ইফতারে নানা ধরনের শরবতের আয়োজন থাকে। দিনভর রোজা রাখার পর এসব পানীয় আমাদের দ্রুত চাঙ্গা করতে সাহায্য করে। এছাড়া পানির চাহিদা মেটাতেও শরবতের জুড়ি নেই। রুহ আফজা, তরমুজ, পুদিনা পাতা, লেবুসহ নানা কিছু ব্যবহৃত হয় শরবত বানাতে। এসব শরবতেই যদি কিছু বীজ ও উপাদান মিশিয়ে নেন, তাহলে বাড়তি উপকার পেতে পারেন। জেনে নিন শরবতে কোন কোন উপাদান মিশিয়ে এর গুণ বাড়াবেন।
১। তোকমা
ইফতারে তোকমার শরবত খেতে বলেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এর রয়েছে অনেক পুষ্টিগুণ। স্মুদি কিংবা শরবতে ভেজানো তোকমা মিশিয়ে দিতে পারেন সহজেই। বীজটি ফাইবার, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, আয়রন এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো খনিজ এবং প্রয়োজনীয় ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ। তোকমা অনেকটা চিয়া বীজের মতোই দেখতে, পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ছোট, কালো এবং থকথকে হয় এটি। খাওয়ার কমপক্ষে ৩০ মিনিট আগে তোকমা ভিজিয়ে রাখতে হবে। সর্বোচ্চ দুই ঘণ্টা পর্যন্ত এটি ভিজিয়ে রেখে খাওয়া যায়। তোকমায় প্রচুর পরিমাণে ডায়েটারি ফাইবার থাকে। ফাইবারের অনেক স্বাস্থ্য সুবিধার মধ্যে একটি হলো এটি কোষ্ঠকাঠিন্য উপশম বা প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে। অন্ত্রের স্বাস্থ্য ভালো রাখতেও এটি সহায়ক। রোজা রেখে তোকমার শরবত খেলে আমাদের শরীরের তরলের মাত্রা পূরণ করা সম্ভব হয়। আমাদের হাইড্রেটেড রাখতে সাহায্য করে তোকমার শরবত। এতে মিউকিলেজ থাকে। এটি এক ধরনের জেলের মতো পদার্থ যা পানিতে ভিজিয়ে রাখলে ফুলে যায়। এই জেলের মতো টেক্সচার নিয়মিত খেলে হজম ভালো হয়। এছাড়া তোকমায় থাকা ফাইবার কার্ডিওভাসকুলার রোগ, কোলোরেক্টাল ক্যানসার এবং টাইপ ২ ডায়াবেটিসের মতো রোগের ঝুঁকি কমাতে পারে।
২। চিয়া সিড
চিয়া সিডকে বলা হয় সুপার ফুড। ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের চমৎকার উৎস এই বীজ। ক্যালসিয়াম, আয়রন, ফসফরাস, জিঙ্ক এবং ম্যাগনেসিয়ামের মতো প্রয়োজনীয় খনিজও মেলে এই বীজ থেকে। খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে ভিজিয়ে রাখবেন চিয়া সিড। চিয়া বীজ প্রচুর পরিমাণে পানি শোষণ করে, ফলে ইফতারে চিয়া সিডের শরবত খেলে শরীরের পানির চাহিদা পূরণ হয়। নিয়মিত চিয়া বীজ খেলে হজম ভালো হয়, কোলেস্টেরল ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে এবং সর্বোপরি ভালো থাকে হার্টের স্বাস্থ্য। রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সাহায্য করে ক্ষুদ্র এই বীজ। উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে শরীরের প্রদাহ এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেস কমাতেও সাহায্য করতে পারে চিয়া বীজ। ফলে ডায়াবেটিস, ক্যানসার এবং হৃদরোগের মতো দীর্ঘস্থায়ী রোগের ঝুঁকি কমে। চিয়া বীজ ফাইবার, প্রোটিন, ওমেগা ৩ ফ্যাটি অ্যাসিড, ভিটামিন বি, ভিটামিন ই, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম এবং ফসফরাসের দারুণ উৎস।
৩। ইসবগুল
রোজা রেখে অনেকেই কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগেন। জারা কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যায় ভুগছেন তারা তো বটেই, অন্যরাও শরবতের সঙ্গে খেতে পারেন ইসবগুলের ভুসি। ইসবগুল পাকস্থলী পরিষ্কার করে, হজমে সহায়তা করে ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। ইসবগুল পাকস্থলী ও খাদ্যনালির ভেতরে আলাদা একটি পর্দা তৈরি করে, যা অ্যাসিড থেকে খাদ্যনালীর পর্দাকে রক্ষা করে বুক জ্বালাপোড়া কমায়। কোলেস্টেরলের মাত্রা কমাতেও সহায়ক উপাদানটি। তবে ইসুবগুল দীর্ঘক্ষণ ভিজিয়ে রেখে খাবেন না। শরবতের সঙ্গে মিশিয়ে খেয়ে ফেলুন সঙ্গে সঙ্গে।
৪। সাবুদানা
ইফতারে বানিয়ে ফেলতে পারেন সাবুদানার শরবত। চুলায় পানি বসিয়ে দিন। গরম হয়ে গেলে এক কাপ সাবুদানা দিন। মাঝারি আঁচে ১০ থেকে ১২ মিনিট সেদ্ধ করুন। সাবুদানাগুলো স্বচ্ছ দেখা গেলে নামিয়ে ছেঁকে নিন। ছাঁকনিতে থাকা অবস্থাতেই ঠান্ডা পানি ঢেলে ধুয়ে নিন। পছন্দের যেকোনো শরবতে মিশিয়ে নিন সেদ্ধ সাবুদানা। প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম এবং ম্যাগনেসিয়াম পাওয়া যায় সাবুদানায়। ফলে এটি খেলে অস্টিওপোরোসিস ও আর্থ্রাইটিসের ঝুঁকি কমে। শরীরে শক্তি জোগানোর পাশাপাশি হজমশক্তি বাড়াতেও এর ভূমিকা রয়েছে।
তথ্যসূত্র: মেডিক্যাল নিউজ টুডে ও এনডিটিভি