X
মঙ্গলবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৪
১৬ বৈশাখ ১৪৩১
বিশ শতকের ইতালির গল্প

মৃত্যুর ঘ্রাণ ।। বেপ্পে ফেনোজিলো

অনুবাদ : সাজিদ উল হক আবির
০২ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:২১আপডেট : ০২ এপ্রিল ২০২৪, ১৪:৩৩

এক হাতের সবগুলো আঙুল দিয়ে অন্য হাতের উলটো পীঠে লম্বা একটা সময় জোরে জোরে ঘষবার পর ঘষাখাওয়া ত্বক নাকের ডগায় ঠেকালে যে ঘ্রাণ পাওয়া যায়, ওটাই মৃত্যুর ঘ্রাণ।

কার্লো এটা শিখেছিল একদম ছেলেবেলায়, সম্ভবত বাড়ির উঠোনে মা আর অন্যান্য মহিলার আড্ডায়, অথবা গ্রীষ্মের রাতে জমায়েত বাচ্চাদের খেলার ফাঁকে ফাঁকে, যেখানে বয়সে একটু মুরুব্বিটাইপ ছেলেদের কাছ থেকে সাধারণভাবে জীবন সম্পর্কে, এবং বিশেষভাবে নারী-পুরুষের সম্পর্ক নিয়ে অনেকানেক জ্ঞান লাভ করা যায়।

ফেলে আসা নির্দোষ সে সকল গ্রীষ্মের আরও অনেকগুলো গ্রীষ্ম পেরিয়ে এসে, এক সাঁঝবেলায়, যখন কার্লো এক পুরোদস্তুর ব্যাটামানুষ, সে আবারও পেল সে বিশেষ ঘ্রাণ, নানারকম প্রমাণ সূত্রে যাকে মৃত্যুর গন্ধ বলে চিহ্নিত করতে কোনো বেগ পেতে হয় না।

সে সন্ধ্যায় কার্লো অপেক্ষা করছিল রাস্তার শেষ মাথায় দাঁড়িয়ে—যেখানে রয়েছে সান লাজ্জারো হাসপাতাল, এবং যার উলটো পাশে, রেলরোড স্টেশনের ঠিক বাইরেই এক গ্রেডক্রসিং অবস্থিত। আগের ট্রেনটা মাত্রই স্টেশন ছেড়ে চলে গিয়েছিল, সাঁঝের আকাশে কালো ধোঁয়া ওড়াতে ওড়াতে, এবং চারপাশে কয়লা আর কম্পনরত ইস্পাতের সুন্দর এক মিশ্র গন্ধ ছড়াতে ছড়াতে; তার জানালার আলো ছিল হলদে, বড়ই নরম এবং মিষ্টি, ঠিক যেন মানুষের বাড়ির আলোকিত জানালা। আটটা পনেরো বাজে, সে বিড়বিড় করল আপন মনে। লাইনম্যান তখন রেললাইনের পাশে হাতল ঘুরিয়ে রেলপথের দু’পাশ আগল দিয়ে রাখা ডান্ডিটা তুলছে ওপরে।

যে বাড়ির কোনায়, দেয়ালে সে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ছিল, তার ভেতরে কার্লোর মায়ের বয়সী এক মহিলা (কণ্ঠ থেকে অনুমান করা), তার যুবতী বয়সের এক গীত গাওয়া শুরু করলেন— 

মাম্মা মিয়াঁ, দাম্মে কেন্টো লিরা

চে ইন অ্যামেরিকা ভগিলো আন্দারে...

আম্মাগো আম্মা, আমারে একশ লিরা দেও

কারণ, আমি আমেরিকা যাইবার চাই...

ভালোই তো হতো আমেরিকা যেতে পারলে, ভাবে সে। বিশেষ করে হলিউডে। কিন্তু আজ রাতে নয়, হুহু বাবা! আজ রাতে আমি আমার দেশের মাটিতেই ভালোবাসাবাসি করব। তার মুষ্টিবদ্ধ হাতজোড়া সে প্যান্টের পকেটে শক্ত করে ঠুসে ভরে রাখে।

কার্লো অপেক্ষা করছিল তার আঠারো বছর বয়সী প্রেমিকার জন্য, যে আসা মাত্র তাকে নিয়ে সে হারিয়ে যাবে সামনের বিস্তীর্ণ ময়দানের কোথাও, যেখানে একবার হারিয়ে গেলে তাকে আর বাসনার চুলায় হাঁপরের বাতাস দেওয়া লাগবে না, চিন্তা করা লাগবে না স্টেশনে ঝুলে থাকা ওই ঘড়ির খোমার ওপর প্রতিফলিত আলোর প্রবাহ নিয়ে। এখন কথা হলো, মেয়েটার চুলের ডগাও তো দেখা যাচ্ছে না দূরদূরান্তে। জীবনের এ অসহ্য দিনগুলোতে, এই কমবয়সী প্রেমিকার শরীরের চেয়ে দামি আর কোনো সম্পত্তি তো তার আয়ত্তে নেই। মেয়েটা যদি আজ সন্ধেবেলায়ও না আসে, তবে আবার আরও একটা সপ্তাহ দারুণ উদ্বিগ্নতায়, অপেক্ষার আগুনে জ্বলে পুড়ে ছাই হতে হতে কাটানো লাগবে।

