X
বুধবার, ০২ জুলাই ২০২৫
১৮ আষাঢ় ১৪৩২

ঈদে এলো ‘প্রকৃতি কন্যা সিলেট’

তুহিনুল হক তুহিন, সিলেট
২২ আগস্ট ২০১৮, ১০:০০আপডেট : ২২ আগস্ট ২০১৮, ১০:০০

পাহাড়, টিলা আর দিগন্ত বিস্তৃত চা-বাগান যেন সিলেটকে আদরে ঢেকে রেখেছে সবুজ চাদরে। সিলেটের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে প্রকৃতির রূপ-লাবণ্যের অপূর্ব ভান্ডার। প্রকৃতির এই লীলাভূমি মুগ্ধ করে সবাইকে।

ঈদকে সামনে রেখে সিলেটের পর্যটন কেন্দ্রগুলো সম্পর্কে পর্যটকদের ন্যূনতম ধারণা দিতে সিলেট জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে প্রকাশিত হয়েছে ‘প্রকৃতি কন্যা সিলেট’ নামের একটি পরিচিতি পত্র। এ ধরনের প্রকাশনা এটাই প্রথম।

জানা গেছে- তুরস্ক, জার্মানি, স্পেনসহ বিভিন্ন দেশের দেড় শতাধিক পর্যটক এখন সিলেটে অবস্থান করছেন। দেশি-বিদেশি পর্যটকদের সুবিধার্থে কোরবানির পশুর বর্জ্য যথাসময়ে পরিষ্কার করা জরুরি বলে মনে করেন সিলেট ট্যুরিস্ট ক্লাবের সভাপতি হুমায়ুন কবীর লিটন। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘আমাদের সংগঠন থেকে সিটি করপোরেশন ও জেলা প্রশাসনকে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।’

পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন সিলেটের রাতারগুল (1) জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে পর্যটকদের নিরাপত্তা জোরদারের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে জানা যায়। এ প্রসঙ্গে সিলেটের জেলা প্রশাসক নুমেরী জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেছেন, ‘ঈদের ছুটি কাটাতে সিলেটে প্রতি বছর বিপুলসংখ্যক পর্যটকদের আসে। সেদিকে লক্ষ্য রেখে এবারও জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা জোরদারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট থানাসহ ট্যুরিস্ট পুলিশকে কঠোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।’

‘প্রকৃতি কন্যা সিলেট’ পরিচিতি পত্র থেকে কয়েকটি নৈসর্গিক প্রাকৃতিক শোভার সংক্ষিপ্ত তথ্য রইলো:

জাফলং
সৌন্দর্যপিপাসুদের পক্ষে জাফলংয়ের আকর্ষণ এড়ানো যেন অসম্ভব! সিলেটের পর্যটনের অন্যতম প্রধান আকর্ষণ এটাই। আকাশে হেলান দিয়ে পাহাড়ের দাঁড়িয়ে থাকা দেখা যায় সেখানে। প্রকৃতিকন্যা নামেও জাফলংয়ের আলাদা পরিচিতি রয়েছে। ওপারে খাসিয়া জৈন্তা পাহাড়, এপারে নদী। পাহাড়ের বুক চিরে বয়ে চলছে ঝরনা, আর নদীর বুকে স্তরে স্তরে সাজানো নানান রঙের নুড়ি পাথর। পাহাড়ের গায়ে নরম তুলার মতো ভেসে বেড়াচ্ছে মেঘরাশি। প্রকৃতির এমন অপরূপ সৌন্দর্য জাফলংয়ে শুধু মেলে। এখানেই শেষ নয়; সমতল চা-বাগান, খাসিয়া পল্লী, পানের বরজসহ কী নেই জাফলংয়ে! এর বুক চিরে বয়ে গেছে ধলাই ও পিয়াইন নদী। সীমান্তের ওপারে ডাউকি নদীর ওপরে দুই পাহাড়ের মাঝখানে ঝুলন্ত সেতু বাড়িয়ে দিয়েছে জাফলংয়ের সৌন্দর্য। পাহাড়, পানি, পান, পাথর, ঝরনার সমাহারে জাফলং যেন রূপকথার রাজ্য।

