X
বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল ২০২৪
১২ বৈশাখ ১৪৩১

দৃষ্টির ওপারে

কুমার অরবিন্দ
২৬ মে ২০২২, ১৫:১২আপডেট : ২৬ মে ২০২২, ১৫:১২

১.

মেয়েটা নিচু হয়ে কী খুঁজছে? তার হাত মাড়ানো ঘাসের ওপর ইতস্তত ঘুরছে এদিক-ওদিক। কিছু অনুভব করার চেষ্টা করছে। চোখের দৃষ্টির সঙ্গে হাত সঞ্চালনের অসঙ্গতির জন্য কাঙ্ক্ষিত বস্তুটি অধরাই থেকে যাচ্ছে বারবার।

সামনে দিয়ে যেতে যেতে থমকে দাঁড়ায় নাদিম। মেয়েটার মুখের দিকে তাকায়। সে ঠিকই অনুমান করেছিল, মেয়েটা অন্ধ। কিছু খুঁজছেন?

নাদিমের প্রশ্নে মেয়েটা তার দিকে মুখ ফেরায়। দৃষ্টিহীন চোখে দেখার আকুতি। বাম হাতে ধরা ছোট কাঁধব্যাগটা বুকের সঙ্গে আরও শক্ত করে ধরে। হ্যাঁ, একটা ঠিকানা লেখা কাগজ...। ব্যাগ থেকে মোবাইলটা বের করতে গিয়ে পড়ে গেল।

নাদিম অদূরেই পড়ে থাকা একটা ভাঁজ করা কাগজ তুলে চোখের সামনে ধরে। প্রমথ সরকার, ২০১/সি, কাকরাইল। নিচে একটা মোবাইল নম্বর দেওয়া। আপনি কি প্রমথ সরকারের ঠিকানা লেখা কাগজটা খুঁজছেন?

মেয়েটার লেগে থাকা ঠোঁট দুটি একটু প্রসারিত হয়। সেই হাসিটা মুখে আটকে রেখেই বলে, হ্যাঁ। উনি আমার বাবা।

নাদিম মেয়েটার হাতে কাগজটা দেয়। সে কাগজখানা যত্ন করে ব্যাগের মধ্যে রাখতে রাখতে বলে, যদি কখনো ভুল পথে চলে যাই অথবা অন্য কিছু হয়―তাই ঠিকানাটা রাখা। আপনি বসুন না!

নাদিমেরও আজ আর কিছু করার নেই। মাঝেমধ্যে সে রমনা পার্কে আসে। এদিক ওদিক ঘোরে। গাছ দেখে, পাখি দেখে, মানুষ দেখে। মানুষের বেঁচে থাকা দেখে, বেঁচে থাকার অবিরাম চেষ্টা দেখে। এই ক্ষয়ে যাওয়া বিবর্ণ সময়ে যতটুকু পারে দুচোখ ভরে তা নিয়ে যেতে চায়। চলে গেলে এসব তো আর দেখা হবে না! অজান্তেই চোখ ভারি হয়ে আসে নাদিমের।

মেয়েটা মোবাইলের একটা বাটন চাপ দিয়ে সময়টা শুনে নেয়। নাদিমও শোনে বিকাল সাড়ে ৫টা। নাদিম সিমেন্টওঠা বেঞ্চটার এক কোনায় বসে। মেয়েটার দৃষ্টির সীমানায় কতকিছুই আছে অথচ কিছুই নেই, কেবলই অন্ধকার। বয়স আঠারো-উনিশ বছর হবে। শান্ত নিরীহ একটা মুখ। চুলগুলো ছড়িয়ে আছে পিঠের ওপর। বাতাসে কয়েকটা দলছুট চুল মুখের ওপর এসে পড়ে। সেগুলো ডান হাতের আঙুল দিয়ে কানের ওপারে ঠেলে দেয়। চোখের দিকে তাকালে মনে হয় না ওই চোখে আলো নেই। আপনি কি একাই এসেছেন?

নাদিমের কথায় মেয়েটার অস্বস্তি কিছুটা দূর হয়। লোকটা তার উপকার করেছে বলে বসতে বলেছিল। কিন্তু তারপর কী বলবে ভেবে পাচ্ছিল না। জি, আজ একাই এসেছি। কোনো কোনো দিন মা, বাবা অথবা ভাই সঙ্গে থাকে। ...অবশ্য এখনই আমার ছোটভাই আমাকে নিতে আসবে। সবসময় বাসায় থাকতে ভালো লাগে না।

যদি ভাই না আসে―একা যেতে পারবেন?

