গর্ভবতী মায়েদের বমি ভাব, মাথা ঘুরানো, খাবারে গন্ধ লাগা খুবই সাধারণ সমস্যা। সবার ক্ষেত্রেই এই ধরনের সমস্যা দেখা দিতে পারে। আর্লি প্রেগন্যান্সি বা এর সাথে প্রাইমি গ্রাভিডা থাকলে সমস্যাগুলো বেশি দেখা যায়। রোগী যদি কিছু পরামর্শ মেনে চলতে পারেন এবং চিকিৎসকের দেওয়া ঔষধ সেবন করেন তবে বমির প্রকোপ অনেকটাই কমে যায় এবং অন্যান্য সমস্যা থেকেও রেহাই পাওয়া যায়।
গর্ভকালীন সময়ে হরমোনের পরিবর্তন হয়। এর ফলেই শরীরে নানা ধরনের পরিবর্তন দেখা দেয়। এর মধ্যে বমি, বমি ভাব, মাথা ঘুরানো, খাবারে অরুচি, গন্ধ লাগা অন্যতম। কিছু হরমোন যেমন এস্ট্রোজেন, প্রোজেস্টরেন এসব বেড়ে যাওয়ার জন্য এই সমস্যাগুলো হয়ে থাকে।
এ সময় সুস্থ থাকার জন্য কিছু বিষয় মেনে চলা জরুরি-
- সকালে ঘুম থেকে উঠেই বিছানা থেকে না উঠে শোয়া অবস্থায় একটু হাত-পা নাড়াচাড়া করার চেষ্টা করুন অর্থাৎ হালকা ব্যায়াম করুন।
- রাতেই ব্রাশ করে ঘুমান। সকালে উঠে শুধু কুলি করে মুখ ধুয়ে নিন। কারণ অনেক সময় সকালে ব্রাশ করতে গিয়ে টুথপেষ্টের গন্ধে অনেকের বমি ভাব হয়।
- ঘুম থেকে উঠেই শুকনো খাবার যেমন বিস্কুট, টোস্ট বা মুড়ি খান। এতে বমি ভাব কমে। এর ১ থেকে ২ঘন্টা পর সকালের নাস্তা করবেন।
- খাবার আগে ও খেতে বসে অতিরিক্ত পানি খাবেন না এতে বমি বা বমি ভাব হয়।
- সবসময় বাসায় তৈরি খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। চাকরিজীবী হলে তাহলে বাসা থেকে খাবার নিয়ে যাবেন।
- অতিরিক্ত তৈলাক্ত, ভাজাপোড়া, মসলাদার খাবার খাবেন না। এ ধরনের খাবার অ্যাসিডিটির কারণ হতে পারে যা থেকে বমি ভাব হয়।
- একবারে বেশি পরিমাণ খাবার না খেয়ে ২ থেকে আড়াই ঘন্টা পরপর অল্প করে খাবার খান।
- খালিপেটে টকজাতীয় ফল খাবেন না। এতে অ্যাসিডিটি হয়ে বমি/ বমি ভাব হতে পারে। খাবারের পর বা মধ্যে টক ফল খাওয়া যেতে পারে।
- বাসি খাবার খাওয়া যাবেনা। এর থেকে বমি, ডায়ারিয়া, পেটে ব্যাথা হতে পরে। পুষ্টিকর ও ফ্রেশ খাবার খেতে হবে।
- অনেক সময় জার্নি করার ফলে অনেক মায়েদের মোশন সিকনেস। এই ধরনের সমস্যা হলে কোথাও যাওয়ার আগে বমির ঔষধ খেয়ে নিতে হবে চিকিৎসকের পরামর্শ মতো।
- অতিরিক্ত গন্ধযুক্ত খাবার, এনার্জি ডিংকস এগুলো এড়িয়ে চলা জরুরি।
- রাতে খাবার খাওয়ার পরপরই ঘুমাতে গেলে অস্বস্তিভাব এবং অ্যাসিডিটি হতে পারে। তাই রাতের খাবার খাওয়ার অন্তত ১ থেকে ২ঘন্টা পর ঘুমাতে যেতে হবে।
- ইলেক্ট্রোলাইট ইমব্যালেন্সের কারণেও বমি হয়। এই বমি ঔষধের খেলেও কমে না। এই ধরনের সমস্যায় পড়লে ব্লাড টেস্ট করে সেই অনুযায়ী চিকিৎসা করতে হবে।
অতিরিক্ত বমি, মাথা ঘুরানো, বমি ভাব ইত্যাদির জন্য কিছু ঔষধ এবং প্রয়োজনে ইনজেকশন দেওয়া যেতে পারে। তবে এগুলো শুধুমাত্র চিকিৎসকের পরামর্শ মতোই প্রয়োগ করতে হবে।
লেখক:
জনস্বাস্থ্য গবেষক ও চিকিৎসক
উপ-পরিচালক, সেন্টার ফর ক্লিনিক্যাল এক্সিলেন্স অ্যান্ড রিসার্চ