X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১
সাহিত্যতত্ত্ব : একটি সংক্ষিপ্ত পরিক্রমা

প্রসঙ্গ : ক্লদ লেভি-স্ট্রস ও কাঠামোবাদ

মুহম্মদ মুহসিন
২৯ অক্টোবর ২০২১, ১১:৪১আপডেট : ২৯ অক্টোবর ২০২১, ১১:৪১

সস্যুর কাঠামোর সাথে সংশ্লিষ্ট করে ভাষা সম্পর্কে যা বললেন তাকে সাহিত্য বিশ্লেষণে কীভাবে ব্যবহার করা যায় সে বিষয়ে সস্যুর কিছু বলে যাননি। সস্যুর বর্ণিত ভাষা-কাঠামোর ধারণাকে ভাষার বাইরে এনে মানুষের সামাজিক-সাংস্কৃতিক জীবন বিশ্লেষণের জন্য প্রথম ব্যবহার করলেন নৃবিজ্ঞানী ক্লদ লেভি স্ট্রস (১৯০৮-২০০৯) এবং তিনিই সস্যুরের কাঠামো চিন্তাকে সাহিত্যের রাজ্যে ব্যবহারের পথ করে দিয়েছিলেন। এর জন্য তিনি সস্যুর বর্ণিত লাঙ ও পারোলের ধারণা দিয়ে বিশ্লেষণ করেছেন বিখ্যাত ইদিপাস মিথ। এই বিশ্লেষণের প্রবন্ধটির নাম ‘দি স্ট্রাকচারাল স্টাডি অব মিথ’। তিনি মিথের এই বিশ্লেষণে ভাষার কাঠামোকে এমনভাবে অনুসরণ করেছেন যে, ভাষা যে-ধ্বনি একক দিয়ে তৈরি হয় তার নাম ‘মরফিম’ (Mrpheme) বলে তিনি মিথ যে-ঘটনা একক দিয়ে তৈরি হয় মরফিমের সাথে মিল রেখে তার নাম দিলেন ‘মিথিম’ (Mytheme)। মিথিমের একক এবং লাঙ ও পারোলের ধারণা দিয়ে তিনি কীভাবে মিথ বিশ্লেষণ করলেন তা বোঝার জন্য আমরা এখানে ইদিপাসসংক্রান্ত মিথটি সংক্ষেপে বর্ণনা করছি।

ইদিপাসসংক্রান্ত মিথটির শুরু ক্যাডমসের কাহিনি থেকে। ক্যাডমসের বোন ইউরোপাকে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছিল জিউস। ইউরোপার অপহরণের পরে ইউরোপার বাবা তার ছেলেদেরকে আদেশ করলেন বোনকে খুঁজে আনতে। ইউরোপার ভাই ক্যাডমস ও অন্যান্য ভাইয়েরা বোনের সন্ধানে নামে কিন্তু কোথাও তাকে খুঁজে পেল না। খুঁজতে খুঁজেতে ক্যাডমস হাজির হয়েছিলেন ডেলফি নামক স্থানে। ডেলফির বিখ্যাত ভবিষ্যদ্বক্তা তাঁকে বললেন যে, ইউরোপাকে খুঁজে কোনো লাভ নেই, কারণ তাকে কোথাও পাওয়া যাবে না। তবে ভবিষ্যদ্বক্তা ক্যাডমসকে বললেন তিনি যেখানে খুঁজতে এসেছেন সেখানে তিনি একটি নতুন শহর পত্তন করতে পারেন। ভবিষদ্বক্তার এই বাণীতে প্রীত হয়ে তিনি তাঁর সঙ্গীদের পাঠালেন একটু বিশুদ্ধ পানি সংগ্রহ করতে যে পানি তিনি অ্যাথিনা দেবীর উদ্দেশ্যে একটি গরু উৎসর্গের কাজে ব্যবহার করবেন। সঙ্গীরা পানি আনতে গিয়ে কেউ আর ফিরে আসছে না দেখে ক্যাডমস নিজেই গেলেন তাদের খোঁজে। গিয়ে দেখেন এক ড্রাগন তাদের সকলকে হত্যা করেছে। তিনি তখন ড্রাগনকে পরাস্ত করে হত্যা করেন এবং ড্রাগনের দাঁতগুলো মাটিতে রোপন করেন। ড্রাগনের দাঁত থেকে স্পার্টোইদের জন্ম হয় এবং স্পার্টোইরা একে অপরকে হত্যায় নেমে পড়ে এবং শেষ পর্যন্ত ৫ জন বেঁচে থাকে। এই ৫ জন পারস্পরিক হত্যাযজ্ঞ বন্ধ করে এবং তারা ক্যাডমসের বশ্যতা স্বীকার করে। এরপরে তদের নিয়ে ক্যাডমস যে শহর পত্তন করেন তারই নাম থিবিস।