পারব। রিকশাওয়ালাকে ঠিকানা বললে নিয়ে যাবে। আর মোবাইল তো সঙ্গে আছেই।

কথা বলতে বলতেই মেয়েটার মোবাইল বাজে। মুখে একচিলতে হাসি ঝুলিয়ে রেখে বলে, মা ফোন দিয়েছে। আমাকে নিয়ে বেশি বেশি চিন্তা করে।

মেয়েটার কথা বলা শেষ হলে নাদিম জিজ্ঞেস করে, কীভাবে বুঝলেন যে এটা আপনার মায়েরই কল? আমি বুঝতে পারি। মা কল করলে মনে হয় রিংটোনটা কোমল সুরে বাজে। এটা অন্য কেউ বুঝতে পারবে না।

আপনি কিছু মনে না করলে আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করতাম। যদিও জানি না এটা জিজ্ঞেস করা আমার উচিত হবে কি না।

মেয়েটা শব্দ না করে হাসে। এই হাসিটা আগের মতো নয়। এবারের হাসির সঙ্গে কিছুটা দুঃখও নিঃশব্দে ঝরে পড়ে। নাদিমকে হকচকিয়ে দিয়ে বলে, আমার চোখ কীভাবে গিয়েছে তাই জানতে চাইবেন তো?

নাদিম লজ্জিত। আপনি এমন সুন্দর দেখতে অথচ...। আসলে সৃষ্টিকর্তা কিছু কিছু মানুষকে সব দিয়েও এমন কিছু কেড়ে নেন যে প্রাপ্তিগুলোকেও উপহাস বলে মনে হয়। দীর্ঘশ্বাস ফেলে নাদিম। বাই দ্যা ওয়ে, আমি নাদিম রহমান।

আমি অর্পিতা, অর্পিতা সরকার। ভগবান কাকে নিয়ে কী খেলা খেলছেন তা তো আমরা বুঝি না। মেনে নিয়ে মানিয়ে নেওয়াটাই বুদ্ধিমানের কাজ। সবাই তো বলেন, উনি নাকি সবকিছু মঙ্গলের জন্যই করেন। তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে ওঠে অর্পিতার মুখে। বলতে পারেন, আমাকে অন্ধ করে কার, কোথায়, কী মঙ্গল তিনি করছেন?

নাদিম নীরব হয়ে থাকে। তারও তো একই প্রশ্ন। হাতে ধরা ডাক্তারের রিপোর্ট। মৃত্যুর আগাম সনদপত্র। আর মাত্র কয়েকটা দিন। তারপর, চোখ বুজিলেই দুনিয়া আন্ধার...।

নাদিমের নীরবতা ভঙ্গ করে অর্পিতা বলে, ছোটবেলায় আমি খুব চঞ্চল ছিলাম। সারাবাড়ি দৌড়াদৌড়ি করে ছুটে বেড়াতাম। পুজোর সময় বাড়িতে গেলে তো কথাই নাই। আমার বয়সী আরও কিছু ভাই-বোন আছে বাড়িতে। তাদের সাথে হুল্লোড় করে ঠাকুর দেখতে যেতাম, কত মজা করে পূজা উপভোগ করতাম! আমাদের গ্রামের বাড়িতে অনেক বড় করে দুর্গাপূজা হতো, এখনো হয় বোধ হয়। ওই তিন-চারটা দিন কীভাবে যে যেত বুঝতেই পারতাম না। মনে হতো চোখের পলকে পূজার দিনগুলো শেষ হয়ে গেল!

বাতাসের বুকে একটা দীর্ঘশ্বাস ছড়িয়ে আবার বলতে থাকে, একবার গরমের ছুটিতে বাড়িতে যাই। বন্ধুদের সঙ্গে খেলতে গিয়ে পড়ে যাই কেটে রাখা গাছের ডালের ওপর। দুই চোখেরই কর্নিয়াতে আঘাত লাগে। ডাক্তার দেখাই, দীর্ঘদিন ধরে চিকিৎসা চলতে থাকে। কিন্তু কর্নিয়াকে বাঁচানো যায়নি। ফলে এখন চারপাশ অন্ধকার। দিন-রাতের ফারাক বুঝি না। সুন্দর-অসুন্দর চোখে আর ধরা পড়ে না। বলতে বলতে অর্পিতার জ্যোতিহীন চোখে জল জমতে থাকে। জানেন, মজার ব্যাপার হলো―আমার কর্নিয়া নষ্ট হলেও ল্যাক্রিম্যাল গ্রন্থি অক্ষত রেখেছেন ভগবান। নিজের দুঃখকে প্রকাশ করতে গেলে চোখের জলের চেয়ে ভালো মাধ্যম আর কী হতে পারে! অথবা তাঁকে অর্ঘ্য দেবো বলেই হয়তো তিনি এটা রেখে দিয়েছেন।

