একান্তে নারীদের সঙ্গে আচরণের ক্ষেত্রে সীমা অতিক্রমের অভিযোগ উঠেছে আসন্ন মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সম্ভাব্য প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম নিউ ইয়র্ক টাইমসের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নারীদের ‘সম্ভোগের বস্তু’ মনে করতেন এ ধনকুবের। ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠানে বা তার সঙ্গে কাজ করেছেন, এমন অর্ধশতাধিক নারীর সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে প্রতিবেদনটি তৈরি করা হয়। এর শিরোনাম ছিল, ‘ক্রসিং দ্য লাইন: হাউ ডোনাল্ড ট্রাম্প বিহেভড উইদ উইম্যান ইন প্রাইভেট।’ অর্থাৎ, ‘সীমা অতিক্রম: একান্তে নারীদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করতেন ট্রাম্প।’
অর্ধশতাধিক সাক্ষাৎকার নিয়ে করা এই প্রতিবেদনে ট্রাম্প সম্পর্কে নারীদের মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। অনেকের প্রতিক্রিয়াই নেতিবাচক। আবার কিছু নারী ট্রাম্পকে তাদের ক্যারিয়ার গড়ে দেওয়ার জন্য ধন্যবাদ দেন। ট্রাম্পের বিতর্কিত মন্তব্যকেও গুরুতর বলে মানতে নারাজ তারা।
নিউ ইয়র্ক টাইমসকে সাক্ষাৎকারদাতা নারীদের একজন হচ্ছেন ট্রাম্পের ম্যানহাটনের নির্মাণ ব্যবসার প্রধান দফতরের দেখভালকারী বারবারা রেস। তিনি বলেন, ট্রাম্প সভা চলাকালে প্রায়ই ইঙ্গিতপূর্ণভাবে তাকে ‘মৌচাক’ বলে ডাকতেন। ১৯৯০ সালে নিউইয়র্কের ডেপুটি মেয়র থাকা বারবারা ফাইল তখনকার কথা স্মরণ করে বলেন, তার সিটি হল অফিসে ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজ ব্যস্ততা দেখিয়ে ওই রাতে এক মডেলের সঙ্গে ‘গ্রেট ডেট’ থাকার কথা বলেছিলেন তাকে। এমনকি নিউইয়র্কের মিলিটারি স্টাইলের বোর্ডিং স্কুলেও মেয়েদের সঙ্গে ডেট করতে যেতেন বলে ‘লেডিস ম্যান’ খেতাব পেয়েছিলেন এই রিপাবলিকান প্রার্থী।
একবার সুইমিং পুলে পার্টি দিয়েছিলেন ট্রাম্প। এতে অংশ নিয়েছিলেন ৫০ জন নারী মডেল ও ৩০ জন পুরুষ। এর মধ্যে রোয়ান ব্রিউয়ার নামে এক মডেলের প্রতি আকৃষ্ট হন ট্রাম্প। প্রথম পরিচয়েই সবার কাছ থেকে আলাদা করে নিজের বিলাসবহুল বাড়ি দেখান তাকে। ক্ষণিকের পরিচয়েই ব্রিউয়ারকে পোশাক বদলে সাঁতারের পোশাক পরতে বাধ্য করেন ট্রাম্প। ওই ঘটনার সময় ব্রিউয়ারের বয়স ছিল ২৬। ওই সময় ৪৪ বছর বয়সী ট্রাম্পের প্রথম বিবাহ বিচ্ছেদের প্রক্রিয়া চলছিল।
মার্কিন মুলুকে ধনকুবের হিসেবে দীর্ঘদিন থেকেই পরিচিত ট্রাম্প। রিয়াল এস্টেট, ক্যাসিনো থেকে শুরু করে বিভিন্ন ব্যবসায় দীর্ঘদিন ধরেই জড়িত ট্রাম্প। একইসঙ্গে তিনি সুন্দরী প্রতিযোগিতারও আয়োজক।
সুন্দরী প্রতিযোগিতায় ট্রাম্পের অসদাচরণ:
ট্রাম্পের প্রতিষ্ঠান মিস ইউনিভার্স থেকে বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। ১৯৯৭ সালের বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া টেম্পল ট্যাগার্ট বলেন, লাইনে দাঁড় করিয়ে বিশ্বসুন্দরীদের খুব কাছ থেকে দেখতেন ট্রাম্প। এবং বিভিন্ন জন সম্পর্কে বিভিন্ন মন্তব্য করতেন। এছাড়া সব প্রতিযোগীরই ঠোঁটে চুমো দেওয়ার প্রবণতা ছিল ট্রাম্পের। বিষয়টি অধিকাংশ প্রতিযোগীই ভালোভাবে নেননি। তবে ট্রাম্পের দাবি, বিশ্বসুন্দরী প্রতিযোগিতার মাধ্যমে তিনি নারীদের এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ দিয়েছেন। এই কারণে হাজারো নারী উপকৃত হয়েছেন।
ট্রাম্পের বিরুদ্ধে এসব অভিযোগে অবশ্য এখন পর্যন্ত সেভাবে আমল দিতে নারাজ তার দল রিপাবলিকান পার্টি। রিপাবলিকান ন্যাশনাল কমিটির চেয়ারম্যান রিন্স প্রিবাস ফক্স নিউজকে বলেছেন, ট্রাম্পের নারীঘটিত সমস্যা নিয়ে জনগণের কোনও মাথাব্যথা নেই। সূত্র: দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস, ফক্স নিউজ।
/এমপি/