X
শনিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৪
৭ বৈশাখ ১৪৩১
ঈদসংখ্যা ২০২২

৫টি ফ্ল্যাশ ফিকশন

অনুবাদ : শেহরীন আতাউর খান
২৯ এপ্রিল ২০২২, ২১:৪৮আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২২, ২২:০১

ডিশ নাইট ।।  মাইকেল মার্টন

ওয়েলস থিয়েটারে প্রতি বুধবার ছিল ডিশ নাইট। মেয়েটা খুব আগ্রহ নিয়ে সেখানে যেত, সপ্তাহের পর সপ্তাহ। একটা শ্বেতশুভ্র চিনামাটির ডিশের জন্য। সিনেমা শেষ হওয়া পর্যন্ত সে মেয়েটা অপেক্ষা করত। একটা পিরিচ। একটা কাপ। সিনেমা হলের আসন-প্রদর্শকরা হলের দরজার পাশে চেয়ারের ওপর দাঁড়িয়ে বিশাল বিশাল কাঠের বাক্স থেকে ডিশগুলা নামিয়ে আনত। সেইসব কাঠের বাক্সে ডিশের মাঝে গুঁজে রাখা বিচিত্র সব শহরতলীর খবরের কাগজের পাকানো দলা আর খড় সিনেমা হলের লবির মেঝেজুড়ে ছড়িয়ে থাকত। আমি জানতাম আমার জন্য এইই সেই মেয়ে। আমি ওকে ওর বাড়ি পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসতাম। মেয়েটা সদ্য পাওয়া ডিশটাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে রাখত। রাস্তার পাশের লাইটপোস্টগুলোর আলো জ্বলত, আর গাছের পেছনে চাঁদ। মেয়েটা আমাদের ৮ জনের পরিবারের সবার জন্য পর্যাপ্ত চিনামাটির ডিশ সংগ্রহ করার কথা বলত। হাতের সামনে ডিশটাকে ধরে মেয়েটা বলত, ‘এগুলো খুবই আধুনিক আর সাধারণ। কিন্তু অনেকদিন চলবে আমাদের, আর এইসব সিনেমার কথা তখন আমাদের মনেও থাকবে না।’

তারপর কী হয়েছিল আমার ঠিক মনে পড়ছে না। রবিবারের ম্যাটিনিশোতে আমরা পার্লহারবারের ঘটনা শুনলাম। সিনেমাটা বন্ধ করে দিয়ে একটা লোক স্টেজের উপরে উঠে এলো। স্টেজের নীল আলো পেছনের সোনালি পর্দাগুলোর ওপর উছলে পড়ছিল। ভিতরে অন্ধকার থাকলেও বাইরে তখনো বেশ উজ্জ্বল আলো, আর ঠান্ডা। সেদিনের সিনেমাটা ওরা আর শেষ করল না। ব্যবসা এমনিতেও জমে উঠছিল, দর্শক ভেড়ানোর জন্য ওয়েলস থিয়েটারের আর ডিশনাইটের দরকার ছিল না। সেদিনের সেই রাতের শো’র আগের সপ্তাহের সিনেমাই যে আমাদের দুইজনের জন্য শেষ ডিশনাইট ছিল, আমরা জানতাম না। ঝোলের বাটিটাকে চপ্পলের মতন দেখাচ্ছিল। আমি যুদ্ধে চলে গেলাম। ইউরোপে থাকাকালীন মেয়েটার চিঠি পেতাম। স্কুলের কাগজের মতন রুলটানা কাগজে মেয়েটা আমাকে জানাত তার চিনেমাটির সেটটা আরমাত্র কয়েকটা ডিশের অভাবে পূর্ণতা পেল না।

আসলে এটাই আমার জীবনের সিনেমা হতে পারত, এই যে সিনেমা দেখে ফেরার পথে চাঁদের আলোয় মেয়েটাকে বাসায় এগিয়ে দেওয়া, আর বইয়ের মতন করে মেয়েটার হাতে একটা ডিনার প্লেট ধরা। আমার মনে হতো, এই একটা জিনিসের জন্যই আসলে আমি যুদ্ধটা করছি। ইউরোপে আমি বিভিন্ন জায়গায় বারেবারে চিনেমাটির বাসনের ভাঙা টুকরা দেখেছি। বাগানবাড়িতে, ক্যাফেতে। প্রতিটা রাস্তার পাশে জমে থাকত চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে যাওয়া চিনেমাটির বাসনকোসন। একবার একটা সৈকতে গুঁড়ি মেরে সামনে এগিয়ে যাওয়ার সময় এরকম একটা খোলামকুচি চোখে পড়েছিল। সমুদ্রের ঢেউ সৈকতে এনে ফেলেছিল বোধহয়, নীল শিরার মতন নকশার অবয়বটা খোলামকুচিতে ভেসে উঠেছিল।