মেয়েটার উপস্থিত হবার নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও, সব আশা-ভরসা ত্যাগ করে ফিরে যেতে কার্লোর মন সায় দিচ্ছিল না। সে আগের জায়গাতেই দাঁড়িয়ে রইল কিছুটা খুঁতখুঁতে মন নিয়ে, যেন সে একবার জিটকা দিয়ে এখানে দাঁড়িয়ে গেলে মেয়েটার দেখা না দিয়ে আর কোনো উপায় থাকবে না। কিন্তু এখন ঘড়ির কাঁটায় আটটা চল্লিশ, চারপাশে কেবল বুড়ো ব্যাটা-বেটিদেরই পাবলিক পার্কের বেঞ্চিতে জমে বসে থাকতে দেখা যাচ্ছে। এদের অর্ধেকই আবার আঁধারের পেটে সেঁধিয়ে গিয়েছিল প্রায়, তবে আন্ধারে বসে যে কয়টা বুড়ো কিংবা বুড়ি বিড়ি ফুঁকছিল, তাদের প্রত্যেকেই নিজ নিজ বিড়ির আগুনরঙা পাছা তাক করে রেখেছিল কার্লোর দিকে। আর এতক্ষণ যে বেটি গান গাইছিল, হ্যাঁ, সে নিশ্চিত, যে বেটি গান গাইছিল, ওই বেটিই, এখন বারান্দায় এসে কার্লোর চাঁদির দিকে কুতুরে চোখে তাকিয়ে আছে।

শহরের বেল টাওয়ারে নয়টা বাজার ঘণ্টা তার কানে ভেসে এলে সে হাঁটা শুরু করে শহরের কেন্দ্রের দিকে, যেখানে পিজ্জার দোকানে, বা ক্যাফেতে তার বয়সী লোকজন ভিড় জমায়, এবং মাথার মধ্যে ভনভন করতে থাকা মাগিদের চিন্তা মাছি তাড়ানোর মতো করে তাড়ায়।

সে প্রতি পাঁচ কদম পরপর ফিরে ফিরে তাকাতে আরম্ভ করল পেছনে ফেলে আসা রাস্তার সে কর্নারটার দিকে। এভাবে গোটা দু-তিন দম্পতির সঙ্গেও দেখা হয়ে গেল, যারা রাস্তার একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্ত কিছুটা মাতলামো করতে করতে হেঁটে বেড়াচ্ছিল, আর মাথার ওপর ল্যাম্পের আলো আছে না নেই—এটার ওপর নির্ভর করে একবার একে অপরের সঙ্গে চিপকে যাচ্ছিল, আবার দূরে সরে যাচ্ছিল। এদের দেখে কার্লোর মনে কিছুটা ঈর্ষা জাগে, কিন্তু পরক্ষণেই সে নিজেকে বোঝায় :   এরা সম্ভবত সেটা করতে পারবে না, যেটা আমার ডার্লিং আজ দেখা দিলে ও আর আমি করতাম। অতএব, এদের ঈর্ষা করার কিছু নেই।

ইতোমধ্যে সে গতিপথ খানিকটা বদলে, ঘুরে এসে শহরের ফোয়ারার পাশে এসে দাঁড়ায়, পানি পান করবার জন্য। সে পেটপুরে পানি খায়, তারপর ঘাড়খানা বাঁকিয়ে শেষবারের মতো পেছনে ফেলে আসা জায়গাটিকে দেখে, এবং এক লম্বা মেয়েকে সে জায়গায় আবিষ্কার করে, যার গায়ে ছিল ক্যানেরি পাখির মতো হলুদ রঙা ধোপদুরস্ত এক জ্যাকেট। মেয়েটা হাঁটছিল দ্রুতগতিতে, গ্রেড ক্রসিংয়ের দিকে।

কার্লো ছুটে সরে এলো সেই ফোয়ারার কাছ থেকে, তারপর পার্কের রাস্তা ধরে ছুটতে ছুটতে মেয়েটাকে উদ্দেশ্য করে এক লম্বা শীষ বাজাল। পার্কের বেঞ্চিতে বসে রাস্তার ওপর আরাম করে পা ছড়িয়ে রাখা বুড়ো মানুষগুলো দ্রুত যে যার পা টেনে বেঞ্চের আড়ালে নিয়ে লুকোতে বাধ্য হলো। কার্লো তখন আরও একবার শিষ বাজিয়ে ছুটে চলছে মেয়েটার দিকে।

মেয়েটা থামলও না, কার্লোর দিকে ঘুরে তাকালও না একটিবারের জন্য; সে বরং তার হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিল। কার্লোও ছুটতে ছুটতে ধাক্কা খেল লাইনম্যানের ওপর, যে রেললাইনের ওপর ব্যারিকেড ফেলার কাজে ব্যস্ত ছিল; তারপর সে প্রায় ধরে ফেলল মেয়েটিকে পেছন থেকে।      

