জার্মানির সাবেক একনায়ক এডলফ হিটলারের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যের সঙ্গে ইউরোপীয় ইউনিয়নের উদ্দেশ্যের মিল খুঁজে পেয়েছেন একজন প্রভাবশালী ব্রিটিশ এমপি। লন্ডনের সাবেক মেয়র ও ব্রিটিশ টোরি এমপি বরিস জনসন অভিযোগ করেছেন, হিটলার যেমন করে গোটা ইউরোপকে একটি একক শাসনব্যবস্থার আওতায় আনতে চেয়েছিলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নও তাই চায়। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে হিটলারের তুলনাকে ‘আক্রমণাত্মক ও বেপরোয়া’ বলেছেন শ্যাডো পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি বেন। এ ঘটনায় ক্ষোভও জানিয়েছেন তিনি।
আসছে ২৩ জুন ইউরোপীয় ইউনিয়নে যুক্তরাজ্যের থাকা না থাকার প্রশ্নে নিজেদের রায় দেবেন ব্রিটিশ জনগণ। ওইদিন অনুষ্ঠিত গণভোটেই নির্ধারিত হবে ব্রিটেনের পরিণতি। আর সে গণভোটকে সামনে রেখে রাজনীতিকদের পাশাপাশি জনগণও বিভক্ত হয়ে পড়েছেন। রক্ষণশীলদের একটা বড় অংশ চাইছে যুক্তরাজ্য ইউরোপীয় ইউনিয়নেই থাকুক। সে লক্ষ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরনসহ অনেকেই প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। আর যারা জাতীয়তাবাদী, তারা চাইছে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে আসতে। দেশটির প্রধান বিরোধী ফোর্স লেবার পার্টির শীর্ষ নেতা জেরেমি করবিনও ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে বের হয়ে যাওয়ার পক্ষে। এদিকে সরকারি দলের গুরুত্বপূর্ণ কোনও কোনও ব্যক্তিও নিজ দলের অবস্থানের বাইরে এসে দ্বিতীয় দলের সঙ্গে এ নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। বরিস জনসনও তেমনই একজন। টোরি এমপি হওয়ার পরও তিনি চান যুক্তরাজ্য ইইউ থেকে বেরিয়ে আসুক। আরও পড়ুন: ব্রেক্সিট: কিছু প্রশ্ন এবং উত্তর
সম্প্রতি ইইউ’র কর্মকাণ্ড সম্পর্কে ক্ষোভ জানিয়ে সানডে টেলিগ্রাফকে বরিস জনসন বলেন, ইউরোপের ইতিহাসে বারবার একই ঘটনার পুনারাবৃত্তি হচ্ছে। রোমানদের নেতৃত্বে শান্তি ও সমৃদ্ধির স্বর্ণ যুগকে নতুন করে আবিষ্কারের জন্য বার বার চেষ্টা চলেছে। জার্মানির নাৎসি নেতা হিটলার এবং ফরাসি নেতা নেপোলিয়ন দুজনই ইউরোপ দখলের চেষ্টা করেছেন। তাদের মতো আরও অনেকে পুরো ইউরোপের ওপর কর্তৃত্ব করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছে। ইইউও ভিন্ন পদ্ধতিতে একই উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা করছে। তবে মূল সমস্যা হলো এখানে এমন কোনও একক নেতৃত্ব নেই, যাকে সবাই বুঝতে পারে অথবা সম্মান করে।’
এর মধ্যে বরিস জনসনের মন্তব্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ জানিয়েছেন ইইউপন্থীরা। বরিসের মন্তব্যকে লজ্জাজনক ও অবিবেচক বলে উল্লেখ করেছেন সাবেক লেবারমন্ত্রী ইভেত্তে কুপার। ওই মন্তব্য প্রত্যাখ্যান করে শ্যাডো পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি বেন বলেন, ‘ইইউ থেকে বের হয়ে আসার পক্ষের লোকজন আগেই অর্থনৈতিক যৌক্তিকতা হারিয়েছে। আর এখন তারা নৈতিকতাও হারাচ্ছেন।’
আরও পড়ুন: ইইউ থেকে যুক্তরাজ্যের বেরিয়ে আসার প্রশ্নে ওবামার হুঁশিয়ারি, ক্ষুব্ধ ইইউবিরোধীরা
তবে বরিস জনসনের মন্তব্যকে সমর্থন জানিয়েছেন ইইউবিরোধী টোরি নেতা জ্যাকব রেস মগ। তিনি বলেন, ‘বরিসের কথা একেবারেই সত্য। হিটলার আর নেপোলিয়ন ইউরোপে জোর করে একক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন। আর ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখন চৌর্যবৃত্তির মধ্য দিয়ে একই কাজ করার চেষ্টা করছে।’
বিবিসি জানায়, এরই মধ্যে ব্রিটেনের ইউকেআইপি নেতা নাইজেল ফারাজ পরবর্তী কনজারভেটিভ নেতা হিসেবে বরিসের নাম প্রস্তাব করেছেন। ইইউ নিয়ে ভোটে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন পদত্যাগ করলে তাকে প্রধানমন্ত্রী করার প্রস্তাব নাইজেলের।
এদিকে ব্যাংক অব ইংল্যান্ডের গভর্নর মার্ক কার্নি সতর্ক করে বলেছেন ইইউ থেকে বেরিয়ে আসার পক্ষে ভোট পড়লে ব্যাপক অর্থনৈতিক মন্দা দেখা দিতে পারে। সূত্র: বিবিসি
/এফইউ/বিএ/