X
বৃহস্পতিবার, ২৮ মার্চ ২০২৪
১৪ চৈত্র ১৪৩০
পথে নেমে পথ খোঁজা

মহৎ উপন্যাস লেখার স্বপ্ন ও ব্যর্থতা।। পর্ব—দশ

মঞ্জু সরকার
২১ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০আপডেট : ২১ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০

পাঠক হিসেবে প্রিয় লেখকদের সেরা উপন্যাসগুলির নাম ও পঠন-প্রাপ্তির অভিজ্ঞতা যখন স্মরণ করি, লেখক হিসেবেও অনেক সময় প্রশ্ন জাগে, শ্রেষ্ঠদের তালিকায় ঠাঁই পাওয়ার যোগ্য কোনো উপন্যাস রচনা করতে পেরেছি কি? এ প্রশ্নর নিরপেক্ষ জবাব দেয়া কঠিন। কারণ জেনেটিক কারণেই মনস-সন্তানের প্রতি লেখকের অন্ধ স্নেহ-পক্ষপাত থাকা স্বাভাবিক। তার উপর সন্তানের সংখ্যা যাদের অর্ধ- এমনকি এক কী দুই শতাধিকও, তাদের পক্ষে নিজের সেরাটা নির্ণয় করা তো আরো কঠিন। আবার হতে পারে, বহুলপ্রজগণ সাহিত্যমানের সফল্য কিংবা শ্রেষ্ঠত্বের ধার ধারেন না। নগদপ্রাপ্তি কিংবা সৃষ্টির আনন্দকে গুরুত্ব দিয়ে বছর বছর অবলীলায় যমজ বা তারো বেশি প্রসব করে থাকেন, দ্রুত বেড়ে চলে বইয়ের সংখ্যা।
মহৎ কিংবা কালোত্তীর্ণ উপন্যাস নির্ণয় করেন আসলে প্রকৃত পাঠক ও মহাকাল। যে ভাষাতেই রচিত হোক না কেন, অনুবাদের মাধ্যমে ভিন্ন ভাষার পাঠকরাও তার রসাস্বাদন করতে পারেন। বোদ্ধা সাহিত্য সমালোচকগণ এ ব্যাপারে সাধারণ পাঠককে সহায়তা করেন মাত্র। আবার বিদগ্ধ সাহিত্য-বিশারদের মন্তব্যে-আলোচনায় প্রভাবিত হন পরের মুখে ঝাল খেতে অভ্যস্ত পাঠক, পুরস্করদাতা প্রতিষ্ঠান, এমনকি স্বয়ং লেখকও। প্রচার-মাহাত্ম্যেও সফল লেখক কি সেরা বইয়ের নাম-ইমেজ কখনো-বা বেলুনের মতো ফুলে ওঠে। আবার চটজলদি চুপসেও যায়।

সমকালে সাফল্য বিচারের একটি বড় মানদণ্ড জনপ্রিয়তা, যা মূলত নির্ণীত হয় বাণিজ্যিক ভিত্তিতে। কত কপি বিক্রি হলো সেই নিরিখে। ইংরেজি ভাষায় রচিত ও আন্তর্জাতিক বাজারে সহজলভ্য বেস্টসেলার গ্রন্থে বিক্রিত মিলিয়ন কপির সংখ্যা এবং বিভিন্ন ভাষায় অনুবাদের সংখাও উল্লেখ থাকে। আমাদের দেশে প্রকাশকরাও জনপ্রিয়দের কিছু গ্রন্থে সংখ্যার বদলে সংস্করণ উল্লেখ করেন। কিছুদিন আগে দেখলাম একটি উপন্যাসের শততম সংস্করণ প্রকাশের উৎসব অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু প্রতি সংস্করণ মানে কত কপি, সেই তথ্য কিংবা মুনাফার তহবিলটি রাখা হয় গোপনে।