ব্যাগ থেকে টিস্যু বের করে চোখ মোছে অর্পিতা। আমার সেই চঞ্চলতা বোধ হয় ভগবানের পছন্দ ছিল না। চোখ দুটো নিয়ে গিয়ে আমাকে স্তব্ধ করে দিয়েছেন। কিন্তু আমার খুব দেখতে ইচ্ছে করে! গ্রামের বন্ধুদেরকে, স্কুলের বন্ধুদেরকে, মা-বাবা-ভাইকে। গ্রামের পূজা, এখানকার পহেলা বৈশাখ সবই আবার দেখতে ইচ্ছে করে। যার চোখ আছে তাকে চোখ না থাকার আকুলতা বোঝানো যায় না।

ঠিকই বলেছেন। একজনের দুঃখ আরেকজনকে বলে বোঝানো যায় না। তারা শুনে বা দেখে শুধু কয়েকটা দুঃখবোধক শব্দে অনুভূতি প্রকাশ করে। সেই শব্দগুলো কণ্ঠ ছুঁয়ে বের হয় অন্তর ছুঁয়ে নয়। আপনার বাইরে অন্ধকার আমার ভেতরে। তাই আপনার দুঃখ কিছুটা হয়তো আমি বুঝতে পেরেছি।

অর্পিতা কোনো কথা বলে না। একটা পাখি ডেকে উঠল মাথাও ওপর। মুখ উঁচু করে সেদিকে জ্যোতিহীন চোখ রাখল। কী পাখি এটা?

নাদিম পাতার ফাঁকে ফাঁকে দৃষ্টি রাখে। ঠকঠক শব্দ শুনে পাশের গাছটায় তাকায়। কাঠঠোকরা।

বুঝতে পারছি।

কর্নিয়া তো সংযোজন করা যায়, নাদিম বলে। জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউটেই তো কর্নিয়া প্রতিস্থাপন ইউনিট আছে। আপনি কি ডাক্তারের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলেছেন?

বলেছি। কিন্তু কর্নিয়া পাওয়া যাচ্ছে না। বিভিন্ন আই-ব্যাংকে নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে। কর্নিয়ার সন্ধান পেলে তারা জানাবে বলেছে। আসলে দেশে এই সমস্যার রোগী এত বেশি...।

পনেরো-ষোলো বছরের একটা ছেলে অর্পিতার পাশে এসে দাঁড়ায়। অর্পিতার কাঁধে হাত রাখে। অন্ধ মেয়েটার সঙ্গে এ কী ধরনের অসভ্যতা! নাদিম কিছু বলার আগেই অর্পিতা বলে, আমার ছোটভাই।

নাদিম অবাক হয়। কথা না শুনেই শুধু স্পর্শেই এমন নিখুঁতভাবে লোক চেনা যায়!

দিদি চল, বলে স্টিকটা এক হাতে নিয়ে অন্য হাতে অর্পিতার হাত ধরে ছেলেটা। অর্পিতা উঠে দাঁড়ায়। আপনাকে অনেক কথা বলেছি কিছু মনে করবেন না, প্লিজ।

নাদিম সৌজন্যতার একটু হাসি হাসে। কিন্তু সে হাসি যাকে উদ্দেশ করে সে দেখতে পায়নি। বুঝতে পেরেছে কি না নাদিম জানে না। অর্পিতার সঙ্গে কথা না হলে সে বুঝতেই পারত না তার মতো দুঃখীর সংখ্যা পৃথিবীতে নেহায়েত কম না।

রাত ৯টার দিকে নাদিম প্রমথ সরকারকে কল করেন। অর্পিতার অনুমতি নিয়েই সে নম্বরটা নিয়েছিল। নাদিম প্রমথ সরকারকে জানায়, কর্নিয়া দান করতে চায় এমন একজনের সন্ধান সে পেয়েছে। সাক্ষাতে সে সব কথা বলবে। নাদিম অর্পিতার সাথে কথা বলতে চায়।

নাদিম অর্পিতাকে বলে, কাল একবার আসবেন পার্কে? আজ তো আপনার দুঃখের কথা শোনালেন, কাল না হয় আমারটা শুনবেন।

