X
মঙ্গলবার, ০৬ মে ২০২৫
২৩ বৈশাখ ১৪৩২

কাজী শাহেদ আহমেদ : যে জীবনের শিলালিপি আমাদের রক্তবীজে

চয়ন খায়রুল হাবিব
৩০ আগস্ট ২০২৩, ১৭:২৩আপডেট : ৩০ আগস্ট ২০২৩, ১৭:৫৯

২০০৫ সালের বসন্তে যুক্তরাজ্যের চেশায়ারে আমার হাতে আসে কাজী শাহেদ আহমেদ প্রকাশিত ‘আফ্রিকার সাহিত্য সংগ্রহ-২’ শিরোনামে ৩৭৭ পৃষ্ঠার একটি মনোরম সংকলন। পরে জোগাড় করে নিয়েছিলাম ‘আফ্রিকার সাহিত্য সংগ্রহ-১’। ২০০৭-এ চয়ন খায়রুল হাবিব নামে আবারও বাংলা ভাষায় সাহিত্য চর্চায় ফিরে আসাতে কাজী শাহেদ প্রকাশিত উল্লেখিত বইটি তুমুলভাবে আমাকে অনুপ্রাণিত করেছিল।

‘আফ্রিকার সাহিত্য সংগ্রহ’ সংকলনটি সম্পাদনা করেছিলেন প্রখ্যাত চিন্তাবিদ শিবনারায়ণ রায় এবং অধ্যাপক শামীম রেজা। সে-সময় কর্মসূত্রে যুক্তরাজ্যের চেশায়ারে থাকছিলাম বন্ধু অপু চৌধুরীর বাসাতে। প্রয়াত কবি বেলাল চৌধুরী এবং প্রয়াত সাংবাদিক গিয়াস কামাল চৌধুরীর আপন ভাগ্নে অপু যুক্তরাজ্যের উত্তরাঞ্চলে দীর্ঘকাল সরকারি শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে কাজ করে আসছিলো। বাংলাদেশে গেলে অপু বিভিন্ন ধরনের বইপত্র নিয়ে আসতো। সেবার শীতের ছুটি দেশে কাটিয়ে ফেরার পর ‘আফ্রিকার সাহিত্য সংগ্রহ’ বইটি আমার হাতে তুলে দিয়ে অপু জানালো, “এখানে ‘রক্তবীজের’ পুরোটা আছে তোর ভূমিকাসহ”।

