[কবি পেইসলি রেকডাল বেড়ে ওঠেন যুক্তরাষ্ট্রের সিয়াটল নগরীতে। নৃতাত্ত্বিক পরিচয়ে তাঁর মা যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত একজন চায়নিজ-আমেরিকান তবে পিতা নরওয়ের বাসিন্দা। একাধিক প্রবন্ধসংকলন ও কাব্যগ্রন্থের রচয়িতা কবি রেকডালের দুটি আলোচিত কাব্যগ্রন্থের শিরোনাম হচ্ছে যথাক্রমে : ‘সিক্স গার্লস্ উইথআউট প্যান্টস্, (২০০২)’; ও ‘ইনভেনশন অব কেলাইডোস্কোপ, (২০০৭)’। কবি যুক্তরাষ্ট্রের ইউটা অঙ্গরাজ্যের ‘পোয়েট লারিয়েট’, পেশাদারি জীবনে তিনি ইউটা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনাও করে থাকেন। ২০১৬ সালে প্রকাশিত যে কবিতার বইটি সম্প্রতি বোদ্ধা পাঠকদের মনোযোগ আকর্ষণ করেছে, তার শিরোনাম হচ্ছে—‘ইমাজিনারি ভেসেলস্’, যা থেকে অনূদিত কবিতাটি চয়ন করা হয়েছে। কবিতাটি কেম্বোডিয়ার রাজধানী নমপেন নগরীর তৌল স্লেং নামক জাদুঘরে প্রদর্শিত অজস্র করোটির একটিকে ভিত্তি করে রচিত। সত্তর দশকের মাঝামাঝি খেমার রুজদের শাসনামলে কেম্বোডিয়ায় সংগঠিত হয়েছিল গণহত্যা। ওই সময়ে নিহত ভিকটিমদের করোটিগুলো পরবর্তীতে সংরক্ষিত হয় তৌল স্লেং জাদুঘরে।]
ভাষান্তর : মঈনুস সুলতান
নমপেনের জাদুঘরে কাচের একুরিয়মে থরে বিথরে
সাজিয়ে রাখা করোটিগুলো—
ভয়ংকর বিষণ্ন খেলনা যেন-বা ঝুলানো যায় ম্যামথ সাইজের বড়শিতে।
এখানে প্রতিটি খুলিকে চিহ্নিত করা হয় নামফলকের মতো ট্যাগে,
তাদের সাজিয়ে রাখা হয়—বেদির মতো একটু উপরে তুলে দৃষ্টিরেখার সমান্তরালে,
পাশে রাখা হয় একটি আলোকচিত্রও—যা নির্বাক ইশারায় জানিয়ে দিচ্ছে
প্রাণ ছিল এক দিন এ দেহে, হয়তো জুড়ে দেওয়া হয়েছে
একজন মানুষের নাম কিংবা সাকিন মায় ঠিকানাও।
দেখেশুনে মনে হয়—আমি আন্দোলিত হই—যা কিছু অজ্ঞাত নাম ঠিকানাহীন,
অতীত—কল্পনা করা যাক—ক্রমশ ক্ষয়ে আসা মুখগুলো পুঁতে আছে কাদামাটিতে, গোড়ালিতে ক্ষত-বিক্ষত মাংশপেশি,
বৃষ্টিপাতে ফুলে উঠেছে—
চোখের খানিকটা আকৃতি এখনো টিকে আছে কোঠরে
হয়তো করোটিগুলো—তাদের নিজস্ব স্বত্তা—এমনকি কোষ-তন্তু ত্বক ও চামড়া উপে যাওয়ার পর চায় না আর কোনো নির্দিষ্ট নামে চিহ্নিত হতে,
এসবই তো তাদের আঘাতের একমাত্র স্বাক্ষী,
সময়ের সঙ্গে তুমুল বেদনা মিশে গিয়ে তৈরি হয়েছিল যে তীব্র সংকট
তা থেকে করোটিগুলোকে বিযুক্ত করা যায় কী কখনো?
মানুষ হিসেবে হারিয়ে গিয়ে তারা হয়ে ওঠেছে কেবলমাত্র একটি ঘটনা।
এভাবে অতিক্রম করে অনেক কিছু তারা অর্জন করে ভয়ংকর এক অভিজ্ঞতা।