বাড়ি ফিরে এলাম। প্রতিরাতে আমি থালাবাটিগুলি ধুয়ে রাখতাম আর ও সেগুলাকে এমনভাবে একটার পর একটা সাজিয়ে জমিয়ে রাখত যেন দেখে মনে হতো সকালেই বুঝি আমরা বাসা বদলাব।

সবুজ মাঠজুড়ে টেবিলগুলা পাতা আছে। উপরে বিশাল, বিস্তৃত আকাশে মেঘেদের আনাগোনা। পিকআপ ট্রাকগুলা আর মালগাড়িগুলি টেবিলের গা ঘেঁষে এমনভাবে রাখা যেন ট্রাক আর লরির নামানো পাটাতনে মানুষ বসতে পারে। টেবিলের ওপরে রাখা হাজারো চিনেমাটির থালাবাটি। মেয়েটা আমার আগে আগে হেঁটে চলেছে। কখনো একটা কাপ তুলে নেড়েচেড়ে দেখে আবার রেখে দিচ্ছে। কখনো-বা একটা প্লেট। সেগুলার কিনারজুড়ে আঙুল বুলিয়ে নিচ্ছে মেয়েটা। হাঁটতে হাঁটতে সবুজ মাঠটা হালকা একটু উঁচুতে গিয়েছে দেখলাম। সব জায়গাতেই টেবিল পাতা। মেয়েটা অন্য কাউকে খুঁজে পাওয়ার কথা ভাবছে যে তার মতই ডিশ নাইটের সিনেমাগুলো দেখেছে। সিনেমা হল লোকে লোকারণ্য। আমিও ছিলাম সেখানে। প্রতি রবিবারে চার্চের পরে আমরা এই কাজই করি।

* তৎকালীন আমেরিকায় গ্রেট ডিপ্রেশন চলাকালে সিনেমা হলের মন্দা কাটানোর উদ্দেশ্যে এবং নাগরিকদের সিনেমা দেখার জন্য উদ্বুদ্ধ করতে সিনেমা হলে আগত দর্শকদের প্রণোদনা হিসেবে বিনামূল্যে চিনেমাটির তৈজসপত্র দেওয়া হতো।


আঙুল ।।  গ্যারি গিল্ডনার

লেসি সাহেবের ছেলে, রোনাল্ড যুদ্ধ থেকে বাড়িতে ফিরেই গোসলে ঢুকল। গোসল করে বের হয়ে একজোড়া নতুন জিন্স আর নতুন টি-শার্ট গায়ে পরে তার হাইস্কুলের পুরনো বেসবল ক্যাপটা মাথায় দিয়ে কপাল পর্যন্ত টেনে নিয়ে বাইরে বের হলো। বাইরে গিয়ে রোনাল্ড বাস্কেট বলের লুপে বল ছুড়ে দিতে লাগল। প্রায় দুসপ্তাহ ধরে রোনাল্ড কেবল এই কাজই করল। একদিন লেসি সাহেব রোনাল্ডের কাছে জানতে চাইলেন, ‘তোমার জমানো টাকাগুলোর কী অবস্থা? সেগুলো দিয়ে কী করবে, কিছু ভেবেছ?’ সেদিন একটু বেশি সময় ধরেই রোনাল্ড বাস্কেট বল লুপে ছুড়লো, তারপর শহরতলীর পথে রওনা হলো। ফেরার পথে একটা হাডসন হর্নেট কিনে বাড়িতে ফিরল। পরবর্তী পাঁচদিন জুড়ে রোনাল্ড সারা শহরের এমাথা থেকে সেমাথা সেই হাডসন চালিয়ে বেড়ালো আর তৃষ্ণা পেলে কিছুক্ষণ পরপরই রুট বিয়ার কিনে খেল। ষষ্ঠ দিনে যখন হাডসনের একটা চাকা পাংচার হয়ে গেল তখন রোনাল্ড গাড়িটা তালা দিয়ে রাস্তার পাশে লিফট নেওয়ার উদ্দেশে আঙুল উঁচিয়ে দাঁড়াল। পরদিন কানসাস শহরের এটকিন্স জাদুঘর থেকে রোনাল্ড ছবিওয়ালা একডজন পোস্টকার্ড কিনল। পোস্টকার্ডের বিষয়বস্তু : হুদনের তৈরি করা বেঞ্জামিন ফ্র্যাংকলিনের আবক্ষ মূর্তি। মাথার সামনে ঐরকম টাক আর পেছনে কাঁধ পর্যন্ত বাবড়িওয়ালা ফ্র্যাংকলিনকে দেখতে চরম বিদঘুটে লাগছিল। এবং ফ্র্যাংকলিনকে দেখে মনেও হচ্ছিল যে উনি কিছু একটা নিয়ে বেশ বিরক্ত। তারপর রোনাল্ড নিউ ইয়র্কের একটা বাসে চেপে বসল। তিনশ’ মাইলের সেই বাসযাত্রা তেমন আহামরি কিছু ছিল না। অবশ্য এও হতে পারে যে সেই বাসে ওর পাশে বসে থাকা যাত্রী খুবই আগ্রহ নিয়ে নিজের প্রোস্টেট গ্ল্যান্ড হারানোর কথা বর্ণনা করতে চাচ্ছিল বলে বাসযাত্রাটা তেমন জমেনি। নিউ ইয়র্কে পৌঁছে রোনাল্ড ইয়াঙ্কি স্টেডিয়াম থেকে ঠিক এককদম দূরেই একটা রুম খুঁজে পেল। সেখান থেকে তার বাবার জন্য ফ্র্যাংকলিনের সেই বিদঘুটে একটা পোস্টকার্ড পাঠালো যাতে লিখে দিলো, ‘ভালোবাসা, রোনাল্ড।’ তারপর সে জানালা দিয়ে উদাস হয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকল। বাইরে ফায়ার এস্কেপের ওপর একটা লাল বেলুন কেমন করে যেন আটকা পড়েছিল। দমকা বাতাস এসে সেই বেলুনটাকে উড়ানোর পাঁয়তারা করছিল। অবশেষে বাতাস নিজ উদ্যোগে সফল হলো। রোনাল্ডের কেমন যেন ক্লান্ত লাগতে শুরু করেছিল, সে কাপড় ছেড়ে বিছানায় উঠে তার নিজের হাতের আঙুল গোনা আরম্ভ করল।