সেরা ও সাফল্য বিচারের প্রচলিত যেসব মানদণ্ডের কথা বললাম, তার কোনোটার নিরিখেই আমি একটিও সফল কিংবা শ্রেষ্ঠ উপন্যাসের জনক হতে পারিনি। প্রায় চার যুগের সাহিত্য জীবনে, ১৯৮২ সালে প্রথম মানস-সন্তানের জন্মের পর থেকে প্রতি বছরেই একাধিক জন্ম নিয়েছে। ফলে গ্রন্থসংখ্যা শত ছুঁই-ছুঁই প্রায়। আমি এক অর্থে ভাগ্যবান যে, প্রথম প্রকাশিত গল্পগ্রন্থটি একটি সাহিত্য পুরস্কার পায়। এরপরে পরবর্তী দু’এক দশকের মধ্যেই একাধিক উপনাস্যের জন্য একাধিক সাহিত্য পুরস্কারসহ বাংলা একাডেমি পুরস্কারটিও কোনোরকম চেষ্টা-তদবির ছাড়াই পেয়ে গেছি। এসব পুরস্কার লেখককে পিঠচাপড়ানি দেয়া ছাড়াও সংসারের চাকা ঠেলতেও সহায়ক হয় বটে, কিন্তু মহৎ উপন্যাস লিখতে পারার গ্যারান্টি বা স্বীকৃতি কোনোটাই দেয় না। পুরস্কার ছাড়াও বিদগ্ধ পাঠকমণ্ডলীর কাছ থেকে মৌখিক, ক্কচিত লিখিত আলোচনাতেও কিছু কিছু শংসাবাণী শুনতে পেয়েছি। কিন্তু তা কখনোই ‘মুই কী হনু রে’ ধরনের গর্ব জাগায়নি। কারণ নিজের লেখার অপূর্ণতা ও দুর্বলতার দিকগুলি সম্পর্কে লেখকের সচেতনতা এবং অতৃপ্তি এত বেশি যে, পুরস্কার কিংবা পাঠক-সমালোচকদের এটুকু প্রশংসা কিংবা সার্টিফিকেট তা মুছে দেয়ার জন্য মোটেও যথেষ্ট ছিল না।

সামান্য পুরস্কার-প্রশংসার তুলনায় আমার অধিকাংশ উপন্যাসের ক্ষেত্রে পাঠকদের অবহেলা এবং প্রকাশকদের হতাশা ও তুচ্ছতাচিছল্যের পরিমাণটা অনেক বেশি। বিদগ্ধ সমালোচকের দু’অক্ষরের মন্তব্য দূরে থাক, সাধারণ পাঠকদের ভালোলাগা কিংবা নাক সিটকানোর খবরটাও জানতে পারিনি। অবশ্য পত্রপত্রিকায় লেখা প্রকাশিত হলে, কখনো-বা বইয়ের প্রচ্ছদের ছবি ও খবর দেখেও ‘দেখলাম!’ বলেছেন অনেকেই। একদা পাঠকদের লেখকের নাম-দেখা মন্তব্যেও খুশি হতাম। ভাবতাম, যাক নামটা তো ছড়াচ্ছে। অস্বীকার করব না, অল্প বয়সে বিশ্ববিখ্যাত লেখক হওয়ার জন্য খ্যাতির তৃষ্ণাটাও প্রবল ছিল। কিন্তু বিখ্যাত হওয়ার জন্য যে ধরনের মহৎ উপন্যাস রচনার স্বপ্ন ও সংকল্প ছিল লেখকজীবনের শুরুতেও, পরিণত বয়সে নাম-খ্যাতির তৃষ্ণা মুছে গিয়ে অনেক ব্যর্থতা জমা হওয়ার পরও দেখছি, সেই স্বপ্নটা অধরাই রয়ে গেছে এখনো।