‘ধান ভানতে শিবের গীত’ প্রবচনটি আসলে আমাদের গল্পের ভেতরের গল্প বলার তাগিদ থেকে এসেছে। কাজী শাহেদ আহমেদ প্রকাশিত বইটি আমার প্রবাসী মনে প্রায় হারিয়ে যাওয়া যে অধ্যায়গুলোর যোগসূত্র হ্যাঁচকা টানে ফিরিয়ে দিয়েছিল সেগুলো এখানে না লিখলে নয়। ‘রক্তবীজ’ হচ্ছে প্রথম নোবেল বিজয়ী আফ্রিকান সাহিত্যিক ওলে সোয়িঙ্কার ‘স্ট্রং ব্রিড’ নাটকের বাংলা অনুবাদ। আমার অনুবাদ এবং নির্দেশনায় যা মঞ্চায়িত হয়েছিল ১৯৯০ সালে ঢাকা ব্রিটিশ কাউন্সিল মঞ্চে, ডাকসু এবং ইংরেজি বিভাগের যৌথ প্রযোজনায় কমনওয়েলথ সেমিনারে। ‘রক্তবীজের’ কেন্দ্রীয় চরিত্র ইমান রূপায়ন করেছিল অপু চৌধুরী। অপু ছাড়াও সে-সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাঠরত গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনে জড়িত নেতৃস্থানীয় ছাত্রছাত্রীরা নাটকটিতে অভিনয় করেছিল। একই সালে নাটকটি শিল্পতরু প্রকাশনী থেকে বের করেছিলেন প্রয়াত কবি আবিদ আজাদ। তখন ঢাকার বিভিন্ন পত্রিকায় আমার কবিতাও প্রকাশিত হচ্ছিলো। নাটকটি প্রকাশের কিছুদিন পর দীর্ঘ সেশন জটে আটকে পড়া আমি ব্যবস্থাপনা চূড়ান্ত সেমিস্টার না দিয়ে বিলেত চলে যাই, কিছুদিন পর ফিরে এসে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের ঢাকা বিমান বন্দর চেক-ইন কর্মী হিসেবে নিয়োগ পাই। এর আগে ১৯৮৮ সালে বিমান বাহিনীতে কর্মরত বৈমানিক বড় ভাইকে হারিয়ে যে প্রবল মানসিক ধাক্কা খেয়েছিলাম, তাতে আমার ভেতর একটা পালাই পালাই ভাব এসে গিয়েছিল। সতীর্থ শিল্পী, লেখকদের সাথে তখন খুব কম দেখা করতাম। ৯৩ তে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজের কাজ ছেড়ে দিয়ে স্থায়ীভাবে বিলাতে চলে আসি এবং অভিবাসীর প্রাথমিক জীবন সংগ্রামে জড়িয়ে পড়ি। এসময় জীবিকা নির্বাহের জন্য প্রবল ব্যস্ততার ভেতরও লন্ডনের স্কুল অব আফ্রিকান এন্ড ওরিয়েন্টাল আর্টসে যাতায়াত করতাম, উইলিয়াম রাদিচির সাথে মাঝে মাঝে দেখা হতো। আন্তর্জাতিক এক সম্প্রচার মাধ্যমে শিক্ষানবিশি নিয়ে শেপহার্ড বুশে ব্রডকাস্টিং সেন্টারে হাতেকলমে ডিপ্লোমা পড়াশোনা শুরু করি।

আমি যে-সময় লন্ডনে ব্রডকাস্টিং ডিপ্লোমা করছি, তখন রেকর্ড করা হতো সিকি ইঞ্চি ফিতায়। যে-সময় অপু আমার হাতে কাজী শাহেদ প্রকাশিত বইটি পৌঁছে দেয় তখন ব্রডকাস্টিং-এ সবকিছু হচ্ছে ডেস্কটপ কম্পিউটারে।

আজকের বিশ্বায়িত বাংলা তথ্য প্রবাহ যে জায়গাতে, তার একটা কংক্রিট পূর্বাভাস আমরা দেখতে পাই কাজী শাহেদের তৎপরতায়। গত শতকের ৮০ দশকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ‘খবরের কাগজ’ কাজী শাহেদের মালিকানায় প্রকাশিত হতো। পরে তা দৈনিক পত্রিকা ‘আজকের কাগজে’ রূপ নেয়। প্রথমে নাঈমুল ইসলাম খান সম্পাদনা করলেও পরে প্রকাশনার পাশাপাশি সম্পাদকের দায়িত্ব নেন কাজী শাহেদ। দেড় দশক আগে বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত আজকের কাগজের প্রকাশক-সম্পাদক ছিলেন তিনি। এ পত্রিকাগুলো বাংলা সংবাদ পরিবেশনায় যুগান্তকারী ভূমিকা রেখেছিল। আর ব্যক্তিগত জায়গায় আমি যে বাংলা ভাষার সাহিত্য চর্চাকে পেছনের সিটে নিয়ে গিয়েছিলাম, তাকে সামনের সিটে এনে দেয় কাজী শাহেদ প্রকাশিত ‘আফ্রিকার সাহিত্য সংগ্রহ’ সংকলনটি।