চুল ছাঁটা ।।  ম্যারি মরিস

যেই মুহূর্তে ও প্লেনে উঠে এলো, আমার সাথে সাথেই মনে হলো কী জানি একটা ঝামেলা আছে, কিন্তু সেটা যে কী ধরতে পারছিলাম না। লোকটা খাকি স্যুট পরে হাতে টেনিস র‌্যাকেট নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, দুইপাশে দাঁড়ানো হাস্যোজ্জ্বল তাঁর কিশোর ছেলেরা। আর আমার বাবা-মার পাশে আমি দাঁড়িয়েছিলাম আমাদের মেয়েকে কোলে নিয়ে। ব্রিটিশ আর ফ্রেঞ্চরা যেভাবে পুরানো বিপ্লবী যুদ্ধের সিনেমাগুলাতে মুখোমুখি দাঁড়ায়, আমরা একজন আরেকজনের মুখোমুখি তেমনিভাবে দাঁড়িয়েছিলাম।

সমস্যাটা কী আসলে? নিজেই নিজেকে জিজ্ঞেস করলাম। জিজ্ঞেস করতে গিয়ে আমার ছোটবেলার এক পরীক্ষার কথা মনে পড়ে গেল, সেই পরীক্ষায় আমি আবার প্রায়ই ফেল করতাম। কিছুটা বেকুব প্রকৃতির ছিলাম, যে যা বলত খুব সহজেই সেটা বিশ্বাস করে ফেলতাম। আমি জানি যাঁর সাথে আমার আদতে ছাড়াছাড়ি হয়ে গেছে, সবাই চাচ্ছে আমি যেন তাঁর সাথে স্বাভাবিকভাবেই কুশলাদি বিনিময় করি কারণ এই মুহূর্তটা আসলে মিটমাট করে ফেলার, যা হয়ে গেছে সেটা ভুলে সামনে এগিয়ে যাওয়ার। দেশের দুই প্রান্তে দুইজন আলাদাভাবে প্রায় একবছর থাকার পরে আমরা মিলিতভাবেই এ সিদ্ধান্তটা নিয়েছিলাম।

