X
শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১

স্বীকৃতি চান গেরিলা যোদ্ধা মোক্তার হোসেন

আরিফুল ইসলাম, কুড়িগ্রাম
৩০ আগস্ট ২০২১, ১৭:৩৪আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২১, ১৮:২০

দেশের টানে গ্রামের যুবকদের সঙ্গে নিয়ে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। তৎকালীন কুড়িগ্রাম মহকুমার উলিপুর অঞ্চলের বিশাল জলরাশি বেষ্টিত ব্রহ্মপুত্র নদের দইখাওয়ার চরে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজের নাম অন্তর্ভুক্ত করেন। এরপর মুক্তাঞ্চল খ্যাত রৌমারীতে গিয়ে গেরিলা যোদ্ধা হিসেবে প্রশিক্ষণ নেন। অস্ত্র হাতে হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে একাধিক যুদ্ধে অংশ নিয়ে দেশের মানচিত্র আর লাল সবুজের পতাকা প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন। যুদ্ধ শেষে অস্ত্র জমা দিয়ে নেমে পড়েন জীবনযুদ্ধে। দেশের প্রয়োজনে সময়মতো মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিলেও জীবনযুদ্ধের কর্মব্যস্ততায় সরকারি তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়াতে অংশ নিতে পারেননি। দেশ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মেলেনি এই গেরিলা যোদ্ধার। জীবন সায়াহ্নে এসে স্বীকৃতি পেতে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের ‘অনুগ্রহ প্রার্থনা’ করেছেন জাতির এই সূর্য সন্তান।

সরকারি গেজেটভুক্ত হওয়া থেকে বঞ্চিত এই বীর মুক্তিযোদ্ধার নাম মোক্তার হোসেন সরকার। কুড়িগ্রাম জেলার রাজারহাট উপজেলার উমর মজিদ ইউনিয়নের বাসিন্দা এই গেরিলা যোদ্ধা রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চান। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার সব সাক্ষ্য-প্রমাণ ও দলিল-দস্তাবেজ থাকলেও মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে গেজেটভুক্ত হতে না পারার ব্যর্থতা তাকে সব সময় কুরে কুরে খাচ্ছে– এমনটাই জানান এই গেরিলা যোদ্ধা।

মোক্তার হোসেন সরকার বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি বয়সে তরুণ। ’৭১ সালের জুলাই মাসে দেশের টানে মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিই। দইখাওয়ার চরে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে নিজের নাম তালিকাভুক্ত করে রৌমারীতে প্রশিক্ষণ নিতে যাই। ১১ নম্বর সেক্টরের সাব সেক্টর কমান্ডার হামিদুল্লাহ খান, কোম্পানি কমান্ডার আবুল কাশেম চাঁদ ও ৪নং প্লাটুন কমান্ডার আব্দুল জব্বারের নেতৃত্বে কয়েকটি সম্মুখযুদ্ধে অংশ নিই। মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশ সশস্ত্রবাহিনীর তৎকালীন অধিনায়ক মুহাম্মদ আতাউল গনি ওসমানী সাহেবের দেওয়া সনদও রয়েছে আমার।’

যুদ্ধে অংশ নেওয়ার স্মৃতি ও সফলতা সম্পর্কে জানতে চাইলে এই গেরিলা যোদ্ধা বলেন, ‘প্রশিক্ষণ নেওয়ার পর কয়েকটি অপারেশনে অংশ নিই। একবার উলিপুরের শিববাড়িতে পাকবাহিনীকে বহনকারী একটি ট্রেনে অপারেশন চালিয়ে ট্রেন লাইনচ্যুত করি আমরা। ওই অপারেশনে বেশ কয়েকজন পাকসেনা নিহত হয়। বাকিরা পালিয়ে যায়।’

মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণে ব্যবহৃত মুক্তাঞ্চল রৌমারীতে হামলার ছক আঁকে পাক বাহিনী। কারণ রৌমারী দখলে নিতে পারলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র ও আস্তানা ধ্বংস করা সম্ভব হবে। এই লক্ষ্যে কোদালকাটির (বর্তমানে রাজীবপুর উপজেলাধীন) চর হয়ে রৌমারীর দিকে অগ্রসর হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় হানাদাররা। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধারা সে খবর পাওয়ামাত্র কোদালকাটিতে প্রবল প্রতিরোধ গড়ে তোলেন। ’৭১-এর আগস্টে কোদালকাটিতে ভয়াবহ এক সম্মুখ যুদ্ধ সংঘটিত হয়। কোদালকাটির সেই যুদ্ধে অংশ নেওয়ার গৌরব এখনও আলোড়িত করে মোক্তার হোসেন সরকারকে।

