X
শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪
১৩ বৈশাখ ১৪৩১
আইনজীবী দম্পতির লাইফস্টাইল

স্ত্রীর পছন্দ ফৌজদারি মামলা, স্বামীর রিট

বাহাউদ্দিন ইমরান
২৭ নভেম্বর ২০২২, ১৬:০০আপডেট : ২৭ নভেম্বর ২০২২, ১৭:১৭

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সেলিনা আক্তার চৌধুরী, তার স্বামী মোতাহার হোসেন সাজুও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী। পেশার পাশাপাশি সাংগঠনিক নেতৃত্বে এগিয়ে রয়েছেন তিনি। ছেলেকে বানিয়েছেন ব্যারিস্টার। সম্প্রতি এই দম্পতির চেম্বারে গিয়ে দেখা গেলো, সদ্য ব্যারিস্টারি পাস করা ছেলেকে চেম্বারে বসিয়ে মামলার ড্রাফটিং শেখাচ্ছেন আইনজীবী মা। পাশের রুমে চেম্বারে মামলার ফাইল নিয়ে ব্যস্ত বাবা। তারা স্বপ্ন দেখেন উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া এই পেশায় সততা নিয়ে বাকি জীবন বেঁচে থাকার। প্রত্যেকের রয়েছে ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, নিজেদের সেসব কথা বাংলা ট্রিবিউনের কাছে তুলে ধরেছেন এই আইনজীবী দম্পতি।

আইনজীবী সেলিনা আক্তার চৌধুরীর জন্ম চট্টগ্রামের রাউজান থানার নোওয়াজিসপুর গ্রামে। সেখানেই কেটেছে শৈশব। এরপর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রাজনীতি বিজ্ঞানে মাস্টার্স, ইডেন কলেজ থেকে দ্বিতীয়বার আবার মাস্টার্স এবং চট্টগ্রামের ল’ টেম্পল থেকে এলএলবি সম্পন্ন করেন। এরপর ১৯৯৩ সালে এনরোলমেন্টের পর আইন পেশায় যুক্ত হন। তার বাবার নাম আবুল হাশেম চৌধুরী ও মা নুরজাহান বেগম (প্রয়াত)। তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনিই সবার বড়।

জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মোতাহার হোসেন সাজুর জন্ম ১৯৬৫ সালের ১ জানুয়ারি, যদিও একাডেমিক সার্টিফিকেটে ভিন্ন। বাবা ওয়াজেদ আলী কাজী। তিনি ছিলেন হেলথের সুপারিন্টেনডেন্ট। তিনি ১৯৮০ সালে পরলোকগমন করেন। মা আয়েশা ওয়াজেদ ছিলেন গৃহিণী। বাবা-দাদার পৈত্রিক নিবাস মানিকগঞ্জ জেলার ঘিওর থানায়। তারা দুই ভাই ও তিন বোন। তবে ১৯৯২ সালে ব্লাড ক্যান্সারে এক বোন মারা যান, দেশ স্বাধীনের পর বাবার পোস্টিং ঢাকায় হওয়ায় সিলেট থেকে চলে আসেন। মূলত বাবার চাকরির সুবাদে দিনাজপুর, বৃহত্তর সিলেট, বগুড়া ও ঢাকা অঞ্চলে তার বেড়ে ওঠা।

মোতাহার হোসেন সাজু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন এমএমসি (কীটতত্ত্ব), এলএলবি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সার্টিফিকেট কোর্স করে মাস্টার্স প্রথম পর্ব সমাপ্ত করেন। ১৮ বছর আইন পেশা পরিচালনার পর ২০০৯ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি থেকে বাংলাদেশের ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল হিসেবে দায়িত্বপ্রাপ্ত হন। ভেবেছিলেন ছয় মাস এই দায়িত্ব পালন করবেন। পরে ২০১৯ সালের ২১ জুলাই পর্যন্ত একই পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ছিলেন। তৎকালীন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলমের অধীনে সততা নির্ভর টিম ওয়ার্কের কারণে গুরুত্বপূর্ণ বেশকিছু মামলায় অবদান রেখেছেন তিনি। ওই সময়ে অনেক কিছুই শিখেছেন বলে তিনি মনে করেন।