মেয়েটার হাঁটার ভঙ্গিতে ছিল এক ধরনের জড়তা, তবে ওই জড়তা নিয়েই সে খুব দ্রুতপায়ে হেঁটে কয়লার গ্যাসের কারখানাটা পার করে গেল। ততক্ষণে কার্লো ছোটা থামিয়ে দাঁড়িয়ে পড়েছে। সে এটা উপলব্ধি করেছে যে, একই শারীরিক কাঠামো, এবং একই ধরনের জ্যাকেটের মালেকিন হলেও, এই মেয়েটা আসলে তার প্রেমিকা না। তবে তার এ উপলব্ধি পোক্ত হবার আগেই সে তৃতীয়বারের মতো শীষ বাজিয়ে ফেলেছিল, ফলশ্রুতিতে মেয়েটা হাঁটা থামাল না বটে, তবে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকিয়ে কার্লোকে আবিষ্কার করল তার মর্তমান দুখানা হাত দুদিকে ঝুলিয়ে মাঝরাস্তায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা অবস্থায়। তারপর, তিরগতিতে হেঁটে সে মিশে গেল রাস্তার শেষমাথার আঁধারে।

ততক্ষণে কার্লোর নিজের দমও প্রায় ফুরিয়ে এসেছে, ফলে রেললাইনের পাশে দাঁড়ানো লাইনম্যান—যে লোকটাকে রেললাইন আগলে দাঁড়িয়ে থাকা ডান্ডির নিচে মাথা গলিয়ে কার্লোর দিকে তেড়ে যেতে দেখল, কার্লো নিজে তাকে তৎক্ষণাৎ দেখতে পেল না। কিন্তু কার্লোকে পেছন থেকেই আঘাত করার বদলে সে অর্ধ চন্দ্রাকৃতিতে ঘুরে এসে কার্লোর মুখোমুখি দাঁড়াল, এবং মুখ দিয়ে একটি শব্দও উচ্চারণ না করে তার হাড় জিরজিরে আঙুলগুলো দিয়ে কার্লোর হাতের পেশি খপ করে চেপে ধরল।

লোকটার নাম আত্তিলিও, সে কাজ করেছে গ্রিসের সৈন্যবাহিনীতে, জার্মানির জেলে বন্দিও ছিল কিছুদিন, সবশেষে যক্ষ্মা বাঁধিয়ে দেশে ফিরেছে—এতটুকুই ছিল লোকটার ব্যাপারে কার্লোর জানাশোনা।

কার্লো নিজেও তার মুক্ত হাতটি দিয়ে লোকটার একটি হাত চেপে ধরল, ফলে শুরু হয়ে গেল দুজনের মাঝে ধস্তাধস্তি। আত্তিলিওর কাঁধের ওপর দিয়ে তখনও মেয়েটাকে দেখা যাচ্ছে, যার যারপরনাই চেষ্টা ছিল ওখানে এক দরজার ফাঁকে নিজেকে লুকিয়ে ফেলার, কিন্তু তার গায়ের হলদে জ্যাকেট সে পরিকল্পনায় আড়ঠ্যাকা দিয়ে বসেছিল।

আত্তিলিও তাকে আক্রমণ করলেও, একবারও সে কার্লোর মুখের দিকে চায়নি; তার চেহারা ছিল কার্লোর বুকের ওপর আড়াআড়ি চেপে রাখা, আর তার চুলগুলো কার্লোর চিবুক ছুঁয়ে ছুঁয়ে যাচ্ছিল কিছুক্ষণ পরপর। তারা দুজন সমানে ধস্তাধস্তি চালিয়ে গেলেও, কার্লো একটিবারের জন্যও মুখ খুলে চেঁচিয়ে উঠতে পারল না যে—কী বালটা ফেলছিস তুই আমার সাথে? তোর মাথা কি চোদ খেয়ে গেছে? তবে সে বলতে পারল না কিছুই, কারণ, ততক্ষণে তার নাকে নোংরা সাদা ধোঁয়ার মতো কী এক বস্তু ঢুকে গেছে, খালি চোখেই যে ধোঁয়া সে দেখতে পেল, যাকে মৃত্যুর গন্ধ হিসেবে চিহ্নিত করতে কার্লোর বেগ পেতে হয় একমুহূর্তও। মৃত্যুর সে গন্ধ, যাকে এই গল্পের শুরুতে বয়ান করা পন্থা অবলম্বন করে যে কেউ চাইলেই পুনরুৎপাদন করতে পারে, তীব্রতায় সে গন্ধ খানিকটা হালকা হলেও। কাজেই সে ঠোঁট কামড়ে মুখ বন্ধ করে রাখে। ধস্তাধস্তির তীব্রতা বাড়লে যখন তার পক্ষে শ্বাস নেওয়াও কঠিন হয়ে পড়ছিল ক্রমশ, কার্লো এমনভাবে তার মাথাটা ঘুরিয়ে নিল যে, তার এই প্যাঁচে আত্তিলিওর ঘাড় মটকানোর আওয়াজ স্পষ্ট শোনা গেল। এই মাথা ঘোরানোর ফাঁকেই কার্লো লাইনম্যানকে দেখতে পেল, যে কোনোরকমের অংশী হবার ইচ্ছে ছাড়াই দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের দুজনের লড়াই উপভোগ করছিল। কার্লো ভাবল—লোকটা কি বুঝতে পারছে না যে, তারা দুজনে আসলে একে অপরের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে থাকা হদ্দ মাতাল নয়, বরং তারা একে অপরের জান কেড়ে নেওয়ার চেষ্টায় লিপ্ত? সম্ভবত, তারা দুজন কীভাবে একে অপরের পেশিকে খাবলে ধরে আছে—এটাই লোকটা বুঝতে পারছিল না। কার্লো এ পর্যায়ে খানিকটা বিস্ময় নিয়ে ভাবা শুরু করল যে, তার জম চাপে ভর্তা হয়ে যাওয়ার বদলে আত্তিলিওর এই ভয়াবহ কঙ্কালসার হাতদুটো এখনও টিকে আছে কীভাবে? প্রকৃতপক্ষে আত্তিলিওর হাতের মুষ্টিও ছিল দারুণ শক্তিশালী, যদি মৃত্যুর গন্ধে কার্লোর নাক মুখ বন্ধ না হয়ে আসত, তবে এতক্ষণে কার্লো নিজেও চেঁচিয়ে উঠত দারুণ যন্ত্রণায়।