কাজী শাহেদ আহমেদের সাথে আমার কখনো দেখা হয়নি। শিব নারায়ণ রায়ের সাথেও আমার কখনো দেখা হয়নি। ১৯৯৯ সালে প্যাট্রিসিয়াসহ শান্তিনিকেতনে কিছুদিন ছিলাম। দেখা করার সুযোগ ছিল, কিন্তু তখন আমি ও ফরাসি তরুণী প্যাটি পরস্পরে বিভোর। বৃন্দাবনের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া যমুনায় সূর্যোদয়ে কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে সংস্কৃত মন্ত্র শিখছি, স্কটল্যান্ডের পাহাড়ে পাহাড়ে তাঁবু গেড়ে ঘুরে বেড়িয়েছি ব্যাকপ্যাকার রুকস্যাকে। শিবনারায়ণের নাম অনেকের সাথে আমিও জানতাম, কিন্তু জীবনানন্দ ও বুদ্ধদেবের যেভাবে তুলনা করেছিলেন, তাতে আমার মনে হয়েছিল, উনি আমার সময়কে হয়ত বুঝতে পারবেন না। দেখা হলে হয়তো শেষ বেলায় ওনাকে না বুঝে, তর্ক করে ব্যথা দিয়ে ফেলতাম। এখন উনি আমার কাছে সেই না দেখা হওয়া কিন্তু খুব কাছের একজন অধ্যাপক। ওনার সম্পাদনায় আমার অনুবাদ জায়গা করে নিয়েছিল, এটা ভেবে আমি কেঁপে উঠি, সাহিত্যের অনানুষ্ঠানিক নিষ্ঠায়, নিজের লেখালেখিতে আস্থা বাড়ে। 'আফ্রিকার সাহিত্য সংগ্রহে' 'খায়রুল হাবিবকে' পেয়ে, চয়ন খায়রুল হাবিব আবারো বাংলা ভাষার তূনে আরো আরো তীরের ফলা জড়ো করবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছিল, বাংলা ভাষার সাথে আবারো শুরু হয়েছিল তার যাযাবর-রোমান্স! শিবনারায়ণের সাথে আমার এ আত্মিক যোগাযোগের মতো অপরাপর অনেকের যাপিত মিথস্ক্রিয়ায় যে কাজী শাহেদ অনুঘটক ছিলেন তাও বলা যায়।

অবাক লাগে কাজী শাহেদ আহমেদ শত ব্যস্ততার ভেতর ৮৪ বছর বয়সী শিবনারায়ণ রায়কে খুঁজে নিচ্ছেন। বাংলাদেশে অনুপস্থিত একজন অনুজ লেখককে শিবনারায়ণ শেষ বেলায় খুঁজে নিয়ে শক্তি চট্টোপাধ্যায়ের পাশে জায়গা করে দিচ্ছেন, কিন্তু এবম্প্রকার যোগাযোগের যুগে বাংলা একাডেমি, বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সে-মেলবন্ধন তৈরি করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। শিল্প, সাহিত্যের হিতৈষী সাজা ভাঁওতাবাজিগুলো শিবনারায়ণের অভিজ্ঞ অথচ চির সবুজ চোখ চিহ্নিত করেছিলো এবং অনানুষ্ঠানিকের সাথে আনুষ্ঠানিকের সম্পর্ক গড়ে তুলতে ব্রতি হয়েছিল আন্তরিক অঙ্গিকারে।

তুলনামূলক সাহিত্যের বোঝাবোঝিতে কিভাবে দল, মতের বাইরে এসে একটা মানদণ্ডগত অবস্থান তৈরি করা যায়, তার প্যারাডাইম আমরা যেরকম শিবনারায়ণের সংকলনগুলোতে পেতে পারি, সেরকম পেতে পারি কাজী শাহেদ আহমেদের জীবন খোঁড়াখোঁড়ি করে। একজন পেশাদার প্রকৌশলী এবং সেনাকর্তা হিসেবে বাংলা সাহিত্যকে উনি যে ভবিষ্যৎবাদীতায় সংক্রমিত করে গেছেন, তার তুলনা মেলা ভার। আমি ঠিক যেখানে একজনকে পূর্ণাঙ্গ, পরিশীলিত মানুষ বলবো, সেখানে উনি নিজে দাঁড়িয়ে ছিলেন, অন্যদের জন্যেও সে দাঁড়াবার পরিসর ক্রমাগত বাড়িয়ে গেছেন।