থিবিসের প্রতিষ্ঠাতা এই ক্যাডমসের নাতি ছিলেন ল্যাবডাকোস। ল্যাবডাকোস অর্থ হলো খোঁড়া। ল্যাবডাকোসের পুত্র ছিলেন লেয়াস। লেয়াস অর্থ হলো বামহাতি। ডেলফির ভবিষ্যদ্বক্তা লেয়াসকে সতর্ক করলেন যে তার পুত্র তাকে হত্যা করবে এবং তার স্ত্রীকে বিবাহ করবে। এই ভবিষ্যদ্বাণীকে শঙ্কিত হয়ে লেয়াস তাঁর নবজাত পুত্রের দুই পা পেরেকবিদ্ধ করে এক ভৃত্যের হাতে দিলেন শিশুটিকে দূরে পাহাড়ে ফেলে আসতে যাতে শিশুটি সেখানে মারা যায়। কিন্তু শিশুটি মারা গেল না বরং এক রাখাল শিশুটিকে নিজ গৃহে নিয়ে লালন করলো। পেরেকবিদ্ধ শিশুর পা ফুলে গিয়েছিল বলে এই শিশুর নাম হলো ইদিপাস অর্থাৎ পা-ফোলা। বড় হয়ে ইদিপাস ডেলফির ভবিষ্যদ্বক্তার কাছ থেকে দৈববাণী শুনলেন যে, তাঁর হাতে তাঁর পিতা মারা যাবে এবং তিনি বিয়ে করবেন তাঁর মাকে। তিনি তো ভাবছেন তাঁকে যারা লালন-পালন করছেন তারাই তাঁর মা-বাবা। তাই যাতে বাবাকে হত্যা করতে না হয় এবং মাকে বিয়ে করার মতো ঘৃণ্য কাজে জড়াতে না হয় সে লক্ষ্যে তিনি বাড়ি থেকে বের হয়ে থিবিস চলে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলেন। পথিমধ্যে এক ব্যক্তির রথের সাথে ধাক্কা লাগায় তাঁর সাথে ইডিপাসের ঝগড়া হলো এবং এক পর্যায়ে ইডিপাস তাকে হত্যা করলেন। এই ব্যক্তিই ছিলেন রাজা লেয়াস অর্থাৎ ইডিপাসের পিতা। এভাবে পিতাকে হত্যা করে ইডিপাস যখন থিবিস উপস্থিত হলেন তখন দেখলেন সেখানে একটি স্ফিংস মানুষকে বিভিন্ন রকম ধাঁধা জিজ্ঞেস করছে এবং ধাঁধার সঠিক উত্তর দিতে না পারায় স্ফিংস মানুষগুলোকে হত্যা করছে। ইডিপাস স্ফিংসের ধাঁধার সঠিক জবাব দিয়ে থিবিসের মানুষদেরকে রক্ষা করায় থিবিসবাসী কৃতজ্ঞতার সাথে ইডিপাসকে তাদের রাজা হিসেবে বরণ করে। রাজা হয়ে স্বাভাবিকভাবে তিনি রানি জোকাস্টাকে পত্নী হিসেবে গ্রহণ করেন। পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে যখন প্রকাশিত হলো এবং ইডিপাস জানতে পারলেন যে তিনি নিজ হাতে পিতাকে হত্যা করেছেন এবং মাকে বিয়ে করেছেন তখন অসহ্য মানসিক যন্ত্রণায় তিনি আপন চক্ষুদ্বয় বিদীর্ণ করে অন্ধত্ব বরণ করলেন এবং রাজ্য ছেড়ে চলে গেলেন। এক পর্যায়ে রাজার উত্তরসূরী ইটিওক্লেস ও পলিনাইসিসের মধ্যে বিবাদ শুরু হলো এবং ইটিওক্লেস পলিনাইসিসকে হত্যা করল। হত্যার পরে ইটিওক্লেস ঘোষণা করল যে, কেউ পলিনাইসিসের মৃতদেহ সৎকার করতে পারবে না, যদি কেউ পলিনাইসিসের মৃতদেহ সৎকার করে তাহলে সৎকারকারীকে জীবন্ত কবর দেওয়া হবে। ইটিওক্লেসের এই ঘোষণা উপেক্ষা করে তাদের বোন আন্তিগোনি পলিনাইসিসের মৃতদেহ সৎকার করলেন এবং পরিণতি এড়ানোর জন্য আত্মহত্যা করলেন।

