তরুণদের ধূমপানের প্রতি আকৃষ্ট করতে তামাক কোম্পানিগুলো বিভিন্ন কূটকৌশল ব্যবহার করছে বলে দাবি করেছে তরুণ চিকিৎকরা। তারা অভিযোগ করেন, কোম্পানিগুলো সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচির আড়ালে তামাকের প্রচারণা চালাচ্ছে। তাই তাদের এসব অপকৌশল বন্ধে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের মাধ্যমে শক্তিশালী করার দাবি জানিয়েছেন তরুণ চিকিৎসকরা।
শনিবার (২২ মার্চ) ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত ‘জনস্বাস্থ্যের সুরক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণে তরুণ চিকিৎসকদের ভূমিকা’ শীর্ষক কর্মশালায় এই দাবি করেন দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজে অধ্যয়নরত তরুণ চিকিৎসকরা।
তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বরাতে জানান, তামাক ব্যবহারজনিত কারণে বাংলাদেশে প্রতিবছর ১ লাখ ৬১ হাজার ২৫৩ জন মানুষ অকালে মারা যায়। এই প্রতিরোধযোগ্য অকাল মৃত্যু কমাতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোলের (এফসিটিসি) আলোকে বিদ্যমান আইনের ছয়টি ধারা সংশোধনের দাবি করেন।
সেগুলো হলো, সব পাবলিক প্লেসে ও পাবলিক পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের বিক্রয়স্থলে তামাকজাত পণ্য প্রর্দশনী নিষিদ্ধ করা; তামাক কোম্পানির যেকোনও ধরনের সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; ই-সিগারেটসহ সব ইমার্জিং টোব্যাকো প্রোডাক্টস্ পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা; তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট/কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা এবং বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা, মোড়কবিহীন এবং খোলা ধোঁয়াবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা।
কর্মশালায় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডশনের পক্ষ থেকে বলা হয়, বাংলাদেশের প্রাপ্তবয়স্ক ৩৫ দশমিক ৩ শতাংশ মানুষ তামাক ব্যবহার করেন এবং ধূমপান না করেও বিভিন্ন পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহনে প্রতিনিয়ত পরোক্ষ ধূমপানের শিকার হচ্ছেন প্রায় ৩ কোটি ৮৪ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ। এমন বাস্তবতায় অধূমপায়ীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কিন্তু তামাক কোম্পানিগুলো আইন সংশোধনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে। তারা রাজস্ব ও কর্মসংস্থান হারানোর ভিত্তিহীন তথ্য দিচ্ছে। তবে এনবিআর-এর তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০০৫ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন করার পরে পরবর্তী দুই অর্থবছরে সিগারেট খাতে রাজস্ব আয় বেড়েছে যথাক্রমে ১৭.৯৭ শতাংশ এবং ৩৭ দশমিক ৫২ শতাংশ। একইভাবে, ২০১৩ সালে সংশোধনীর পর পরবর্তী দুই অর্থবছরে সিগারেট খাতে রাজস্ব আয় বেড়েছে যথাক্রমে ২৫ দশমিক ৫১ শতাংশ এবং ৪৬ দশমিক ৫২ শতাংশ।
এছাড়াও ২০২১ সালের বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর তথ্যানুযায়ী, খাদ্য, পানীয় এবং তামাকপণ্য বিক্রি করে এরকম খুচরা দোকানের সংখ্যা মাত্র এক লাখ ৯৬ হাজার ৩৪১, যারা অন্যান্য পণ্যের সঙ্গেই তামাকপণ্য বিক্রি করে থাকে। তাই কর্মসংস্থান হারানোর তথ্যটিও বিভ্রান্তিকর।
কর্মশালায় উপস্থিত তরুণ চিকিৎসকরা জানান, তামাক ক্ষতিকর জেনেও আমরা সেবন করছি। এটা থেকে বের হতে সবার মাঝে সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। আর সচেতনতা সৃষ্টি করতে সবার আগে এগিয়ে আসতে হবে চিকিৎসকদের। একইসঙ্গে রোগীদের তামাকের কুফল সম্পর্কে অবহিত করতে হবে।
তারা আরও বলেন, সচেতনতা সৃষ্টির পাশাপাশি তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী এবং তামাক পণ্যের দাম কার্যকরভাবে বৃদ্ধি করতে হবে। তাহলে দেশে তামাকের ব্যবহার কমানো সম্ভব হবে।
ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর সভাপতি অধ্যাপক খন্দকার আব্দুল আউয়াল রিজভী’র সভাপতিত্বে কর্মশালায় স্বাগত বক্তব্য দেন মহাসচিব অধ্যাপক ফজিলা তুন নেসা মালিক। এ সময় ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতাল অ্যান্ড রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রোগতত্ত্ব ও গবেষণা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ডা. সোহেল রেজা চৌধুরী, তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচির উপদেষ্টা ও ঢাকার বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, সমন্বয়ক ডা. অরুনা সরকার ও কমিউনিকেশন অফিসার আবু জাফরসহ দেশের বিভিন্ন মেডিক্যাল কলেজের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।