বিছনাকান্দি
ভারতের মেঘালয় পাহাড়ের বুক চিরে নেমেছে মনোলোভা কয়েকটি পাহাড়ি ঝরনা। পাহাড়ের ওপার থেকে কলকল শব্দে ঝরনাধারা চলে এসেছে গোয়াইনঘাটের পিয়াইন নদীতে। এর মধ্যে একটি হচ্ছে বিস্ময়কর সৌন্দর্যের সমাহার বিছনাকান্দি। কাছেই দেখা যায়, মেঘে ঢাকা মেঘালয় পর্বতমালা। সেই পাহাড় থেকে নেমে আসে সু-শীতল ঝরনাধারার প্রবাহ। পাথরে ভরা পুরো এলাকায় পানিতে বিছানো রয়েছে হাজারও নুড়ি পাথর। বিছনাকান্দির চারপাশের মুগ্ধতায় পাথর জলের বিছানায় শরীর এলিয়ে দিতে মন চাইবে সবারই। হাতের কাছে দেখা যায়, আকাশে হেলানো উঁচু পাহাড়ের সারি। চোখধাঁধানো সব দৃশ্য দেখতে দেখতে একসময় এই পাহাড়ের কোলে চোখে পড়বে বিস্তীর্ণ পাথর কোয়ারি। বর্ষায় পাথর কোয়ারি পানিতে ডুবু ডুবু থাকে। এখানে পাথরের বিছানার ওপরে পাশের পাহাড় থেকে অবিরাম স্বচ্ছ জলধারা বয়ে চলে।

সিলেটের গোয়াইনঘাটের বিছনাকান্দি রাতারগুল
সিলেটের গোয়াইনঘাটের রাতারগুল সোয়াম্প ফরেস্ট। ভরা বর্ষায় মাথার ওপর সূর্য দেখা দিলে ঈষৎ ছায়া জলে অপূর্ব রূপ ধারণ করে রাতারগুল। এখানে ঘন গাছের কালো কালো ডালপালায় সবুজ পত্র-পল্লব ভেদ করে কদাচিত সূর্যের স্পর্শ পাওয়া যায়। কাচের মতো মসৃণ নিথর জলে গাছের ডালপালার প্রতিবিম্ব অদ্ভূত দৃশ্যের অবতারণা করে। তখন হঠাৎ কোনও বন্যপ্রাণী মেছোবাঘ, অজগর, কাঠবিড়ালি, বানর, বনবিড়াল, শিয়াল পাতার ছায়ায় জলে উঁকি দেয়। জালিবেত, কদম, হিজল, মূর্তাসহ বিভিন্ন জাতের গাছে সমৃদ্ধ এই ফরেস্ট। রাতারগুলে গাছে গাছে দেখা যায় ঘুঘু, চড়ুই, পানকৌড়ি, চিল, সাদা বক, কানা বক, মাছরাঙা, টিয়া, বুলবুলি, চিল, বালি হাঁসসহ নানান প্রজাতির পাখি।

লালাখাল
ভারতের চেরাপুঞ্জির নিচেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের  অপরূপ লীলাভূমি লালাখাল। সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় স্বচ্ছ নীল পানির নদী বলা হয় ‘লালাখাল’কে। প্রকৃতিকে একান্তে অনুভবের জন্য এই স্থান বেশ জুতসই। লালাখাল জুড়ে পাহাড়ে ঘন সবুজ বন, নদী, চা-বাগান ও বিভিন্ন জাতের বৃক্ষের সমাহার। লালাখালে ঘুরতে গিয়ে যেদিকে চোখ যায়, মুগ্ধতায় নেমে আসে মগ্নতা! লালাখালের চারপাশে সন্ধ্যার আগ মুহূর্তটা আরও মুগ্ধকর। ক্লান্ত সূর্য পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ার দৃশ্য দেখলে মনে হয়, পাহাড় থেকেই বুঝি সন্ধ্যা নেমে আসছে! ধীরে ধীরে গোধূলিকে ঢেকে দেয় আঁধার।