ব্যাংকার প্রমথ সরকার খুশি হন। অবশেষে কর্নিয়ার খোঁজ পাওয়া গেল। এমন চাঁদের মতো মেয়েটার মুখে অন্ধত্বের অমাবশ্যা তিনি সহ্য করতে পারেন না। তিনি কতবার মেয়েকে বুঝিয়েছেন, আমার একটা কর্নিয়া আর তোর মায়ের একটা কর্নিয়া দিয়ে তোর চোখে সংযোজন করি। এতে আমাদের একটা করে চোখ ভালো থাকবে তুইও তোর চোখ দুটো ফিরে পাবি। কিন্তু কিছুতেই রাজি হয়নি অর্পিতা। সে বলে, আমি তো এখন তোমাদের চোখ দিয়েই দেখছি, বাবা।

 

২.

আজ অর্পিতাকে গতকালের চেয়ে বেশি সুন্দর লাগছে। বেশ হাসিখুশি। আপনি নাকি কর্নিয়ার সন্ধান পেয়েছেন? কাল তো আমাকে বলেননি?

রাতে সন্ধান পেয়ে আপনার বাবার সাথে কথা বলেছি। আমার এক চাচাত ভাই লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত। চিকিৎসা করাতে করাতে এখন নিঃস্ব। বয়স্ক মা-বাবা আর ছোট অবিবাহিত এক বোন আছে বাড়িতে। ডাক্তার আগেই তার জীবনের সময় বেঁধে দিয়েছিলেন। গতকালও সে ডাক্তারের কাছে গিয়েছিল। আরও কিছুদিন যাতে টিকে থাকে তার জন্য কিছু ওষুধ নিয়ে এসেছে। ডাক্তার বলছেন, সময় এগিয়ে আসছে। ...তো আমি তার সাথে কথা বলেছি। সে তো মারা যাবেই যদি তার কর্নিয়া দিয়ে আপনার চোখের আলো ফিরে পান! তবে এর জন্য...।

সেটা আপনি ভাববেন না। তার যা প্রাপ্য তা আমরা দেবো।

তাতে ওই পরিবারটা একটু বাঁচবে। তবে তার একটা ইচ্ছা, আপনার চোখ ভালো হলে ওর মা-বাবাকে গিয়ে মাঝেমধ্যে দেখে আসবেন। সে পৃথিবীতে না থাকলেও তার চোখ দুটো থাকবে। সেই চোখ দিয়ে আপনার মাধ্যমে সে তার মা-বাবাকে দেখতে চায়।

অর্পিতা খুশি হয়। আমি কথা দিলাম। আমি তার ইচ্ছা পূরণ করব। আপনিও তখন সঙ্গে থাকবেন নিশ্চয়ই।

আমার কথা বাদ দেন। আমার গন্তব্যও স্থির হয়ে গেছে। এখানে আর বেশিদিন নেই।

কোথায় যাবেন আপনি?

সেটা আরেকদিন বলব। আপনারা রাজি থাকলে দুই-একদিনের মধ্যেই সে চোখ দিতে চায়।

অর্পিতা হাসে। জীবিত মানুষের দুচোখের কর্নিয়া দেওয়ার আইন নাই। এক চোখেরটা দিতে পারবে।

তাহলে আর কী। তার মৃত্যু পর্যন্ত আপনাদের অপেক্ষা করতে হবে।

ছিঃ ছিঃ আপনি এভাবে বলবেন না। আমার চোখ নেই কিন্তু বেঁচে আছি। তারপরও মনে হয় আমি এই পৃথিবীর সবচেয়ে দুঃখী মানুষ, আমার কষ্টের সীমা নেই। আর যিনি জানেন যে তিনি চিরতরে চলে যাবেন তাঁর দুঃখ কতটা অনুভব করতে পারেন?

নাদিম কিছু বলে না। শুধু ওপর দিকে তাকায়।

একটা আই-ব্যাংকের সঙ্গে কথাবার্তা চূড়ান্ত হয়েছে। নাদিমের হাতে তার ভাইকে দেওয়ার জন্য চাহিদামতো কিছু টাকা অগ্রিম দেওয়া হয়। বাকি টাকা অর্পিতা নিজে গিয়ে ওর পরিবারকে দিয়ে আসবে। নাদিম একটা ঠিকানা লিখে দেয় অর্পিতাকে।

৩.

