেনেট্রেটর’ দিয়ে আঘাত হানার কথা ভাবছে।

একজন ইসরায়েলি সামরিক কর্মকর্তা বলেছেন, ফরদোর জন্য পরিকল্পনা আছে এবং তা বাস্তবায়নের সক্ষমতাও রয়েছে। তবে বিস্তারিত কিছু বলেননি তিনি।

তেহরান স্পষ্টভাবে জানিয়ে দিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি যুদ্ধে জড়ালে তারা মধ্যপ্রাচ্যে থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে আঘাত হানবে। সূত্রের বরাতে নিউ ইয়র্ক টাইমস বলছে, ইরান এরই মধ্যে তাদের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করেছে। প্রথম হামলার লক্ষ্য হতে পারে ইরাকে থাকা মার্কিন ঘাঁটিগুলো। পরবর্তীতে বাহরাইন, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মার্কিন ঘাঁটিগুলোতে হামলার আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

এছাড়া পারস্য উপসাগরে বিস্ফোরক মাইন বসিয়ে মার্কিন নৌবহরের চলাচল বাধাগ্রস্ত করতে পারে ইরান। এপি জানিয়েছে, মঙ্গলবার তোলা উপগ্রহচিত্রে দেখা গেছে, বাহরাইনে মার্কিন নৌবাহিনীর ৫ম নৌবহরের ঘাঁটিতে আর কোনও জাহাজ নোঙর করা নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি সংকটকালে ব্যবহৃত নিরাপত্তা কৌশল।

ইরান-সমর্থিত হুথি বিদ্রোহী গোষ্ঠী যুদ্ধে ফের সক্রিয় হতে পারে। মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে এক প্রকার সমঝোতায় পৌঁছালেও ইসরায়েলে এখনও তারা ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে যাচ্ছে। সিরিয়া ও ইরাকে ইরানপন্থি গোষ্ঠীগুলো মার্কিন ঘাঁটিতে হামলা করতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

জানুয়ারিতে জর্ডানে এক মার্কিন ঘাঁটিতে ড্রোন হামলায় তিন মার্কিন সেনা নিহত হয়েছিল। সেই হামলার পেছনেও একটি ইরানপন্থি গোষ্ঠী ছিল।

এদিকে, ইরানের অন্যতম শক্তিশালী মিত্র লেবাননের হিজবুল্লাহ গোষ্ঠী এখনও সক্রিয় হয়নি। ইসরায়েলের সঙ্গে সাম্প্রতিক যুদ্ধেই তাদের অস্ত্রভাণ্ডার ধ্বংস হয়েছে এবং প্রভাব হ্রাস পেয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

এই যুদ্ধের সূচনা হয়েছিল গত সপ্তাহে, ইসরায়েলের ‘অপারেশন রাইজিং লায়ন’-এর মাধ্যমে। ইসরায়েল দাবি করে, ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র সক্ষমতা তাদের অস্তিত্বের জন্য হুমকি। ইতোমধ্যে ইরান শত শত ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ছুড়েছে ইসরায়েলের দিকে। তেহরান দাবি করে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি শান্তিপূর্ণ।

সূত্র: টাইমস অব ইসরায়েল

/এএ/এমওএফ/
সম্পর্কিত
মধ্যপ্রাচ্য কি না ফেরার অবস্থায় পৌঁছে যাচ্ছে? 
কাশ্মীর নিয়ে তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা চায় না ভারত: ট্রাম্পকে মোদি
তেহরান থেকে বাংলাদেশিদের নিরাপদ স্থানে যাওয়ার ব্যবস্থা করছে দূতাবাস
সর্বশেষ খবর
একদিনে আরও ২৮ জনের করোনা শনাক্ত
একদিনে আরও ২৮ জনের করোনা শনাক্ত
জেএসএসের বিরুদ্ধে শিক্ষক ও স্থানীয়দের শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ
জেএসএসের বিরুদ্ধে শিক্ষক ও স্থানীয়দের শারীরিক নির্যাতনের অভিযোগ
ডিএমপির মাসিক অপরাধ সভায় শ্রেষ্ঠ হলেন যারা
ডিএমপির মাসিক অপরাধ সভায় শ্রেষ্ঠ হলেন যারা
মধ্যপ্রাচ্য কি না ফেরার অবস্থায় পৌঁছে যাচ্ছে? 
মধ্যপ্রাচ্য কি না ফেরার অবস্থায় পৌঁছে যাচ্ছে? 
সর্বাধিক পঠিত
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে হট্টগোল
ঐকমত্য কমিশনের বৈঠকে হট্টগোল
সিরিয়ার আকাশ দিয়ে ইরানে বোমা ফেলছে ইসরায়েল: নীরব সরকার, বাড়ছে ক্ষোভ
সিরিয়ার আকাশ দিয়ে ইরানে বোমা ফেলছে ইসরায়েল: নীরব সরকার, বাড়ছে ক্ষোভ
আরও একমাসের ছুটিতে ২ বিচারপতি
আরও একমাসের ছুটিতে ২ বিচারপতি
দেশে প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে গুগল পে: ডিজিটাল লেনদেনে নতুন যুগের সূচনা
দেশে প্রথমবারের মতো চালু হচ্ছে গুগল পে: ডিজিটাল লেনদেনে নতুন যুগের সূচনা
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে রাশিয়ার লাভ-লোকসানের সমীকরণ
ইরান-ইসরায়েল সংঘাত নিয়ে রাশিয়ার লাভ-লোকসানের সমীকরণ