সে ততক্ষণে আত্তিলিওর এহেন আক্রমণের হেতু বুঝতে পেরেছে, এবং বিস্ময়কর হলেও, তার এ আক্রমণ এখন আর তার কাছে অদ্ভুত, কিংবা জানোয়ারের মতো কোনো আচরণ বলে মনে হচ্ছে না। আত্তিলিও যখন তার শরীরের সব শক্তি এক করে তার হাত ভাঙার চেষ্টায় রত, কার্লো ঠিক সে মুহূর্তেই পরিপূর্ণভাবে বুঝতে পারল ওকে।

কার্লো এ পর্যায়ে পুনরায় তার মাথা উঠিয়ে একপাশ করা মাত্রই দেখতে পেল যে লোকটার চোখদুটো একদম টেঁসে বন্ধ করা, তার চিবুকের হাড্ডি এমন ঝকঝকে যেন কেউ ওয়াক্স করে গোঁফদাড়ি সব তুলে এনেছে, তার মুখ এতখানি হাঁ করা, যার মধ্যদিয়ে সহজেই মৃত্যুর গন্ধ ভকভক করে বেরিয়ে আসছে। এ পর্যায়ে এসে কার্লো নিজেও তার চোখ বন্ধ করে ফেলে, আত্তিলিওর হাঁ করে রাখা মুখগহ্বরের দিকে তাকিয়ে থাকা আর সহ্য হচ্ছিল না তার। সে পুরো মনঃসংযোগ স্থাপন করে মাটির ওপর তার পা গেড়ে রাখা, আর দুহাতের বজ্রমুষ্টি এঁটে রাখার ওপর।

ক্রমাগত বেজে চলা স্টেশনের ঘণ্টির মাঝেও সে আত্তিলিওর হৃৎপিণ্ডের ধুকপুকানো স্পষ্টতই অনুভব করতে পারছিল তার নিজের পাঁজরের হাড়ের বিপরীতে, যেন মিসাইলের মতো ছুটে এসে যেকোনো মুহূর্তে হৃৎপিণ্ডটা পতিত হবে কার্লোর ওপর, আর তাকে টুকরো টুকরো করে ফেলবে। 

সে ঠিক করল, এ খেলা এখন শেষ করতে হবে। গন্ধটা সে এখন উপর নিচ ডান বাম—সবদিক থেকেই সমানে পাচ্ছে। তার নাক, মুখ, চামড়ার ওপর প্রতিটি লোমের ডগা দিয়ে সমানে সে গন্ধ ঢুকছে ভকভকিয়ে। আত্তিলিওর প্রচেষ্টা যেমন মরিয়া, তার মৃত্যুগন্ধও ঠিক তেমনি বেপরোয়া। এতক্ষণে বোধহয় সে গন্ধ কার্লোর মস্তিষ্কের দখল নিয়ে নিয়েছে, কারণ তার ভেতরটা পাগল পাগল লাগছে। কার্লো একটা পা সামনে বাড়িয়ে প্যাঁচ কষে আত্তিলিওকে আছড়ে ফেলল তার পাছার ওপর। বদলে যাওয়া পজিশনে আত্তিলিওর মাথা পিছলে এসে আস্তে করে ঝুঁকে পড়ল কার্লোর পেটের ওপর, তার হাতের মুষ্টি ঢিলা হয়ে এলো ক্রমশ, কার্লোর হাতের পেশির বদলে এখন তার মুষ্টিতে ছিল কেবল কার্লোর দুহাতের কবজি দুটি। তার টেনে টেনে নেওয়া শ্বাস কিম্ভূতকিমাকার এক শব্দ উৎপাদন করছিল। একপর্যায়ে সে কার্লোর হাতের কবজিও ছেড়ে দিল, এবং কার্লোর কোনো ধাক্কা দেওয়া ছাড়াই সে ধপাস করে বসে পড়ল রাস্তার ওপর। তার মাথা বেকায়দায় পেছন দিকে হেলে পড়লে তার পুরো শরীরটাই মাথাকে অনুসরণ করে, এবং সে রাস্তার ওপর টান হয়ে শুয়ে পড়ে।