এই মিথের বিশ্লেষণে লেভি-স্ট্রস প্রথমে পুরো মিথটিকে মিথিমে বিশ্লেষিত করলেন। আমরা আগেই বলেছি লেভি-স্ট্রসের মতে মিথিম হলো মিথের ঘটনা-একক। পুরো মিথটিকে বিশ্লেষণ করে লেভি-স্ট্রস যে ঘটনা-একক বা মিথিমগুলো পেলেন সেগুলো হলো : ক) ক্যাডমস কর্তৃক তাঁর অপহৃত বোন ইউরোপাকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়া, খ) ক্যাডমস কর্তৃক ড্রাগন হত্যা, গ) স্পার্টোইদের একে অপরকে হত্যা করা,  ঘ) খোঁড়া রূপে ক্যাডমসের নাতি ল্যাবডাকসের জন্ম (ল্যাবডাকস অর্থ খোঁড়া), চ) খোঁড়া ল্যাবডাকসের পুত্ররূপে বামহাতি লেয়াসের জন্ম (লেয়াস মানে বামহাতি), ছ) লেয়াসের পুত্ররূপে পা-ফোলা ইডিপাসের জন্ম (ইডিপাস মানে পা-ফোলা), জ) ইডিপাসের হাতে তাঁর পিতা লেয়াসের খুনের ঘটনা, ঝ) ইডিপাস কর্তৃক স্ফিংস হত্যা, ঞ) ইডিপাস কর্তৃক মাকে বিবাহ, ট) ইটিওক্লেস কর্তৃক ভাই পলিনাইসিসকে হত্যা, ও ঠ) ইটিওক্লেসের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও আন্তিগোনি কর্তৃক ভাই পলিনাইসিসের মৃতদেহ সৎকার।

বিশ্লেষণের প্রয়োজনে লেভি-স্ট্রস মিথিমগুলো নিম্নরূপে সারণিবদ্ধ করেছেন।

লেভি-স্ট্রসের সারণি

লেভি-স্ট্রস মিথিমগুলোকে এভাবে বিন্যস্ত করে বলেছেন যে, এগুলো সারি অনুসারে আনুভূমিকভাবে পড়লে পুরো মিথটি ধারাবাহিকভাবে পাওয়া যাবে। কিন্তু এগুলো কলাম অনুসারে উল্লম্বভাবে পড়লে নজরে পড়বে মিথিমগুলোর মধ্যকার এক আজব সম্পর্কের বুনন। এই সম্পর্কই মূলত মিথিমগুলোকে মিথের কাঠামোতে আবদ্ধ করেছে। কাঠামোবাদী বিশ্লেষণের কাজই হলো কাহিনি বা আখ্যানকে এভাবে এর ঘটনা-এককে বিশ্লিষ্ট করে এর কাঠামোগত স্বরূপটি তুলে ধরা এবং এর এককগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক নির্দেশ করা। উল্লম্বভাবে প্রদর্শিত মিথিমগুলোর মধ্যে লেভি-স্ট্রস যে আজব সম্পর্কের বুনন দেখিয়েছেন সে সম্পর্ক হলো প্রথম কলামের সাথে দ্বিতীয় কলামের এবং তৃতীয় কলামের সাথে চতুর্থ কলামের। আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, প্রথম কলামে যে মিথিমগুলো রয়েছে সেগুলো পারিবারিক সম্পর্কের বা রক্তের সম্পর্কের এক গভীর ও অতিমাত্রিক ঊর্ধগামী রূপের প্রকাশ। ক্যাডমস কর্তৃক বোনের খোঁজে দূর দেশে বেরিয়ে পড়া তাদের পারিবারিক গভীর এক বন্ধন ও সম্পর্কের প্রকাশ। ইডিপাস কর্তৃক মাকে বিবাহ যদিও ঘৃণ্য এক ঘটনা তবে তার মধ্য দিয়েও পূর্বতন মাতৃসম্পর্ক আরো এক ধাপ এগিয়ে যে শরীরবৃত্তীয় গভীরতর সম্পর্কে প্রবেশ করেছে তা অস্বীকারের সুযোগ নেই। এই কলামের তৃতীয় মিথিম ইটিওক্লেসের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও জীবনের বিনিময়ে আন্তিগোনি কর্তৃক ভাই পলিনাইসিসের মৃতদেহ সৎকারের ঘটনাও একইভাবে কঠিন এক অতিমাত্রিক পারিবারিক বা রক্তের সম্পর্কের প্রকাশ। এই কলামের সাথে সম্পূর্ণ বৈপরীত্যের সম্পর্কে রয়েছে দ্বিতীয় কলাম। দ্বিতীয় কলামের প্রতিটি মিথিম পারিবারিক সম্পর্কহীনতা বা অতিমাত্রিক নিম্নগামিতার এক ঘৃণ্য রূপ প্রকাশ করছে। একই ড্রাগনের দাঁত থেকে উৎপন্ন স্পার্টোইরা অনেকটা সহোদরা হয়েও একে অপরকে হত্যায় লিপ্ত হয়েছে। ইডিপাস পুত্র হয়ে পিতাকে হত্যা করেছে। ইটিওক্লেস সহোদর ভাইকে হত্যা করেছে। পারিবারিক সম্পর্কের এর চেয়ে নিম্নতর ও জঘন্য কোনো রূপ হতে পারে না। এভাবে লেভি-স্ট্রস পারিবারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে দুই কলামের মিথিমগুলোর মধ্যকার বৈপরীত্যের সম্পর্ক নির্দেশ করেছেন।              