তিনি ১৯৯২ সালে আইন পেশায় যুক্ত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তৎকালীন বাংলাদেশ আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটিতে সহ-প্রচার সম্পাদক এবং পরবর্তী সময়ে প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন। জাতীয় চার নেতা পরিষদের যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন। তিনি মুক্তিযুদ্ধের মূলধারার পেশাজীবী সমন্বয় পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক। হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-এর যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেছেন। বঙ্গবন্ধু যুব পরিষদেরও সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন এই আইনজীবী। ঢাকা আইনজীবী সমিতিতে কার্যনির্বাহী কমিটিতে ৯৭-৯৮ বর্ষে সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০০২ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে সরকারদলীয় আইনজীবীদের তোপের মুখেও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে সদস্য ও ২০০৬ সালে সমিতিতে জ্যেষ্ঠ সহকারী সম্পাদক নির্বাচিত হন এবং ২০০৮ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। ঢাকা জজকোর্টে থাকতে কিছুদিন সাংবাদিকতাও করেছিলেন দৈনিক ভোরের ডাক ও সমাচার পত্রিকায়।

মোতাহার হোসেন সাজু। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন
নিজের সাংগঠনিক অভিজ্ঞতা তুলে ধরে মোতাহার হোসেন সাজু জানালেন, ঢাকা শিশু হাসপাতালের চারটি বোর্ডে দীর্ঘ প্রায় ১২ বছর ম্যানেজিং বোর্ডের মেম্বার হিসেবে দায়িত্ব পালন করি। যা ওই হাসপাতালের জন্য একটি অনন্য নজির। এখনও প্রায় ১২ বছর ধরে দেশীয় চিকিৎসা গবেষণার একমাত্র প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ মেডিক্যাল রিসার্স কাউন্সিলের (বিএমআরসি) ইথিক্যাল কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। বাংলাদেশ টেনিস ফেডারেশনে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ভোট পেয়ে সহ-সভাপতি নির্বাচিত হয়েছি। সরকার গত সপ্তাহে বর্তমান নৌ পরিবহন প্রতিমন্ত্রীকে ফেডারেশনটির সভাপতি মনোনীত করেছে। বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের পরপর দুই বার সফলতার সঙ্গে নির্বাচন কমিশনে সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছি। ফুটবল ফেডারেশনের ফার্স্ট ইনস্ট্যান্স বডির সহ-সভাপতি হিসেবে আছি। মুদ্রণ শিল্প সমিতিতে একাধিক নির্বাচন কমিশনে দায়িত্ব পালন করি। উক্ত নির্বাচনে পর পর তিন বার আপিল ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫১ সালে উপমহাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ চিকিৎসক এমএন নন্দী গড়ে তুলেছিলেন মানিকগঞ্জ সমিতি। তিনি সেই সমিতিতে তিন বার সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন।

তাদের ঘর আলো করে আছে দুই সন্তান। ছেলে তাহমিদ তাজওয়ার তূর্য, ব্যারিস্টারি পাস করেছেন। মেয়ে ফাতেহা নূর তাহিয়া ভিকারুন নিসা নুন কলেজে দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়ছে। ছেলেকে ব্যারিস্টারি পড়ানোর বিষয়ে মায়ের ইচ্ছাটাই বেশি ছিল। প্রাথমিকভাবে মায়ের থেকেই মামলার ড্রাফটিং করা শিখছে। ছোট বিষয়গুলো শেখার পর ও এনরোলমেন্ট সাপেক্ষে ছেলে বড় কোনও চেম্বারে জয়েন করবে কিনা সে বিষয়ে ভেবে রেখেছে পরিবার। পেশার বাইরেও তূর্য ক্রিকেট ও ফুটবল খেলতে পছন্দ করে।