অর্পিতা এখন দেখতে পায়। তার ভুবনজুড়ে এখন আলো আর আলো। এত আলো দেখে তার চোখ ছলছল করে। চারদিকে কত আগ্রহ নিয়ে তাকায়! এতদিন না দেখতে পারাটা পুষিয়ে নিতে চায়।

অপারেশনের পর নাদিমকে কতবার ফোন দিয়েছে অর্পিতা! কিন্তু তার ফোন বন্ধ। প্রমথ সরকার ঠিক করেন পরিবারের সবাই মিলে গিয়ে বাকি টাকাটা দিয়ে আসবেন।

ঠিকানামতো অর্পিতারা উপস্থিত হয় একটা ভাঙ্গাচোরা বাড়িতে। তাঁরা মোহসিনকে খোঁজেন। কিন্তু এই নামে কাউকে পান না। প্রমথ বাবু সব কথা খুলে বলেন পরিবারটিকে। অর্পিতার চোখের দিকে তাকিয়ে এক বৃদ্ধা বলেন, আমার নাদিমের চোখ, আমার পোলার চোখ দিয়ে তুমি দেখতি পাচ্ছ, মা?

বৃদ্ধার কথা শুনে অবাক হন সবাই। নাদিমের চোখ! প্রমথ বাবু বিস্মিত হয়ে বলেন, নাদিম তো বলেছিল তার এক চাচাত ভাই মোহসিন কর্নিয়া দেবে!

নাদিমের বোন একটা বাঁধানো ছবি নিয়ে আসে। প্রমথর বাবুর হাতে দেয়। সে জলভরা চোখ নিয়ে বলে, জানি না ভাইজান কেন মিথ্যে বলেছিল। আমাদের কথা চিন্তা করে নিজের চোখ বিক্রি করে গেছে। টাকার বিনিময়ে চোখ দিচ্ছে এই কথাটা আপনাদের লজ্জায় হয়তো বলতে পারেনি। তবে আমাকে সেসব কথাই খুলে বলেছিল। আপনারা যে আসবেন তাও আমি জানতাম।

তার মানে নাদিম নেই! ঘটনার বিহ্বলতায় মুখে কথা আসে না অর্পিতার। নাদিমের মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, কথা কও না ক্যান মা, তুমি কি আমার পোলার চোখ দিয়ে আমারে দেখতি পাচ্ছ?

অর্পিতা ওপর-নিচে মাথা নাড়ে। নাদিমের মা আরও কাছে এসে অর্পিতার চোখে হাত বুলিয়ে দেন। তার শুষ্ক ঠোঁটে অর্পিতার চোখে চুমু খান।

প্রমথ বাবু পকেট থেকে একটা খাম বের করে নাদিমের বাবার দিকে এগিয়ে দেন। অসহায় বৃদ্ধ কেঁদে ফেলেন। আমি এটা চাই না, বাবু। চোখের আলো কি বেচা যায়, না কি কেনাই যায়! মাঝেমধ্যে মেয়েডা আইসে আমাগেরে এট্টু দেইখে যাক। আমার পোলা নাই, কিন্তু তার চোখ দুডো তো আছে। ওই চোখ দুইডা দেখলিও আমরা শান্তি পাব।

নাদিমের মা বারান্দায় বসে কাঁদতে থাকেন। অর্পিতা গিয়ে তাঁর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। সন্তানহারা এই মাকে কী বলে সান্ত্বনা দেবে সে জানে না।

বাবার কাছ থেকে নাদিমের ছবিটা নেয়। নাদিমের চোখ দিয়েই তার চোখের দিকে স্থির তাকিয়ে থাকে অর্পিতা।

/জেডএস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক এমডিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজের সাবেক এমডিসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা
বঙ্গোপসাগরে ডুবলো জাহাজ, ভাসছেন ১২ নাবিক
বঙ্গোপসাগরে ডুবলো জাহাজ, ভাসছেন ১২ নাবিক
মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ ইসির
মাঠ প্রশাসনকে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ ইসির
ভারতের একটি হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৬
ভারতের একটি হোটেলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় নিহত ৬
সর্বাধিক পঠিত
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
বাংলাদেশ ব্যাংকের চাকরি ছাড়লেন ৫৭ কর্মকর্তা
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
কেন গলে যাচ্ছে রাস্তার বিটুমিন?
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
স্কুল-কলেজে ছুটি ‘বাড়ছে না’, ক্লাস শুরুর প্রস্তুতি
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
ধানের উৎপাদন বাড়াতে ‘কৃত্রিম বৃষ্টির’ পরিকল্পনা
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের
সিনিয়র শিক্ষককে ‘দেখে নেওয়ার’ হুমকি জুনিয়র শিক্ষকের