X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

‘আমি শোক পালন করতে পারি না’, রানির মৃত্যুতে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

আন্তর্জাতিক ডেস্ক
১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২২:১৫আপডেট : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২২, ২২:১৬

১৯৫২ সালে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ সিংহাসনে আরোহনের মাধ্যমে বিশ্বজুড়ে কয়েক কোটি প্রজা পেয়েছিলেন। এদের অনেকেই অনিচ্ছায় তার প্রজা হয়েছেন। এখন তার মৃত্যুতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সাবেক উপনিবেশগুলোতে ক্ষোভসহ মিশ্র প্রতিক্রিয়া জন্ম দিয়েছে।

আনুষ্ঠানিকভাবে রানির দীর্ঘায়ু ও সেবার প্রশংসা করে শোক প্রকাশের বাইরেও অতীত নিয়ে আফ্রিকা, এশিয়া, ক্যারিবীয় অঞ্চলে তিক্ততা রয়েছে। রানির মৃত্যুতে আলোচনা মোড় নিয়েছে উপনিবেশবাদের উত্তরাধিকার, দাসত্ব থেকে আফ্রিকার স্কুলগুলোতে দৈহিক শাস্তি, আফ্রিকা থেকে লুট করা প্রত্নবস্তু ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠানে প্রদর্শনে। অনেকের মতে, গত সাত দশক সিংহাসনে থেকে রানি এগুলোর প্রতিনিধিত্ব করেছেন।

সাত দশক আগে কেনিয়াতে অবস্থানকালেই তরুণ এলিজাবেথ জানতে পেরেছিলেন তার বাবার মৃত্যুর কথা। এখানে থাকতেই তিনি রানি হয়েছিলেন। অ্যালিস মুগো নামের এক আইনজীবী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একটি নথির ছবি প্রকাশ করেছেন। নথিটি ১৯৫৬ সালে জারি করা হয়েছিল। সিংহাসনে রানির চার বছর পূর্তিতে ছবিটি প্রকাশ করা হয়েছিল। একই সঙ্গে তা ছিল উপনিবেশিক শাসনের বিরুদ্ধে মাউ মাউ বিদ্রোহের প্রতি ব্রিটেনের কঠোর প্রতিক্রিয়ারও।

নথিটিতে লেখা রয়েছে, ‘মুভমেন্ট পারমিট’। মুগোর দাদির মতো লক্ষাধিক কেনিয়ার নাগরিককে ভয়াবহ অবস্থার মধ্যে ক্যাম্পে বন্দি করা হয়েছিল। এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় থেকে তাদের ব্রিটিশদের কাছ থেকে অনুমতি নিতে হত।

বৃহস্পতিবার রানির মৃত্যুর কয়েক ঘণ্টা পর মুগো টুইটারে লিখেছেন, ‘আমাদের বেশিরভাগ পূর্বপুরুষদের নির্যাতন করা হয়েছিল। আমি শোক পালন করতে পারি না।’

কেনিয়ায় মাউ মাউ বিদ্রোহের সময় লক্ষাধিক মানুষকে বন্দিশিবিরে রাখা হয়েছিল। ছবি: এপি

কেনিয়ার বিদায়ী প্রেসিডেন্ট উহুরু কেনিয়াত্তার বাবা জমো কেনিয়াত্তা রানির শাসনামলে কারাবন্দি ছিলেন। পরে ১৯৬৪ সালে তিনি কেনিয়ার প্রথম প্রেসিডেন্ট হয়েছিলেন। উহুরু অতীতের কথা মনে রাখতে চান না। যেমনটি করছেন আফ্রিকার অনেক রাষ্ট্রপ্রধান।

উহুরু কেনিয়াত্তা রানিকে ‘২০ ও ২১ শতাব্দীর সবচেয়ে আইকনিক ব্যক্তিত্ব’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

রানির মৃত্যুর পর সাবেক উপনিবেশগুলোতে সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। কেউ কেউ দাসত্বের মতো অতীত নিপীড়নের জন্য ক্ষমা চাওয়ার দাবি করেছেন, কেউ কেউ আরও বাস্তব কিছুর জন্য ক্ষমা চাইতে বলছেন।

জ্যামাইকার ক্ষতিপূরণ আদায় বিষয়ক জাতীয় কাউন্সিলের সদস্য বার্ট স্যামুয়েলস বলেন, দেশগুলোর কমনওয়েলথ হলেও সম্পদ ইংল্যান্ডের। এই সম্পদ কখনও বণ্টন হয়নি।

