বই পড়ে কেঁদে কুটে বালিশ ভেজানোর বয়স আমার পার হয়েছে অনেক আগে।‘মেম সাহেব’-এর পরে আমি বোধহয় প্রথম সবচেয়ে বেশি মুগ্ধ হয়েছিলাম রাবেয়া আপার প্রতি। যে ছিলো মন্টুর বড় বোন। আমি আর মন্টু তখন ১৪-১৫ বছরের কিশোর। আমাদের কথা লিখেছিলেন হুমায়ূন আহমেদ, বইটার নাম ছিলো—‘শঙ্খনীল কারাগার’।
বিগত প্রায় দুই-যুগ ধরে পরিপূর্ণ উপন্যাস পড়ার সময় আমার বিবেচনায় তাঁর কোনো উপন্যাসই আমি শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পড়ে শেষ করতে পারিনি বা করিনি। কারণ, পড়তে পড়তে হোঁচট খেয়ে আমার বিশ্বাসের জায়গায় যখনই খোঁচা লেগেছে তখনই আমি বইটি উল্টে সরিয়ে রেখেছি, তা তিনি যে লেখকই হোন না কেন।
কিন্তু সেই সময় ‘শঙ্খনীল কারাগার’ আমাকে বিশ্বাস করিয়েছিল। আমার মনে হতো সত্যই আমার এক বড় আপা আছেন, আমার আপন বোন না, আমার মায়ের আগের পক্ষের মেয়ে, রাবেয়া তাঁর নাম। গায়ের রঙ কালো বলে বিয়ে হচ্ছে না, বাবা তাঁর জন্য ‘ফেয়ার এন্ড লাভলি’ কিনে আনেন। এই পরিবারের বড় ছেলে খোকা। খোকা ভাই আমার চেয়ে বয়সে বড়, কিন্তু আমার মাঝে মাঝে নিজেকে খোকাও মনে হতো, আবার নিজেকে মন্টুও মনে হতো। আমার কোনো বড় বোন নেই। কিন্তু মনে হতো রাবেয়া আপা আমার বড় বোন। আর সে সময় আমি নিজেও এক দুইটা কবিতা লিখে ফেলেছি মন্টুর মতো।
এই লেখক একই চরিত্রের নাম দিয়ে আরেকটি উপন্যাস লেখেন—‘নন্দিত নরকে’। ঘটনাও এই পরিবারের, কিন্তু কাহিনি ভিন্ন। দুইটাই সমান তালে ভাল লেগে যায়। এই ভালোলাগার ঘোর আমার ভালোলাগার বয়স কেটে যাবার পরও এই লেখকের অন্য কোন নতুন বই দিয়ে কাটেনি, যদিও তাঁর প্রায় সকল উল্লেখযোগ্য বই আমি চেখে দেখেছি।