এই বাচ্চাটা জন্মানোর আগেই আসলে আমাদের ছাড়াছাড়ি হয়ে গিয়েছিল। ও এই বাড়তি দায়িত্ব নেওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিল না। আর আমি একটু বেশিই ওকে আঁকড়ে রাখতে চাচ্ছিলাম। আমি আমাদের ফ্যামিলি শুরু করতে চাচ্ছিলাম আর ও যেটা আগেই ছিল সেটা নিয়েই হিমশিম খাচ্ছিল। আমরা আলাদা আলাদাভাবে চেষ্টা করেছিলাম এবং যথারীতি অসফল হয়েছিলাম। ছোট বাচ্চাটাকে নিয়ে আমি ক্যালিফোর্নিয়াতে চাকরি নিলাম। ও ইস্টকোস্টে রয়ে গেল। কিন্তু আমরা প্রতিদিন ফোনে কথা বলতাম। দুইজনেই পালা করে দুইজনের কাছে চলে যেতাম। তারপর একসময় আমি আমার ওয়েস্ট কোস্টের চাকরিটা ছেড়ে দিতে রাজি হলাম। ও বলল, ও নিজেও চেষ্টা করবে।

আমাদের দেখা হওয়ার দুই মাস পার হয়েছে। ভ্যালেন্টাইনের প্ল্যান বাতিল করার পর থেকে আমি ওর ওপর কিছুটা খেপে আছি (ও, ওর ছেলেদের তখন কথা দিয়েছিল একসাথে স্কি ট্রিপে যাবে।) আবার আমাকে কল দেওয়ার কথা থাকলেও কল দেয়নি বলেও আমি বেশ বিরক্ত ছিলাম। এইরকম ছোট বড় নানান ঘটনায় আমার অভিমান জমছিল কিন্তু এখন আমি আমাদের মেয়েটাকে নিয়ে আমার বাবা-মা’র ফ্লোরিডার বাসাটায় যাচ্ছি। আর ও এসেছে ওর ছেলেদের নিয়ে। একটা পারিবারিক ছুটি কাটানোর মতন বিষয় আর কী! নিজেদের মধ্যে মিটমাট করে ফেলার একটা সুযোগ।

আবার একটু খেয়াল করো তো, নিজেই নিজেকে বললাম। এখনও বুঝতে পারছি না এই খচখচানিটা কেন যাচ্ছে না! কী জানি একটা ঝামেলা, কিছু একটা ঠিক নাই। ওকে দেখতে চমৎকার লাগছে, রোদে পুড়ে প্রায় তামাটে হয়ে গেছে গায়ের রঙটা। স্যুটটাও পরিপাটি একদম। চোখগুলো উজ্জ্বল, জুতাটা চকচকে পালিশ করা। চুলদাড়ি ঠিকঠাক পরিপাটি করে ছেঁটে রাখা।

আমি একটু থামলাম, কারণ একটানা পাঁচ বছর কারোর সাথে কাটালে খুঁটিনাটি অনেক কিছুই চোখে পড়ে। ও আসলে একটু অদ্ভুত প্রকৃতির। কিছু কিছু আজব ধরনের বাতিক আছে ওর, যেমন, ওর ওটমিল দলা পাকিয়ে গেলে সেটা আর স্পর্শ করবে না। ঘড়ি পরবে না। যখন দুঃখ পাবে তখন নিজেকে গুটিয়ে নেবে। প্রতিদিন টেনিস খেলবে। মিথ্যা কথা বলার সময় একটু হালকা কুঁজো হয়ে কথা বলবে আর সবচেয়ে অদ্ভুত হলো এই মানুষটা সেলুনে কখনই যাবে না। আশ্চর্য হলেও সত্যি যে বিগত ২৫ বছর ধরে এই সেলুনে না যাওয়া নিয়ে ওর একরকমের অহংকারই আছে। আমি গত পাঁচ বছর ধরে ওর চুল ছেঁটে দিয়েছি, তার আগে ওর প্রাক্তন স্ত্রী অগুনতি বছরজুড়ে সেই কাজ করেছে। অনেকটা এই লোক যেন স্বেচ্ছায় স্যামসন হয়ে তাঁর দেলাইলাহদের কাছে ধরা দেয়। দুই মাস হয়ে গেছে ওর সাথে আমার দেখা হয়নি, কিন্তু ওর চুল পরিপাটি করে ছাঁটা।

আমার মনে হলো যেন হঠাৎ করে কোনো স্বপ্নের অর্থ উন্মোচন হয়ে গেল, যেন হিব্রু ভাষার কিছু আমি একবারে বুঝে গেলাম। আমার সাথে করা ভ্যালেন্টাইনের প্ল্যান বাতিল, কল না ধরা, ওর কলিগ যার সাথে ঘনঘন ওর দেখা করতে হয়, সব জলের মতন পরিষ্কার হয়ে গেল। হঠাৎ ঠিক ঐ মুহূর্তে, এয়ারপোর্টে বাবা-মা’র পাশে আমার দাঁড়ানো, ওর পাশে ওর ছেলেরা দাঁড়ানো, হাসিখুশি একটা ব্যাপার। চারপাশে রোদ ঝলমল উষ্ণ দিন, এমন একটা অবস্থায় আমার বহুদিনের খুঁজে ফেরা ধাঁধার সবকটা জট যেন একবারে খুলে গেল।