এলিজাবেথের শাসনামলে আফ্রিকার ঘানা থেকে জিম্বাবুয়েসহ অনেক দেশ স্বাধীনতা লাভ করেছে। একই সঙ্গে ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জ ও আরব উপদ্বীপের কিছু দেশও স্বাধীন হয়েছে।

কয়েকজন ইতিহাসবিদ সাম্রাজ্য থেকে কমনওয়েলথে শান্তিপূর্ণ রূপান্তরের জন্য রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের ভূমিকা রয়েছে বলে মনে করেন। কমনওয়েলথ ৫৬টি দেশের একটি স্বেচ্ছাসেবী জোট। যে দেশগুলোর মধ্যে ঐতিহাসিক ও ভাষাগত সম্পর্ক রয়েছে। তবে তিনি এমন একটি জাতির প্রতীক ছিলেন যারা প্রায়ই অধীনস্তদের নিপীড়ন করেছে।

১৯৫২ সালে ব্রিটিশদের তৈরি বন্দিশিবিরে কেনিয়ার নাগরিকরা। ছবি: এপি

মধ্যপ্রাচ্যে রানির মৃত্যু নিয়ে সাধারণ মানুষের শোক প্রকাশ বা আগ্রহের তেমন কোনও ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি। অঞ্চলটিতে এখনও অনেকেই মনে করেন, ব্রিটেনের উপনিবেশিক ভূমিকাতেই দেশগুলোর সীমান্ত রচিত হয়েছে এবং আধুনিক বিভিন্ন সংঘাতের শেকড়ও তাদের রোপন করা। শনিবার গাজার শাসক হামাস নতুন রাজা তৃতীয় চার্লসের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, ফিলিস্তিনিদের নিপীড়নের যে সিদ্ধান্ত ব্রিটিশরা নিয়েছে সেটি ‘সংশোধনের’ জন্য।

জাতিগতভাবে বিভক্ত সাইপ্রাসে গ্রিক সাইপ্রিয়টদের অনেকেই এখনও ১৯৫০ দশকে চার বছরব্যাপী গেরিলা যুদ্ধের কথা স্মৃতির ভুলেননি। এই গেরিলা যুদ্ধ ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশের বিরুদ্ধে। ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষ যাদের ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করেছিল তাদের মধ্যে ৯জনের প্রতি রানির উদাসীনতা ছিল বলে তাদের এখনও মনে হয়।

অ্যাসোসিয়েশন অব ন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব সাইপ্রিয়ট ফাইটার্সের সভাপতি ইয়ানিস স্প্যানোস বলেছেন, দ্বীপের অনেক মর্মান্তিক ঘটনার জন্য দায় রয়েছে রানির।

রানির মৃত্যুর পর উপনিবেশিক অতীতের মীমাংসা বা গোপন করতে নতুন উদ্যোগ রয়েছে। ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি উদ্যোগ নিয়েছেন উপনিবেশিক নাম ও প্রতীক মুছে ফেলার। ভারত অনেক এগিয়ে গেছে। এমনকি অর্থনীতির আকারে ব্রিটিশদের পেছনে ফেলেছে তারা।

দিল্লির ৫৭ বছর বয়সী উদ্যোক্তা ধীরেন সিং বলেন, আমার মনে হয় না কোনও রাজা ও রানির জন্য আমাদের কোনও জায়গা আছে। কারণ আমরা বিশ্বের বৃহত্তম গণতান্ত্রিক দেশ।

সূত্র: এপি

/এএ/
সম্পর্কিত
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভস্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করল ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
মারা গেলো গাজায় নিহত মায়ের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুটি
ইউক্রেনকে ৫৫০ কোটি ডলারের সহায়তা দেবে সুইজারল্যান্ড
সর্বশেষ খবর
স্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করল ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
যুক্তরাষ্ট্রে ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভস্নাতক অনুষ্ঠান বাতিল করল ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়
বৈশাখী মেলায় গানের আয়োজন, কমিটির সঙ্গে দর্শকদের সংঘর্ষে নিহত ১
বৈশাখী মেলায় গানের আয়োজন, কমিটির সঙ্গে দর্শকদের সংঘর্ষে নিহত ১
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলিউডের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেন ক্যাটরিনা!
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
হলও ছাড়েননি আন্দোলনেও নামেননি চুয়েটের শিক্ষার্থীরা
সর্বাধিক পঠিত
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
মৈত্রী ট্রেনে তল্লাশি, মুদ্রা পাচারের অভিযোগে আটক দুই বাংলাদেশি
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
আমরা সবাই ফেরেশতা, বাস করি বেহেশতে: রায়হান রাফী
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!