শাহজালালের মাজার
সুদূর ইয়েমেন থেকে ধর্ম প্রচারের জন্য এদেশে এসেছিলেন সাধক পুরুষ হযরত শাহজালাল (রহ.)। দীর্ঘদিন সিলেটে বিভিন্ন মানুষের মাঝে ৩৬০ জন আউলিয়াসহ ধর্ম প্রচারের কাজে নিয়োজিত ছিলেন তিনি। প্রতি বছর তার মাজার জিয়ারতে বিপুলসংখ্যক পর্যটক সিলেটে আসেন। হযরত শাহজালালের (রহ.) ব্যবহৃত কিছু মূল্যবান পবিত্র দ্রব্যও মাজারের কাছে সংরক্ষিত আছে।

পর্যটকরা ঘুরে বেড়াচ্ছেন সিলেটের রাতারগুল (2) তামাবিল
সিলেট শহরের প্রায় ৫৮ কিলোমিটার উত্তরে সিলেট-শিলং (ভারত) যাতায়াত পথের প্রান্তসীমায় চমৎকার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অবস্থিত তামাবিল। মনোমুগ্ধকর পর্বতের দৃশ্য ছাড়াও তামাবিলের প্রাসীমা থেকে জলপ্রপাত দেখা যায় ক্ষীণভাবে। প্রতিদিন ভারত থেকে অসংখ্য ট্রাক স্থলপথে এই বন্দরে কয়লা নিয়ে আসায় বাংলাদেশ বছরে কয়েক কোটি টাকা রাজস্ব আদায় করে থাকে। এছাড়া এখানকার স্থলপথ দিয়েও অনেক বিদেশি পর্যটক বাংলাদেশে বেড়াতে আসে।

পান্তুমাই
বিছনাকান্দির পাশেই অপরূপ সৌন্দর্যের ওপর পাহাড়ি ঝরনা হাতছানি দিয়ে ডাকে। নাম তার পান্তুমাই। এখানে পাহাড়, নদী আর ঝরনা সাজিয়ে বসে আছে সৌন্দর্যের ঢালি। বিছনাকান্দি দেখার পর পান্তুমাই উপভোগের জন্য ট্রলারে চলে যেতে পারেন রিজার্ভে। হাদারপার বাজারে গিয়ে গুদারা পার হয়ে ওপার থেকে মোটরসাইকেলেও যাওয়া যায় সেখানে।

খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান
সিলেট শহরতলীর খাদিমপাড়া এলাকায় রয়েছে খাদিমনগর জাতীয় উদ্যান। ছয়টি চা-বাগান পরিবেষ্টিত উঁচু-নিচু পাহাড়ি এলাকা এটি। এর আয়তন ১ হাজার ৬৭৬ একর। জীববৈচিত্র্যে ভরপুর এই উদ্যানে রয়েছে প্রায় ২১৭ প্রজাতির গাছ ও ৮৩ প্রজাতির প্রাণী।

প্রকৃতি কন্যা জাফলং (2) জৈন্তা রাজবাড়ি
ঐতিহাসিক পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে সিলেটের পর্যটন শিল্পে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছে জৈন্তা রাজবাড়ি। প্রবাদ আছে পান, পাতা আর নারী; এই তিন নিয়েই সমৃদ্ধ ও ঐতিহ্যবাহী জনপদ জৈন্তারাজ্য। ঐতিহাসিক ও দর্শনীয় অনেক প্রত্নতাত্ত্বিক নির্দশন এখনও টিকে আছে সিলেটের জৈন্তাপুরের জৈন্তা রাজবাড়িতে। সময়ের পরিক্রমায় রাজবাড়ি ও ফটক ধ্বংসের প্রায় দ্বারপ্রান্তে। তবে ইতিহাস ও ঐতিহ্যপ্রিয় পর্যটকরা ঐতিহাসিক এই স্থানে সময় কাটাতে পছন্দ করেন। এখানে দেখার মতো অবশিষ্ট আছে শিবপূজার জন্য নির্মিত মন্দিরের ধ্বংসাবশেষ, রাজ্যের সভায় অংশগ্রহণকারীদের বসার পাথর খণ্ড ‘মেগালিথ’। এছাড়া অক্ষত অবস্থায় আছে বধ্যভূমি। এখানেই রাজার অবাধ্যদের হত্যা করা হতো।