কার্লো তাকে টেনে তোলা, বা কয়লার গ্যাস স্টেশনের দেয়ালে হেলান দিয়ে বসিয়ে রাখা—এসব কোনোকিছুর মধ্যদিয়েই গেল না, কেননা সে আসলে ওই গন্ধটা আর সহ্য করতে পারছিল না একদমই। আত্তিলিও যখন রাস্তার ওপর টান হয়ে শুয়ে, তখন সে এটা ভুলে গেল যে কার্লো আসলে আত্তিলিওর সমস্যাটা বুঝতে পেরেছিল, এবং প্রায় চিৎকার করেই উঠছিল যে—তোর মাথাটা কি চোদ খেয়ে গিয়েছিল রে হারামজাদা? কিন্তু সে মুখ বন্ধই রাখল শেষমেশ। 

অপর ট্রেনটা ততক্ষণে কাছাকাছি এসে পড়েছে, তার শব্দ শুনলেই সেটা বোঝা যাচ্ছিল, সম্ভবত ব্রিজের পাশ দিয়ে ছুটে চলছিল বাহনটা এখন। সে রাস্তার শেষ মাথায় উঁকি দিল আবারও মেয়েটাকে খুঁজবার জন্য। মেয়েটা ততক্ষণে দরজার নিরাপদ আশ্রয় ছেড়ে মাঝরাস্তায় এসে দাঁড়িয়েছে। সে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল সাদাকালো বস্তার মতো স্তূপ হয়ে রাস্তার ওপর পড়ে থাকা আত্তিলিওর শরীরের ওপর। তারপর, খুব ধীরপায়ে হেঁটে সে কার্লোদের পাশে এসে দাঁড়াল।

এখন কার্লো চাইলে চলে যেতে পারে; সে আত্তিলিওকে পেছনে ফেলে গ্রেড ক্রসিংয়ের দিকে পায়ে পায়ে হাঁটা শুরু করে। লাইনম্যানকে দেখে মনে হচ্ছিল যে ব্যাটা পুরো মনোযোগ দিয়ে রেললাইনের দিকেই তাকিয়ে আছে, যার ওপর যেকোনো সময় ট্রেন এসে হাজির হতে পারে। তবে সে যে আড়চোখে কার্লোর দিকেই তাকিয়ে ছিল, সেটা কার্লো টের পাচ্ছিল। লাইনম্যান তাকে কিছুই বলল না, এমনিতেও যখন দরকার ছিল, তখন সে চ্যাঁচায়নি মোটেও। কার্লোর ওপর ট্রেন তার সমস্ত আলো নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। ট্রেনের জানালার পাশে বসা যাত্রীগুলো কার্লোর মুখের দিকে ঠায় তাকিয়ে থেকে, কার্লোর চেহারা থেকে তারা কী ভাবে, বা কী পাঠ গ্রহণ করে—সে তারাই ভালো জানে।

কার্লো হাঁটতে থাকল। বুকের ওপর দুহাত ভাঁজ করে হাঁটতে হাঁটতে সে নিজের দুহাতের পেশি টিপে টিপে দেখে। আত্তিলিও লোহার বেড়ির মতো দুহাতের চাপ খেয়ে জায়গায় জায়গায় এখনও ব্যথা। তার চোখের সামনে ভাসমান আত্তিলিওর ফ্যাকাশে মরা চামড়া। সে বুঝতে পারছিল, আত্তিলিওর সাথে এই মারামারির পর তার পক্ষে আর কখনোই আগের সে মানুষটি হওয়া সম্ভব নয়। সে রাস্তার আঁধারঘেরা পথ ঘেঁষে হাঁটতে থাকল, তার চোখের পাপড়ি, মুখাবয়ব, হাঁটু তখনও কাঁপছিল তিরতির করে। স্নায়ুর ওপর কোপটা গিয়ে পড়েছে তার। সে ভাবছিল, আত্তিলিওর হাতের চাপ খেয়ে তার স্নায়ুতন্ত্র মোটের ওপর ভোগলা হয়ে গেছে, ফলে স্নায়বিক চাপ থেকে সে আজীবনের তরে মুক্তি পেয়েছে।