একদম স্ফটিকের মতন স্বচ্ছ হয়ে পুরো বিষয়টা আমার কাছে পরিষ্কার হয়ে গেল, যেন বহুদিনের একটা কুয়াশার চাদর চারপাশ থেকে সরে গেল। আমার আর কোনও ধরনের কোনও দ্বিধাই থাকল না, একদম নিশ্চিতভাবে সবকিছু সামনে চলে আসলো আমার। ও যখন এগিয়ে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরল, আমি জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমার চুল কে ছেঁটে দিয়েছে?’ ও এক কদম পিছিয়ে গেল কিন্তু আমি পেছালাম না। আমাদের বাচ্চাটাকে আমার কাঁধে নিয়ে আমি বললাম, ‘বলো! তোমার চুল কে ছেঁটে দিয়েছে?’


ক্ষুধা ।।  খোলন্ড টপোখ

আপনি ভাবতে পারেন আমি মনে হয় একটা মিথ্যুক কিন্তু আমার কখনোই ক্ষুধা লাগে না। আমি আসলে ক্ষুধার মানেটাই জানি না। যদ্দুর মনে করতে পারি আমি কখনো ক্ষুধার সাথে পরিচিতই ছিলাম না। অবশ্যই আমি খাই, কিন্তু ক্ষুধা ছাড়া। আমি একদম কিছুই অনুভব করি না, এমনকি বিস্বাদও না। আমি শুধু খেয়ে যাই।

প্রায়ই অনেকে আমাকে জিজ্ঞেস করে, ‘তাহলে, আপনি আসলে কীভাবে খান?’ তখন আমাকে অবশ্য স্বীকার করতেই হয় যে আমি ঠিক জানি না আসলে এটা কীভাবে সম্ভব। সাধারণত যেটা ঘটে, সেটা হলো, আমি একটা টেবিলে বসে থাকি আর আমার সামনে এক প্লেটভর্তি খাবার। যেহেতু আমি কিঞ্চিত আত্মভোলা কিসিমের মানুষ, আমি একটু পরেই ভুলে যাই যে আমি কোথায় আছি। যখন আমার আবার খাবারের কথা মনে পড়ে, তখন দেখি আমার সামনের প্লেটটা খালি। এটাই সাধারণত ঘটে থাকে।

তার মানে কি আমি সম্মোহিত হয়ে অবাস্তব কোনও অবস্থায় খাওয়া দাওয়া করি? মোটেই না। আমি আসলে বললাম, যে এটাই সাধারণত ঘটে থাকে। যদিও সবসময় এমনটা হয় না। মাঝে মাঝে অবশ্য আমার খেয়াল থাকে যে সামনে প্লেটভর্তি খাবার আছে, কিন্তু তারপরেও আমি সেই প্লেট খালি করে ফেলি।

স্বভাবতই আমি না খেয়ে থাকার চেষ্টা করেছিলাম। কিন্তু তাতে কোনো লাভ হয় নাই। যেটা হয়েছিল সেটা হলো আমি শুকিয়ে কাঠি হয়ে গিয়েছিলাম। অবশ্য ঠিক সময়েই আমি এই অবস্থা থেকে বের হয়ে যেতে পেরেছিলাম নইলে আর কয়দিন সে অবস্থা চললে আমি নিজের অজান্তেই নিদারুণ ক্ষুধায় মারা যেতাম। এই ঘটনার পর থেকে বেশ ভয় পেয়েই আমি সাবধান হয়ে গেছি এবং তখন থেকেই আমি সারা দিন খাওয়া শুরু করেছি। কারণ সারা দিন খাওয়াদাওয়া করলে আসলে আর চিন্তার কিছু নাই। আমি মানুষটা লম্বা এবং শক্ত-সমর্থ। সুতরাং এই মেশিনটাকে সচল রাখতে হলে তো খাওয়া দাওয়া করতেই হবে। অন্যদের জন্য ক্ষিদে পাওয়া আদতে একটা হুঁশিয়ারি হিসেবে কাজ করে, এখন যেহেতু আমি তাতে বঞ্চিত, তাই আমাকে দ্বিগুণরূপে সতর্ক থাকতে হয়। যেমন কিছুক্ষণ আগেই যা বলছিলাম, আমি একটু আত্মভোলা মানুষ, সুতরাং খাওয়ার কথা ভুলে যাওয়ার পরিণাম মারাত্মক হয়ে যেতেই পারে। সেইজন্য আমি সারা দিন খাই, আর এটাই নিরাপদ। আমি নিজেও বেশ বুঝতে পারি যে, যখন না খেয়ে থাকি তখন আমি খিটখিটে আর নার্ভাস হয়ে যাই, কিন্তু মুশকিল হলো আমি নিজেই জানি না এ থেকে পরিত্রাণের পথটা কী। তাই আমি তখন প্রচুর সিগারেট আর মদ খেয়ে ফেলি, যদিও সেটাও খারাপ।