আমরা জানতে পারছি উনিশশো চল্লিশের দশকে ব্রিটিশ রাজের অন্তর্গত যশোরে জন্ম নেবার পর কাজী শাহেদ আহমেদ ১৯৬৬ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে লেফটেন্যান্ট পদে কমিশন পান। মুক্তিযুদ্ধের সময় পশ্চিম পাকিস্তানে যুদ্ধবন্দী থাকলেও, ১৯৭৫ এ বঙ্গবন্ধুকে স্বপরিবারে হত্যা করার পর, বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে প্রতিক্রিয়াশীল মেরুকরণ ঘটিয়ে ১৯৭১ এর অর্জনগুলোকে অদৃশ্য, অশ্রুত করে ফেলা হয়, সেগুলোকে আবার পত্রিকার মাধ্যমে গণ-মানসে ফিরিয়ে আনতে অবসরপ্রাপ্ত সেনাকর্তা কাজী শাহেদ আহমেদ একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধার ভূমিকা রাখেন। তার প্রকাশিত পত্রিকায় বার বার ‘জয়বাংলা’ শব্দটি আমাদের ১৯৭১-এর অঙ্গীকারগুলোর দিকে ফিরিয়ে দিতে থাকে।

‘জীবনের শিলালিপি’ গ্রন্থে কাজী শাহেদ আহমেদ লিখেছিলেন, “আমার অনেক দিনের ইচ্ছা পত্রিকায় আবার ‘জাতির পিতা’, ‘বঙ্গবন্ধু’, আর ‘বাঙালি’—এই শব্দগুলো নিয়মিত ছাপা হবে। নতুন প্রজন্ম জানবে, মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা নিয়ে লেখা হবে। মানে ম্রিয়মাণ মুক্তিযোদ্ধাদের আবার জাগাতে হবে। বিপ্লব ঘটাতে হবে, ১৬ ডিসেম্বর আবার ফেরত আনতে হবে।”

ওপরের উক্তির আলোকে, আমরা যখন জানতে পাই, কাজী শাহেদের জন্ম ১৯৪০ সালের ৭ নভেম্বর যশোরে, তখন ৭ই নভেম্বর’ নিয়ে বাংলাদেশে যে মেরুকরণ তৈরি হয়েছে, তাতে প্রাগ্রসর মানুষটির বিড়ম্বনা এবং স্পষ্ট অবস্থান দেখতে পাই। স্মর্তব্য যে আশির দশকে আমার মত যারা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সেশন জটে আটকে থাকার পাশাপাশি সামরিক স্বৈরতন্ত্র বিরোধী সাংস্কৃতিক মঞ্চে, রাস্তার মিছিলে সক্রিয় ছিলো, তাদের মনে থাকবে যে 'আজকের কাগজের' প্রতিষ্ঠাকালীন সম্পাদক নাইমুল ইসলাম খান ছিলেন সে সময়ের উত্তুঙ্গ ছাত্র আন্দোলনগুলোর সরাসরি ফসল।

সংবাদ প্রকাশে যে স্বচ্ছ এবং ভিন্ন মাত্রা এ কাগজটিতে দেখা গিয়েছিল তা ছিল বিভিন্ন ঐতিহাসিক আন্দোলনের অনিবার্য ফলাফল। সময়ের থেকে এগিয়ে কাজী শাহেদ বাকস্বাধীনিতাকামী জনতার হৃৎস্পন্দন ধরতে পেরেছিলেন এবং তা প্রকাশে আন্তরিক ছিলেন। ১৯৯২ সালের মে মাসে ভারতের আনন্দ পাবলিশার্স থেকে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত তসলিমা নাসরিনের প্রথম গদ্য-গ্রন্থ 'নির্বাচিত কলাম' মূলত 'আজকের কাগজে' তার লিখিত ধারাবাহিক কলামগুলির সংকলন। সে সময় তসলিমার কলামকে কাজী শাহেদ সেন্সর-বিহীন স্বাধীনতা দিয়েছিলেন এবং পরবর্তীতে এ কলাম-কেন্দ্রিক প্রতিক্রিয়াশীল ঝাঁপটাগুলো যে উনাকে পোহাতে হয়েছিল, তা লেখা বাহুল্য।

