সুবর্ণ আদিত্যর কবিতার বই ‘ফারদুন সিরিজ’র প্রকাশকাল ডিসেম্বর ২০১৮। প্রচ্ছদ করেছেন, তৌহিন হাসান। প্রকাশক : পেন্সিল পাবলিকেশনস। মূল্য ১৪০ টাকা। বইটির পাণ্ডুলিপি থেকে কয়েকটি কবিতা প্রকাশ করা হলো।
ফুলেদের আয়ু থাকে না
সমস্ত দুপুর খুলে তোমার কোলের বারান্দায় শুয়ে থাকি। মৃত্যুর গরিমায় টালমাটাল ঘ্রাণ ময়দানে ছায়া টেনে তারস্বরে চেঁচায় অবনত বৃক্ষ। ফলের শ্বাস ও ফুলের পতনে হুক খুলে দারস্থ হয় মধ্যরাতের বিস্তারিত গল্প।
লাল লাল কোয়া নিয়ে নরম ডালে ডালিম প্রার্থনা করে শীত। যেভাবে জেগে থাকে নাগলিঙ্গম, প্রতি ভোরে। আমাকে ভালোবেসে নাকফুল পরা মেয়েটা দিন দিন যোগ্য হয়ে ওঠে, ধ্যানে। মগজের মনন থাকে, ফুলেদের আফসোস থাকে; আয়ু থাকে না।
ফারদুন—তোমাকে গোলাপ নামে ডাকা হয়ে উঠবে না?
সবজিমহল
রক্তাক্ত হয়ে যাই ফারদুন—যদিও তুমি একটা প্রমাণ সাইজের
টসটসে লাল টিপ আর পরীক্ষাগারে বর্ষাই গোলাপ নাম নিয়ে দুলছো
তোমার ভেতর চলতে চলতে বন-থমকে যাওয়া ঝাঁকঝাঁক অসমতল পাখিবন্দী জীবন
দেশ কাঁধে করে আসা বেদনা-প্রসব।
এইরূপ কুয়াশাসমগ্র শীত আর শুষ্ক হয়ে আসে প্রাত্যহিক ঋতু
আরো কিছু খরার আসন্ন সংবাদে আঙুলের ছাপ নিয়ে
প্রতিবার তোমাকে লুকিয়ে ফেলি; হারিয়ে ফেলার ভয় জন্ম নিতে নিতেই তোমাকে চাষ করি
ফারদুন—কতবার বৃষ্টি এলো তারপর নানাবিধ ফুল-ফল
ঔষধি চারা, পাহাড়িয়া ঢল আর রোদের করাতকল ঘাড়ে চেপে টইটই করে
হেঁটে গেল অনাগত বিধাতা, আরো অনেক অরণ্য
বেডরুমে চিৎকার করছে থকথক ঘ্রাণ
কম্পণ, বুক হাতড়ে আসে উলঙ্গ ছাউনি, ঐ যে যাপন! বসবাস করে যাবো জীবন
মেঘ, মৌমাছি আর অন্যান্য সন্ধ্যায় দূরাগত প্রেমিক আনো—
খাড়া নহর। ফলক আর বীজঃ মই দিয়ে যাই, থোকা থোকা কাঁটায় জন্ম নেয় রক্তালু আত্মজ
সেই নিরঙ্গম শ্বাস, প্রাসঙ্গিক গরিমা আর তুলতুলে সমুদ্রে রোপন করি সুচারু পতন
ফারদুন—আমি নিরেট চাষা বলেই তুমিও চমৎকার বীজসুপ্ত সবজিমহল
হাড়ক্ষয় রোগ
হাসপাতালের বেডে...
নরম ইনসুলিন চলছে—আমার রক্তের ভেতর নড়েচড়ে উঠছো ফারদুন
হাড়ক্ষয় রোগ নিয়ে জন্মেছিলাম। এক স্বচ্ছ আকাশ রোদ আমাদের বাড়ি ঘিরে রাখে।
ভেতরবাড়ির উল্লাস, কাঁপনের দরজা খুলে
মা
বাবাকে
ডাকেন
দাদার আর কোনো ছেলেপুলে ছিল না
নাতির সাথে গল্প করবেন ভেবে
আমার আয়ুর বিনিময়ে প্রতিদিন
নিজেকে ইটভাটায় পোড়ান
দাদার অবশিষ্ট হাড়
বুকের পাজরে নিয়ে এখন আমি বাবার সাথে গল্প করি।
মাছি
ফুলার রোডে দ্যাখা হবার কথা থাকে; দ্যাখা হয় না ফারদুন...