একইভাবে বৈপরীত্যের সম্পর্ক বিদ্যমান তৃতীয় ও চতুর্থ কলামের মধ্যে। এই বৈপরীত্যের ভিত্তি হলো ভূ-উদ্ভূত অস্তিত্বের (Chthonic existence) স্বীকৃতি ও অস্বীকৃতি। এখানে তৃতীয় কলামে রয়েছে ভূ-উদ্ভূত দুটি প্রাণীর নাম : ড্রাগন ও স্ফিংস। দুটোই নিহত হওয়ার মধ্য দিয়ে ভূ-উদ্ভূত অস্তিত্বকে অস্বীকার করা হয়েছে। চতুর্থ কলামে এই অস্তিত্ব স্বীকার করা হয়েছে। চতুর্থ কলামে উল্লিখিত তিনজন মানুষই হাঁটার সমস্যায় ভুগছে। ল্যাবডাকস খোঁড়া, লেয়াস বামহাতি বিধায় ডানপায়ে কম শক্তিসম্পন্ন এবং ইডিপাস পা-ফোলা। ভূ-উদ্ভূত প্রাণীরা কিংবা দেবতারা বুকে ভর দিয়ে চলার বৈশিষ্ট্য ধারণ করে এবং হাঁটতে সমস্যা বোধ করে। ল্যাবডাকস, লেয়াস ও ইডিপাসের হাঁটার এই সমস্যা ইঙ্গিত দেয় যে তাঁরা ভূ-উদ্ভূত অস্তিত্ব এবং তাদের অস্তিত্বের মধ্য দিয়ে ভূ-উদ্ভূত অস্তিত্বকে স্বীকার করা হচ্ছে।

মিথোলজির পারোল রূপ উদাহরণ থিবিসীয় এই মিথকে মিথিম বিশ্লেষণের মধ্য দিয়ে লেভি-স্ট্রস যেভাবে কলামগত সম্পর্কের কাঠামোতে দাঁড় করালেন তা সংক্ষেপে নিম্নরূপে তুলে ধরা যায়:

পারিবারিক বা রক্তের সম্পর্কের অতিমাত্রিক মূল্যায়ন (কলাম-১)              ভূ-উদ্ভূত অস্তিত্বকে অস্বীকার (কলাম-৩)

...........................................................................               ..............................................

পারিবারিক বা রক্তের সম্পর্কের অতিমাত্রিক অবমূল্যায়ন (কলাম-২)           ভূ-উদ্ভূত অস্তিত্বকে স্বীকার (কলাম-৪)