রাস্তায় চলতিপথে প্রায়ই ছেঁড়াফাটা কাপড় পরা রুগ্ন কংকালসার মানুষ আমাকে ঘিরে ঘিরে ধরে। জ্বরো রোগীর মতন তপ্ত চোখ নিয়ে তারা আমায় আপাদমস্তক দেখে কাঁপা স্বরে জানায়, ‘আমরা ক্ষুধার্ত!’ আমি ঘেন্নাভরে তাদের দিকে তাকাই। এরা হয়তো মাসে মোটে একবার একটা শুকনা রুটির টুকরা খেতে পায়, অথচ সেটা তারা আগ্রহ নিয়ে খেতে পারে। আমি তাদেরকে যাচ্ছেতাইভাবে বলে দেই, ‘ক্ষুধার্ত! তাই নাকি! এত ভাগ্য!’

চাপা কান্নার দমকে তাদের গলা আটকে আসে, গা কেঁপে ওঠে। ধীরে ধীরে তারা কুণ্ঠিত পায়ে চলেও যায়। আর আমি? আমি তো সেখান থেকে প্রথম যে রেস্তোরাঁটাই চোখে পড়ে, সেখানেই জেঁকে বসি। ঘটবে কি কোনও অভূতপূর্ব ঘটনা? প্রথম গ্রাস মুখে দেওয়ার সময়ই আমার বুক দুরুদুরু করে ওঠে আর তারপরেই ভয়ানক হতাশা আমাকে ঘিরে ধরে। না। কিচ্ছু না। স্রেফ কিচ্ছু না। কোনও ক্ষুধাই নাই। কিন্তু তাতে কী! আমি আমার প্রতিশোধ ঠিকই তুলে নেই গোগ্রাসে খাবার গিলে গিলে, ঠিক যেমন করে কষ্ট পেয়ে মানুষ মদ গিলে গিলে ডুবে যায়।

একগাদা খাবার আর ঘেন্নার ভারে নুয়ে আমি রেস্তরাঁ থেকে বের হয়ে আসি। দিন দিন আমার তিক্ততা বেড়েই চলেছে। যাদের ক্ষিদে পায় তাদের প্রতি আমার বিদ্বেষও প্রতিদিন বেড়ে যাচ্ছে। আমি ঘেন্না করি তাদের। তারা নাকি ক্ষুধার্ত? তাই নাকি? আমি চাই সেই ক্ষুধাতেই তারা মরুক। তাদের জন্য দুঃখ পাওয়ার কোনও দায় নাই আমার। সত্যি বলতে কী, যখন আমি খাই, তখন এই যে ক্ষুধার্ত যারা, তাদের কথা মনে করলেই আমার একটু আহ্লাদ হয় কেবল।


একটা কুকুর, একটা ভোর আর একটু স্পর্শ ।।  রড কেসলার

ঘটনার শুরু হয়েছিল শূন্যতার মধ্যদিয়ে। ঘরের পর্দার ফাঁক গলে বাইরের গোলাপি আলো চুইয়ে চুইয়ে আসছিল। গোলাপি আর আরামদায়ক। আমার কম্বলটা সবুজ আর উষ্ণ। ঘরের বাইরে ঠান্ডা। শীতল একটা দিন। আমার স্ত্রী, যে আর এখানে নেই, তাঁকে ছুঁয়ে দেওয়ার জন্য হাত বাড়ালাম।

পাশের বাড়ির লোকটার গলার স্বরে মুহূর্তের স্তব্ধতা চূর্ণ হয়ে গেল। লোকটা রাস্তার ওপার থেকে চেঁচাচ্ছেন। ‘তোমার কুকুর! তোমার কুকুরটাকে গাড়ি মেরে দিয়েছে।’ লোকটা কৃষক, তাই কৃষকের সময় কাকডাকা ভোরেই তাঁর দিন শুরু হয়েছে। ‘তোমার কুকুর!’