ফুলেদের নাম করে পাশ কাটিয়ে যায় পারফিউম
শরীরে মাছের গন্ধ নিয়ে স্থির থাকতে থাকতে কীট হয়ে যাই
কীটনাশক ছিটিয়ে মাছি তাড়ানোর নাম করে আমাকে তাড়াও রোজ
ঘুম
ফারদুনের ঘুম পায়...
প্রতিদিন তার জন্য ঘুম কিনে আনি
বাবাও আমার জন্য ঘুম আনতেন
মা
তার সাথে অপেক্ষা মিশিয়ে দরজা খুলে রাখতেন
ভোর অবধি আমাকে ঘুমিয়ে দিয়ে
বাবা রোগী দেখতে বের হতেন
একদিন এক রোগী এলো
মা’কে পাশে নিয়ে বাবা হাস্নাহেনার নিচে
তিন যুগ ধরে ঘুমাচ্ছেন...
রোগীর চোখে ঘুম দিয়ে আমি বাবা-মা’র পাশে শুয়ে পড়লাম...
ধ্যানবিদ্যা
ধ্যানবিদ্যা আত্মস্থ করতে করতে ধ্যানি হই। ফারদুনের ঠোঁটের কাছে নিজেকে অবনত
করি প্রেম ও শোকে। যেহেতু আমাদের পৃথিবী ও বৃক্ষরা খুব উদার। মানুষ বলেই
বারবার অসুখে পড়ি, রোগী হই। কোনো কোমল নারী চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে
হবে ভেবে তৃতীয়বার ফারদুনকে ডাক্তার হবার পরামর্শ দিই। সমস্ত গরিমা নিয়ে হেঁটে
যায় ফারদুন। আকাশের মত এক গমগমে পৃথিবী ফারদুনকে কেন্দ্র করে ঘোরে।
ফারদুন—আমাকে স্পর্শ করো, খোলাচুলে বুকের কাছাকাছি ঝুঁকে আসো, ঘন নিঃশ্বাসে গাঢ় করে কপালে সেবন করাও মৃত্যু নিরঙ্গম।
এরপর নত হতে হতে, তোমার বুক সমান আধিপত্য নিয়ে ফুল আর পাখির কাছে শিখে নিই সমূহ উড়াল জীবন।
মুখ ও মুখোশ
একদিন স্বপ্নের ভেতর তোমার হাত নিয়ে উড়ে গেলাম। ডানা কাটা আঘাত নিয়ে তুমি
অলিম্পিকে গেলে। সাঁতারে গোল্ড জিতে ফিরে এসে আমার পা দু’খানা খুলে নিলে লং
জাম্পে লড়বে বলে।
উড়তে গিয়ে মোমের আকাশে আমার বুকের হাপর খুলে গেলো
চালতার আচারের বোয়ামে রোদে শুকোতে দিলে ফুটন্ত হৃদপিন্ড।
এখন তো আর তোমার হাত ফিরিয়ে দিতে পারি না
ভালোবাসি—বলতে পারি না
আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়াই...
পুরোনো চেহারাটা খুঁজে নিতে নিতে
মুখোমুখি হয়ে যাই মুখোশের
ফারদুন—আমার মুখ, ফিরিয়ে দাও।
গন্তব্য
লোকটি শত মাইল পথ হেঁটে এলেন—
আমরা দূর থেকে তাকে কাছে দেখি
কাছে থেকে অতিদূর বলে ভুল হলে
বুঝি—
তার হাজার মাইল পথ বাকি...
ফারদুন—বরং ফিরে এসে তোমাকে ভালোবাসা যাবে
পাঠ-প্রতিক্রিয়া:
আমাকে কিছু কবিতা পাঠানো হয়েছে ঠিকই কিন্তু কবির নাম পাঠানো হয়নি, ফলে কবি কোন সময়ের সেসব কিছু বুঝতে পারছি না। তবে কবিতাগুলো পড়ে উত্তর আধুনিক কবিতার কিছুটা স্বাদ পেয়েছি। তবে এ-ও মনে হয়েছে কবি তরুণ। জানি না কতখানি ধরতে পেরেছি। চিত্রকল্প নির্মাণে তাকে বেশ কিছুটা কাঁচা মনে হয়েছে, যদিও আশা করি অল্প দিনেই এই কবির কবিতাগুলো আরো পরিণত হয়ে উঠবে। কবিকে শুভেচ্ছা।
[আমরা গল্প ও কবিতার সঙ্গে পাঠ-প্রতিক্রিয়া জুড়ে দেবার সীদ্ধান্ত নিয়েছি। যিনি পাঠ-প্রতিক্রিয়া লিখবেন তাকে শুরুতে জানতে দেয়া হয় না লেখকের নাম। আবার লেখক কখনোই জানতে পারবেন না পাঠ-প্রতিক্রিয়া কে লিখেছেন।–বি.স.]