পরিবার প্রসঙ্গে মোতাহার হোসেন সাজুর বক্তব্য, ‘আমার জীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি বেহেস্তসম আমার মা। যাকে নিয়ে আমি একসঙ্গে হজ্ব করেছি। আমার চলার ব্যারোমিটার— মানুষটি সৎ কিনা, দুর্নীতি করে কিনা এবং তদবির করে টাকা উপার্জন করে কিনা। এসব বিষয়ে না উৎরিয়ে না গেলে সেসব লোকদের এড়িয়ে চলি। আশা করি আমার এই অবস্থানটি আমার প্রজন্মও ধরে রাখবে। এজন্য আমি আমার স্ত্রীর কাছে সবচেয়ে বেশি কৃতজ্ঞ। তার কারণেই আমার নিজের অবস্থান ধরে রাখা সহজ হয়েছে। আমার স্ত্রী পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। চতুর্থ শ্রেণি থেকেই সে নিয়মিত নামাজ আদায় করে। পাঁচবার ওমরাহ হজ ও একবার সরাসরি হজ আদায় করেছে। আমার মা-বোন ও সন্তান সকলেই নিয়মিত নামাজ আদায় করে।’

মোতাহার হোসেন সাজু। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন
মোতাহার হোসেন সাজুর বাবা তার সন্তানদের রাজনৈতিক গল্প বলে ঘুম পাড়াতেন। সেসব স্মৃতিকথা তুলে ধরে তিনি বললেন, ছোট বেলা থেকেই আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের আলোকে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সঙ্গে জড়িত ছিলাম। ঘিওর কলেজ শাখার প্রচার সম্পাদক ছিলাম, মানিকগঞ্জে দেবেন্দ্র কলেজ শাখাতেও ছাত্রলীগ করেছি, ভাইস-প্রেসিডন্টে ছিলাম। ল’ পড়ার সময় ল’ স্টুডেন্টস ফেডারেশন এর ভাইস-প্রেসিডেন্ট ছিলাম। এরপর যুবলীগের সঙ্গে জড়িত হলাম। বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ কেন্দ্রীয় কমিটিতে প্রথম সহ-আইন সম্পাদক, পরবর্তী কমিটিতে প্রেসিডিয়াম মেম্বার হলাম। ১৯৭২ সালের পর সাতক্ষীরায় যেসব ইউনিয়ন-থানায় কমিটি হয়নি, সেসব এলাকায় গিয়ে আমি সম্মেলন করেছি।

স্বামীর বিষয়ে স্ত্রী হিসেবে সেলিনা আক্তার চৌধুরীর মূল্যায়ন জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘তার (মোতাহার হোসেন সাজু) সঙ্গে পারিবারিকভাবেই বিয়ে হয়। তার সবচেয়ে ভালো দিক হলো, তিনি একজন সৎ মানুষ। তার থেকে পেশাগত দিকসহ সবকিছুতেই পূর্ণ স্বাধীনতা পেয়েছি। আইনজীবী হিসেবে আমি যা উপার্জন করি তা নিজেই খরচ করি। এসব বিষয়ে তিনি কখনোই খোঁজ নেননি। তিনি চাকচিক্যহীন, তবে খুবই ভালো মানুষ। তার সবকিছুই আমার খুব পছন্দ। তার সততা, চরিত্র, নৈতিকতা সবই চমৎকার। আমার মনের মতো মানুষ তিনি।’

সেলিনা আক্তার বললেন, ‘স্বামী হিসেবে ১’শর মধ্যে আমি তাকে ৯৯ নাম্বার দিবো। আর একজন আইনজীবী হিসেবে তাকে ৮০ নম্বর দেবো। তবে তিনি অনেক লেখাপড়া করেন, ততটা আমিও করি না। সংসারের প্রতি তার খেয়ালটাও চমৎকার।’