লেখার সময় ঘরে আমার শিশু-পাঠক নাতিও একদিন প্রেরণা দিয়ে বলেছে, দাদু অ্যালিয়েনদের নিয়ে একটা দারুণ উপন্যাস লেখো। এমন একটা উপন্যাস লিখবে, যেটা তুমি ছাড়া পৃথিবীর কেউ লিখতে পারবে না। তা হলে একদিন নোবেল পুরস্কার পাবে। চমকে উঠেছিলাম তার কথা শুনে। কারণ লেখকজীবনের শুরুতে আমিও এরকমই ভাবতাম আসলে। অবশ্যই ভিন্ন গ্রহের অ্যালিয়েনদের নিয়ে নয়, চেনা দুনিয়ার পরিচতি মানুষজন নিয়ে এমন অসাধারণ লিখব, পাঠকের পড়ে অবশ্যই মনে হবে ওই লেখক ছাড়া আর কারো পক্ষেই এমন লেখা সম্ভব হয়নি। মহৎ উপন্যাস বিষয়ে নিজের ধারণা, আমাদের সাহিত্যজগতের বর্তমান সংকট, উন্নয়ন কিংবা অবক্ষয় নিয়ে নিজের সাহিত্যচিন্তার বিস্তার পরে কোনো নিবন্ধে ঘটানো যাবে। এ লেখাটায় আপাতত মহৎ উপন্যাস রচনার ব্যক্তিগত স্বপ্ন-প্রয়াস, ছিটেফোঁটা সাফল্য ও বিস্তর ব্যর্থতা সম্পর্কে খানিকটা আলোকপাত করি বরং।

বাংলা সাহিত্যে মহৎ উপন্যাস রচিত হয়েছে যাদের হাতে, তারা প্রত্যেকেই কিন্তু মহৎ উপন্যাস পাঠের অভিজ্ঞতা থেকেও অনুপ্রাণিত হয়েছিলেন নিজের সেরা ও স্বতন্ত্র উপন্যাসটির জন্য। বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যেমন নতুন আবিষ্কারের পেছনে পূর্বসুরিদের আবিষ্কার বা তত্ত্বের উপর নির্ভর করতে হয়, সাহিত্যের ক্ষেত্রেও তেমনি কোনো প্রতিভাই আকাশ থেকে পড়ে না। বড় লেখক মানে বিস্তর বইপড়া পাঠকও। লেখার শুরুতে প্রশ্ন রেখেছিলাম, নিজের পঠিত শ্রেষ্ঠ উপন্যসগুলির তালিকায় ঠাঁই পাওয়ার যোগ্য নিজের সেরা উপন্যাসটি লিখতে পেরেছি কি না। জবাব খোঁজার আগে প্রশ্নটি আরো স্পষ্ট করার জন্য বিশ্বসাহিত্যের কথা উহ্য রেখেও, নিজের পঠনপ্রাপ্তির অভিজ্ঞতায় বাঙলা সাহিত্যের কীর্তিমান লেখকদের একটি করে প্রিয় উপন্যাসের নাম স্মরণ করা যাক। বঙ্কিমের ‘কৃষ্ণকান্তের উইল’, শরৎচন্দ্রের ‘গৃহদাহ’, রবীন্দ্রনাথের ‘গোরা’, তারাশঙ্করের ‘কবি’, বিভূতিভূষণের ‘পথের পাঁচালি’, মানিকের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা’, সতীনাথের ‘ঢোঁড়াই চরিতমানস’, দেবেশের ‘তিস্তাপারের বৃত্তান্ত’, মহাশ্বেতার ‘হাজার চুরাশির মা’, ওয়ালীউল্লাহর ‘লালসালু’ এবং ইলিয়াসের ‘খোয়াবনামা’। পাঠক ভেদে সেরা লেখক ও প্রিয় উপন্যাসের তারতম্য এবং তালিকার হ্রাস-বৃদ্ধি ঘটবে, ঘটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাংলা সাহিত্যের ঐতিহ্যের সাথে পরিচিত কোনো পাঠকের মূল্যায়নেই তার পঠনতালিকায় সেরা এক ডজনের তলানিতেও আমার কোনো উপন্যাস ঠাঁই পাবে কি?