কিন্তু কীসের কী? তার চোখের সামনে পর্দার মতো বারবার ভেসে উঠছিল সে ফ্যাকাশে ত্বক। মাথা থেকে ছবিটাকে তাড়ানোর জন্য সে পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে তার প্রেমিকার ন্যাংটো, ভারী, কামনা উদ্রেককারী শরীরখানার কথা ভাবার চেষ্টা করে। কিন্তু তা কিছুতেই একটা আকৃতিতে পৌঁছায় না, বরং একটুকরো সাদা মেঘের মতো ভেসে থাকে তার মস্তিষ্কে, আর মেঘের সে সাদা রং গিয়ে মেলে আত্তিলিওর শরীরের মরা সাদা চামড়ার সঙ্গে।

কার্লো রেলরোড স্টেশনের শুঁড়িখানায় গিয়ে হাজির হয়, কিন্তু ভিতরে ঢোকে না; সে পরিবেশককে দরজায় দাঁড়িয়েই ইশারায় বলল তাকে ব্রান্ডি দিতে, ওষুধি ব্রান্ডি—যদি থেকে থাকে।

ব্রান্ডির জন্য অপেক্ষা করতে করতেই কার্লো দেখল, পার্কের ভেতরের রাস্তা ধরে একটা হলুদ জ্যাকেট হাওয়ায় ভেসে এগিয়ে আসছে তার দিকে। আত্তিলিওর সে প্রেমিকা, আগের চেয়ে তার হাঁটার গতি এবার অনেক ধীর। সে কার্লোকে আবিষ্কার করলো শুঁড়িখানার সামনে, কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কী যেন ভাবল, তারপর পুনরায় হেঁটে এগিয়ে এলো কার্লোর দিকে, নতমস্তকে, মাপা পদক্ষেপে। এই ফাঁকে কার্লো মেয়েটার পুরো শরীরটাকে চোখে মেপে নিতে পারল। খুবই সাধারণ একটা শরীর, কিন্তু তা কেবল দামড়া, গাট্টাগোট্টা এক ব্যাটামানুষের শরীরেই তৃপ্ত হবে।

মেয়েটা একদম তার কাছে এসে দাঁড়াল। তার নীল চোখ কার্লোর চোখে বিঁধিয়ে দিয়ে রুক্ষকণ্ঠে বলল, ‘শুকরিয়া, ওকে সরাসরি ঘুসি মারেননি, তাই।’

‘ব্রান্ডি’ কার্লোর পেছন থেকে পরিবেশনকারী চেঁচিয়ে বলে। কার্লো ঘুরে দেখল না। একটু পর তার কানে ভেসে এলো বাইরে পেতে রাখা টেবিলের ওপর ব্রান্ডির গেলাস রাখবার ঠকাঠক আওয়াজ।

মেয়েটা তাকে বলল, ‘আপনি তো এসব আগে থেকেই প্ল্যান করে রেখেছিলেন, তাই না?’

কার্লো বলল, ‘এতক্ষণে আপনার বুঝে যাওয়ার কথা যে আমি একটা ভুল করেছি, আমি আপনাকে অন্য একজনের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলেছি। দুঃখের বিষয় হলো, ওই বেকুবটা সেটা বুঝতে পারেনি।’

জবাবে মেয়েটা কাঁধ শ্রাগ করে দূরে কোথাও তাকিয়ে রইল। কার্লো এবারে মেয়েটাকে প্রশ্ন করল, ‘মাফ করবেন, কিন্তু আত্তিলিও এই ধারণাটা পেল কোথা থেকে যে কেউ আপনাকে ওর কাছ থেকে কেড়ে নিতে চায়?’

‘কারণ, এমন কেউ আসলেই আছে।’

‘এমন কেউ...খুব দামড়া সাইজের নাকি?’

‘হ্যাঁ, অনেক পেটা শরীর তার। তো, এতে দোষ কোথায়? আত্তিলিও চাইত যে আমি আবার আগের মতো হয়ে যাই, যেখানে ও নিজেই আর আগের মতো ছিল না। এছাড়া আমার পরিবারেরও আর অনুমতি নেই ওর সঙ্গে এ সম্পর্কে।’

‘এখন আছে কেমন সে? বাড়ি পৌঁছে দিয়েছিলেন?’

হ্যাঁ, মেয়েটা জানায় যে সে সেটা করেছে, কিন্তু আত্তিলিওর অবস্থা এখন খুব খারাপ। আত্তিলিওর মা মেয়েটাকে পাঠিয়েছে দ্রুত যেখান থেকে পারে একটা ডাক্তার ধরে নিয়ে আসতে। কার্লো স্পষ্টতই বুঝেছিল, এই সাঁঝের ব্যস্ত সড়ক ডিঙিয়ে ওর মতো মেয়ের পক্ষে দ্রুত কোনো ডাক্তার ধরে আনা সম্ভব হবে না।

‘ড. ম্যানজন কই বাস করে জানেন? ভিয়া কাভ্যরে?’