তবে ব্যক্তি হিসেবে স্ত্রীকে ১’শর অধিক যদি কোনও নম্বর দেওয়ার সুযোগ থাকে তাহলে সেই নম্বর দিতে চান মোতাহার হোসেন সাজু। স্ত্রীর প্রতি তার এক সমুদ্র ভালোবাসার বিশ্বাস কাজ করে সবসময়। সেই ইবাদতে কখনও পিছপা হয় না। সামাজিকভাবে চলাচল করে সবসময়।

সপরিবারে মোতাহার হোসেন সাজু। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন
 বাবা-মা সম্পর্কে ছেলে তুর্য মূল্যায়ন করতে গিয়ে বলেন, ‘বাবার সততা সবচেয়ে পছন্দের। আর আম্মুর এমন কোনও দিক নেই যে পছন্দ করি না, তার সবকিছুই পছন্দ করি। নম্বরের দিক দিয়ে আম্মু ২’শ পেতে পারতো। আর আব্বু আরেকটু বেশি পেতে পারতো।’
 
স্ত্রী সম্পর্কে মোতাহার হোসেন সাজু যোগ করে বললেন, ‘বিয়ের পর আমাদের বাড়িতে আসার পর সে ছোট মাছ খেতে চাইতো না। তবে যে কোনও মাছ আনলেই তা সে কেটে রান্না করে খাওয়াতো। এখনও ওকালতির পাশাপাশি তার চিন্তা ছেলে-মেয়ের দেখাশোনা করা এবং ঘরের সব কিছু সামলে নেওয়া। আজকের ও আগামীকালের মেনু নিয়েও তার ভাবনা। তার রান্না করা খাবারই কোর্টে নিয়ে আসি এবং দুপুরে সেটাই খেয়ে থাকি। সে একজন পাকা রাঁধুনী।’

ছোটবেলার একটি স্মৃতির কথা মনে করে মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, ‘সিলেটে ছোটবেলায় এক ভিক্ষুকের থেকে একটি ছোট মুরগির বাচ্চা কিনেছিলাম। বাচ্চাটি বড় হলে সারাবছর ডিম দিতো। সিলেট থেকে ঢাকাতে ট্রেনে এসেছিলাম। মুরগিটা নিয়ে মানিকগঞ্জ গেলাম। সেখানে তখন পাটের সময়। প্রতিটি ঘর পাটে বোঝাই। কোনমতে একটি ঘরে সবাই থাকতে শুরু করলাম। দুই বছরের মাথায় মারাই করা ধান খেতে আসার সময় মুরগীটি গরুর পায়ে পিষ্ট হয়ে মারা যায়। ওই ঘটনার পর শোকে আর কিছু খাইনি, খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। এখন বিচারিক জীবনেও খুব বেশি কষ্ট পাই, যখন দেখি কোনও কর্মকর্তা-কর্মচারী বা আইনজীবী অবৈধ পথে কোনও আদেশ হাজির করার চেষ্টা করছেন।’

আদালতে মামলা পরিচালনার ক্ষেত্রে সেলিনা আক্তারের পছন্দ ফৌজদারি মামলা। অন্যদিকে মোতাহার হোসেন সাজুর পছন্দ রিট মামলা পরিচালনা করা।
 
পেশা সম্পর্কে মোতাহার হোসেন সাজুর মন্তব্য, ‘আইনের জগৎটা হলো একটা পাহাড়ের মতো। সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র অ্যাডভোকেট হওয়ার পরও নিজেকে মনে হয়, মাত্র সেই পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থান করছি। শেখার শেষ নেই। আমি অ্যাডভোকেট ঠিকই, তারপরও মূলত আমি আইনের ছাত্র। এই চর্চা আজীবন চলতে থাকবে। আমৃত্যু আইনের চর্চা করে যাবো।’