মুক্তিযুদ্ধের ধ্বংসস্তুপ থেকে বাংলাদেশের ব্যবসায়িক বাণিজ্যিক পরিকাঠামো পুনর্গঠনের সময় আমি নিশ্চিত কাজী শাহেদ ঢাকার বদলে যাওয়া দেখেছেন, সে অদলবদলে প্রত্যক্ষভাবে অংশ নিয়েছেন। আমি যে আজন্ম ঢাকাকে ছেড়ে এসেছি নব্বই দশকের শুরুতে সে ঢাকায় শুধু কূটনৈতিক এলাকাসহ কিছু বিশেষ আবাসিক এলাকায় বাসার সামনে দারোয়ান দেখা যেতো। সে ঢাকার মেগা রূপান্তরে এখন যেখানেই বহুতল, সেখানেই দারোয়ান। আবাসিক এলাকাগুলোর পাশাপাশি এক সময় আমাদের সামাজিক, আত্মিক চিন্তাও হয়ে পড়েছে পাহারাধীন, ব্যক্তিক জায়গাতে আমরা হয়ে পড়েছি অন্তর্মুখী। এখানে যে করপোরেট উদ্যোক্তা কাজী শাহেদ আহমেদ আবাহনী ক্রীড়া চক্রের পৃষ্ঠপোষক হন, সমতলে অর্গানিক চা বাগান বাস্তবায়ন করেন তার ভেতর আমরা এমন একজন মানুষকে পাই যিনি শত প্রতিকূলতা পার হয়ে পরের প্রজন্মদের পরিবেশবান্ধব শ্বাস ফেলার অবকাশ ও পরিসর বাড়িয়ে দিতে চেয়েছেন।

কাজী শাহেদের জন্মস্থান যশোরের জমিদার কালি পোদ্দারের মা যশোর রোড ধরে যেতো চাকদহে গঙ্গাস্নানে। ১৮৪২-এ যশোর রোডের কিনার ধরে কালি পোদ্দার মাইলকে মাইল মেহগনি গাছ লাগিয়েছিল মাতৃছায়াদানে। পেরেশান পাল্কির বেহারারা বিশ্রাম নিতো মেহগনি-তলায়। এ যশোরের কাছাকাছি, বর্তমান খুলনার নড়াইলে ১৯২০ এর দশকে জন্ম গ্রহণ করেন কিংবদন্তিতুল্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতান। ১৯৭১ সালে মার্কিন বিট কবি এলেন গিনসবার্গ পশ্চিমবঙ্গ ধারে যশোর রোডে বাংলাদেশি শরণার্থীদের দেখে লেখে মর্মন্তুদ শোকগাথা, ‘সেপ্টেম্বর অন যেশোর রোড’। কালি পোদ্দার, সুলতান, গিন্সবার্গকে একটি রৈখিক ত্রিভুজে চিন্তা করলে তার ভেতর চড়াই, উতরাই, ক্রেসেন্ডোতে উদযাপনের সেতুবন্ধন হিসেবে পাবো কাজী শাহেদ আহমেদকে, যিনি একাধারে সুলতানের ক্যানভাসে পেশল-ভাবে যুদ্ধে অবতীর্ণ এবং পেলব-ভাবে সৃষ্টিতে মগ্ন, যিনি শান্তিনিকেতনকে জুল ভার্নের রূপক কার্পেটে ভাসিয়ে আনেন চেশায়ারে!
যে কোনও সাক্ষাতের মূলে আছে ধারণ ও লালনের অনুপ্রেরণা। এত কিছুর ভেতর কিভাবে  নিজেকে সময় দিতেন কাজী শাহেদ আহমেদ?