‘হ্যাঁ, ভিয়া কাভ্যরের মুখেই।’

মেয়েটা এককদম পিছিয়ে আসে; বিদায় নিয়ে ঘুরে হাঁটা শুরু করবে ঠিক এমন সময় কার্লোর ভেতরে এক তীব্র কৌতূহল সঞ্চারিত হয়। সে মেয়েটাকে থামানোর জন্য একটা হাত প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই বাড়িয়ে দেয়। তার আসলে একবার এ প্রশ্নটি করবার ইচ্ছে হচ্ছিল যে : ক্ষমা করবেন, আপনি তো দীর্ঘদিন ধরেই ওর সঙ্গে আছেন, আপনি কি ওই গন্ধটা কখনো পেয়েছেন ওর শরীরে...? কিন্তু তা আর বলা হয়ে ওঠে না। হাত নামিয়ে সে শুধু তাকে শুভরাত্রির সম্ভাষণই জানাতে পারে। মেয়েটা আস্তে আস্তে হেঁটে চলে যায়।

ব্রান্ডি শেষ করে সে বাড়িতে ফিরে আসে। পানির কলের নিচে একদম ন্যাংটো হয়ে দাঁড়িয়ে সে এতটা উৎসাহ নিয়ে এবং দীর্ঘসময় ধরে গোসল করে যে তার মার ঘুম ভেঙে যায়, এবং নিজের কামরা থেকে সে চেঁচিয়ে কার্লোকে সাবধান করে, গোসলে বেশি সাবান ক্ষয় করে পয়সার খরচ না বাড়াতে।

সে রাতে কার্লো আত্তিলিওর সাথে তার মারামারির ঘটনাটা স্বপ্নে দেখে, আর সকালবেলা কর্মসংস্থান অফিসে গিয়ে সে শুনতে পায়, আত্তিলিওকে হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে ভর্তি করা হয়েছে।

‘জার্মানি,’ কার্লোর মতোই এক হদ্দবেকার বলে ওঠে।

‘কাকে নিয়ে কথা বলছ?’ কে যেন মাত্রই ভেতরে প্রবেশ করল। ‘এই আত্তিলিওটা কে? তোমাদের পরিচিত কেউ?’ নতুন লোকটা কার্লোকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন ছুড়ে দেয়।

‘পরিচিত কি না? কে জানে, তবে আমি ওর শরীর থেকে ভেসে আসা মৃত্যুর গন্ধ শুঁকেছিলাম ‘ কার্লো উত্তর দেয়। লোকটা কার্লোর মুখোমুখি হয়ে তাকে কিছু বলতে চাইছিল, কিন্তু তখনই ভেতর থেকে কেউ তার নাম ধরে ডাকে, ফলে তার ঘুরে দাঁড়িয়ে নাম ডাকা কেরানির দিকে পালটা চেঁচিয়ে বলা লাগে—‘এই যে আমি।’  

তিন সপ্তাহ বাদ সে আবারও আত্তিলিওর সঙ্গে তার ধস্তাধস্তির স্বপ্ন দেখে। সেদিন সকালেও ঘুম থেকে উঠে সে প্রতিদিনের মতো রওনা হয় কর্মসংস্থান অফিসে। পথিমধ্যে এক কুয়ার পাশে সে দাঁড়ায় এবং রান্নাঘরে ব্যবহৃত একটা ম্যাচের বক্স থেকে কাঠি নিয়ে সেটা ঠুকে জ্বালায়। এর থেকে দামি ম্যাচ তার পক্ষে কুলিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। এই করতে করতে সে হঠাৎ আবিষ্কার করল, একটা ঝুলন্ত শোক—ব্যানারে, বড় বড় কালো অক্ষরে আত্তিলিওর শেষকৃত্যের সংবাদ টাঙিয়ে রাখা। 

(জন শেপ্লেই-এর ইংরেজি অনুবাদ থেকে বঙ্গানুবাদ করেছেন সাজিদ উল হক আবির) 

 

বেপ্পে ফেনোজিলো (১৯২২-১৯৬৩)

ফেনোজিলো তার সাহিত্যে ‘জনি’ আর ‘মিল্টন’ নামে দুটি বিপরীতমুখী চরিত্র নির্মাণ করেছিলেন। ফেনোজিলোর নিজ সত্তারই বিপরীতমুখী এ দুই চরিত্রকে যোগ করলে পাওয়া যায় জন মিল্টনের একটা আমেরিকান ভার্সন। সপ্তদশ শতকের ইংল্যান্ডের  কবি জন মিল্টন ছিলেন ফেনোজিলোর সাহিত্য জীবনের ধ্রুবতারা।

ফেনোজিলোর কোনো ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি নেই, দেশভাগের সময় ছিলেন সামরিক বাহিনীতে কর্মরত, একদম হাতখুলে লিখেছেন ইতালির ফ্যাসিস্ট রেজিমের বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা প্রতিরোধের স্বপক্ষে। তবে ফেনোজিলোর প্রথম সাহিত্যিক প্রতিবাদ ছিল লিখে নয়, বরং না লিখে। ইতালির ফ্যাসিস্ট শাসক বেনিতো মুসোলিনির রোম যাত্রা উপলক্ষ্যে স্কুলে তাদের সবার একটি রচনা লিখবার কথা ছিল। ফেনোজিলো তখন রচনা লিখবার বদলে খালি খাতা জমা দেন।