ছবি: পারিবারিক অ্যালবাম থেকে
 
সেলিনা আক্তার চৌধুরীর কাছে তার স্বামীকে নিয়ে কোনও মজার স্মৃতি তুলে ধরতে বলা হয়। এসময় ফিসফিসিয়ে উঠলেন মোতাহার হোসেন সাজু। স্ত্রীকে নিচুস্বরে বললেন, ‘এই তুমি ওইটা কিন্তু বলে দিও না’। কথাটা শুনেই সেখানে উপস্থিত সবার হাসির বাঁধ ভাঙলো। স্বামীর দিকে তাকিয়ে থেকে হাসিটা দীর্ঘ করলেন সেলিনা আক্তার চৌধুরী। এরপর কিছুক্ষণ ভেবে জানালেন, মজার বিষয়টা হলো পরিবার সহ যখন কোথাও ঘুরতে যাই তখন ছেলে-মেয়ে আমার দলভুক্ত হয়ে যায় আর তিনি একা একদলে ঘুরে বেড়ান। এটা বেশ মজা লাগে।
 
স্বামীকে পাশে না পেলে ও তার সহযোগিতা না থাকলে নিজেকে আজকের অবস্থানে আসা হতোনা বলে মনে করেন তিনি। স্ত্রীর পেশাগত দিক নিয়ে মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, আমার মনে হয় তার মধ্যে কিছু গড গিফটেড বিষয় রয়েছে যা দেখলে সবাই মুগ্ধ হয়। তিনি আরও বলেন, আমি দু’বার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে দায়িত্ব পালন করেছি, কিউবিক্যালস বণ্টন করেছি। কিন্তু কমিটি থেকে চাপ দেওয়া সত্ত্বেও আমার সহধর্মিনীর প্রাপ্য যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও আমার হাত দিয়ে তাকে কিউবিক্যালস দেইনি, মনে হয় তার প্রতি অবিচার করেছি।

মিষ্টি এবং গুড় বেশ পছন্দ মোতাহার হোসেন সাজুর। বললেন, গুড় ও পিঠা আমার খুব পছন্দ। আমাদের মানিকগঞ্জের মানুষেরাও মিষ্টি পছন্দ করেন। এর বাইরে ছোট মাছ, খিচুরি, পিপুলি পাতা দিয়ে বেলে মাছ, বোয়াল মাছ ও কুমড়া পাতার বিশেষ ডাল তার পছন্দের। তবে তার স্ত্রী সব খাবারই সমানভাবে পছন্দ করেন।
 
নিজের জীবন সম্পর্কে মূল্যায়ন করতে গিয়ে মোতাহার হোসেন সাজু বলেন, ‘আমার পরিবারের সকলেই নামাজ পড়ে। আমার সন্তান ইংল্যান্ডের মাটিতে থেকেও নিয়মিত নামাজ পড়েছে। পরিবারের সবাই নামাজ পড়ে, কোরআন পড়ে, রোজা রাখে, তাহাজ্জুদের নামাজও বাদ দেয় না। এসব আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অর্জন। তবে আমি কোরআন পড়া কিছু শিখেছিলাম, ভুলে গিয়েছি, আবারও শিখবো। এসবই আমার মনের শ্রেষ্ঠ সুখ। তাই আর কোনও অপ্রাপ্তি নেই।’

প্রতিবেদকের সঙ্গে কথা বলছেন মোতাহার হোসেন সাজু। ছবি: সাজ্জাদ হোসেন
সেলিনা আক্তার চৌধুরী বললেন, ‘প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে উঠে এসে এখন আমি সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী। এর চেয়ে বড় প্রাপ্তির আর কিছু হতে পারে না।’