পাথর রাজ্য ভোলাগঞ্জ
পাথর ছুঁয়ে নামছে পাহাড়ের স্বচ্ছ জল, সেই জলে বাসা বেঁধেছে সাদা পাথর। এর সঙ্গে আছে নীল আকাশ আর পাহাড়ের বুকে কালো মেঘের আনাগোনা। যাত্রা পথেই চোখে পড়বে বালির পাহাড় আর সারি সারি নৌকা, যেখানে পাথর আহরণে কর্মব্যস্ত মানুষ। এমন সব নৈসর্গিক সৌন্দর্য উপভোগের জন্য ভ্রমণপিপাসুদের যেতে হবে, সিলেটের কোম্পানিগঞ্জের ভোলাগঞ্জে।

ঈদগাহ
সিলেট শহরের দক্ষিণ পূর্ব প্রান্তে একটি ছোট টিলার ওপরে সিলেটের শাহী ঈদগাহ অবস্থিত। এটি বাংলাদেশের প্রাচীনতম শাহী ঈদগাহের একটি। দৃষ্টিনন্দন, মনোমুগ্ধকর, কারুকার্যময় এই শাহী ঈদগাহের ঐতিহাসিক গুরুত্ব অনেক। ১৭৮২ খ্রিস্টাব্দে এখানে সৈয়দ মুহাম্মদ হাদী ও সৈয়দ মুহাম্মদ মেহেদী ভ্রাতৃদ্বয়ের নেতৃত্বে ইংরেজ বিরোধী অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। ইংরেজদের সঙ্গে মুখোমুখি সংঘর্ষে সৈয়দ ভ্রাতৃদ্বয় শহীদ হন। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে এই শাহী ঈদগাহ ময়দানে দাঁড়িয়ে বক্তব্য রেখে গেছেন কায়েদে আযম মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ, মহাত্মা গান্ধী, মাওলানা মোহাম্মদ আলী, শহীদ সোহরাওয়ার্দী, শেরে বাংলাসহ উপমহাদেশের বিখ্যাত রাজনীতিকরা।

প্রকৃতি কন্যা জাফলং (1) মন্দির ও আখড়া
পর্যটন নগরী সিলেট হিন্দু ধর্মাবলম্বীদেরও অন্যতম তীর্থভূমি। শহরের মধ্যেই বেশ কয়েকটি ঐতিহ্যবাহী গুরুত্বপূর্ণ মন্দির রয়েছে। প্রতি বছর শত শত পর্যটক এখানে এসে বেড়ান।

/জেএইচ/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
নতুন অর্থবছরের প্রথম দিনে মোংলা বন্দরে ১৪টি বিদেশি জাহাজ
নতুন অর্থবছরের প্রথম দিনে মোংলা বন্দরে ১৪টি বিদেশি জাহাজ
যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ অনুদান হবে সীমিত: রুবিও
যুক্তরাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ অনুদান হবে সীমিত: রুবিও
ত্বকের যত্নে আমের খোসা কাজে লাগাবেন যেভাবে
ত্বকের যত্নে আমের খোসা কাজে লাগাবেন যেভাবে
ব্রহ্মপুত্রে নৌকাডুবি: আরও দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার
ব্রহ্মপুত্রে নৌকাডুবি: আরও দুই শিশুর মরদেহ উদ্ধার
সর্বাধিক পঠিত
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
যারা ফেসবুক লাল করেছিল, তাদের জীবন লাল করে দেবে আ.লীগ: পার্থ
অবশেষে রিজার্ভে আইএমএফের লক্ষ্য পূরণ হলো
অবশেষে রিজার্ভে আইএমএফের লক্ষ্য পূরণ হলো
ইলিশের দাম নির্ধারণের প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন
ইলিশের দাম নির্ধারণের প্রস্তাবে প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল
বেসরকারি শিক্ষকদের জ্যেষ্ঠতা যোগদানের দিন থেকে শুরু করতে হাইকোর্টের রুল