সম্প্রতি এক পাঠক-বন্ধু বিদগ্ধ কোনো সমালোচকের সাহায্য না পেয়েই বোধহয়, প্রশ্নটা সরাসরি লেখকের কাছেই রেখেছিলেন। জবাব দিতে অক্ষমতা প্রকাশ করলে নিজের রচিত দুই ডজন উপন্যাসের মধ্যে সেরাটির নাম জানতে চেয়েছিলেন। আবারও জানি না বলা ছাড়া উপায় ছিল না। কারণ মনে হয়, নিজের সেরা উপন্যাসটি আসলে এখনো লিখতেই পারিনি। বিনয় নয়, লেখক হিসেবে অতৃপ্তি ও ব্যর্থতার দিকগুলি ভাবলে নিজেকে ব্যর্থ লেখক বলতে একটুও দ্বিধা নেই। তবে এ কথাও সত্য, মহৎ উপন্যাস রচনার স্বপ্ন ছিল লেখক-জীবনের শুরু থেকেই। এই স্বপ্ন ও ব্যর্থতার দিকগুলি নিজের রচিত কিছু উপন্যাসের দৃষ্টান্ত দিলে আরো স্পষ্ট হবে।

শৈশব-কৈশোরে দেখা গ্রামবাংলা, অবিস্মরণীয় কিছু চরিত্র, কৈশোর-যৌবনে প্রেম, যৌনতা, ধর্ম, রাজনীতির প্রভাব, মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীন বাংলাদেশের স্বপ্ন-হতাশা, ভোগ-দুর্ভোগ ইত্যাদি বিষয়ের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতাকে পুঁজি করে বড় ক্যানভাসে মহৎ উপন্যাস লেখার স্বপ্ন দেখতাম। সমস্যা হলো, এরকম মহৎ উপন্যাস লেখার জন্য যে দীর্ঘ সময় ও একনিষ্ঠ শ্রম প্রয়োজন, তা দেওয়া সম্ভব ছিল না। প্রধান বাধা ছিল জীবিকার জন্য অপছন্দের চাকরি এবং সংসারের দায়। জীবনীশক্তি চুষে খেত এইসব বাজে কাজ। অন্যদিকে সাহিত্যের নিয়ন্ত্রক পরিবেশও আমার মহৎ উপন্যাস রচনার স্বপ্ন-পরিকল্পনার অনুকুলে ছিল না তখন। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময়ে আয়তনে ছোট ছোট প্রচুর উপন্যাস লিখে হুমায়ূন আহমেদ জনপ্রিয়তা ও বাণিজ্যিক সাফল্যের নিরিখে কিংবদন্তির লেখক হয়ে উঠছিলেন। কলকাতায় পুজো সংখ্যা যেমন, ঢাকাতেও সাপ্তাহিক বিচিত্রা পত্রিকার অনুকরণে দৈনিক ও সাপ্তাহিক পত্রিকাগুলো প্রতি বছর ঈদসংখ্যা করতে শুরু করে। লেখক হিসেবে নিজের টানাপোড়েনের জীবনে চাকরির অল্প বেতনে সংসার চলত না বলে লেখালিখিকে বাড়তি রোজগারের দায় নিতে হয়েছিল। প্রতি বছর ঈদসংখ্যায় তাড়াহুড়ো করে একাধিক উপন্যাস লিখেছি। হুমায়ূন আহমেদ বিচিত্রার এক সাক্ষাৎকারে তরুণ লেখকদের মধ্যে পক্ষপাত বা ভালো লাগার কথা উল্লেখ করতে গিয়ে আমার নামটিও করেছিলেন। উদাহরণ হিসেবে একটা গল্পেরও নাম বলেছিলেন। প্রকাশকদের অনেকেই আরো হুমায়ূন আহমেদ পাওয়ার আশাতেই হয়তো-বা, আমার বই প্রকাশেও আগ্রহী হয়ে উঠেছিলেন। চেয়েচিন্তে পাণ্ডুলিপি নিয়ে বই প্রকশের পর, পাঠক না খাওয়ার অপবাদ দিয়ে প্রাপ্য রয়্যালিটি ও বিক্রির হিসাব দেননি অনেকেই। অর্থ রোজগারে উপন্যাসগুলি তেমন সফল ভূমিকা রাখতে না পারায়, এক সময় টিভিতেও নাটক লিখেছিলাম বেশ কয়েকটি। কিন্তু আমার সাহিত্যপ্রতিভা, রুচি, উদ্দেশ্য, আদর্শ কিংবা যোগ্যতা যাই বলি- কোনোটাই জনপ্রিয় কিংবা শুধুই টাকা-কামানো লেখক হওয়ার অনুকূলে ছিল না।