সামরিক ছাউনির বাইরে, ফেনোজিলোর বাসস্থান ছিল পেইদমন্তিসি সিটি অফ অ্যালবা, লাংহে-তে, যা ছিল তার জন্মস্থানও। এ বিচ্ছিন্ন জনপদ ও জনজীবন তাকে প্রাণিত করে, সাহিত্য সৃষ্টির রসদ জোগায়। ‘মৃত্যুর ঘ্রাণ’ গল্পটি তার ১৯৫২ সালে প্রকাশিত প্রথম গল্পের বই—আই ভেন্তিত্রে জিওরনি দেল্লা সিত্তা দি অ্যালবা (অ্যালবা শহরে তেইশটি বছর)-এর বারোটি গল্পের মধ্যে একটি। বাগাড়ম্বরবিহীন, সহজ সরল ভাষায় কিন্তু গভীর অন্তর্দৃষ্টি সহকারে লেখা ফেনোজিলোর এই বইটিকে ইতালির ফ্যাসিস্ট প্রতিরোধী সাহিত্যের উৎকৃষ্ট এক নিদর্শন হিসেবে ধরা হয়। বামপন্থিরা অবশ্য বইটাতে আদর্শিক বিষয়াদির আলাপ বাদ দিয়ে সত্য ঘটনাকে বেশি তুলে ধরার ফলে একে ফেনোজিলোর রাজনৈতিক বিশ্বাসঘাতকতা হিসেবে চিহ্নিত করে।

কৈশোরের দিনগুলো থেকেই ইংরেজি ভাষার প্রেমে আকণ্ঠ ডুবে থাকা ফেনোজিলোর ইংরেজি ভাষায় দক্ষতা ছিল এত বেশি যে, তিনি স্যামুয়েল টেইলর কোলরেজ, এবং জেরার্ড ম্যানলে হপকিন্স ইংরেজি থেকে ইতালিয়ানে অনুবাদ করতে পারতেন। তার নিজের লেখাপত্রের প্রথম ড্রাফট ইংরেজি ভাষায় তৈরি করার অভ্যেস ছিল। তার জীবনের সর্বশেষ উপন্যাস প্রিমাভেরা দি বেল্লেজ্জা (রূপসী বসন্ত)-এর ইতালিয়ান ভার্সনকে তিনি ইতালিয়ান ভাষার পাঠকদের জন্য ‘মূল বইয়ের এক ছাপোষ ইতালিয়ান অনুবাদ’ বলে উল্লেখ করেছিলেন। তার আরও দুটি উপন্যাস, উনা কোশ্চিওনে প্রাইভাতা (সম্প্রতি—‘এক ব্যক্তিগত বিষয়’ নামে প্রকাশিত) এবং দ্য পার্টিজিয়ানো জনি (বিচ্ছেদপন্থি জনি), ফুসফুসের ক্যানসারে মাত্র চল্লিশ বছরে তার মৃত্যুর পর প্রকাশিত হয়। তার সবচেয়ে শক্তিশালী উপন্যাস, ‘বিচ্ছেদপন্থি জনি’-এর প্রথম ড্রাফট লেখা হয়েছে ইতালিয়ান এবং ইংরেজি ভাষার এক আশ্চর্য সংমিশ্রণে, ইতালির সাহিত্য সমালোচকরা যার স্নেহভরে নাম দিয়েছিলেন—‘ফেংলিশ’।

/জেড-এস/
সম্পর্কিত
সৈকতে জনসমুদ্র!
চিড়িয়াখানায় মানুষের ঢল
জঞ্জালের নগরে প্রাণ ভরানো সবুজের খোঁজে...
সর্বশেষ খবর
‘“সুলতান পদক” পেয়ে আমি গর্বিত ও ধন্য’
‘“সুলতান পদক” পেয়ে আমি গর্বিত ও ধন্য’
বুয়েটকে হিজবুত তাহরীর-মুক্ত করতে ৬ শিক্ষার্থীর স্মারকলিপি
বুয়েটকে হিজবুত তাহরীর-মুক্ত করতে ৬ শিক্ষার্থীর স্মারকলিপি
বরুণের স্পিনের পর সল্ট ঝড়ে দিল্লিকে হারালো কলকাতা
বরুণের স্পিনের পর সল্ট ঝড়ে দিল্লিকে হারালো কলকাতা
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
বেতন বৈষম্যে উচ্চশিক্ষার মান হারাচ্ছে বেসরকারি কলেজগুলো
সর্বাধিক পঠিত
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
‘পুলিশ’ স্টিকার লাগানো গাড়িতে অভিযান চালাবে পুলিশ
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
শরীরের তাপ কমায় এই ৮ খাবার
আজ কি বৃষ্টি হবে?
আজ কি বৃষ্টি হবে?
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
জালিয়াতির মামলায় সাবেক ব্যাংক কর্মকর্তার ২৬ বছরের কারাদণ্ড
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে
মঙ্গলবার দুই বিভাগের সব, তিন বিভাগের আংশিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে