প্রশ্ন: আমার বয়স ৩৫ বছর। স্ত্রী, সন্তান আছে। আমি সহকর্মীর সাথে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছি। তারও স্বামী আছে। আমরা বুঝতে পারছি এই সম্পর্কটা অনৈতিক, এটার ভবিষ্যৎ নেই। কিন্তু তাও বেরিয়ে আসতে পারছি না। বিষয়টা অফিসে কিংবা পরিবারে জানাজানি হলে কী হবে সেটা ভেবে সবসময় আতংকগ্রস্ত থাকি। কীভাবে বিষয়টা সামলাবো বুঝতে পারছি না।
উত্তর: পরকীয়া-প্রবণতা এক ধরনের অ্যাডিকশন। অ্যাডিকশন প্রবণতা যেমন একেকজন মানুষের মধ্যে একেক রকম, পরকীয়া প্রবণতাও তাই। আপনি এখন যে অবস্থায় আছেন, তাতে করে আতংকগ্রস্ত থাকাটাই স্বাভাবিক। আবার আপনার মস্তিষ্ক এই আতংকগ্রস্ততার নেশা থেকে বেরও হয়ে আসতে চাচ্ছে না, রোলার কোস্টার বা রেকলেস ড্রাইভিং-এর নেশার মতো। আপনিও জানেন পরিণতি যেটাই হোক, সেটার মুখোমুখি আপনাকে একদিন হতেই হবে। আপনি এটাও জানেন যে, পরিস্থিতি আপনাকে যেদিকে নিয়ে যাবে আপনি সেদিকেই যাবেন। আপনার পরিস্থিতিতে মানুষ অনেক সময় নিজেকে নিজের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্নবিদ্ধ করে বিবেকের দংশনে দংশিত হয়। পরকীয়া সম্পর্কে আমার আগের প্রশ্নোত্তরগুলো পড়ে দেখতে পারেন।
প্রশ্ন: আমার বয়স ২৯ বছর। চাকরির জন্য অনেক চেষ্টা করছি ৩ বছর ধরে হচ্ছে না। এইদিকে বাসা থেকে বিয়ের জন্য চাপ দিচ্ছে। আমি এই মুহুর্তে বিয়ে করতে চাইছি না। একটা সম্পর্কে ছিলাম, সেটাতেও থিতু হতে পারিনি নানা কারণে। এখন সমস্যা হচ্ছে আমার মা আমাকে বাজেভাবে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে। আমার বিয়ে হবে না, বয়স হয়ে যাচ্ছে, আমার জন্য সমাজে মুখ দেখাতে পারে না- এসব কথা সারাক্ষণ শুনতে হয়। দিন দিন আমার মানসিক অবস্থা খারাপ হচ্ছে।
উত্তর: মানুষের অগ্রমস্তিষ্কের প্রিফ্রন্টাল লোবের অ্যাকটিভিটির কারণে তার ভেতরে নীতি-নৈতিকতার ভালো-মন্দ নিয়ে দ্বিধাদন্দ্ব, অতীত নিয়ে অনুশোচনা তথা বিষণ্ণতা এবং ভবিষ্যৎ নিয়ে অনিশ্চয়তা তথা উদ্বেগ-উৎকন্ঠার উদ্ভব হয়। আমাদের ভেতরে এক্সিসটেনশিয়াল ক্রাইসিস তৈরি হওয়ার কারণ হলো আমরা ইভোলুশনারি নিজেকে চামড়ার মধ্যে আবদ্ধ একটি বিচ্ছিন্ন সত্ত্বা মনে করি অথচ আমরা কোনোভাবেই প্রকৃতি এবং মহাবিশ্ব থেকে বিচ্ছিন্ন নই বরং মহাবিশ্ব আমার মধ্য দিয়েই প্রকাশিত হচ্ছে। আমাদের এবং বিশ্বের অধিকাংশ দেশের (ফিনল্যান্ডসহ কতিপয় নরডিক রাষ্ট্র ব্যতীত) শিক্ষাব্যবস্থা দাসমনোভাবসম্পন্ন আত্মবিশ্বাসহীন এবং আত্মর্যাদাহীন ম্যালফাংশনিং মানুষ তৈরি করে। প্রচলিত পারিবারিক মূল্যবোধ এই ক্ষতিকে আরও পরিপুষ্ট করে নেগেটিভ সাজেশনের মাধ্যমে (তোমার দ্বারা কিছু হবে না, তোমার চেয়ে অমুক অমুক কত ভালো রেজাল্ট করছে, ভালো সাবজেক্ট নিয়ে পড়ালেখা না করলে ভালো চাকরি পাবে না, ইত্যাদি)। অথচ প্রকৃতির দিকে তাকালেই আমরা দেখতে পাবো মানুষ ছাড়া অন্য কোন প্রাণির খাবার এবং বাসস্থান নিয়ে চিন্তা করতে হয় না; প্রাকৃতিকভাবেই এর সমাধান হয়ে থাকে। আমাদের ক্ষেত্রে তা হয় না কারণ আমাদের তথাকথিত শিক্ষা আমাদেরকে প্রকৃতি থেকে বিচ্ছিন্ন করে প্রাকৃতিক শক্তির প্রতি আস্থাহীন কর তোলে। আপনাকে আবার মূলে ফিরে যেতে হবে। প্রকৃতির উপরে আস্থা রাখতে হবে, আপনার জন্য যেটা সর্বোত্তম সেই পরিণতির দিকেই প্রকৃতি আপনাকে নিয়ে যাবে। এজন্য প্রকৃতির মাঝে কিছুক্ষণ খালিপায়ে হাঁটার চর্চা করুন, ব্রিদিং এক্সারসাইজ করুন, সম্ভব হলে মাঝে মাঝে মেডিটেশন করুন।