যে কয়েকজন অগ্রজ লেখকদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে মিশতাম, তাদের মধ্যে হাসান আজিজুল হক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস কিংবা কায়েস আহমেদ কেউই বহুলপ্রজ লেখক ছিলেন না। ইলিয়াস তো আমাদের সঙ্গে আড্ডা দেয়ার পাশাপাশি বড় ক্যানভাসে দুটিমাত্র মোটা উপন্যাস লেখার সাধনায় মগ্ন থেকেছেন বছরের পর বছর। ফলে জনপ্রিয় ধারার বহুলপ্রজ লেখকের পাশে ক্ল্যাসিক ঘরানার মহৎ লেখকের দৃষ্টান্ত হয়ে উঠেছিলেন তিনি। যারা তার উপন্যাস পড়েননি কিংবা পড়ে ভালো লাগেনি, তাদের কাছেও। আমার সম্পর্কে ঘনিষ্ঠদের কাছে শুনেছি, ইলিয়াস ভাইয়ের আক্ষেপ ছিল, ‘ও ভালো লেখে, কিন্তু কেন যে এত তাড়াহুড়া করে!’

লেখক জনপ্রিয় কিংবা স্বল্পসময়ে রচিত ক্ষুদ্রায়তন হলেই যে কোনো উপন্যাস মহৎ হবে না, এমন সরলীকরণ করছি না। বরং উল্টো দৃষ্টান্ত অনেক পাঠকই দিতে পারবেন। সংক্ষিপ্ত আয়তনের বই হেমিংওয়ের ‘ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দি সী’ আমার কাছেও যেমন বিশ্বসেরা উল্লেখযোগ্য উপন্যাস। নিজেরও মাত্র দুই-তিন মাস সময়সীমার মধ্যে লেখা ‘তমস’, ‘নগ্ন আগন্তুক’, ‘প্রতিমা উপাখ্যান’, ‘যমুনা’, ‘দাঁড়াবার জায়গা’ ইত্যাদি উপন্যাস পড়ে অনেক বোদ্ধা পাঠকই প্রশংসা করেছিলেন। তাতে অবশ্য কোনোটাই মহৎ উপন্যাস প্রমাণিত হয়নি। প্রশ্নটা আসলে উপন্যাসের প্রসব-সময় কিংবা তার আকার-উদ্দেশ্য নিয়ে নয়; লেখক একটি উপন্যাসের সৃজনশ্রমে কতটা নিষ্ঠাবান এবং লিখে কতটা তৃপ্ত হলেন, সেটাই বিবেচ্য আসলে।

আমার যেহেতু শুরু থেকে সার্বক্ষণিক লেখক হওয়াই ছিল লক্ষ্য, বাকি সব কাজকেই মনে হতো বাধা। অন্যদিকে বিশাল পাঠকগোষ্ঠী, প্রচুর খ্যাতি-বিত্তের লোভ কিংবা পত্রিকার চাপে তাড়াহুড়া করে লেখায় উৎসাহ এবং তৃপ্তি ছিল না মোটেও। অর্থের প্রয়োজন ছিল, আবার একনিষ্ঠ শ্রম ও দীর্ঘসময় নিয়ে উচ্চাকাঙ্ক্ষী মহৎ উপন্যাস লিখতে চাই। এই উভয়সংকটে পড়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, পরিকল্পিত মহৎ উপন্যাসের খসড়া খণ্ডাকারে ঈদসংখ্যায় প্রকাশ করব, কিন্তু সেগুলোকে তাড়াহুড়া করে বই হতে দেব না। পরে সময়-সুযোগ মতো মাঁজাঘষা ও পুনর্লিখনের কাজ করে বই করব।

