প্রাণঘাতী ক্যানসার সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে প্রতি বছর ৪ ফেব্রুয়ারি পালিত হয় বিশ্ব ক্যানসার দিবস। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলছে, ক্যানসার বিশ্বব্যাপী একটি প্রধান স্বাস্থ্য উদ্বেগ, যার ফলে প্রতি ৬ জনের মধ্যে ১ জনের মৃত্যু হয়। কিন্তু আপনি কি জানেন যে জীবনযাত্রার সহজ পরিবর্তনের মাধ্যমে প্রায় ৫০ শতাংশ ক্যানসার প্রতিরোধ করা সম্ভব?
ধূমপান, খারাপ খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক কার্যকলাপের অভাব এবং ক্ষতিকারক পদার্থের সংস্পর্শের মতো কিছু কারণ ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে। প্রতিদিনের ছোট ছোট অভ্যাস এই ঝুঁকিগুলোকে উল্লেখযোগ্যভাবে কমাতে পারে।
একটি উন্নত এবং সুস্থ জীবনধারা ক্যানসারের প্রকোপ কমাতে পারে। ক্যানসার অনেক ক্ষেত্রে জেনেটিকও হলেও এর জন্য দায়ী কারণগুলোকে পরিবর্তনযোগ্য বা অপরিবর্তনীয় হিসেবে বিবেচনা করা যেতে পারে। স্বাস্থ্যকর জীবনধারা হলো পরিবর্তনযোগ্য ফ্যাক্টরের সর্বোত্তম উদাহরণ যা আমরা পরিবর্তন করতে পারি এবং ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারি- এমনটা জানান ব্রেস্ট সার্জন ড. সন্দীপ বিপ্টে।
১। ধূমপান ত্যাগ করুন
ধূমপান ফুসফুস ক্যানসারের প্রধান কারণ এবং এটি মুখ, গলা, অগ্ন্যাশয় এবং মূত্রাশয় ক্যানসারসহ কমপক্ষে ১৪ ধরনের ক্যানসারের সাথে সম্পর্কিত। সিডিসি (সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন) অনুসারে, ধূমপান ত্যাগ করলে ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পায়।
২। স্বাস্থ্যকর ওজন বজায় রাখুন
স্থূলতা স্তন, কোলোরেক্টাল এবং কিডনি ক্যানসারসহ বিভিন্ন ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে একটি সুস্থ বডি মাস ইনডেক্স (BMI) বজায় রাখলে ক্যানসারের ঝুঁকি ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়। খাবারের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণ, বেশি ফাইবার খাওয়া এবং চিনিযুক্ত খাবার কমানোর মতো সহজ পরিবর্তনগুলো ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে সাহায্য করতে পারে।
৩। ক্যানসার প্রতিরোধী খাবার খান
ক্যানসার প্রতিরোধে খাবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্যতালিকায় অন্তর্ভুক্ত থাকা উচিত ফলমূল এবং শাকসবজি (অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ), শস্যজাতীয় খাবার এবং ডাল (আঁশ কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি কমায়), স্বাস্থ্যকর চর্বি (যেমন জলপাই তেল এবং বাদাম)। একই সাথে প্রক্রিয়াজাত মাংস, লাল মাংস এবং চিনিযুক্ত পানীয় কমিয়ে দেওয়াও জরুরি। এগুলো পেট এবং কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে পারে।
৪। শরীরচর্চা করুন
নিয়মিত ব্যায়াম করলে ক্যানসারের ঝুঁকি ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যায়, বিশেষ করে স্তন, কোলন এবং এন্ডোমেট্রিয়াল ক্যানসারের ক্ষেত্রে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা প্রতি সপ্তাহে কমপক্ষে ১৫০ মিনিট মাঝারি ব্যায়াম করার পরামর্শ দেয়।
৫। মদ্যপান করবেন না
অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনের কারণেও লিভার, স্তন এবং কোলোরেক্টাল ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়ে। তাই ক্যানসারের ঝুঁকি কমাতে অ্যালকোহল থেকে দূরে থাকা জরুরি।
৬। পর্যাপ্ত ঘুম ও বিশ্রাম জরুরি
অনিদ্রার অভ্যাস রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল করে দিতে পারে এবং ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। ২০১৮ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, ঘুমের অভাব কিংবা অনিয়মিত ঘুম স্তন এবং প্রোস্টেট ক্যানসারের মতো হরমোন সম্পর্কিত ক্যানসারের ঝুঁকি বাড়াতে পারে। প্রতি রাতে ৭ থেকে ৯ ঘণ্টা ঘুম তাই ভীষণ জরুরি।
৭। দূরে থাকুন সূর্যের অতিবেগুনি রশ্মি থেকে
ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধযোগ্য ক্যানসারগুলোর মধ্যে একটি। ত্বকের ক্যানসার প্রতিরোধে সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুনি রশ্মি থেকে নিজেকে রক্ষা করা জরুরি। দীর্ঘক্ষণ রোদের সংস্পর্শে থাকবেন না। এছাড়া বাইরে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন ব্যবহার করুন।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া