‘আমি তখন বয়সে তরুণ। রক্তে দেশপ্রেমের প্রবল আলোড়ন। আমরা যারা দেশের জন্য যুদ্ধ করছি তাদের সবারই একই অনুভূতি। তাই দেশের জন্য জীবন উৎসর্গ করার একটা বাসনা লালন করেই যুদ্ধে অংশ নিয়েছিলাম। কোদালকাটিতে যখন অস্ত্র হাতে পাকবাহিনীর ওপর গুলি করছি তখন একবারও জীবনের মায়া মনে আসেনি। শুধু চিন্তা ছিল, দেশকে স্বাধীন করতে হলে পাক বাহিনীকে হটাতেই হবে। কোদালকাটিতে সেদিন প্রবল প্রতিরোধের মুখে অবশেষে পাক বাহিনী পরাস্ত হয়ে পিছু হটে।’ যুদ্ধের স্মৃতি স্মরণ করতে গিয়ে যোগ করেন এই যোদ্ধা।

মুক্তিযুদ্ধ শেষ হলে বিজয়ের উল্লাসে সহযোদ্ধাদের হাতে নিজের অস্ত্র জমা দিয়ে বাড়িতে ফেরেন মোক্তার হোসেন সরকার। পরে গাইবান্ধার টেকনিক্যাল কলেজ মাঠে তার অস্ত্রসহ সহযোদ্ধারা অস্ত্র জমা দেন। অস্ত্র হাতে যুদ্ধ করলেও এখনও রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাননি এই যোদ্ধা। কিন্তু কেন? জানতে চাইলে মোক্তার হোসেন সরকার বলেন, ‘যুদ্ধ শেষে জীবিকার তাগিতে জেলার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় কাজ করে বেরিয়েছি। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর মুক্তিযোদ্ধাদের উপযুক্ত সম্মান ও আর্থিক সুবিধা দেওয়ার ব্যবস্থা নিলেও জীবিকার প্রয়োজনে আমি চট্টগ্রামে থাকায় সময়মতো আবেদন করতে পারিনি। ফলে সুযোগ হাতছাড়া হয়ে গেছে। আমার যুদ্ধে অংশ নেওয়ার সব দলিল ও সাক্ষ্য-প্রমাণ থাকলেও শুধু সময়মতো আবেদন করতে ব্যর্থ হওয়ায় রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি থেকে বঞ্চিত হয়েছি।’

‘বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা ও সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের কাছে আমার অনুরোধ, আমিসহ যেসব মুক্তিযোদ্ধা আবেদন করার সুযোগ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন তাদের যেন তালিকাভুক্ত করার সুযোগ দেওয়া হয়। মৃত্যুর আগে আমরা যেন রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পাই। ’ প্রবল প্রত্যাশা নিয়ে যোগ করেন মোক্তার হোসেন।

মোক্তার হোসেনের যুদ্ধে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন তার সহযোদ্ধা ও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম মিয়া, মো. মকবুল হোসেন ও মো. খবির উদ্দিন। তারা বলেন, ‘আমরা একই সেক্টরের (১১ নং সেক্টর) অধীন মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছি। কিন্তু মোক্তার হোসেন দীর্ঘদিন এলাকায় না থাকার কারণে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সরকারি তালিকাভুক্তিতে আবেদন করতে পারেনি। তার মতো বঞ্চিত মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকাভুক্তির বিষয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের সুদৃষ্টি কামনা করি।’

/এমএএ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
শনিবার জাতীয় পার্টির বর্ধিত সভানির্বাচনের সময় জাপায় কী হয়েছিল, জানাবেন জিএম কাদের
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
১০ কোটি টাকা অনিয়মের অভিযোগে অগ্রণী ব্যাংকের ৩ কর্মকর্তা আটক
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
থাই প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে শেখ হাসিনাকে উষ্ণ অভ্যর্থনা
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
পশ্চিমাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখতে চীনকে যা করতে হবে
সর্বাধিক পঠিত
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
দুদকের চাকরি ছাড়লেন ১৫ কর্মকর্তা
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
খুলনায় এযাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ
চুক্তিতে মাউশির ডিজি হলেন নেহাল আহমেদ