এটা আসলে ঠিক আমার কুকুর না, কিন্তু আমার দায়িত্ব। এটা বেথের কুকুর। কুকুরটার রাতের বেলায় রান্নাঘরের মেঝে নোংরা করে ফেলার স্বভাবটার জন্য আমি ওকে ঠিক পছন্দও করি না। বেথ হাই তুলতে তুলতে আমাদের বিছানা থেকে নেমে আসার আগেই আমি অবশ্য রান্নাঘরের মেঝে পরিষ্কার করে রাখতাম। ভালোবাসি বলেই করতাম, কুকুরটার জন্য নয়। এখন অবশ্য পরিষ্কার করলেও কিছু যায় আসে না, অথবা না করলেও কিছু আসে যায় না।

বেথের কুকুরটা বয়স্ক আর খুবই দুর্বল। ওর গায়ে চুরুটের গন্ধ। প্রাণীদের আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বেথ ওকে নিয়ে এসেছিল, সেখানকার সবচেয়ে বয়স্ক কুকুর ছিল এটা।

ঘর থেকে বের হয়ে দেখলাম কুকুরটা রাস্তা থেকে খুঁড়িয়ে খুড়িয়ে এসে বাড়ির কিনারে বসে ধুঁকছে। বাগানের গেটে যেখানে গোলাপের ঝাড় আছে, সেখানটায়। দেখলাম ওর ক্ষতটা পায়ের হাড় পর্যন্ত পৌঁছেছে, ওর মলিন লোমের ওপর জায়গায় জায়গায় লাল রক্তের ছোপ। বাবা-বাছা করেও ওকে দাঁড় করাতে অথবা নড়াতে পারলাম না। ওর মুখ থেকে ঘন বাদামি রঙের একদলা লালা থুপ করে বাগানের ধুলায় পড়ল।

ভেটেরেনারিয়ানকে কল দিলাম, উনি জানতে চাইলেন কীরকম দেখতে, আমি বোকার মতন বলে বসলাম যে ও দেখতে একটা বৃদ্ধ এয়ারেডেলের মতন। ভেট আসলে জানতে চাচ্ছিলেন ক্ষতটা দেখতে কেমন। ক্ষতের বর্ণনা শুনে উনি বললেন কুকুরটাকে একটা উষ্ণ কিছুর মধ্যে জড়িয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব যেন হাসপাতালে নিয়ে আসি।

আমি সবুজ কম্বলটাকে দস্তানার মতো পাকিয়ে কুকুরটাকে তাতে তুলে নিলাম। ওর রক্ত হাতে লেগে যাবে ভাবতেই একটু কেমন যেন গা গুলিয়ে উঠল। আর আমি এমনিতেও কিছুটা আনাড়ি মানুষ। কুকুরটাকে বাগান থেকে তুলে নেওয়ার সময় এক চাবড়া ঘাস আর কিছু আগাছাও কম্বলের সাথে উঠে এলো। শিশিরভেজা ঘাস দেখতে ভালো হলেও কম্বলের ওপর ফুটেওঠা তাজা রক্ত আসলে বেশ গরম আর গা গুলিয়ে ওঠার মতন। ও আমার কোলে এসে সমস্ত ভর ছেড়ে দিলো। বিনা বাধায় গাড়ির সিটে গুটিশুটি হয়ে বসে থাকল। ও এখন মহাকর্ষ শক্তির কুকুর হয়ে গেছে।

অকর্ষিত জমির সারি পেছনে ফেলে আমার গাড়ি ছুটছে শহরের দিকে, আর আমি ভাবছি আমার আনাড়িপনার জন্য কুকুরটা আবার ব্যথা পেল কি না। আচ্ছা, বেথ থাকলে কি ওকে ঠিকভাবে ধরতে পারত? আশ্রয়কেন্দ্রের সবচেয়ে বয়ষ্ক কুকুর! আমার খুবই অদ্ভুত লাগে যে বেথ কীভাবে ভাবতে পারল একটা কুকুর পাললে হয়তো সমস্যার সমাধান হবে!