সার্বক্ষণিক পেশাদার লখক হওয়ার একাধিক উদ্যোগ ও অভিযান ব্যর্থ হওয়ার পর, অবশেষে সাংবাদিকতার সুযোগ-সুবিধাপূর্ণ চাকরিটা ছেড়ে ২০১২-তে নিজেকে স্বাধীন সার্বক্ষণিক লেখক ঘোষণা করেছি আবার। পরিণত বয়সের চূড়ান্ত সংকল্প, নড়চড় হবার উপায় নেই আর। যে কয় বছর সক্ষম থাকব, লেখালেখির কাজটাই করব শুধু। কারণ তখন পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক উপন্যাস ‘অন্তর্দাহ’, তিস্তানদীর মরে যাওয়া ও নদীপারের জীবন নিয়ে রচিত ‘অচল ঘাটের আখ্যান’, আইওয়া ভ্রমণভিত্তিক উপন্যাস লেখক এবং দেশের সাম্প্রতিক উন্নয়ন থেকে স্বাধীনতার পটভূমি নিয়ে স্মৃতি-অভিজ্ঞতা নির্ভর উপন্যাস ‘উজানযাত্রা’ বই করতে পারিনি। বিভিন্ন সময়ে এগুলোর খসড়া ছিন্নভিন্ন আকারে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল। বিগত দশ বছরে এগুলো নিয়ে লেগে থাকায় পুরোনো পরিকল্পিত খসড়া উপন্যাসগুলি একে একে বই হয়ে বেরিয়ে গেছে। কতটা সফল হয়েছি, এ যাবত প্রকাশিতের মধ্যে একটিও কোনো পাঠকের প্রিয় বা সেরা উপন্যাসের তালিকায় ঠাঁই পাবে কিনা, সে বিচারের ভার অবশ্যই পাঠকের। অতৃপ্ত লেখকের সান্ত্বনা লাভের একটাই পথ- অতৃপ্তি বা ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে বাকি জীবনে যেন আর একটি মহৎ উপন্যাস রচনার স্বপ্নসাধনায় একাগ্র থাকতে পারি।

 

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
কেনাকাটার একাল-সেকাল
অনলাইন শপিংকেনাকাটার একাল-সেকাল
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
প্রথম গানে ‘প্রিয়তমা’র পুনরাবৃত্তি, কেবল... (ভিডিও)
বিএনপির ‘ইন্ডিয়া-আউট’ ক্যাম্পেইন: বাস্তবতা ও সম্ভাব্য ফলাফল
বিএনপির ‘ইন্ডিয়া-আউট’ ক্যাম্পেইন: বাস্তবতা ও সম্ভাব্য ফলাফল
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
নায়কের জন্মদিনে নায়িকারা...
সর্বাধিক পঠিত
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
যেভাবে মুদ্রা পাচারে জড়িত ব্যাংকাররা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
আয়বহির্ভূত সম্পদ: সাবেক এমপির পিএস ও স্ত্রীর বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
কুড়িগ্রাম আসছেন ভুটানের রাজা, সমৃদ্ধির হাতছানি
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
নিউ ইয়র্কে পুলিশের গুলিতে বাংলাদেশি তরুণ নিহত, যা জানা গেলো
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের
বিএনপির ইফতারে সরকারবিরোধী ঐক্য নিয়ে ‘ইঙ্গিতময়’ বক্তব্য নেতাদের