এবারে প্রশ্ন হলো ইডিপাস-মিথ-রূপ পারোলের অন্তস্থ সম্পর্কের এই কাঠামো তৎকালীন সমাজকাঠামোর সাথে কীভাবে সংশ্লিষ্ট। সমাজকাঠামোর সাথে মিথের এই কাঠামোর সম্পর্ক নির্দেশ করতে গিয়ে লেভি-স্ট্রস বলছেন যে, এই মিথের অন্তস্থ মিথিমগুলোর আন্তসম্পর্ক তখনকার সমাজ-মানসে সুপ্তভাবে বিদ্যমান মানবের উদ্ভব বিষয়ক প্রশ্নসমূহ উত্থাপন করছে। মানুষের উদ্ভব যৌনমিলন থেকে নাকি ভূ-উদ্ভূত অস্তিত্ব থেকে সে বিষয়ে সেই সমাজের জনগণ স্থির ধারণায় আসতে পারছিল না। ফলে রক্তের সম্পর্কের বিষয়েও তাদের বিরোধাত্মক ভাবনা ছিল এবং ভূ-উদ্ভব বিষয়েও তাদের বিরোধাত্মক ভাবনা ছিল। সারণির প্রথম কলাম রক্তের সম্পর্ক অতিমূল্যায়নের মাধ্যমে মানুষের উদ্ভব যৌনমিলন থেকে হওয়ার বিষয়ে সায় দিচ্ছে। আবার দ্বিতীয় কলাম রক্তের সম্পর্ককে অবমূল্যায়নের মাধ্যমে মানুষের উদ্ভব যৌনমিলন থেকে হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছে। একইভাবে তৃতীয় কলাম মানুষের ভূ-উদ্ভূত হওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করছে এবং চতুর্থ কলাম মানুষের ভূ-উদ্ভূত হওয়ার বিষয়টি স্বীকার করছে। সারণির প্রথম কলামের সাথে দ্বিতীয় কলামের এবং তৃতীয় কলামের সাথে চতুর্থ কলামের বিরোধ তখনকার সমাজ-মানসের উপরোক্ত বিরোধাত্মক ভাবনারই প্রকাশ। মিথটি অবশ্য এ বিষয়ে কোনো সমাধান দেয় না। মানুষের উদ্ভব যৌনমিলন থেকে নাকি ভূ-উদ্ভূত অস্তিত্ব থেকে অর্থাৎ মানুষের উদ্ভব দুয়ের মিলন থেকে নাকি একক কোনো অস্তিত্ব থেকে সে বিষয়ে মিথটি কোনো সিদ্ধান্ত দেয় না। এ বিষয়ে যে তখনকার সমাজে পরস্পর বিরোধী ভাবনা বিদ্যমান ছিল মিথটি তাই শুধু উচ্চারণ করে। মিথটির পুরো ইঙ্গিতার্থকে নিম্নের সমীকরণে প্রকাশ করা যায়:

জন্ম যৌনমিলনের ফসল                        মানব ভূ-উদ্ভূত অস্তিত্বের ফসল নয়

..........................................     =    .........................................

মানবের জন্ম যৌনমিলনের ফসল নয়          মানব ভূ-উদ্ভূত অস্তিত্বের ফসল  

পারোল রূপ ইডিপাস মিথটিকে এভাবে কাঠামোতে ফেলে বিশ্লেষণ করে লেভি-স্ট্রস যে অর্থে পৌঁছেছেন সেটিই মূলত এ সংক্রান্ত মিথোলজির লাঙ (Langue)। অর্থাৎ মিথিমগুলোর আন্তসম্পর্ক আমাদেরকে পৌঁছে দিয়েছে মিথের বৃহত্তর কাঠামোতে যে কাঠামোতে আমরা দেখতে পাচ্ছি তখনকার সমাজচিত্র আর সেই বৃহত্তর কাঠামোটিই হলো এর লাঙ। কাঠামোবাদী সমালোচনার কাজ হলো এভাবে কোনো আখ্যানের উপাদানসমূহ সজ্জিতকরণের মাধ্যমে তার অন্তস্থ কাঠামোটি দৃশ্যমান করে তোলা এবং সেই কাঠামোর অন্তস্থ উপাদানসমূহের সম্পর্কের মধ্য দিয়ে নির্দিষ্ট আখ্যানের পারোল-রূপ কাঠামোর সাথে বৃহত্তর লাঙ-রূপ কাঠামোর সম্পর্ক নির্দেশ করা ও প্রতিষ্ঠা করা। চলবে  

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
‘আমি কোনও ছেলেকে বিশ্বাস করতে পারি না’
‘আমি কোনও ছেলেকে বিশ্বাস করতে পারি না’
তাপদাহে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের গাউন পরিধানে শিথিলতা
তাপদাহে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবীদের গাউন পরিধানে শিথিলতা
সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
সারা দেশে প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা
উপজেলা নির্বাচন: জেলা-উপজেলায় আ.লীগের সম্মেলন বন্ধ
উপজেলা নির্বাচন: জেলা-উপজেলায় আ.লীগের সম্মেলন বন্ধ
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া