তোমার তর্জনী—এখনো আমাকে
সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়তে উদ্বুদ্ধ করে
এখনো তোমার সফেদ পাঞ্জাবি, কালো কোট
আমার চোখে চোখে প্রতিনিয়ত আলো ফেলে
আমি যখন নির্জন সবুজ খেত ধরে হাঁটি
টুঙ্গিপাড়ার সেই মাটি-পথ;
এখনো আমাকে বলে :
‘খোকা’ হেঁটেছিল এই পথে—
বলে : বাইগারের জলের সাথে
‘খোকা’ ডুবসাঁতার খেলেছে
তাল গাছ, ইট বিছানো পুকুরঘাট,
পুকুরের জল, জলের আচরণে
এখনো ভেসে উঠে তোমার শৈশবের স্মৃতিময় মুখ
গিমাডাঙ্গার স্মৃতিমুখর স্কুল-মাঠের ঘাসেরা বলে :
মুজিব আমাদের দুপুরকে উজ্জীবিত করেছে বহুদিন
খরস্রোতা আড়িয়াল খাঁ বলে : মুজিবের সাইকেলটি
আমাকে চিনিয়েছে মাদারিপুরের মেঠোপথ—
ইসলামিয়া কলেজ হোস্টেলের
তোমার শয়নকক্ষ, পড়ার টেবিল,
এখনো তোমার বলিষ্ঠ মানবিক চেতনাকে বহন করে চলেছে
মনে পড়ে তোমার?
এক সন্ধ্যায় তাজমহলের গায়ের পাশে দাঁড়িয়ে
যমুনায় উপচে পড়া জ্যোৎস্নার রং মেপে মেপে বলেছিলে :
আহা কি সুন্দর, কী যে সুন্দর এই পূর্ণিমা, জল-তরঙ্গ
ঠিক এমনই জ্যোৎস্নার স্ফূরণ দেখেছিলে তুমি
মধুমতী, পদ্মা, বুড়িগঙ্গার প্লাবিত জলের হৃদয়জুড়ে?
জানো কী তুমি?
ধানমন্ডি, পল্টন, সোহরাওয়ার্দীর বাতাসেরা
এখনো তোমার উদীপ্ত কণ্ঠস্বরে কথা বলে!
এখনো তোমার কালো পাইপ থেকে উত্থিত ধোঁয়া
ঘ্রাণে বিমোহিত করে রেখেছে বত্রিশের ছাদ
তোমার ভরাট মুখের পুরুষ-দীপ্ত পোর্টেট
এখনো শোভা পায়—বাংলার ঘরে ঘরে
বাঙালির অন্তরে অন্তরে
দিনের কাজ শেষে যেমন বাড়ি ফিরি আমরা
তুমিও স্বাধীনতার সূর্য ফুটিয়ে ফিরে গেছ
পুণ্যভূমি টুঙ্গিপাড়ার শীতল ছায়ায়
তোমার অসমাপ্ত আত্মজীবনীর পৃষ্ঠাগুলো পড়ে
আমরা আজীবন ভালবাসতে শিখেছি বাংলাদেশকে