ভেটেরেনারিয়ান গাড়ি থেকে কুকুরটাকে বের করে উনার অফিসে নিয়ে যেতে আমাকে সাহায্য করলেন। কম্বলটা দিয়ে আমরা একটা লুপের মতন বানিয়ে ওকে ভিতরে একটা স্টিলের টেবিলের ওপরে শুইয়ে দিলাম। কম্বল থেকে ঘাস আর আগাছাগুলা খুঁটে তুলতে তুলতে আমি ভাবছিলাম আসলে কী বলা যায়।

ভেটেরেনারিয়ান একবার একটু গলা খাঁকারি দিলেন কিন্তু কিছু বললেন না।

‘এটা আমার স্ত্রীর কুকুর। বড়রাস্তার ওপরে যেই আশ্রয়কেন্দ্রটা আছে, ওখানকার সবচেয়ে বয়স্ক কুকুর এটা। ও তেমন কোনও কাজের না। আমি আসলে ওকে ফেরত দিয়ে আসার কথা ভাবছিলাম।’

ভেটেরেনারিয়ান কুকুরটার চোখের নিচের একটা দাগ স্পর্শ করলেন।

‘মানে, মানে খরচ যদি একটু বেশি পরে যায় তাহলে...’

‘আমার মনে হয় না আপনার এমন কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন আছে’, ভেটেরেনারিয়ান বলতে বলতে জানালেন কুকুরটার চোখের পিউপিলের কিছু অংশের সাড়া পাওয়া যাচ্ছে না। ‘ও মারা যাচ্ছে আসলে। ভালোই হয়েছে যে ওর উপর আপনার কোনও টান নেই।’

আমার মনে পড়ে গেল, বেথ ওকে গাড়িতে করে ঘুরতে নিয়ে যেতে ভালোবাসত।

‘এই যে ও শ্বাস নিচ্ছে দেখছেন, এটাই হয়তো ওর শেষ নিশ্বাস।’

ভেটকে দেখে মনে হলো আমি শোকাতুর নই বলে তিনি একটু স্বস্তির সাথে কথাবার্তা বলার সুযোগ পেয়েছেন। ‘ও কি সবসময়ই এভাবে রাস্তায় দৌড়াত?’, ভেট জানতে চাইলেন।

‘কোনো দিনও না, আসলে ও কখনো দৌড়াতই না।’

‘তাহলে এটা কী করে ঘটল?’

‘বুঝতে পারছি না তো,’ বললাম আমি, মিথ্যা বললাম। কুকুরটার বুকের ওঠানামা দেখছিলাম। ও এরমধ্যেই একলা হয়ে বহুদূরে চলে গেছে। আমি কল্পনায় নিজেকে রাস্তায় দৌড়াতে দেখলাম।

হঠাৎ খেয়াল করলাম আমার হাতটা নিজে থেকেই কুকুরটার মাথার নিচের অংশটায় আঙুল বুলিয়ে দিচ্ছে। ওর মাথার এই অংশটা অদ্ভুতরকমের নরম। আমার স্পর্শটা পাওয়ার প্রায় সাথে সাথেই ও হুট করে চলে গেল।

গাড়ির কাছে এগিয়ে যেতে যেতে ভাবছিলাম এখনো কেমন করে এতটা ভোর হয়ে আছে। আমার হাতে রাখা কম্বলে মেখে যাওয়া রক্ত শুকাতে শুরু করেছে, যদিও ধোয়ার সাথে সাথেই এই দাগ উঠে যাবে। গাড়ির কার্পেটে গড়িয়ে পড়া রক্তের দাগটা তেমন চোখে পড়ছে না, আমি ভান করলাম ওটা আসলে নেই। কিন্তু তারপরও সেই স্পর্শটা আছে। যদিও শীঘ্রই সেটাও হারিয়ে যাবে।

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
সর্বশেষ খবর
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
মুখোমুখি ইরান-ইসরায়েল, পরীক্ষার মুখে মার্কিন সামরিক কৌশল
শহীদ মিনারে বীরমুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
শহীদ মিনারে বীরমুক্তিযোদ্ধা শিব নারায়ণ দাসের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা
বিমানবন্দরে বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে যাওয়া বাসের চালক গ্রেফতার 
বিমানবন্দরে বাউন্ডারি ভেঙে ঢুকে যাওয়া বাসের চালক গ্রেফতার 
মোংলার তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সহসা নামবে না বৃষ্টি
মোংলার তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস, সহসা নামবে না বৃষ্টি
সর্বাধিক পঠিত
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
বাড়ছে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মানি, নতুন যোগ হচ্ছে স্বাধীনতা দিবসের ভাতা
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
দুর্নীতির অভিযোগ: সাবেক আইজিপি বেনজীরের পাল্টা চ্যালেঞ্জ
ইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
ইস্পাহানে হামলাইরান ও ইসরায়েলের বক্তব্য অযৌক্তিক: এরদোয়ান
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থীকে অপহরণের ঘটনায় ক্ষমা চাইলেন প্রতিমন্ত্রী
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া
সংঘাত বাড়াতে চায় না ইরান, ইসরায়েলকে জানিয়েছে রাশিয়া