X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৬ বৈশাখ ১৪৩১

শুধু সহানুভূতি নয়, ভালোবাসাও চাই

শাখাওয়াৎ নয়ন
২৯ জুলাই ২০১৭, ০১:৪৪আপডেট : ২৯ জুলাই ২০১৭, ০১:৫১

শুধু সহানুভূতি নয়, ভালোবাসাও চাই
বাংলাদেশের একজন তরুণ লেখকের একটি গল্পের বই পড়লাম। বইটি নাকি পুরস্কারও পেয়েছে। আমার অনুজপ্রতিম গল্পকার মেহেদী উল্লাহকে জিজ্ঞেস করলাম, অমুক লেখকের সেরা লেখা কোনটি? [প্রিয় পাঠক, কোনো লেখকের সুনাম নষ্ট করা আমার উদ্দেশ্য নয়, তাই লেখক এবং তাঁর বইয়ের নাম উল্লেখ করছি না।] সে আমাকে উক্ত বইটির নাম বলল। আমি তাকে লিখলাম, ঐটা যদি ওনার সেরা লেখা হয়, তাহলে আমি হতাশ। কারণ লেখাটি পুনরাবৃত্তি দোষে দুষ্ট। গল্পের ধরনে, কথনে এবং ভাষায় কোনো বিশেষত্ব খুঁজে পাইনি। ক্ষয়িষ্ণু পেশা, গোষ্ঠী, সংস্কৃতি, সম্প্রদায়কে উপজীব্য করে বাংলা সাহিত্যে অনেক গল্প আছে। সাব-অল্টার্ন ভাবধারার দুর্বল গল্প পাঠকের হৃদয়ে এক ধরনের সহানুভূতি জাগ্রত করে বটে কিন্তু ভালোবাসার উদ্রেক করে না; যদি না লেখক বন্দ্যোপাধ্যায় (মানিক, বিভূতি) পর্যায়ে পৌঁছাতে পারেন।      

শিল্প-সাহিত্যে গরিব, দুঃস্থ, মেহনতি, নিপীড়িত, অবহেলিত, বঞ্চিতদের প্রতি সহানুভূতি জাগ্রত করা অতি সহজ বিষয়গুলোর একটি। কারণ গল্প কিংবা চরিত্র সুলভ। কিন্তু ভালোবাসা জাগ্রত করতে বিরল প্রতিভা দরকার। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের দেশের তরুণ লেখকদের মধ্যে প্রতিভার অভাব নেই। কিন্তু মনোযোগ এবং প্রস্তুতির অভাব। ভালো করে লিটারেচার রিভিউ না করেই কোনো একটি বিষয়ে লিখতে শুরু করে দেয়।

শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন তাঁর শিল্পের মাধ্যমে অবহেলিত, বঞ্চিতদের প্রতি আমাদের মধ্যে দারুণভাবে সহানুভূতি, মমতা এবং ভালোবাসাবোধ জাগ্রত করেছেন। তাঁর আঁকা দেবে যাওয়া চাকা, কিংবা দুর্ভিক্ষের ছবির দিকে আমরা যতক্ষণ তাকিয়ে থেকেছি, বাস্তবে ময়লার বিন থেকে খুঁজে খুঁজে খাবার খাওয়া কারো দিকে অত সময় তাকিয়ে থাকিনি। নাক টিপে মুখ ঘুড়িয়ে চলে যাই। তাহলে কী দাঁড়ালো? জয়নুল আমাকে ধরে ফেলেন, মুখ ঘুড়িয়ে চলে যেতে পারি না। বাস্তবের মানুষের প্রতি অবহেলা করার কারণে, একজন শিল্পী আমাকে অপরাধী করে ফেলেন। এটাই তো একজন শিল্পীর শক্তি। পথের পাঁচালী, পদ্মানদীর মাঝি আমাকে ভাবায়। আরিচা ঘাটে অতিকায় স্টিমারে পদ্মা পার হবার সময় মানিকের ‘পদ্মানদীর মাঝি’কে খুঁজতে থাকি। দেবীগঞ্জ কোন দিকে? অনেককে জিজ্ঞেস করেছি। কারণ লেখক আমাকে জামিন দেন নাই। প্রেমিকার মতন হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন; ভুলতে চাইলেও ভুলতে পারি না। তাঁর মানে ভালোবাসার উদ্রেক করতে সক্ষম হয়েছেন।   

এখন কথা হচ্ছে, সহানুভূতি জাগ্রত করতে পারলেই কম কি? অবশ্যই কম। কারণ যে ভালোবাসার দাবীদার, তাকে সহানুভূতি দিলে নিবে কেন? সহানুভূতি তো স্বল্পায়ু, ভালোবাসা দীর্ঘস্থায়ী।

একটা সময় শিল্প-সাহিত্য ছিল রাজা-রানী-রাজকন্যা-রাজপুত্র নির্ভর। সমাজ-সভ্যতার ক্রমবিকাশে গত এক-দেড় শতকে সমাজের অবহেলিত, বঞ্চিতরা শিল্প-সাহিত্যে জায়গা পেয়েছে। মধ্যবিত্তরা শিল্প-সাহিত্যের ভোক্তা হয়েছে। এমতাবস্থায়, আমাদের অনেক তরুণ লেখক সমাজের দুঃস্থদের প্রতি সহানুভূতি নিয়ে হাজির হয়েছেন, কেউ কেউ একটু আধটু মমতাও জাগিয়েছেন। কিন্তু ভালোবাসাবোধ জাগ্রত করতে পারছেন কেউ? আমরা লেখকের কাছে শুধু সহানুভূতি নয়, ভালোবাসাও চাই।     

 

সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
দাবদাহে ট্রাফিক পুলিশ সদস্যদের তরল খাদ্য দিচ্ছে ডিএমপি
জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
কান উৎসব ২০২৪জাপানি ছবির দৃশ্য নিয়ে কানের অফিসিয়াল পোস্টার
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
ড্যান্ডি সেবন থেকে পথশিশুদের বাঁচাবে কারা?
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
লখনউর কাছে হারলো চেন্নাই
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
ইরানে হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল!
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া