চুল পড়ার পিছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। যেমন মানসিক চাপ, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা, খাদ্যাভ্যাস ইত্যাদি। আবার এগুলোর পাশাপাশি আমাদের কিছু অভ্যাসের কারণেও মাত্রাতিরিক্ত চুল ঝরে যেতে পারে। যেমন চুলে অতিরিক্ত রঙ বা কেমিক্যাল ব্যবহার করা, শক্ত করে চুল বাঁধার অভ্যাস কিংবা চুল জোরে জোরে ঝাড়া। চুল পড়া নিয়ন্ত্রণ করতে এবং চুল শক্তিশালী করতে স্বাস্থ্যকর কিছু অভ্যাস আয়ত্ত করার বিকল্প নেই।
১। সঠিক খাদ্যাভ্যাস
চুলের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য অপরিহার্য হচ্ছে সঠিক খাদ্যাভ্যাস। কোন খাবার খাচ্ছেন এবং কোন কোন পুষ্টি পাচ্ছেন, সেটার উপর নির্ভর করে চুলের স্বাস্থ্য। তাই সুষম খাদ্য নিশ্চিত করা অপরিহার্য। প্রোটিন, ভিটামিন এবং খনিজ মাথার ত্বকের পুষ্টি এবং চুলের ফলিকলগুলিকে শক্তিশালী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কোন কোন খাবার ডায়েটে রাখা জরুরি?
- খাদ্য তালিকায় পজ্জাপ্ত প্রোটিন রাখুন। আমাদের চুল কেরাটিন দিয়ে তৈরি, যা এক ধরনের প্রোটিন। প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়। চর্বিহীন মাংস, মাছ, ডিম, মটরশুঁটি, বাদাম এবং ডালের মতো খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন খাদ্য তালিকায়।
- আয়রনের ঘাটতি চুল পড়ার কারণ হতে পারে। পালং শাক, গরুর কলিজা, মসুর ডাল, মটরশুঁটি খেতে পারেন পর্যাপ্ত আয়রন পেতে।
- ভিটামিন সি শরীরকে আয়রন আরও ভালোভাবে শোষণ করতে সাহায্য করে এবং কোলাজেন উৎপাদন বাড়ায়,। সাইট্রাস ফল, স্ট্রবেরির পাশাপাশি সবুজ শাকসবজি খান এই ভিটামিন পেতে।
- বায়োটিন এবং ভিটামিন বি কমপ্লেক্স চুলের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য। ডিম, অ্যাভোকাডো এবং মিষ্টি আলু বায়োটিন এবং বি ভিটামিনের চমৎকার উৎস।
২। মাথার ত্বক ম্যাসাজ করুন
চুল পড়া বন্ধ করার সবচেয়ে সহজ কিন্তু কার্যকর উপায়গুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে মাথার ত্বক ম্যাসাজ করা। এতে রক্ত সঞ্চালন বৃদ্ধি পায়, যা চুলের ফলিকলকে উদ্দীপিত করে ও চুলের বৃদ্ধি বাড়ায়। রাতে ঘুমানোর আগে বৃত্তাকার গতিতে মাথার ত্বকে আলতো করে ম্যাসাজ করুন। দিনে মযাসাজ করতে চাইলে নারকেল তেল, আরগান তেল বা বাদাম তেলের মতো তেল ব্যবহার করতে পারেন। চুলে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করবে এসব তেল।
৩। আঁটসাঁট করে চুল বাঁধবেন না
পনিটেল, বিনুনি এবং খোঁপার মতো আঁটসাঁট চুলের স্টাইল চুলের গোড়ায় চাপ সৃষ্টি করতে পারে। ধীরে ধীরে এই টান চুলের গোড়াকে দুর্বল করে দিতে পারে, যার ফলে ট্র্যাকশন অ্যালোপেসিয়া নামের একটি অবস্থা দেখা দেয়। এর ফলে চুল পড়ে যায়। চুল সবসময় আলতো করে বাঁধুন। চুল পেছনে বাঁধতে চাইলে ইলাস্টিক ব্যান্ডের পরিবর্তে কাপড় দিয়ে ঢাকা ব্যান্ডের মতো নরম চুলের ব্যান্ড ব্যবহার করুন।
৪। তাপ দিয়ে স্টাইলিং এবং কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট কমিয়ে দিন
স্ট্রেইটনার, কার্লার এবং ব্লো ড্রায়ারের মতো তাপ প্রদানকারী স্টাইলিং সরঞ্জামগুলো ঘন ঘন ব্যবহার করলে চুলের ভীষণ ক্ষতি হয়। অতিরিক্ত তাপ চুল ভেঙে যাওয়ার অন্যতম কারণ। আবার চুল রঙ করার মতো কেমিক্যাল ট্রিটমেন্ট চুলের গোড়া দুর্বল করে দিতে পারে, যার ফলে চুল পড়ে যাওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। চুল এবং তাপের মধ্যে বাধা তৈরি করতে স্টাইল করার আগে তাপ সুরক্ষাকারী স্প্রে ব্যবহার করুন। যদি চুল রঙ করতেই হয়, তাহলে প্রাকৃতিক, অ্যামোনিয়ামুক্ত রঙ ব্যবহার করার চেষ্টা করুন।
৫। নিয়মিত ঘুমান ও স্ট্রেস কমান
চুল পড়ার অন্যতম প্রধান কারণ হলো স্ট্রেস। উচ্চ চাপের জীবনধারা সরাসরি প্রভাব ফেলে চুলের উপর। ঘুমের অভাব এই সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তোলে, কারণ শরীরের নিজেকে মেরামত করার জন্য পর্যাপ্ত সময় নেই। মনকে শান্ত করতে এবং চাপ কমাতে ধ্যান, যোগব্যায়াম বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়ামের মতো শিথিলকরণ কৌশল অনুশীলন করুন। প্রতি রাতে ৭-৮ ঘন্টা ঘুম নিশ্চিত করুন যাতে শরীর চুলের ফলিকল মেরামত এবং পুনরুজ্জীবিত করতে পারে। এছাড়া নিয়মিত ব্যায়াম করুন, কারণ এটি স্ট্রেসের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে এবং সামগ্রিক রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে, যা চুলের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী।
তথ্যসূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া