ভারতে বিতর্কিত তিনটি আইন বাতিলের দাবিতে কৃষকদের আন্দোলনের প্রতি বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসী শিখ সম্প্রদায় সমর্থন জানাচ্ছে। নিউ ইয়র্ক থেকে লন্ডন, টরন্টো থেকে সানফ্রান্সিসকো, অকল্যান্ড থেকে বার্লিন- এই সপ্তাহান্তে বিশ্বের বিভিন্ন শহরে ভারতীয় দূতাবাসের সামনে শিখরা বিক্ষোভ করছেন। আন্দোলনকারী কৃষকদের সমর্থনে গাড়ির মিছিল পর্যন্ত বের করছেন। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি এখবর জানিয়েছে।
কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো ইতোমধ্যে এই কৃষক আন্দোলনকে সমর্থন করে একাধিক বিবৃতি দিয়েছেন, ব্রিটেন, জার্মানি বা যুক্তরাষ্ট্রের শিখ রাজনীতিবিদরাও প্রকাশ্যেই তাদের সংহতি জানাচ্ছেন। কৃষক ও মেহনতি জনতার সমর্থনে দিল্লিতে 'কিষাণ-মজদুর একতা'র স্লোগান শোনা যাচ্ছে বেশ কিছুদিন ধরেই, কিন্তু এবার একই ধরনের আওয়াজ উঠছে সুদূর কানাডার টরন্টোতেও। কিংবা নিউ ইয়র্কে, কিংবা নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডেও।
নরেন্দ্র মোদির সরকার দেশের কৃষকদের সঙ্গে, বিশেষ করে পাঞ্জাবের চাষিদের সঙ্গে প্রতারণা করেছে বলেই এই শিখ বিক্ষোভকারীদের দৃঢ় বিশ্বাস।
টরন্টোতে একজন শিখ নারী বলেন, ডিসেম্বরে দিল্লির প্রবল শীতের মধ্যেও ট্রাক্টরে চেপে যে কৃষকরা প্রতিবাদ জানাতে এসেছেন, তাদের ওপর একটা সভ্য সরকার কীভাবে জলকামান দিয়ে ঠান্ডা জল ছিটাতে পারে? শীতের দিনগুলোয় তারা যাতে লম্বা সময় ধরে আন্দোলন চালাতে পারেন, তাই আমরা কানাডা থেকে তাদের জন্য গরম জামাকাপড়, কম্বল পাঠাচ্ছি।
টরন্টো, ভ্যাঙ্কুভারসহ কানাডার বিভিন্ন শহরে শিখরাও পথে নেমেছেন। সান ফ্রান্সিসকোতে শিখরা গলায় সবুজ কাপড় জড়িয়ে শনিবার জড়ো হয়েছিলেন ভারতীয় কনস্যুলেটের সামনে। তাদেরই একজন জগমিত সিং বলেন, সবুজ হলো কৃষিক্ষেতের প্রতীক, ফসলের প্রতীক। যে কৃষকরা তাদের অধিকার আদায়ের জন্য পথে নেমেছেন, তাদের প্রতি সংহতি জানাতেই শিখরা আজ সবুজকে আপন করে নিয়েছেন।
নিউ ইয়র্কের আন্দোলনে অংশ নেওয়া মানিন্দার সিং ব্যাখ্যা করে বলেন, এটি আসলে বিশ্বজুড়ে শিখদের আবেগের বহিঃপ্রকাশ- কারণ তাদের ভাই-বেরাদর, আত্মীয়-পরিজন কিংবা মা-বাবারাই আজ দিল্লিতে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনের ফ্রন্টলাইনে।
রবিবার সকালে নিউজিল্যান্ডের অকল্যান্ডেও ভারতে কৃষকদের প্রতি সংহতি জানিয়ে জড়ো হয়েছিলেন বেশ কয়েক হাজার শিখ। স্থানীয় গুরদোয়ারাতে স্বেচ্ছাসেবী তরুণ-তরুণীরা তাদের জন্য পোস্টার তৈরি করেছেন, লঙ্গরের ব্যবস্থাও করা হয়েছে।
পাশাপাশি ক্যালিফোর্নিয়ার বিভিন্ন শহরে পুরো সপ্তাহান্তে শিখদের গাড়ির মিছিল বেরিয়েছে, 'হঙ্ক ফর ফার্মার্স' স্লোগান দিয়ে কৃষকদের জন্য শিখ চালকরা ক্রমাগত হর্ন বাজিয়ে গেছেন।
বে এরিয়াতে আন্দোলনের আহ্বায়ক রাগিণী কাউর বলেন, দিল্লিতে যেভাবে কৃষকরা শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করছেন ঠিক সেভাবেই আমেরিকায় শিখ যুবকরাও শৃঙ্খলা রক্ষা করেই আন্দোলনে সংহতি জানাচ্ছেন।
রবিবার লন্ডনেও ভারতীয় হাই কমিশনের সামনে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন যুক্তরাজ্যের বহু শিখ সংগঠন। লেবার পার্টির শিখ এমপি, তনমনজিৎ দেসিও ঘোষণা করেছেন ভারতের কৃষকরা যাতে ন্যায় বিচার পান সেই জন্য এই আন্দোলনে তার সমর্থন আছে।
ব্রিটিশ পার্লামেন্টের আরও বহু এমপিও ভারতের আন্দোলনরত কৃষকদের সমর্থন জানাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন তিনি।