শুধু পারিবারিক গণ্ডিতে তার যাপনকে বেধে রাখা যায় না। ওনাকে দেখা যাচ্ছে আশির দশকে শেখ হাসিনার পাশে, শিবনারায়ণ রায় থেকে চা বাগানের কর্মীরা ওনার নেতৃত্বে কাজ করেছেন। হয়তো যখন আমাদের সরাসরি সাক্ষাত হয় না, কর্মযজ্ঞের ভেতর দিয়ে আমরা একজনকে মূল্যায়ন করি, কেবল তার সফলতাগুলো দেখি। কিন্তু সফল ব্যক্তিরও ব্যক্তিগত কমেডি ও ট্রাজেডি থাকতে পারে। এখানে এসে বলা যায়, একজন কাজী শাহেদ আহমেদের মহাকাব্যিক আখ্যানে তার ব্যক্তিগত হাস্যরস, করুণরস একটি জনগোষ্ঠীর উত্থান, পতনের সাথে বিনি সুতার মালায় গাঁথা হয়ে থাকবে।

গত সোমবার, ২৮শে আগস্ট, ২০২৩, ৮২ বছর বয়সে কাজী শাহেদ আহমেদ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন। জীবনের প্রাণস্পন্দনের প্রতি আমাদের অঙ্গীকারে, প্রজন্মান্তরে কাজী শাহেদ আহমেদ আমাদের মাঝে বার বার বেঁচে উঠবেন।

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
স্মরণসভায় বক্তারাস্রোতের বিপরীতে নির্ভয়ে কাজ করে গেছেন কাজী শাহেদ আহমেদ
কাজী শাহেদ আহমেদের স্মরণসভা শুক্রবার
স্মরণসভায় বক্তারা‘নিষ্ঠা ও প্রেরণার বাতিঘর কাজী শাহেদ আহমেদ’
সর্বশেষ খবর
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে আজ ৬ ঘণ্টা চলবে মোটরসাইকেল-সিএনজি
এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে আজ ৬ ঘণ্টা চলবে মোটরসাইকেল-সিএনজি
গোপালগঞ্জে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে আ.লীগ নেতা গ্রেফতার
গোপালগঞ্জে গোয়েন্দা পুলিশের অভিযানে আ.লীগ নেতা গ্রেফতার
খালেদা জিয়ার ফিরে আসা গণতন্ত্রের উত্তরণ সহজ করবে: মির্জা ফখরুল
খালেদা জিয়ার ফিরে আসা গণতন্ত্রের উত্তরণ সহজ করবে: মির্জা ফখরুল
পানীয়তে গোলাপের নির্যাস মেশালে যেসব উপকার পাওয়া যাবে
পানীয়তে গোলাপের নির্যাস মেশালে যেসব উপকার পাওয়া যাবে
সর্বাধিক পঠিত
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের জানাজা পড়ালেন ছেলে, প্রিয় আইনাঙ্গন থেকে শেষ বিদায়
ব্যারিস্টার রাজ্জাকের জানাজা পড়ালেন ছেলে, প্রিয় আইনাঙ্গন থেকে শেষ বিদায়
স্বর্ণালঙ্কার তৈরির মেশিনেই মিললো স্বর্ণ
স্বর্ণালঙ্কার তৈরির মেশিনেই মিললো স্বর্ণ
এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের চাপে আওয়ামীপন্থি ৬ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল
এনসিপি ও গণঅধিকার পরিষদের চাপে আওয়ামীপন্থি ৬ প্রার্থীর প্রার্থিতা বাতিল
চেম্বার থেকে নারী চিকিৎসককে টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় এনে মারধর
চেম্বার থেকে নারী চিকিৎসককে টেনেহিঁচড়ে রাস্তায় এনে মারধর
বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে মাংস আমদানি চাপ আসছে: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা
বিভিন্ন রাষ্ট্র থেকে মাংস আমদানি চাপ আসছে: প্রাণিসম্পদ উপদেষ্টা