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির আসন্ন নির্বাচনে সেক্রেটারি পদের জন্য আলোচনায় রয়েছেন মোতাহার হোসেন সাজু। তিনি বলেন, ‘আমি কিছু বিষয় মেনে চলার চেষ্টা করি। দেখা যায়, যারা সমাজে সৎভাবে চলার চেষ্টা করেন তাদের পিছিয়ে পড়তে হয়। রাজনীতি করলেও আমি আমার দায়িত্বের জায়গাটায় অটল থাকতে চাই। ২০০৯ সালে আমি এমপি নির্বাচন করতে পারতাম। সেই সময়ে আমাকে বারবার নমিনেশন সাবমিটের জন্য বলা হলেও আমি কথা দেওয়ার কারণে নিজের কথার মূল্যায়ন ঠিক রাখতে তখন আর নমিনেশন পেপার তুলিনি। ২০০২ ও ২০০৬ সালের দুই বার সমিতিতে নির্বাচিত হওয়ার পর পরিবারকে বঞ্চিত করে এখানেই বেশি সময় দিতে হয়েছিল। তাই আবারও সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতিতে নির্বাচিত হতে পারলে নতুন করে কিছু কাজ করার ইচ্ছা আছে।’

সাবেক নেতাদের সঙ্গে পরামর্শ করে নিজেদের সমিতিকে আন্তর্জাতিক মানদণ্ডে নিয়ে আসতে, ভ্যানের মাধ্যমে মোবাইল ফুড সরবরাহ চালু, বার ও বেঞ্চের পার্থক্য ও দূরত্ব ঘোচাতে, দেশের প্রত্যেক বার নেতাদের সঙ্গে একটি বাৎসরিক সভা আয়োজন ও পেশাগত সেতুবন্ধন তৈরি, প্রশিক্ষণ তৈরির চেষ্টা করবো। সমিতির পরিচ্ছন্নতা বাড়ানোর চেষ্টা করবো। একইসঙ্গে নতুন ভবন তৈরি ও সমিতির স্টাফ, ড্রাইভারদের জন্য একটি ভালো পরিবেশ গড়ে তোলার ইচ্ছা রয়েছে।

পছন্দের কথা বলতে মোতাহার হোসেন সাজু জানালেন, পছন্দ করি বই পড়তে ও গান শুনতে। রবীন্দ্রসঙ্গীত ও দেশাত্ববোধক গান বেশি শোনা হয়। জীবনমুখী বই পড়তে তার বেশি ভালো লাগে। কিছুদিন আগেও কলকাতা থেকে বই কিনে এনেছি। পড়ার মাঝেও সময় পেলে গান শুনি আমি। এদিকে সেলিনা আক্তার চৌধুরীর ভালো লাগে বিদেশ ঘুরতে। বিশেষ করে সৌদি আরব তার কাছে বেশি প্রিয় জায়গা। স্বপ্ন দেখেন অসহায় শিশুদের জন্য একটি নিরাপদ নিবাস গড়ে তোলার।

/ইউএস/
সম্পর্কিত
কায়সার কামালের বহিষ্কারের দাবি ব্যারিস্টার খোকনের
জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম থেকে ব্যারিস্টার খোকনকে অব্যাহতি
দলের সিদ্ধান্তকে ‘না’, বার সভাপতির দায়িত্ব নিচ্ছেন ব্যারিস্টার খোকন
সর্বশেষ খবর
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
সাদি মহম্মদ: ভাইয়ের কান্না, বন্ধুর স্মৃতি, সতীর্থদের গানে স্মরণ…
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
খালি বাসায় ফ্যানে ঝুলছিল কিশোরী গৃহকর্মীর লাশ
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
গরমে রেললাইন বেঁকে যাওয়ার শঙ্কায় ধীরে চলছে ট্রেন
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
মন্দিরে সেলফি তুলতে গিয়ে প্রদীপে দগ্ধ নারীর মৃত্যু
সর্বাধিক পঠিত
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
পুলিশের সব স্থাপনায় নিরাপত্তা জোরদারের নির্দেশ
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
সরকারি না হলেও সলিমুল্লাহ কলেজে অধ্যাপক ১৪ জন
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
মৌসুমের সব রেকর্ড ভেঙে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গায়
এগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
ঈদের ছবিএগিয়েছে ‘ওমর’, চমকে দিলো ‘লিপস্টিক’!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!
হোটেল রুম থেকে এই ৫ জিনিস নিয়ে আসতে পারেন ব্যাগে ভরে!